মুমূর্ষু মাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে এসে ফি বেশি নেয়ার প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতন

কিডনি রোগে আক্রান্ত মুমূর্ষু মাকে চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করতে এসে রোগী ভর্তি ফি ৩০ টাকার স্থলে ১শ’ টাকা জোর করে আদায় করার প্রতিবাদ করায় অসুস্থ মায়ের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দু’ভাইকে অমানুষিক নির্যাতন করে গুরতর আহত করেছে জরুরি বিভাগের কর্মচারী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক নওশাদ হোসেনের পুত্র উদয়ের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী বাহিনী। গুরতর আহত অবস্থায় দু’ভাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ অমানবিক ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার রাতে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তদন্ত কমিটি করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলাম। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। তারা দায়ীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচার দাবি করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত দুই শিক্ষার্থী জানান, তাদের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার কিশামত শেরপুর গ্রামে। দুই ভাইয়ের মধ্যে রাশেদ করিম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং বড় ভাই রেয়াজুল রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তাদের মা রহিমা বেগম কিডনি রোগী। সপ্তাহে তিনদিন তাকে হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে হয়। কিন্তু হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় শুক্রবার সন্ধ্যায় বাসা থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসে। এরপর ভর্তি করার জন্য জরুরি বিভাগে টিকিট নিতে গেলে কর্তব্যরত কর্মচারীকে ১শ’ টাকা দিলে সে টাকা ফেরত না দিয়ে বলে ১শ’ টাকা লাগবে। এ সময় তারা বলে রোগী ভর্তির জন্য টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা তাহলে কেন ১শ’ টাকা নিচ্ছেন। ১শ’ টাকা নিলে রশিদ দেন। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে কর্মচারী রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক নওশাদ হোসেনের ছেলে উদয় রাশেদকে গালে কয়েকটি থাপ্পর মারে। এ সময় জরুরি বিভাগে থাকা অন্য কর্মচারীরা একযোগে রাশেদের ওপর হামলা চালিয়ে কিল ঘুষি লাথি মারতে থাকে। এমন অবস্থায় বড় ভাই রেয়াজুল এগিয়ে আসলে দুই ভাইকে অমানুষিকভাবে মারধর করে আহত করা হয়। পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে উদয়। এরপর জরুরি বিভাগের একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকসহ হাসপাতালের কর্মকর্তারা তাদের উদ্ধার করে গুরতর আহত অবস্থায় তাদের হাসপাতালের ১৫ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন আহত দুই ভাই । আহত ভাই রাশেদ জানায়, তার হাত সম্ভবত ভেঙে গেছে, মাথাসহ সারা শরীরে প্রচ- ব্যথা সে আরও জানায়, তাকে নির্মমভাবে ১০/১৫ জন মিলে অমানুষিক নির্যাতন করেছে। সে দায়ীদের বিচার দাবি করেছে। অন্যদিকে অন্য ভাই রেয়াজুল জানায়, তার ভাইকে নিষ্ঠুর নির্যাতন করার সময় তাকে বাঁচাতে গেলে তাকেও কিল ঘুষি লাথি থাপ্পর মেরেছে অমানুষিকভাবে। সে কান দিয়ে কিছুই শুনতে পারছে না।

আহত দুই ভাই আরও জানায়, তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছে ওই কর্মচারী ও তার ক্যাডাররা ওয়ার্ডে এসেও তাদের হুমকি দিচ্ছে।

রবিবার, ১৩ জুন ২০২১ , ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৩১ রজব ১৪৪২

মুমূর্ষু মাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে এসে ফি বেশি নেয়ার প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর

কিডনি রোগে আক্রান্ত মুমূর্ষু মাকে চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করতে এসে রোগী ভর্তি ফি ৩০ টাকার স্থলে ১শ’ টাকা জোর করে আদায় করার প্রতিবাদ করায় অসুস্থ মায়ের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দু’ভাইকে অমানুষিক নির্যাতন করে গুরতর আহত করেছে জরুরি বিভাগের কর্মচারী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক নওশাদ হোসেনের পুত্র উদয়ের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী বাহিনী। গুরতর আহত অবস্থায় দু’ভাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ অমানবিক ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার রাতে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তদন্ত কমিটি করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলাম। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। তারা দায়ীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচার দাবি করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত দুই শিক্ষার্থী জানান, তাদের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার কিশামত শেরপুর গ্রামে। দুই ভাইয়ের মধ্যে রাশেদ করিম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং বড় ভাই রেয়াজুল রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তাদের মা রহিমা বেগম কিডনি রোগী। সপ্তাহে তিনদিন তাকে হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে হয়। কিন্তু হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় শুক্রবার সন্ধ্যায় বাসা থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসে। এরপর ভর্তি করার জন্য জরুরি বিভাগে টিকিট নিতে গেলে কর্তব্যরত কর্মচারীকে ১শ’ টাকা দিলে সে টাকা ফেরত না দিয়ে বলে ১শ’ টাকা লাগবে। এ সময় তারা বলে রোগী ভর্তির জন্য টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা তাহলে কেন ১শ’ টাকা নিচ্ছেন। ১শ’ টাকা নিলে রশিদ দেন। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে কর্মচারী রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক নওশাদ হোসেনের ছেলে উদয় রাশেদকে গালে কয়েকটি থাপ্পর মারে। এ সময় জরুরি বিভাগে থাকা অন্য কর্মচারীরা একযোগে রাশেদের ওপর হামলা চালিয়ে কিল ঘুষি লাথি মারতে থাকে। এমন অবস্থায় বড় ভাই রেয়াজুল এগিয়ে আসলে দুই ভাইকে অমানুষিকভাবে মারধর করে আহত করা হয়। পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে উদয়। এরপর জরুরি বিভাগের একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকসহ হাসপাতালের কর্মকর্তারা তাদের উদ্ধার করে গুরতর আহত অবস্থায় তাদের হাসপাতালের ১৫ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন আহত দুই ভাই । আহত ভাই রাশেদ জানায়, তার হাত সম্ভবত ভেঙে গেছে, মাথাসহ সারা শরীরে প্রচ- ব্যথা সে আরও জানায়, তাকে নির্মমভাবে ১০/১৫ জন মিলে অমানুষিক নির্যাতন করেছে। সে দায়ীদের বিচার দাবি করেছে। অন্যদিকে অন্য ভাই রেয়াজুল জানায়, তার ভাইকে নিষ্ঠুর নির্যাতন করার সময় তাকে বাঁচাতে গেলে তাকেও কিল ঘুষি লাথি থাপ্পর মেরেছে অমানুষিকভাবে। সে কান দিয়ে কিছুই শুনতে পারছে না।

আহত দুই ভাই আরও জানায়, তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছে ওই কর্মচারী ও তার ক্যাডাররা ওয়ার্ডে এসেও তাদের হুমকি দিচ্ছে।