সূর্যডিম

শ্যামল রুদ্র

পাহাড়ের মাটি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ জাপানিজ মিয়াজাকি বা সূর্য ডিম আম চাষের উপযোগী হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এর চাষাবাদ সম্ভব। বিশ্ব বাজারে এটি ‘রেড ম্যাংগো’ নামেও পরিচিত। খাগড়াছড়ির দুই চাষি বিশ্ববাজারে সবচেয়ে দামি ও পুষ্টিসমৃদ্ধ এ আমের বাগান করে বেশ সফল। অন্যান্য জাতের আম থেকে এটি ভিন্ন। দেখতে সুন্দর খেতে খুব মিষ্টি ও স্বাদে ১৫ গুণ বেশি। গড় ওজন প্রায় ৭০০ গ্রাম। খোদ পাহাড়েই এক হাজার টাকা কেজি বিক্রি হয় সূর্য ডিম আম। সে হিসাবে এক টন মিয়াজাকি আম ১০ লাখ টাকা! রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরে দাম আরও বেশি। পার্বত্যাঞ্চলে উৎপাদিত নতুন জাতের এই আম দেখতে আকর্ষনীয় মনোলোভা লালচে। খাগড়াছড়ির পরিচিত মুখ বাগান মালিক হ্লাশিমং চৌধুরী ও মংসেতু চৌধুরী জাপানের মিয়াজাকি অঞ্চলের এই জাতের আম বাগান করে সফল হয়েছেন। মহালছড়ির ধুমনিঘাট ও জেলাসদরের কমলছড়ি এলাকায় পাহাড়ি টিলা জমিতে তাদের আম বাগান। মিয়াজাকি প্রজাতির কলম চারা লাগিয়ে ভালো ফলন তুলেছেন তারা। গত বছর প্রথম ফল আসে। তবেএবার নতুন জাতের এই আম বিপণন করে ভালো পয়সা পেয়েছেন। দেখাদেখি অনেকেই বাগান করার উদ্যোগ নিয়েছেন। বাগানে হ্লাশিমং চৌধুরীর ১২০টি এবং মংসেতু চৌধুরীর ৫০টি আম গাছ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লাভজনক এ আমের বাগান ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ আছে পার্বত্যাঞ্চল জুড়ে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও সরকারি হর্টিকালচার সেন্টারগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করতে পারেন সূর্য ডিম বা মিয়াজাকি আমের কলম চারা। এতে পাহাড়ের খেটে খাওয়া গরিব জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবেন। বাণিজ্যিক সম্ভাবনা জাগবে পাহাড়জুড়ে।

জেলাসদরের কমলছড়ি ও মহালছড়ির ধুমনিঘাট পাহাড়ি ঢালু টিলা-উপত্যকায় লাগানো গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে রঙ্গিন নতুন জাতের এই আম। দৃষ্টিনন্দন বিদেশি জাতের আম দেখতে অনেকেই আসছেন বাগানে। সংবাদকর্মীসহ উৎসুক স্থানীয় জনতার ভিড়। পোকা মাকড়ের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে কিছু গাছে ব্যবহৃত হয়েছে ফ্রুুট ব্যাগিং পদ্ধতি। বাগানের যতœ নেয়ায় কোন কমতি নেই বাগান মালিকদের। তাদের হাত ধরেই

পার্বত্যাঞ্চলে মিয়াজাকি আমের প্রথম চাষ। সঠিক পরিচর্যা পাওয়া বাগানদুটোর উৎপাদিত আম অত্যন্ত গুণগত মান সম্পন্ন, বলছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, জাপানের মিয়াজাকি অঞ্চলে প্রথম চাষ হয় এ আমের। এলাকার নামানুসারে হয় “মিয়াজাকি ম্যাংগো”। বাংলাদেশ ও ভারতে সূর্য ডিম বা লাল আম বলা হয়। অন্যান্য জাতের চেয়ে এ আমের বাজার মূল্য ও পুষ্টিগুণ বেশি।

ভারতের ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রি খ্যাত মহারাষ্ট্রের পুনে থেকে ২০১৭ সালে মিয়াজাকি আমের মাতৃ চারা আনেন হ্লাশিমং চৌধুরী। পরে ১২০ টি কলম চারা করেন। চলতি মৌসুমে বাগানে ভালো ফলন হয়। কেজি ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। অন্যদিকে, মংসেতু চৌধুরী এক জাপানি বন্ধুর মাধ্যমে মাতৃজাত এনে আম বাগান করেন।

কৃষি বিজ্ঞানী ও বাগান মালিকদের ভাষ্যমতে, এ আমের বাজার মূল্য ও চাহিদা দিন দিন বাড়বে। এখানকার ক্ষুদ্র চাষিরাও এ জাতের আম গাছ লাগাতে আগ্রহী। সাশ্রয়ী মূল্যে কলম চারা সরবরাহে কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা দরকার। অবশ্য খাগড়াছড়ি হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার জানিয়েছেন, মিয়াজাকি আমের চাষ পাহাড়ে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মাতৃ চারা উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। ফলদ বাগানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের জীবন মান পাল্টাতে এ উদ্যোগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। পাহাড়ি কৃষির অর্থনীতিতে সম্ভাবনার নতুন দোয়ার খুলে যাবে তখন। হয়তো পাহাড়ের আম বিদেশেও রপ্তানি হবে।

রবিবার, ১৩ জুন ২০২১ , ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৩১ রজব ১৪৪২

