চট্টগ্রামে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ, আইনজীবী কারাগারে

চট্টগ্রামে এক তরুণীকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় এক আইনজীবীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন একটি আদালত। বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ উঠা এ আইনজীবীর নাম অ্যাডভোকেট পল্টন দাশ (৩২)। তিনি জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটার অ্যাডভোকেট বঙ্কিমচন্দ্র দাশের ছেলে। চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্তে শেষে অভিযোগটিকে এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। গত ৬ জুন এফআইআর রেকর্ড হওয়ার পর গত ১০ জুন বিকেলে অভিযুক্ত ওই আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে গত ১১ জুন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কোতোয়ালি থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, ওই আইনজীবীকে গত শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ডিএনএ টেস্টসহ সব অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে সবকিছু বলা যাবে।

জানা গেছে, পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে চলছে চরম বিরোধ। তারই সমাধান খুঁজতে এক আইনজীবীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন তরুণী বীথি (ছদ্মনাম)। অল্পদিনেই তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে দারুণ বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বের মোহে রাঙ্গুনিয়ায় ওই আইনজীবীর বাড়িতে গিয়েছিলেন বীথি। কিন্তু আইনজীবী বন্ধুকে বিশ্বাস করাটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বীথির জীবনে। বীথির অভিযোগ বেড়াতে নেয়ার নামে রাঙ্গুনিয়ায় নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে তাকে।

বীথির অভিযোগ, ধর্ষণের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে প্রেমের অভিনয় করতে থাকেন ওই আইনজীবী। এভাবে বিয়ের প্রলোভনে প্রায় বিভিন্ন হোটেলে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হতো বীথি ও ওই আইনজীবী। কিন্তু এক পর্যায়ে বীথি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে ভোল পাল্টে যায় আইনজীবীর। সবকিছুই অস্বীকার করতে শুরু করেন তিনি।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৭ সালে অ্যডভোকেট পল্টন দাশের কাছে জমিজমা বিবাদ নিয়ে আইনি পরামর্শ নিতে গিয়েছিলেন বীথি। সেখান থেকেই তাদের পরিচয়ের শুরু। মাঝেমধ্যে কথা হতো। এর মাঝে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। ২০২০ এর ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে বীথির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করে অভিযুক্ত আইনজীবী অ্যাভোকেট পল্টন দাশ। এমনকি আইনজীবী সমিতির দোয়েল ভবনে তার আইন প্র্যাকটিসের চেম্বারে ডেকে এনেও বীথির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতেন অভিযুক্ত ওই আইনজীবী। কিন্তু বিয়ের কথা বললে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করেন তিনি। এক পর্যায়ে শুধু সম্পর্ক অস্বীকারই নয় বিভিন্ন মাধ্যমে বীথিকে গর্ভপাত করতে চাপ দেন তিনি। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর ছবি ছড়ানোর হুমকিও দেয়া হয় বীথিকে।

ভুক্তভোগী বীথি বলেন, আট মাসের গর্ভাবস্থায় সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আনন্দ নয় বরং সামাজিক অসম্মানসহ নানা হুমকিতে দিন কাটাচ্ছি আমি। শুরুতেই আমি এমন সম্পর্ক করতে অস্বীকৃতি জানালেও বিয়ের কথা বলে এক বছর ধরে আমাকে শারীরিক শোষণ করে পল্টন। গর্ভধারণের সাত মাস হয়ে গেলে আমি তার পরিবারেও জানাই। কেউ আমাকে আশ্বন্ত করেনি বরং অসম্মান ও বিভিন্ন হুমকি দিয়েছে। এরপর আমি আইনজীবী সমিতিতেও লিখিত অভিযোগ দেই। সেখানেও মীমাংসার পথে হাঁটেনি পল্টন। সে বারবারই আমাকে আইনজীবী হওয়ার দাপট দেখিয়েছে। সবসময় বলত, যাও মামলা কর আমি মামলাকে ভয় পাই না। আইনজীবীর বিরুদ্ধে অন্য কেউ মামলা নেবে না।

দফায় দফায় তাকে হুমকি দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বীথি বলেন, পল্টন আমাকে ও আমার পরিবারকে অনেকটা উন্মুক্তভাবেই হুমকি দিয়েছে। চট্টগ্রাম আদালতের তারিন নামের শিক্ষানবিশ আইনজীবী আমাকে ফোন করে হুমকি দেয়। আমার ব্যক্তিগত তথ্য পোস্টার করে পাঠানো হবে বলে জানিয়ে আমাকে কয়েক দফা হুমকি দেয় তারিন নামের ওই নারী।

রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ বীথির অভিযোগ আমলে নেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাকে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে হুমকি দিয়েছে পল্টন। অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে তারা আমার অভিযোগ নেয়নি। ওই এলাকার চেয়ারম্যানের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিলে তিনি ব্যক্তিগত পর্যায়ে সুরাহা করার চেষ্টা করে আমাকে আইনি আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেন।

