স্বাস্থ্য খাতে কোন দুর্নীতি হয়নি স্বাস্থ্যমন্ত্রী

সিনোফার্মের টিকা কিনতে চীনের সঙ্গে ক্রয় চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

স্বাস্থ্য খাতের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে কোন জায়গায় হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে বা দুর্নীতি হয়েছে এরকম কোন তথ্য কেউ দেখাতে পারবে? কেউ এমন তথ্য দিতে পারবে না বরং অন্য অনেক খাতের কোটি টাকা কানাডায় চলে গেছে। তিনি দাবি করেন, স্বাস্থ্য খাতে কোন দুর্নীতির ঘটনা ঘটেনি।

গতকাল করোনাযুদ্ধে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহমুদ মনোয়ারের ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে এক শোকসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এর আগে ভ্যাকসিনের দাম প্রকাশ হওয়ায় আমাদের সমস্যা হয়েছে। এজন্য চুক্তি অনুযায়ী কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে।’ গত ২৯ মে অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিটির সভায় সিনোফার্মের কাছ থেকে ভ্যাকসিন কেনার সিদ্ধান্ত হয়। দেশে টিকা কার্যক্রম শুরু হয় ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে। সরকার সিরামের কাছ থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকা কিনতে চুক্তি করে। প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে টিকা দেয়ার চুক্তি করেও সিরাম এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে দিয়েছে মাত্র ৭০ লাখ টিকা। এর বাইরে উপহার হিসেবে এসেছে আরও ৩৩ লাখ টিকা।

ভারত টিকা রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়ায় দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। এরপর চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে টিকা কিনতে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ। পরে চীন বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে ৫ লাখ টিকা পাঠায়। যা দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে টিকা দেয়া শুরু করেছে সরকার।

স্বাস্থ্য খাতের কোথায় দুর্নীতি হয়েছে এমন প্রশ্ন করে মন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি টিআইবি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে। এটা খুবই দুঃখজনক। করোনা প্রতিরোধে বিশ্বের সব দেশ বা সংস্থা প্রশংসা করেছে বাংলাদেশের। বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। তিনি বলেন, টিআইবি ঘরে বসে একটি সুন্দর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আমরা করোনা শনাক্ত করতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করিনি এমন মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছে। অথচ করোনা শনাক্তে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে কোন দুর্নীতির ঘটনা ঘটেনি।

এর আগে গত মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে করোনা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সুশাসনে ঘাটতি থাকার কথা উল্লেখ করে টিআইবি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। একইসঙ্গে করোনা মোকাবিলায় আগামী দিনের জন্য ১৯টি সুপারিশ তুলে ধরে সংস্থাটি।

জাহিদ মালেক বলেন, তারা (টিআইবি) বলছে রোগীদের জন্য আমরা কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা করিনি। অথচ সারাদেশে ১৫ হাজার বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে শুধুমাত্র করোনা চিকিৎসার জন্য। যে কারণে ভারতের মতো এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এখনও অনেক দেশ যথাযথভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও লকডাউন চলমান।

তিনি আরও বলেন, টিকা ক্রয়ে সততা ছিল না বলে দাবি করছে টিআইবি। কিন্তু আমরা তাদের সঙ্গে স্পষ্ট চুক্তির মাধ্যমে টিকা ক্রয় করেছি। টাকাতে টিকা ক্রয় করা হয়েছে, এজন্য তাদের কত টাকা দিতে হবে সব বিস্তারিত ছিল।

মন্ত্রী বলেন, করোনার মধ্যে আইসিইউ বাড়াতে পারিনি বলে টিআইবি যে দাবি করছে এটা সঠিক নয়। গত বছর যেখানে তিন থেকে চারশ’টি আইসিইউ ছিল, সেখানে এখন ১ হাজারের বেশি আইসিইউর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, এটা শুধুমাত্র জনগণের কাছে ভুল তথ্য দেয়ার জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। করোনার জন্য যে সরঞ্জাম কেনা হয়েছে, তার ব্যবহার করা হয়নি। অথচ আমরা সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে সরঞ্জাম পৌঁছে দিয়েছি। এমন মিথ্যাচার আমরা গ্রহণ করি না। উপস্থাপনায় অসচ্ছতা ছিল এমন অভিযোগ করলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, আমাদের টিকা ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ছিল। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে করোনায় সামনের সারির যোদ্ধাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়া হয়েছে। অনেক অভিযোগ করা হয়েছে যা মোটেও গ্রহণযোগ্য না।

বসুন্ধরার আইসোলেশন সেন্টার নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওটা চালু হলেও ছয় মাসে ছয়টা রোগী হয়েছে। এর পেছনে লাখ লাখ টাকা ভাড়া দেয়ার কারণে সবার সঙ্গে আলোচনা করে আইসোলেশন সেন্টার থেকে সরঞ্জাম বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

