পাবনা গণপূর্ত অফিসে মহড়াকারীদের অস্ত্র জব্দ

গণপূর্ত বিভাগে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা এআর খান মামুন ও যুবলীগ নেতা শেখ লালুর আগ্নেয়াস্ত্র দুটি গতকাল পাবনা সদর থানা পুলিশ জব্দ করেছে। এদিকে অস্ত্র নিয়ে মহড়ার ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

পাবনায় সরকারি দপ্তরে অস্ত্র হাতে প্রবেশ করার ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। অস্ত্র বৈধ হলেও জনমনে ভীতির সঞ্চার হতে পারে বা এমনভাবে অস্ত্র প্রদর্শনের সুযোগ না থাকায় অস্ত্র আইনের শর্ত ভঙ্গ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এদিকে এ ঘটনায় দলের মধ্যেও সমালোচনার ঝড় বইছে বলে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, টেন্ডারবাজ কয়েকজন ঠিকাদার নেতার কারণে গোটা দলকে সমালোচনার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে। টেন্ডারবাজ নেতাদের হাত থেকে দলকে মুক্ত করতে তারা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেছেন।

সদর থানার ওসি মো. নাছিম আহমেদ জানান, গত রোববার পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক হাজী ফারুক, পাবনা পৌর আওয়ামী লীগের স্থগিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এআর খান মামুন ও পাবনা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালুর নেতৃত্বে ২৫-৩০ জনের একটি দল কমান্ডো স্টাইলে শহরের ছাতিয়ানীতে অবস্থিত পাবনা গণপূর্ত অফিসে প্রবেশ করে। তারা নির্বাহী প্রকৌশলীর খোঁজ করেন। এরপর অফিসের অন্য এক প্রকৌশলীর টেবিলে অস্ত্র রেখে নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে প্রবশ করেন। এদের মধ্যে মামুনের হাতে একটি শটগান এবং শেখ লালুর হাতে আরেকটি অস্ত্র ছিল। ১২ জুন সিসিটিভি ফুটেজে ধারণ করা ভিডিওটি ভাইরাল হলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পুলিশ প্রশাসন নড়েচড়ে বসে।

পুলিশের পক্ষ থেকে পাবনা সদর থানায় ২টি জিডি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় পূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে কোন মামলা বা অভিযোগ করা হয়নি। নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম জানান, ঘটনার সময় আমি অফিসের বাইরে ছিলাম।

পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল রহিম লাল জানান, আওয়ামী লীগ কখনও অনৈতিক কোন কর্মকা- সমর্থন করে না, আর এটি দলীয় কোন ব্যাপার নয়।

পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, বিষয় সম্পর্কে তাকে জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রতিকার বা ব্যবস্থা নিতে বলা হয়নি।

এদিকে গণপূর্ত কার্যালয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে সরকারদলীয় কর্মীদের মহড়ায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে সরকারদলীয় কর্মীদের মহড়া সরকারের ঠিকাদারি ও নির্মাণ কাজে অবৈধ পেশিশক্তি ব্যবহারের একটি নগ্ন প্রকাশ। এ ঘটনাকে দেশের সরকারি ক্রয় ও নির্মাণকাজে বহুদিন ধরে প্রচলিত অবৈধ বলপ্রয়োগ, ভয়-ভীতির মাধ্যমে কাজ বাগিয়ে নেয়া এবং অস্ত্রের মুখে প্রতিযোগিতামূলক কাজ বণ্টন প্রভাবিত করার আরেকটি উদাহরণ।

গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি ক্রয়, নির্মাণকাজ এবং প্রাতিষ্ঠানিক নানা কাজে স্বচ্ছতার জন্য প্রতিযোগিতামূলক যে টেন্ডার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও স্বার্থান্বেষী মহলের অবৈধ বলপ্রয়োগ, হুমকি-ধমকি এবং জবরদখলে দীর্ঘদিন ধরেই তা অকার্যকর হয়ে আছে।

সোমবার, ১৪ জুন ২০২১ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২ জিলকদ ১৪৪২

পাবনা গণপূর্ত অফিসে মহড়াকারীদের অস্ত্র জব্দ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পাবনা

গণপূর্ত বিভাগে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা এআর খান মামুন ও যুবলীগ নেতা শেখ লালুর আগ্নেয়াস্ত্র দুটি গতকাল পাবনা সদর থানা পুলিশ জব্দ করেছে। এদিকে অস্ত্র নিয়ে মহড়ার ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

পাবনায় সরকারি দপ্তরে অস্ত্র হাতে প্রবেশ করার ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। অস্ত্র বৈধ হলেও জনমনে ভীতির সঞ্চার হতে পারে বা এমনভাবে অস্ত্র প্রদর্শনের সুযোগ না থাকায় অস্ত্র আইনের শর্ত ভঙ্গ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এদিকে এ ঘটনায় দলের মধ্যেও সমালোচনার ঝড় বইছে বলে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, টেন্ডারবাজ কয়েকজন ঠিকাদার নেতার কারণে গোটা দলকে সমালোচনার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে। টেন্ডারবাজ নেতাদের হাত থেকে দলকে মুক্ত করতে তারা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেছেন।

সদর থানার ওসি মো. নাছিম আহমেদ জানান, গত রোববার পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক হাজী ফারুক, পাবনা পৌর আওয়ামী লীগের স্থগিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এআর খান মামুন ও পাবনা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালুর নেতৃত্বে ২৫-৩০ জনের একটি দল কমান্ডো স্টাইলে শহরের ছাতিয়ানীতে অবস্থিত পাবনা গণপূর্ত অফিসে প্রবেশ করে। তারা নির্বাহী প্রকৌশলীর খোঁজ করেন। এরপর অফিসের অন্য এক প্রকৌশলীর টেবিলে অস্ত্র রেখে নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে প্রবশ করেন। এদের মধ্যে মামুনের হাতে একটি শটগান এবং শেখ লালুর হাতে আরেকটি অস্ত্র ছিল। ১২ জুন সিসিটিভি ফুটেজে ধারণ করা ভিডিওটি ভাইরাল হলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পুলিশ প্রশাসন নড়েচড়ে বসে।

পুলিশের পক্ষ থেকে পাবনা সদর থানায় ২টি জিডি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় পূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে কোন মামলা বা অভিযোগ করা হয়নি। নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম জানান, ঘটনার সময় আমি অফিসের বাইরে ছিলাম।

পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল রহিম লাল জানান, আওয়ামী লীগ কখনও অনৈতিক কোন কর্মকা- সমর্থন করে না, আর এটি দলীয় কোন ব্যাপার নয়।

পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, বিষয় সম্পর্কে তাকে জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রতিকার বা ব্যবস্থা নিতে বলা হয়নি।

এদিকে গণপূর্ত কার্যালয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে সরকারদলীয় কর্মীদের মহড়ায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে সরকারদলীয় কর্মীদের মহড়া সরকারের ঠিকাদারি ও নির্মাণ কাজে অবৈধ পেশিশক্তি ব্যবহারের একটি নগ্ন প্রকাশ। এ ঘটনাকে দেশের সরকারি ক্রয় ও নির্মাণকাজে বহুদিন ধরে প্রচলিত অবৈধ বলপ্রয়োগ, ভয়-ভীতির মাধ্যমে কাজ বাগিয়ে নেয়া এবং অস্ত্রের মুখে প্রতিযোগিতামূলক কাজ বণ্টন প্রভাবিত করার আরেকটি উদাহরণ।

গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি ক্রয়, নির্মাণকাজ এবং প্রাতিষ্ঠানিক নানা কাজে স্বচ্ছতার জন্য প্রতিযোগিতামূলক যে টেন্ডার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও স্বার্থান্বেষী মহলের অবৈধ বলপ্রয়োগ, হুমকি-ধমকি এবং জবরদখলে দীর্ঘদিন ধরেই তা অকার্যকর হয়ে আছে।