রোগীদের হয়রানি রোধে ঢাকা মেডিকেলে ৫ বিশেষ ব্যবস্থা

রাজধানীসহ বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল থেকে চিকিৎসা পেতে প্রতিদিন শত শত রোগী আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। দালালরা রোগীদের সহযোগিতা করার নামে বিভিন্নভাবে ফুসলিয়ে অন্য হাসপাতালে ‘ভাগিয়ে’ নিয়ে যায়। হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা। শুধু তাই নয়, ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে সিট পাওয়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ট্রলি পাওয়া, সিরিয়াল করা- এ রকম নানা কাজে গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা আর এসবই ঘটে হাসপাতালের কতিপয় কর্মচারীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে। অভিযোগ আছে, কর্মচারীদের সঙ্গে আঁতাত করে তাদের মাসোহারা দিয়ে বহিরাগতরা কাজ করেন ওয়ার্ডগুলোতে। হাসপাতালে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বাইরে দালালের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বাধ্য করা হয়।

এতসব হয়রানি ঠেকাতে এবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়েছেন বিশেষ পাঁচ ব্যবস্থা। তারা মনে করছেন এর মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষ হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে।

হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, দালালের সহযোগিতা যেন না লাগে, কেউ যদি একজন রোগী নিয়ে আসেন তিনি কোথায় যাবেন, কীভাবে যাবেন, তার জন্য কিছু কিছু জায়গায় লোকেশন চার্টসহ ডিজিটাল নির্দেশক বোর্ড লাগানো হয়েছে। আরও লাগানো হবে। যাতে বাইরে থেকে আসা মানুষের বুঝতে সুবিধা হয়।

এছাড়া হাসপাতালের কর্মচারীদের সহজে চেনার জন্য আলাদা পোশাক দেয়া হবে। ডিউটির সময় তাদের সেই পোশাক পরতে হবে। শুধু তাই নয়, রোগীর সঙ্গে ভিজিটরদের জন্য করা হয়েছে আইডি কার্ডের ব্যবস্থা। ভিজিটররা ওই কার্ড সঙ্গে রাখবেন। এতে তাদের চিনতে সুবিধা হবে। হাসপাতালে দৈনিক চুক্তিতে লোক নেয়া হয়েছে। তাদেরও কার্ড ও পোশাক দেয়া হবে। সরকারি কর্মচারী ও বেসরকারিদের আলাদা পোশাক দেয়া হবে।

হাসপাতালের স্টাফরা নিজেরাই যখন দালালির সঙ্গে জড়িত তখন কীভাবে এটা নির্মূল হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, অলরেডি আমরা লোক লাগিয়ে দিয়েছি। রোগী ভাগানোর কাজে যারা জড়িত থাকে, তাদের নজরদারিতে রাখছি। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগের প্রমাণ পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে বদলি, এমনকি চাকরিচ্যুত পর্যন্ত করা হবে।

রোগী ও তার স্বজনদের সচেতন করতে মাঝে মধ্যেই মাইকিং করা হয় বলে জানান তিনি। রোগী ও তাদের স্বজনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কাউকে টাকা-পয়সা দেবেন না। যে সমস্ত পরীক্ষা হাসপাতালে হয়, সেগুলো বাইরে থেকে করাবেন না। কারো প্রতারণার শিকার হলে, তাদের চিহ্নিত করে আমাদের কাছে অভিযোগ দেবেন।

তিনি আরও বলেন, রোগীদের সেবার জন্য আমরা আরও বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি, কাজও চলছে। অল্প সময়ের মধ্যে তা শেষ হবে।

সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান ব্রিগেডিয়ার নাজমুল। তিনি জানান, এবার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য এই হাসপাতালে খোলা হচ্ছে আলাদা বিভাগ। এটা বহির্বিভাগে করা হচ্ছে। এর কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এসবের পাশাপাশি কিছু মানবিক উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন, শিশু সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য তৈরি হচ্ছে ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার।

হাসপাতাল এলাকার পাশে বসানো হবে বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ। এতে ঢাকার বাইরে থেকে আসা স্বজনদের অচেনা শহরে সমস্যা কমবে। এছাড়া অপেক্ষমাণ পঙ্গু বা প্রতিবন্ধী রোগী ও তাদের স্বজনদের জন্য করা হবে আলাদা ব্যবস্থা। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, দালাল প্রতারকমুক্ত করা ও হাসপাতালের সঠিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এই উদ্যোগগুলো নেয়া হয়েছে। হাসপাতালকে আরও আধুনিক করতে যা যা করা দরকার, পর্যায়ক্রমে তার সবকিছুই করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১০ জুন) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত র‌্যাবের অভিযানের পর বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দালালদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে অভিযান পরিচালনা করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযানে পাঁচ নারীকে আটক করে থানায় সোপর্দ করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ২৪ দালালকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়।

