পুঁজিবাজারে কারসাজি বন্ধে বিএসইসিকে কঠোর হতে হবে

নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে দেশের পুঁজিবাজার। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এক পর্যাায়ে ৬ হাজার ১১৩ পয়েন্টে পৌঁছায়। দিন শেষে সূচক ৬ হাজার ৬৬ দশমিক ৬৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে, যা গত ৪০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সূচকের সঙ্গে সঙ্গে লেনদেনও বেড়েছে। গত রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকার বেশি। ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বরের পর এটাই সর্বোচ্চ লেনদেন। ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বরে প্রায় ২ হাজার ৭১১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।

২০১০ সালের ভয়াবহ ধসের পর পুঁজিবাজার আবার চাঙা হয়েছে। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নেতৃত্বে (বিএসইসি) পরিবর্তন এসেছে। তারল্য সংকট নেই। ছোট-বড় বিনিয়োগকারীরা বাজারে ভিড় করছেন। কালোটাকা ঢুকেছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে। কাজেই পুঁজিবাজার বাড়ছে, সূচক আর লেনদেনে হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। এমন বাজারই দীর্ঘদিন ধরে সবাই প্রত্যাশা করে আসছেন। তবে পুঁজিবাজারের কিছু কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। দর এতটাই বেড়েছে যে এসব কোম্পানির মালিক-ব্যবস্থাপকদের চোখই ছানাবড়া হয়ে গেছে। তারা বলছেন, ‘আমরা এমন কোন সোনার খনি, রূপার খনি বা হীরার খনি পাই নাই, যে আমাদের শেয়ারদর এমন বাড়ছে।’

প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেছেন এই কথা। কারণ এক বছর আগেও বিমা কোম্পানিটির শেয়ারের দাম গত বছর ১৮ মার্চ ১৬.৩০ টাকা পর্যন্ত নেমেছিল। চলতি বছর ৩১ মে এর দর একপর্যাায়ে ২০৫ টাকায় পৌঁছায়। ১৪ মাসের কিছু বেশি সময়ে এর দর বেড়েছে ১২৫৭ শতাংশেরও বেশি। শুধু এই একটি কোম্পানিই নয়, সব বীমা কোম্পানিরই দর বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এগুলোর সঙ্গে কিছু জাঙ্ক কোম্পানিও রয়েছে যাদের দর বেড়েছে হু হু করে।

সব দেশের পুঁজিবাজারেই কমবেশি কারসাজির ঘটনা ঘটে। বাজার চাঙা হলে কারসাজি বেড়ে যায়। ছোট মূলধনি কোম্পানি নিয়েই বেশি কারসাজি হয়। বীমা খাতসহ কিছু কিছু কোম্পানিতে যে কারসাজি হচ্ছে সেটা বিশেষজ্ঞরা যেমন বলছেন, সাধারণ মানুষও তেমন বুঝতে পারছে। প্রশ্ন হচ্ছে কারসাজি বন্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা স্টক এক্সচেঞ্জগুলো কী করছে।

পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে বিএসইসির অঙ্গীকার রয়েছে। কমিশনের বর্তমান নেতৃত্ব বেশ কিছু ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে। যে কারণে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তুঙ্গে পৌঁছেছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে হলে কমিশনকে সব ধরনের কারসাজি কঠোরভাবে দমন করতে হবে। বিএসইসি দাবি করে, তাদের নজরদারি ব্যবস্থা অতীতের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত। আমরা জানতে চাইব, তাদের সার্ভিল্যান্স বিভাগ কোন কারসাজি ধরতে পারছে কিনা। ধরতে পারলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে কিনা।

২০১০ সালের ধসে বহু মানুষ নিঃস্ব হয়েছে। সর্বস্ব হারানোদের কেউ কেউ আত্মহত্যাও করেছে। কিন্তু সেই ধসের নেপথ্যের কারিগরদের বিচার হয়নি। আমরা চাই না, কমিশনের কোন দুর্বলতায় পুঁজিবাজারে আবারও কোন বিপর্যয় দেখা দিক। সেজন্য যেকোন মূল্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাজারের সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষ যথাযথভাবে আইনকানুন মেনে চলছে কি না সেটা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। কেউ আইনের ব্যত্যয় ঘটালে, কোন কারসাজি করলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজার যেন হরিলুটের আড্ডাখানায় পরিণত না হয় সে বিষয়ে এখনি সতর্ক হতে হবে। স্বার্থান্বেষী কিছু লোকের জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক, পুঁজিবাজর মুখ থুবড়ে পড়ুক সেটা আমরা চাই না।

