ঢাকার বাসযোগ্যতার আরেকটি করুণ চিত্র

রাজধানী ঢাকার বাসযোগ্যতার আরেকটি করুণ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক প্রতিবেদনে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির ‘বিশ্ব বাসযোগ্যতার সূচক-২০২১’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে ১৪০টি দেশের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৩৭তম। তালিকার নিচের দিক থেকে অবস্থান চুতর্থ। প্রতিবেদনে বসবাসের যোগ্য শহর বিবেচনায় স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং অবকাঠামো-এ পাঁচটি বিষয়কে মানদ- হিসেবে ধরা হয়েছে। খবরটি রাজধানীবাসীর জন্য সুখকর নয়।

বাসযোগ্যতার দিক থেকে রাজধানী ঢাকার অবস্থান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছাকাছি। দেশে যুদ্ধাবস্থা চলছে না, আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা থাকলেও উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের বড় সমস্যা সাম্প্রতিককালে মোকাবিলা করতে হয়নি। তারপরও ঢাকা মহানগরীর অবস্থান ১৩৭তম!

রাজধানী ঢাকা কতটা বাসযোগ্য সেটা জানার জন্য কোন গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না। রাজধানীবাসী বহু বছর ধরেই সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। যানজট, দূষণ, জলাবদ্ধতাসহ নানান সংকটে নাগরিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামোর প্রশ্নেও তাদেরকে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। সমস্যগুলো সমাধানের কোন লক্ষণ নেই। বরং এসব সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নিত্য-নতুন সমস্যা।

স্বাস্থ্যসেবায় রুগ্ণদশা চলছে বহুকাল ধরেই। রাজধানীবাসীকে যেমন, রাজধানীর বাইরে থেকে আসা মানুষকেও তেমন স্বাস্থ্যসেবা পেতে পদে পদে ভোগান্তি আর হয়রানির শিকার হতে হয়। মহামারী করোনার সময় স্বাস্থ্য খাতের করুণ দশা আরও স্পষ্ট হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজানোর কার্যকর কোন উদ্যোগ চোখে পড়ে না। শিক্ষা খাতে চলছে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা। ওয়াকিবহাল মহল মাত্রাই এসব অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কথা জানেন।

রাজধানীর বায়ুদূষণের লাগাম টানা যাচ্ছে না কিছুতেই। গত বছর লকডাউনের সময় দূষণ ৪০ ভাগ কমেছিল। দূষণ এখন ফিরে গেছে আগের অবস্থায়। একটি নগরীতে সবুজ এলাকা থাকার কথা ২৫ ভাগ, ঢাকায় আছে মাত্র ১০ ভাগ।

যেসব অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কারণে রাজধানী বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে সেগুলো যদি বন্ধ করা না হয় তাহলে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে না। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া না হলে ভবিষ্যতের গবেষণাতেও ঢাকার অবস্থান তলানিতেই থাকবে। বসবাসযোগ্যতার সূচকে উন্নতি ঘটাতে হলে পরিবেশ দূষণ রোধ করতে হবে, অবকাঠামোর উন্নয় ঘটাতে হবে, বন্ধ করতে হবে অপরিকল্পিত নগরায়ণ। এখানে জমির তুলনায় বসবাসকারী মানুষের সংখ্য ঢের বেশি। ঢাকার ওপর থেকে মানুষের বিপুল চাপ কমাতে বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই।

স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতিতে ঘটাতে হবে ইতিবাচক পরিবর্তন। শুধু অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করে সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলেও লক্ষ্যযোগ্য উন্নতি করা সম্ভব হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

আগামী প্রজন্মের জন্য ঢাকাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হলে সরকারকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

শনিবার, ১২ জুন ২০২১ , ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৩০ শাওয়াল ১৪৪২

ঢাকার বাসযোগ্যতার আরেকটি করুণ চিত্র

রাজধানী ঢাকার বাসযোগ্যতার আরেকটি করুণ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক প্রতিবেদনে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির ‘বিশ্ব বাসযোগ্যতার সূচক-২০২১’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে ১৪০টি দেশের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৩৭তম। তালিকার নিচের দিক থেকে অবস্থান চুতর্থ। প্রতিবেদনে বসবাসের যোগ্য শহর বিবেচনায় স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং অবকাঠামো-এ পাঁচটি বিষয়কে মানদ- হিসেবে ধরা হয়েছে। খবরটি রাজধানীবাসীর জন্য সুখকর নয়।

বাসযোগ্যতার দিক থেকে রাজধানী ঢাকার অবস্থান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছাকাছি। দেশে যুদ্ধাবস্থা চলছে না, আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা থাকলেও উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের বড় সমস্যা সাম্প্রতিককালে মোকাবিলা করতে হয়নি। তারপরও ঢাকা মহানগরীর অবস্থান ১৩৭তম!

রাজধানী ঢাকা কতটা বাসযোগ্য সেটা জানার জন্য কোন গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না। রাজধানীবাসী বহু বছর ধরেই সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। যানজট, দূষণ, জলাবদ্ধতাসহ নানান সংকটে নাগরিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামোর প্রশ্নেও তাদেরকে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। সমস্যগুলো সমাধানের কোন লক্ষণ নেই। বরং এসব সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নিত্য-নতুন সমস্যা।

স্বাস্থ্যসেবায় রুগ্ণদশা চলছে বহুকাল ধরেই। রাজধানীবাসীকে যেমন, রাজধানীর বাইরে থেকে আসা মানুষকেও তেমন স্বাস্থ্যসেবা পেতে পদে পদে ভোগান্তি আর হয়রানির শিকার হতে হয়। মহামারী করোনার সময় স্বাস্থ্য খাতের করুণ দশা আরও স্পষ্ট হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজানোর কার্যকর কোন উদ্যোগ চোখে পড়ে না। শিক্ষা খাতে চলছে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা। ওয়াকিবহাল মহল মাত্রাই এসব অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কথা জানেন।

রাজধানীর বায়ুদূষণের লাগাম টানা যাচ্ছে না কিছুতেই। গত বছর লকডাউনের সময় দূষণ ৪০ ভাগ কমেছিল। দূষণ এখন ফিরে গেছে আগের অবস্থায়। একটি নগরীতে সবুজ এলাকা থাকার কথা ২৫ ভাগ, ঢাকায় আছে মাত্র ১০ ভাগ।

যেসব অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কারণে রাজধানী বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে সেগুলো যদি বন্ধ করা না হয় তাহলে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে না। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া না হলে ভবিষ্যতের গবেষণাতেও ঢাকার অবস্থান তলানিতেই থাকবে। বসবাসযোগ্যতার সূচকে উন্নতি ঘটাতে হলে পরিবেশ দূষণ রোধ করতে হবে, অবকাঠামোর উন্নয় ঘটাতে হবে, বন্ধ করতে হবে অপরিকল্পিত নগরায়ণ। এখানে জমির তুলনায় বসবাসকারী মানুষের সংখ্য ঢের বেশি। ঢাকার ওপর থেকে মানুষের বিপুল চাপ কমাতে বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই।

স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতিতে ঘটাতে হবে ইতিবাচক পরিবর্তন। শুধু অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করে সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলেও লক্ষ্যযোগ্য উন্নতি করা সম্ভব হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

আগামী প্রজন্মের জন্য ঢাকাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হলে সরকারকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।