ক্ষুদ্র ও তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ঘাটতি

করোনা মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ক্ষুদ্র ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে অনেক ঘাটতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক। গতকাল সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও একশন এইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট : প্রেক্ষিত তরুণ জনগোষ্ঠী’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

একশন এইড বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ফারাহ কবিরের সভাপতিত্বে এই আলোচনায় সমাজ কল্যাণ ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে কয়েক কর্মকর্তাও অংশ নেন। আলোচনায় নাহিম রাজ্জাকের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে কৃষি খাতের তরুণ উদ্যোক্তা ফারজিন আলম ঋণ পেতে উদ্যোক্তাদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের বাজেটটা আমি ভালোভাবে ফলো করেছিলাম। বাজেটে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য যে প্যাকেজ ঘোষণা দেয়া হয়েছিল সেই সূত্র ধরে আমি প্রণোদনার জন্য আবেদন করেছিলাম। নিয়ম মেনে প্রণোদনার জন্য আবেদন করলাম। এরপর ব্যাংক এত শর্ত দিল, আমি কোনভাবে ওইসব শর্ত পূরণ করতে পারি নাই। শেষ পর্যন্ত তারা আমাকে কোন অর্থই দেয়নি। এ সময় আমার পরিচিত সরকারের লোকজনকে জানানোর পরও আমি পারিনি কিন্তু মহামারী মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্যাকেজ থেকে কোন অর্থ নিতে পারিনি।’

এটা সরকারের জন্য ব্যর্থতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্যাকেজে তরুণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কিন্তু আশ্চর্য্য হয়ে যাই কেন আমরা প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছি না।’

সরকারের এসব ভালো উদ্যোগ ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। নাহিম রাজ্জাক দক্ষ জনবল তৈরি, কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করা এবং তরুণ জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

সভায় সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে সরকার যেসব উদ্যোগ হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়নের সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা বাস্তবায়ন করতে না পারলে কোনভাবেই উদ্দেশ্য সফল হবে না।’ এজন্য তিনি সরকারের কাছে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করার পরামর্শ রাখেন।

একশন এইড বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ফারাহ কবির বলেন, ‘কোভিড-১৯’র এই দ্বিতীয় বাজেটেও আমরা সরকারকে প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রস্তাব করতে দেখলাম কিন্তু এই মহামারীতে যে নতুন করে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ যে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেল তাদের জন্য সরকার কী করছে তা নিয়ে বাজেটে কিছুই বলা হয়নি। এসব প্রান্তিক মানুষের জন্য সরকার কী উদ্যোগ নিচ্ছে তা আমরা জানতে চাই।’

সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়েমা হক বিদিশার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় এর আগে মূল প্রবন্ধে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা ফেলো ইশরাত শারমিন বলেন, ‘দেশে চলমান জনমিতিক সুবিধা আমরা সর্বোচ্চ ২০৪০ সাল পর্যন্ত পেতে পারি। এরপর তরুণদের আধিক্য কমে যাবে কিন্তু এই জনমিতিক সুবিধা গ্রহণের জন্য দক্ষ তরুণ সমাজ গড়ে তোলার জন্য যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়।’

মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, মহামারীর মধ্যে নতুন করে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর পরিবারের আয় কমে গেছে। তাদের জন্য সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে তা পরিষ্কার নয়। এতে শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল মাধ্যমে পড়াশোনার জন্য ডিভাইস ও ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

সোমবার, ১৪ জুন ২০২১ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২ জিলকদ ১৪৪২

করোনা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়

ক্ষুদ্র ও তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ঘাটতি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

করোনা মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ক্ষুদ্র ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে অনেক ঘাটতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক। গতকাল সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও একশন এইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট : প্রেক্ষিত তরুণ জনগোষ্ঠী’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

একশন এইড বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ফারাহ কবিরের সভাপতিত্বে এই আলোচনায় সমাজ কল্যাণ ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে কয়েক কর্মকর্তাও অংশ নেন। আলোচনায় নাহিম রাজ্জাকের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে কৃষি খাতের তরুণ উদ্যোক্তা ফারজিন আলম ঋণ পেতে উদ্যোক্তাদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের বাজেটটা আমি ভালোভাবে ফলো করেছিলাম। বাজেটে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য যে প্যাকেজ ঘোষণা দেয়া হয়েছিল সেই সূত্র ধরে আমি প্রণোদনার জন্য আবেদন করেছিলাম। নিয়ম মেনে প্রণোদনার জন্য আবেদন করলাম। এরপর ব্যাংক এত শর্ত দিল, আমি কোনভাবে ওইসব শর্ত পূরণ করতে পারি নাই। শেষ পর্যন্ত তারা আমাকে কোন অর্থই দেয়নি। এ সময় আমার পরিচিত সরকারের লোকজনকে জানানোর পরও আমি পারিনি কিন্তু মহামারী মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্যাকেজ থেকে কোন অর্থ নিতে পারিনি।’

এটা সরকারের জন্য ব্যর্থতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্যাকেজে তরুণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কিন্তু আশ্চর্য্য হয়ে যাই কেন আমরা প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছি না।’

সরকারের এসব ভালো উদ্যোগ ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। নাহিম রাজ্জাক দক্ষ জনবল তৈরি, কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করা এবং তরুণ জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

সভায় সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে সরকার যেসব উদ্যোগ হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়নের সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা বাস্তবায়ন করতে না পারলে কোনভাবেই উদ্দেশ্য সফল হবে না।’ এজন্য তিনি সরকারের কাছে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করার পরামর্শ রাখেন।

একশন এইড বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ফারাহ কবির বলেন, ‘কোভিড-১৯’র এই দ্বিতীয় বাজেটেও আমরা সরকারকে প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রস্তাব করতে দেখলাম কিন্তু এই মহামারীতে যে নতুন করে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ যে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেল তাদের জন্য সরকার কী করছে তা নিয়ে বাজেটে কিছুই বলা হয়নি। এসব প্রান্তিক মানুষের জন্য সরকার কী উদ্যোগ নিচ্ছে তা আমরা জানতে চাই।’

সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়েমা হক বিদিশার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় এর আগে মূল প্রবন্ধে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা ফেলো ইশরাত শারমিন বলেন, ‘দেশে চলমান জনমিতিক সুবিধা আমরা সর্বোচ্চ ২০৪০ সাল পর্যন্ত পেতে পারি। এরপর তরুণদের আধিক্য কমে যাবে কিন্তু এই জনমিতিক সুবিধা গ্রহণের জন্য দক্ষ তরুণ সমাজ গড়ে তোলার জন্য যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়।’

মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, মহামারীর মধ্যে নতুন করে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর পরিবারের আয় কমে গেছে। তাদের জন্য সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে তা পরিষ্কার নয়। এতে শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল মাধ্যমে পড়াশোনার জন্য ডিভাইস ও ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।