পরিবার পরিকল্পনায় মন দিন, অন্যথায় ফল ভুগতেই হবে! আসামের অভিবাসী মুসলিমদের কথা সরাসরি উল্লেখ করে তাদের পরিবার পরিকল্পনার নিয়ম-কানুন মেনে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার ওপর জোর দিতে বলেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
মধ্য ও নিম্ন আসামের বাংলাভাষী মুসলিমদের বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ধরা হয়, বরাবরের মতো আসামের সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপির অন্যতম ইস্যু ছিল বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে। আসামের আনুমানিক ৩.১২ কোটি ৩১ শতাংশই অভিবাসী মুসলিম। মোট ১২৬টি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে আসাম রাজ্য। এর মধ্যে মুসলিমরা ৩৫টিতে ফলাফল নির্ধারণী শক্তি বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।
এসব অভিবাসী মুসলিমদের জন্মনিয়ন্ত্রণ, পরিবার-পরিকল্পনা মেনে চললে জমি দখলের মতো ‘সামাজিক সংকট’ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, গত বিধানসভা অধিবেশনে আমরা ইতোমধ্যে একটি জনসংখ্যা নীতি কার্যকর করেছি। কিন্তু আমাদের জনসংখ্যার বোঝা কমাতে বিশেষ করে সংখ্যালঘু মুসলিমদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। তিনি বলেন, গরিবী, জমি দখলের মতো সামাজিক সমস্যার শিকড় রয়েছে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের মধ্যে। জনসংখ্যার রাশ টেনে ধরতে পারলে আনেক সামাজিক সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। অভিবাসী মুসলিমরা একটা ভদ্র পরিবার। তাই রীতি মেনে চলুন। তাদের কাছে এটা আমার আবেদন। জঙ্গল, মন্দির, সত্র ভূমি (আসামে মঠের জমি) দখল কোন মতেই মেনে নেয়া যায় না বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত। আসামে বিজেপি সরকার গড়ার মুখ্যমন্ত্রিত্বের এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর গুয়াহাটিতে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জবরদখল নিয়ে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে মুসলিম শরণার্থীদের প্রতি এই বার্তা দেন হিমন্ত। তার দাবি, দারিদ্র্যতা দূরীকরণের জন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটতেই হবে। অন্য আর কোন রাস্তাই খোলা নেই। দারিদ্র্যতা, অশিক্ষা ও উপযুক্ত পরিবার-পরিকল্পনা না থাকার কারণেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। এজন্য সরকারের পক্ষে মহিলাদের আরও বেশি করে শিক্ষিত করে তুলতে হবে, যাতে এই ধরনের সমস্যার সমাধান সহজে করা যায়।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রাখতেই মাঠে বিজেপি সরকার। এদিকে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে বিজেপির অন্যতম ইস্যু ছিল অসমের মূল ও আদি জনজাতির সুরক্ষা করা। ভোটে জিতে ঠিক সেদিকেই নজর দিল রাজ্যের বিজেপি সরকার। হিমন্তর বক্তব্যের সূত্র ধরে এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। অন্যদিকে আসামের ১২৬টি বিধানসভা আসনের মধ্যে অন্তত ৩৫টিতে সংঘ্যালঘু ভোটও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। সেখানে হিমন্তর এই বক্তব্য রাজ্য-রাজনীতিতে যে ঝড় তুলবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মুখ্যমন্ত্রী এদিনের সংবাদ সম্মেলনে মূলত সব জবরদখলকারী এবং অনুপ্রবেশকারীদেরই উচ্ছেদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ঢোলপুর এলাকাতে যে শিবমন্দির আছে, সেই মন্দিরের প্রায় ১২০ বিঘা জমির জায়গা অনুপ্রবেশকারীরা জবরদখল করে নিয়েছিল বলে জানান তিনি। পুলিশ ইতোমধ্যে সেসব জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করেছে। রাজ্যজুড়ে জমি জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে অভিবাসী মুসলিমদের জন্মনিয়ন্ত্রণের আহ্বানে কংগ্রেসের তোপের মুখে পড়েন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। দলের মুখপাত্র ববিতা শর্মা শনিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানান, ‘একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এ ধরনের মন্তব্য কিছুতেই শোভা পায়না।’ তিনি বলেন, যদি মুখ্যমন্ত্রী এটা ভেবে শঙ্কিত হন যে, ‘জনবিস্ফোরণের ফলে তার বাড়ি অভিবাসীদের দখলে চলে যাবে, তাহলে বিজেপি সরকার ক্যা-বাস্তবায়ন করলে তখন কি আবস্থা হবে? তখনতো অভিবাসীরা ঝাঁকে ঝাঁকে আসবে। সংবাদ সম্মেলনে জনবিস্ফোরণ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী যে মন্তব করেছেন তা মোটেই সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বলার কথা নয়। বিবৃতিতে কংগ্রেস জানায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের তত্ত্ব¡াবধানে হওয়া সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছর ভারতের বেশিরভাগ রাজ্যেই মোট প্রজনন ক্ষমতা উল্লেখযগ্যহারে কমেছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আসামে ২০১৫ থেকে ২০২১-র এই পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কোন প্রশ্নই নেই। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তর এই মন্তব্যের সমালোচনা করে মিম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়েইসিও বলেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রের ব্যাপারে তার মন্তব্য দুঃখজনক।
রবিবার, ১৩ জুন ২০২১ , ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৩১ রজব ১৪৪২