শনিবার, ১২ জুন ২০২১ , ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৩০ শাওয়াল ১৪৪২

পুঁজিবাজারে কারসাজি বন্ধে বিএসইসিকে কঠোর হতে হবে

নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে দেশের পুঁজিবাজার। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এক পর্যাায়ে ৬ হাজার ১১৩ পয়েন্টে পৌঁছায়। দিন শেষে সূচক ৬ হাজার ৬৬ দশমিক ৬৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে, যা গত ৪০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সূচকের সঙ্গে সঙ্গে লেনদেনও বেড়েছে। গত রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকার বেশি। ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বরের পর এটাই সর্বোচ্চ লেনদেন। ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বরে প্রায় ২ হাজার ৭১১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।

২০১০ সালের ভয়াবহ ধসের পর পুঁজিবাজার আবার চাঙা হয়েছে। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নেতৃত্বে (বিএসইসি) পরিবর্তন এসেছে। তারল্য সংকট নেই। ছোট-বড় বিনিয়োগকারীরা বাজারে ভিড় করছেন। কালোটাকা ঢুকেছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে। কাজেই পুঁজিবাজার বাড়ছে, সূচক আর লেনদেনে হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। এমন বাজারই দীর্ঘদিন ধরে সবাই প্রত্যাশা করে আসছেন। তবে পুঁজিবাজারের কিছু কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। দর এতটাই বেড়েছে যে এসব কোম্পানির মালিক-ব্যবস্থাপকদের চোখই ছানাবড়া হয়ে গেছে। তারা বলছেন, ‘আমরা এমন কোন সোনার খনি, রূপার খনি বা হীরার খনি পাই নাই, যে আমাদের শেয়ারদর এমন বাড়ছে।’

প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেছেন এই কথা। কারণ এক বছর আগেও বিমা কোম্পানিটির শেয়ারের দাম গত বছর ১৮ মার্চ ১৬.৩০ টাকা পর্যন্ত নেমেছিল। চলতি বছর ৩১ মে এর দর একপর্যাায়ে ২০৫ টাকায় পৌঁছায়। ১৪ মাসের কিছু বেশি সময়ে এর দর বেড়েছে ১২৫৭ শতাংশেরও বেশি। শুধু এই একটি কোম্পানিই নয়, সব বীমা কোম্পানিরই দর বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এগুলোর সঙ্গে কিছু জাঙ্ক কোম্পানিও রয়েছে যাদের দর বেড়েছে হু হু করে।

সব দেশের পুঁজিবাজারেই কমবেশি কারসাজির ঘটনা ঘটে। বাজার চাঙা হলে কারসাজি বেড়ে যায়। ছোট মূলধনি কোম্পানি নিয়েই বেশি কারসাজি হয়। বীমা খাতসহ কিছু কিছু কোম্পানিতে যে কারসাজি হচ্ছে সেটা বিশেষজ্ঞরা যেমন বলছেন, সাধারণ মানুষও তেমন বুঝতে পারছে। প্রশ্ন হচ্ছে কারসাজি বন্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা স্টক এক্সচেঞ্জগুলো কী করছে।

পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে বিএসইসির অঙ্গীকার রয়েছে। কমিশনের বর্তমান নেতৃত্ব বেশ কিছু ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে। যে কারণে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তুঙ্গে পৌঁছেছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে হলে কমিশনকে সব ধরনের কারসাজি কঠোরভাবে দমন করতে হবে। বিএসইসি দাবি করে, তাদের নজরদারি ব্যবস্থা অতীতের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত। আমরা জানতে চাইব, তাদের সার্ভিল্যান্স বিভাগ কোন কারসাজি ধরতে পারছে কিনা। ধরতে পারলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে কিনা।

২০১০ সালের ধসে বহু মানুষ নিঃস্ব হয়েছে। সর্বস্ব হারানোদের কেউ কেউ আত্মহত্যাও করেছে। কিন্তু সেই ধসের নেপথ্যের কারিগরদের বিচার হয়নি। আমরা চাই না, কমিশনের কোন দুর্বলতায় পুঁজিবাজারে আবারও কোন বিপর্যয় দেখা দিক। সেজন্য যেকোন মূল্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাজারের সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষ যথাযথভাবে আইনকানুন মেনে চলছে কি না সেটা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। কেউ আইনের ব্যত্যয় ঘটালে, কোন কারসাজি করলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজার যেন হরিলুটের আড্ডাখানায় পরিণত না হয় সে বিষয়ে এখনি সতর্ক হতে হবে। স্বার্থান্বেষী কিছু লোকের জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক, পুঁজিবাজর মুখ থুবড়ে পড়ুক সেটা আমরা চাই না।