সোমবার, ১৪ জুন ২০২১ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২ জিলকদ ১৪৪২

চট্টগ্রামে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ, আইনজীবী কারাগারে

চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামে এক তরুণীকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় এক আইনজীবীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন একটি আদালত। বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ উঠা এ আইনজীবীর নাম অ্যাডভোকেট পল্টন দাশ (৩২)। তিনি জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটার অ্যাডভোকেট বঙ্কিমচন্দ্র দাশের ছেলে। চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্তে শেষে অভিযোগটিকে এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। গত ৬ জুন এফআইআর রেকর্ড হওয়ার পর গত ১০ জুন বিকেলে অভিযুক্ত ওই আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে গত ১১ জুন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কোতোয়ালি থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, ওই আইনজীবীকে গত শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ডিএনএ টেস্টসহ সব অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে সবকিছু বলা যাবে।

জানা গেছে, পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে চলছে চরম বিরোধ। তারই সমাধান খুঁজতে এক আইনজীবীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন তরুণী বীথি (ছদ্মনাম)। অল্পদিনেই তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে দারুণ বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বের মোহে রাঙ্গুনিয়ায় ওই আইনজীবীর বাড়িতে গিয়েছিলেন বীথি। কিন্তু আইনজীবী বন্ধুকে বিশ্বাস করাটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বীথির জীবনে। বীথির অভিযোগ বেড়াতে নেয়ার নামে রাঙ্গুনিয়ায় নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে তাকে।

বীথির অভিযোগ, ধর্ষণের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে প্রেমের অভিনয় করতে থাকেন ওই আইনজীবী। এভাবে বিয়ের প্রলোভনে প্রায় বিভিন্ন হোটেলে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হতো বীথি ও ওই আইনজীবী। কিন্তু এক পর্যায়ে বীথি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে ভোল পাল্টে যায় আইনজীবীর। সবকিছুই অস্বীকার করতে শুরু করেন তিনি।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৭ সালে অ্যডভোকেট পল্টন দাশের কাছে জমিজমা বিবাদ নিয়ে আইনি পরামর্শ নিতে গিয়েছিলেন বীথি। সেখান থেকেই তাদের পরিচয়ের শুরু। মাঝেমধ্যে কথা হতো। এর মাঝে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। ২০২০ এর ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে বীথির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করে অভিযুক্ত আইনজীবী অ্যাভোকেট পল্টন দাশ। এমনকি আইনজীবী সমিতির দোয়েল ভবনে তার আইন প্র্যাকটিসের চেম্বারে ডেকে এনেও বীথির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতেন অভিযুক্ত ওই আইনজীবী। কিন্তু বিয়ের কথা বললে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করেন তিনি। এক পর্যায়ে শুধু সম্পর্ক অস্বীকারই নয় বিভিন্ন মাধ্যমে বীথিকে গর্ভপাত করতে চাপ দেন তিনি। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর ছবি ছড়ানোর হুমকিও দেয়া হয় বীথিকে।

ভুক্তভোগী বীথি বলেন, আট মাসের গর্ভাবস্থায় সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আনন্দ নয় বরং সামাজিক অসম্মানসহ নানা হুমকিতে দিন কাটাচ্ছি আমি। শুরুতেই আমি এমন সম্পর্ক করতে অস্বীকৃতি জানালেও বিয়ের কথা বলে এক বছর ধরে আমাকে শারীরিক শোষণ করে পল্টন। গর্ভধারণের সাত মাস হয়ে গেলে আমি তার পরিবারেও জানাই। কেউ আমাকে আশ্বন্ত করেনি বরং অসম্মান ও বিভিন্ন হুমকি দিয়েছে। এরপর আমি আইনজীবী সমিতিতেও লিখিত অভিযোগ দেই। সেখানেও মীমাংসার পথে হাঁটেনি পল্টন। সে বারবারই আমাকে আইনজীবী হওয়ার দাপট দেখিয়েছে। সবসময় বলত, যাও মামলা কর আমি মামলাকে ভয় পাই না। আইনজীবীর বিরুদ্ধে অন্য কেউ মামলা নেবে না।

দফায় দফায় তাকে হুমকি দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বীথি বলেন, পল্টন আমাকে ও আমার পরিবারকে অনেকটা উন্মুক্তভাবেই হুমকি দিয়েছে। চট্টগ্রাম আদালতের তারিন নামের শিক্ষানবিশ আইনজীবী আমাকে ফোন করে হুমকি দেয়। আমার ব্যক্তিগত তথ্য পোস্টার করে পাঠানো হবে বলে জানিয়ে আমাকে কয়েক দফা হুমকি দেয় তারিন নামের ওই নারী।

রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ বীথির অভিযোগ আমলে নেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাকে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে হুমকি দিয়েছে পল্টন। অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে তারা আমার অভিযোগ নেয়নি। ওই এলাকার চেয়ারম্যানের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিলে তিনি ব্যক্তিগত পর্যায়ে সুরাহা করার চেষ্টা করে আমাকে আইনি আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেন।