শিশুশ্রম : শ্রম আর ঘামে শৈশব যেন চুরি না হয়

পরিবারের ছায়াতলে থাকবে, বিদ্যালয়ে আনন্দচিত্তে আগামীর পাঠ নেবে, ছুটে বেড়াবে খেলার মাঠে- শিশুমাত্রই এমন স্বপ্ন লালন করে। কিন্তু দেশের শিশুদের বড় একটি অংশের এই স্বপ্ন থেকে যায় অধরা। যে সময় তাদের বিদ্যালয়ে বা খেলার মাঠে থাকার কথা সে সময় তারা শ্রমে-ঘামে নিঃশেষ করছে শৈশব-কৈশর। পরিবারের অভাব-অনটনে করছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ।

‘মুজিব বর্ষের আহ্বান, শিশুশ্রমের অবসান’ জাতীয় প্রতিপাদ্য নিয়ে গত শনিবার পালিত হয়েছে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। একদিকে শিশুশ্রমের অবসানের আহ্বান জানানো হচ্ছে, আরেকদিকে শিশুশ্রম বেড়ে যাচ্ছে বলে খবর মিলছে। সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) শিশুশ্রমের ওপর একটি জরিপ করেছে। জরিপে দেখা গেছে, কাজ ছেড়ে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল এমন অনেক শিশু করোনাকালে পরিবারকে সহায়তা করতে আবার কাজে ফিরে গেছে।

দেশের অনেক শিশুকেই শৈশব বা কৈশোর পেরোনোর আগেই কোন না কোন কাজে যুক্ত হয়ে পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয়। এদের মধ্যে অনেকেই আবার ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের কাজ করে। একটি শিশুকে কেন কাজ করতে হয়? সাধারণত দরিদ্র পরিবারগুলো বাধ্য হয়ে তাদের শিশুকে কাজে পাঠায়। দারিদ্র্য বাড়লে শিশুশ্রমও বাড়ে। করোনা মহামারীর সময়ও এ কারণে শিশুশ্রম বেড়েছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিশুশ্রম বেড়ে যাওয়ার আরও একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ সুযোগে অস্বচ্ছল বা দরিদ্র পরিবার শিশুদের কাজে পাঠিয়ে আয়ের পথ খুঁজছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা অবশ্য মনে করছেন, বিদ্যালয় খুললে সমস্যা কেটে যাবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যখন আবার ক্লাস শুরু হবে তখন অনেক বাবা-মায়ের হয়তো তাদের সন্তানকে স্কুলে দেয়ার সক্ষমতা থাকবে না। সরকারি প্রণোদনা তাদের বিদ্যালয়ে ফেরানোর জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে। তাই শিশুশ্রম নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। দেরিতে হলেও হয়তো বিদ্যালয় একসময় খুলবে। কিন্তু করোনার সময় যারা যারা দরিদ্র হয়েছে তাদের দারিদ্র্য সহসা কাটবে বলে আশা করা যায় না।

দেশের কত শিশু দারিদ্রের কারণে কাজে যুক্ত হয়েছে সেটা নিয়ে জরিপ হওয়া দরকার। তাদের কত শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত সেটাও জানতে হবে। শিশু শ্রমিকদের একটি স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে হবে। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোকে অর্থিক প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে। করোনার অভিঘাত মোকাবিলা করে পরিবারগুলো যেন টিকে থাকতে পারে সেজন্য লম্বা সময়ের ত্রাণ দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পেত করোনাকালে তা যেন বন্ধ না হয় বা তাদের কাছে নির্দিষ্ট সময়ে সেটা পৌঁছায় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আমরা প্রতিটি শিশুর নিরাপদ ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি। শ্রম আর ঘামে তাদের শৈশব চুরি যাক সেটা আমরা চাই না। পরিবারের স্নেহ-মমতা, বিদ্যালয়ের আনন্দময় পাঠ আর খেলার মাঠের উদ্দামতা- সব শিশুর এই স্বপ্ন পূরণ হোক।