রবিবার, ১৩ জুন ২০২১ , ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৩১ রজব ১৪৪২

স্বাস্থ্য খাতে কোন দুর্নীতি হয়নি স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সিনোফার্মের টিকা কিনতে চীনের সঙ্গে ক্রয় চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

স্বাস্থ্য খাতের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে কোন জায়গায় হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে বা দুর্নীতি হয়েছে এরকম কোন তথ্য কেউ দেখাতে পারবে? কেউ এমন তথ্য দিতে পারবে না বরং অন্য অনেক খাতের কোটি টাকা কানাডায় চলে গেছে। তিনি দাবি করেন, স্বাস্থ্য খাতে কোন দুর্নীতির ঘটনা ঘটেনি।

গতকাল করোনাযুদ্ধে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহমুদ মনোয়ারের ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে এক শোকসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এর আগে ভ্যাকসিনের দাম প্রকাশ হওয়ায় আমাদের সমস্যা হয়েছে। এজন্য চুক্তি অনুযায়ী কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে।’ গত ২৯ মে অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিটির সভায় সিনোফার্মের কাছ থেকে ভ্যাকসিন কেনার সিদ্ধান্ত হয়। দেশে টিকা কার্যক্রম শুরু হয় ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে। সরকার সিরামের কাছ থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকা কিনতে চুক্তি করে। প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে টিকা দেয়ার চুক্তি করেও সিরাম এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে দিয়েছে মাত্র ৭০ লাখ টিকা। এর বাইরে উপহার হিসেবে এসেছে আরও ৩৩ লাখ টিকা।

ভারত টিকা রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়ায় দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। এরপর চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে টিকা কিনতে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ। পরে চীন বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে ৫ লাখ টিকা পাঠায়। যা দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে টিকা দেয়া শুরু করেছে সরকার।

স্বাস্থ্য খাতের কোথায় দুর্নীতি হয়েছে এমন প্রশ্ন করে মন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি টিআইবি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে। এটা খুবই দুঃখজনক। করোনা প্রতিরোধে বিশ্বের সব দেশ বা সংস্থা প্রশংসা করেছে বাংলাদেশের। বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। তিনি বলেন, টিআইবি ঘরে বসে একটি সুন্দর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আমরা করোনা শনাক্ত করতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করিনি এমন মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছে। অথচ করোনা শনাক্তে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে কোন দুর্নীতির ঘটনা ঘটেনি।

এর আগে গত মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে করোনা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সুশাসনে ঘাটতি থাকার কথা উল্লেখ করে টিআইবি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। একইসঙ্গে করোনা মোকাবিলায় আগামী দিনের জন্য ১৯টি সুপারিশ তুলে ধরে সংস্থাটি।

জাহিদ মালেক বলেন, তারা (টিআইবি) বলছে রোগীদের জন্য আমরা কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা করিনি। অথচ সারাদেশে ১৫ হাজার বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে শুধুমাত্র করোনা চিকিৎসার জন্য। যে কারণে ভারতের মতো এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এখনও অনেক দেশ যথাযথভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও লকডাউন চলমান।

তিনি আরও বলেন, টিকা ক্রয়ে সততা ছিল না বলে দাবি করছে টিআইবি। কিন্তু আমরা তাদের সঙ্গে স্পষ্ট চুক্তির মাধ্যমে টিকা ক্রয় করেছি। টাকাতে টিকা ক্রয় করা হয়েছে, এজন্য তাদের কত টাকা দিতে হবে সব বিস্তারিত ছিল।

মন্ত্রী বলেন, করোনার মধ্যে আইসিইউ বাড়াতে পারিনি বলে টিআইবি যে দাবি করছে এটা সঠিক নয়। গত বছর যেখানে তিন থেকে চারশ’টি আইসিইউ ছিল, সেখানে এখন ১ হাজারের বেশি আইসিইউর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, এটা শুধুমাত্র জনগণের কাছে ভুল তথ্য দেয়ার জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। করোনার জন্য যে সরঞ্জাম কেনা হয়েছে, তার ব্যবহার করা হয়নি। অথচ আমরা সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে সরঞ্জাম পৌঁছে দিয়েছি। এমন মিথ্যাচার আমরা গ্রহণ করি না। উপস্থাপনায় অসচ্ছতা ছিল এমন অভিযোগ করলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, আমাদের টিকা ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ছিল। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে করোনায় সামনের সারির যোদ্ধাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়া হয়েছে। অনেক অভিযোগ করা হয়েছে যা মোটেও গ্রহণযোগ্য না।

বসুন্ধরার আইসোলেশন সেন্টার নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওটা চালু হলেও ছয় মাসে ছয়টা রোগী হয়েছে। এর পেছনে লাখ লাখ টাকা ভাড়া দেয়ার কারণে সবার সঙ্গে আলোচনা করে আইসোলেশন সেন্টার থেকে সরঞ্জাম বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।