দীপক মুখার্জী, কলকাতা
পরিবার পরিকল্পনায় মন দিন, অন্যথায় ফল ভুগতেই হবে! আসামের অভিবাসী মুসলিমদের কথা সরাসরি উল্লেখ করে তাদের পরিবার পরিকল্পনার নিয়ম-কানুন মেনে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার ওপর জোর দিতে বলেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
মধ্য ও নিম্ন আসামের বাংলাভাষী মুসলিমদের বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ধরা হয়, বরাবরের মতো আসামের সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপির অন্যতম ইস্যু ছিল বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে। আসামের আনুমানিক ৩.১২ কোটি ৩১ শতাংশই অভিবাসী মুসলিম। মোট ১২৬টি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে আসাম রাজ্য। এর মধ্যে মুসলিমরা ৩৫টিতে ফলাফল নির্ধারণী শক্তি বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।
এসব অভিবাসী মুসলিমদের জন্মনিয়ন্ত্রণ, পরিবার-পরিকল্পনা মেনে চললে জমি দখলের মতো ‘সামাজিক সংকট’ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, গত বিধানসভা অধিবেশনে আমরা ইতোমধ্যে একটি জনসংখ্যা নীতি কার্যকর করেছি। কিন্তু আমাদের জনসংখ্যার বোঝা কমাতে বিশেষ করে সংখ্যালঘু মুসলিমদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। তিনি বলেন, গরিবী, জমি দখলের মতো সামাজিক সমস্যার শিকড় রয়েছে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের মধ্যে। জনসংখ্যার রাশ টেনে ধরতে পারলে আনেক সামাজিক সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। অভিবাসী মুসলিমরা একটা ভদ্র পরিবার। তাই রীতি মেনে চলুন। তাদের কাছে এটা আমার আবেদন। জঙ্গল, মন্দির, সত্র ভূমি (আসামে মঠের জমি) দখল কোন মতেই মেনে নেয়া যায় না বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত। আসামে বিজেপি সরকার গড়ার মুখ্যমন্ত্রিত্বের এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর গুয়াহাটিতে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জবরদখল নিয়ে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে মুসলিম শরণার্থীদের প্রতি এই বার্তা দেন হিমন্ত। তার দাবি, দারিদ্র্যতা দূরীকরণের জন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটতেই হবে। অন্য আর কোন রাস্তাই খোলা নেই। দারিদ্র্যতা, অশিক্ষা ও উপযুক্ত পরিবার-পরিকল্পনা না থাকার কারণেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। এজন্য সরকারের পক্ষে মহিলাদের আরও বেশি করে শিক্ষিত করে তুলতে হবে, যাতে এই ধরনের সমস্যার সমাধান সহজে করা যায়।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রাখতেই মাঠে বিজেপি সরকার। এদিকে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে বিজেপির অন্যতম ইস্যু ছিল অসমের মূল ও আদি জনজাতির সুরক্ষা করা। ভোটে জিতে ঠিক সেদিকেই নজর দিল রাজ্যের বিজেপি সরকার। হিমন্তর বক্তব্যের সূত্র ধরে এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। অন্যদিকে আসামের ১২৬টি বিধানসভা আসনের মধ্যে অন্তত ৩৫টিতে সংঘ্যালঘু ভোটও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। সেখানে হিমন্তর এই বক্তব্য রাজ্য-রাজনীতিতে যে ঝড় তুলবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মুখ্যমন্ত্রী এদিনের সংবাদ সম্মেলনে মূলত সব জবরদখলকারী এবং অনুপ্রবেশকারীদেরই উচ্ছেদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ঢোলপুর এলাকাতে যে শিবমন্দির আছে, সেই মন্দিরের প্রায় ১২০ বিঘা জমির জায়গা অনুপ্রবেশকারীরা জবরদখল করে নিয়েছিল বলে জানান তিনি। পুলিশ ইতোমধ্যে সেসব জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করেছে। রাজ্যজুড়ে জমি জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে অভিবাসী মুসলিমদের জন্মনিয়ন্ত্রণের আহ্বানে কংগ্রেসের তোপের মুখে পড়েন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। দলের মুখপাত্র ববিতা শর্মা শনিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানান, ‘একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এ ধরনের মন্তব্য কিছুতেই শোভা পায়না।’ তিনি বলেন, যদি মুখ্যমন্ত্রী এটা ভেবে শঙ্কিত হন যে, ‘জনবিস্ফোরণের ফলে তার বাড়ি অভিবাসীদের দখলে চলে যাবে, তাহলে বিজেপি সরকার ক্যা-বাস্তবায়ন করলে তখন কি আবস্থা হবে? তখনতো অভিবাসীরা ঝাঁকে ঝাঁকে আসবে। সংবাদ সম্মেলনে জনবিস্ফোরণ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী যে মন্তব করেছেন তা মোটেই সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বলার কথা নয়। বিবৃতিতে কংগ্রেস জানায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের তত্ত্ব¡াবধানে হওয়া সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছর ভারতের বেশিরভাগ রাজ্যেই মোট প্রজনন ক্ষমতা উল্লেখযগ্যহারে কমেছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আসামে ২০১৫ থেকে ২০২১-র এই পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কোন প্রশ্নই নেই। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তর এই মন্তব্যের সমালোচনা করে মিম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়েইসিও বলেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রের ব্যাপারে তার মন্তব্য দুঃখজনক।