রবিবার, ১৩ জুন ২০২১ , ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৩১ রজব ১৪৪২

শিশুশ্রম : শ্রম আর ঘামে শৈশব যেন চুরি না হয়

পরিবারের ছায়াতলে থাকবে, বিদ্যালয়ে আনন্দচিত্তে আগামীর পাঠ নেবে, ছুটে বেড়াবে খেলার মাঠে- শিশুমাত্রই এমন স্বপ্ন লালন করে। কিন্তু দেশের শিশুদের বড় একটি অংশের এই স্বপ্ন থেকে যায় অধরা। যে সময় তাদের বিদ্যালয়ে বা খেলার মাঠে থাকার কথা সে সময় তারা শ্রমে-ঘামে নিঃশেষ করছে শৈশব-কৈশর। পরিবারের অভাব-অনটনে করছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ।

‘মুজিব বর্ষের আহ্বান, শিশুশ্রমের অবসান’ জাতীয় প্রতিপাদ্য নিয়ে গত শনিবার পালিত হয়েছে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। একদিকে শিশুশ্রমের অবসানের আহ্বান জানানো হচ্ছে, আরেকদিকে শিশুশ্রম বেড়ে যাচ্ছে বলে খবর মিলছে। সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) শিশুশ্রমের ওপর একটি জরিপ করেছে। জরিপে দেখা গেছে, কাজ ছেড়ে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল এমন অনেক শিশু করোনাকালে পরিবারকে সহায়তা করতে আবার কাজে ফিরে গেছে।

দেশের অনেক শিশুকেই শৈশব বা কৈশোর পেরোনোর আগেই কোন না কোন কাজে যুক্ত হয়ে পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয়। এদের মধ্যে অনেকেই আবার ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের কাজ করে। একটি শিশুকে কেন কাজ করতে হয়? সাধারণত দরিদ্র পরিবারগুলো বাধ্য হয়ে তাদের শিশুকে কাজে পাঠায়। দারিদ্র্য বাড়লে শিশুশ্রমও বাড়ে। করোনা মহামারীর সময়ও এ কারণে শিশুশ্রম বেড়েছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিশুশ্রম বেড়ে যাওয়ার আরও একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ সুযোগে অস্বচ্ছল বা দরিদ্র পরিবার শিশুদের কাজে পাঠিয়ে আয়ের পথ খুঁজছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা অবশ্য মনে করছেন, বিদ্যালয় খুললে সমস্যা কেটে যাবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যখন আবার ক্লাস শুরু হবে তখন অনেক বাবা-মায়ের হয়তো তাদের সন্তানকে স্কুলে দেয়ার সক্ষমতা থাকবে না। সরকারি প্রণোদনা তাদের বিদ্যালয়ে ফেরানোর জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে। তাই শিশুশ্রম নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। দেরিতে হলেও হয়তো বিদ্যালয় একসময় খুলবে। কিন্তু করোনার সময় যারা যারা দরিদ্র হয়েছে তাদের দারিদ্র্য সহসা কাটবে বলে আশা করা যায় না।

দেশের কত শিশু দারিদ্রের কারণে কাজে যুক্ত হয়েছে সেটা নিয়ে জরিপ হওয়া দরকার। তাদের কত শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত সেটাও জানতে হবে। শিশু শ্রমিকদের একটি স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে হবে। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোকে অর্থিক প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে। করোনার অভিঘাত মোকাবিলা করে পরিবারগুলো যেন টিকে থাকতে পারে সেজন্য লম্বা সময়ের ত্রাণ দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পেত করোনাকালে তা যেন বন্ধ না হয় বা তাদের কাছে নির্দিষ্ট সময়ে সেটা পৌঁছায় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আমরা প্রতিটি শিশুর নিরাপদ ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি। শ্রম আর ঘামে তাদের শৈশব চুরি যাক সেটা আমরা চাই না। পরিবারের স্নেহ-মমতা, বিদ্যালয়ের আনন্দময় পাঠ আর খেলার মাঠের উদ্দামতা- সব শিশুর এই স্বপ্ন পূরণ হোক।