সূর্যডিম

শ্যামল রুদ্র

image

পাহাড়ের মাটি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ জাপানিজ মিয়াজাকি বা সূর্য ডিম আম চাষের উপযোগী হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এর চাষাবাদ সম্ভব। বিশ্ব বাজারে এটি ‘রেড ম্যাংগো’ নামেও পরিচিত। খাগড়াছড়ির দুই চাষি বিশ্ববাজারে সবচেয়ে দামি ও পুষ্টিসমৃদ্ধ এ আমের বাগান করে বেশ সফল। অন্যান্য জাতের আম থেকে এটি ভিন্ন। দেখতে সুন্দর খেতে খুব মিষ্টি ও স্বাদে ১৫ গুণ বেশি। গড় ওজন প্রায় ৭০০ গ্রাম। খোদ পাহাড়েই এক হাজার টাকা কেজি বিক্রি হয় সূর্য ডিম আম। সে হিসাবে এক টন মিয়াজাকি আম ১০ লাখ টাকা! রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরে দাম আরও বেশি। পার্বত্যাঞ্চলে উৎপাদিত নতুন জাতের এই আম দেখতে আকর্ষনীয় মনোলোভা লালচে। খাগড়াছড়ির পরিচিত মুখ বাগান মালিক হ্লাশিমং চৌধুরী ও মংসেতু চৌধুরী জাপানের মিয়াজাকি অঞ্চলের এই জাতের আম বাগান করে সফল হয়েছেন। মহালছড়ির ধুমনিঘাট ও জেলাসদরের কমলছড়ি এলাকায় পাহাড়ি টিলা জমিতে তাদের আম বাগান। মিয়াজাকি প্রজাতির কলম চারা লাগিয়ে ভালো ফলন তুলেছেন তারা। গত বছর প্রথম ফল আসে। তবেএবার নতুন জাতের এই আম বিপণন করে ভালো পয়সা পেয়েছেন। দেখাদেখি অনেকেই বাগান করার উদ্যোগ নিয়েছেন। বাগানে হ্লাশিমং চৌধুরীর ১২০টি এবং মংসেতু চৌধুরীর ৫০টি আম গাছ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লাভজনক এ আমের বাগান ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ আছে পার্বত্যাঞ্চল জুড়ে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও সরকারি হর্টিকালচার সেন্টারগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করতে পারেন সূর্য ডিম বা মিয়াজাকি আমের কলম চারা। এতে পাহাড়ের খেটে খাওয়া গরিব জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবেন। বাণিজ্যিক সম্ভাবনা জাগবে পাহাড়জুড়ে।

জেলাসদরের কমলছড়ি ও মহালছড়ির ধুমনিঘাট পাহাড়ি ঢালু টিলা-উপত্যকায় লাগানো গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে রঙ্গিন নতুন জাতের এই আম। দৃষ্টিনন্দন বিদেশি জাতের আম দেখতে অনেকেই আসছেন বাগানে। সংবাদকর্মীসহ উৎসুক স্থানীয় জনতার ভিড়। পোকা মাকড়ের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে কিছু গাছে ব্যবহৃত হয়েছে ফ্রুুট ব্যাগিং পদ্ধতি। বাগানের যতœ নেয়ায় কোন কমতি নেই বাগান মালিকদের। তাদের হাত ধরেই

পার্বত্যাঞ্চলে মিয়াজাকি আমের প্রথম চাষ। সঠিক পরিচর্যা পাওয়া বাগানদুটোর উৎপাদিত আম অত্যন্ত গুণগত মান সম্পন্ন, বলছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, জাপানের মিয়াজাকি অঞ্চলে প্রথম চাষ হয় এ আমের। এলাকার নামানুসারে হয় “মিয়াজাকি ম্যাংগো”। বাংলাদেশ ও ভারতে সূর্য ডিম বা লাল আম বলা হয়। অন্যান্য জাতের চেয়ে এ আমের বাজার মূল্য ও পুষ্টিগুণ বেশি।

ভারতের ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রি খ্যাত মহারাষ্ট্রের পুনে থেকে ২০১৭ সালে মিয়াজাকি আমের মাতৃ চারা আনেন হ্লাশিমং চৌধুরী। পরে ১২০ টি কলম চারা করেন। চলতি মৌসুমে বাগানে ভালো ফলন হয়। কেজি ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। অন্যদিকে, মংসেতু চৌধুরী এক জাপানি বন্ধুর মাধ্যমে মাতৃজাত এনে আম বাগান করেন।

কৃষি বিজ্ঞানী ও বাগান মালিকদের ভাষ্যমতে, এ আমের বাজার মূল্য ও চাহিদা দিন দিন বাড়বে। এখানকার ক্ষুদ্র চাষিরাও এ জাতের আম গাছ লাগাতে আগ্রহী। সাশ্রয়ী মূল্যে কলম চারা সরবরাহে কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা দরকার। অবশ্য খাগড়াছড়ি হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার জানিয়েছেন, মিয়াজাকি আমের চাষ পাহাড়ে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মাতৃ চারা উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। ফলদ বাগানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের জীবন মান পাল্টাতে এ উদ্যোগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। পাহাড়ি কৃষির অর্থনীতিতে সম্ভাবনার নতুন দোয়ার খুলে যাবে তখন। হয়তো পাহাড়ের আম বিদেশেও রপ্তানি হবে।