সোমবার, ১৪ জুন ২০২১ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২ জিলকদ ১৪৪২

দালালদের হাতে

রোগীদের হয়রানি রোধে ঢাকা মেডিকেলে ৫ বিশেষ ব্যবস্থা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীসহ বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল থেকে চিকিৎসা পেতে প্রতিদিন শত শত রোগী আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। দালালরা রোগীদের সহযোগিতা করার নামে বিভিন্নভাবে ফুসলিয়ে অন্য হাসপাতালে ‘ভাগিয়ে’ নিয়ে যায়। হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা। শুধু তাই নয়, ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে সিট পাওয়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ট্রলি পাওয়া, সিরিয়াল করা- এ রকম নানা কাজে গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা আর এসবই ঘটে হাসপাতালের কতিপয় কর্মচারীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে। অভিযোগ আছে, কর্মচারীদের সঙ্গে আঁতাত করে তাদের মাসোহারা দিয়ে বহিরাগতরা কাজ করেন ওয়ার্ডগুলোতে। হাসপাতালে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বাইরে দালালের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বাধ্য করা হয়।

এতসব হয়রানি ঠেকাতে এবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়েছেন বিশেষ পাঁচ ব্যবস্থা। তারা মনে করছেন এর মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষ হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে।

হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, দালালের সহযোগিতা যেন না লাগে, কেউ যদি একজন রোগী নিয়ে আসেন তিনি কোথায় যাবেন, কীভাবে যাবেন, তার জন্য কিছু কিছু জায়গায় লোকেশন চার্টসহ ডিজিটাল নির্দেশক বোর্ড লাগানো হয়েছে। আরও লাগানো হবে। যাতে বাইরে থেকে আসা মানুষের বুঝতে সুবিধা হয়।

এছাড়া হাসপাতালের কর্মচারীদের সহজে চেনার জন্য আলাদা পোশাক দেয়া হবে। ডিউটির সময় তাদের সেই পোশাক পরতে হবে। শুধু তাই নয়, রোগীর সঙ্গে ভিজিটরদের জন্য করা হয়েছে আইডি কার্ডের ব্যবস্থা। ভিজিটররা ওই কার্ড সঙ্গে রাখবেন। এতে তাদের চিনতে সুবিধা হবে। হাসপাতালে দৈনিক চুক্তিতে লোক নেয়া হয়েছে। তাদেরও কার্ড ও পোশাক দেয়া হবে। সরকারি কর্মচারী ও বেসরকারিদের আলাদা পোশাক দেয়া হবে।

হাসপাতালের স্টাফরা নিজেরাই যখন দালালির সঙ্গে জড়িত তখন কীভাবে এটা নির্মূল হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, অলরেডি আমরা লোক লাগিয়ে দিয়েছি। রোগী ভাগানোর কাজে যারা জড়িত থাকে, তাদের নজরদারিতে রাখছি। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগের প্রমাণ পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে বদলি, এমনকি চাকরিচ্যুত পর্যন্ত করা হবে।

রোগী ও তার স্বজনদের সচেতন করতে মাঝে মধ্যেই মাইকিং করা হয় বলে জানান তিনি। রোগী ও তাদের স্বজনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কাউকে টাকা-পয়সা দেবেন না। যে সমস্ত পরীক্ষা হাসপাতালে হয়, সেগুলো বাইরে থেকে করাবেন না। কারো প্রতারণার শিকার হলে, তাদের চিহ্নিত করে আমাদের কাছে অভিযোগ দেবেন।

তিনি আরও বলেন, রোগীদের সেবার জন্য আমরা আরও বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি, কাজও চলছে। অল্প সময়ের মধ্যে তা শেষ হবে।

সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান ব্রিগেডিয়ার নাজমুল। তিনি জানান, এবার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য এই হাসপাতালে খোলা হচ্ছে আলাদা বিভাগ। এটা বহির্বিভাগে করা হচ্ছে। এর কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এসবের পাশাপাশি কিছু মানবিক উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন, শিশু সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য তৈরি হচ্ছে ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার।

হাসপাতাল এলাকার পাশে বসানো হবে বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ। এতে ঢাকার বাইরে থেকে আসা স্বজনদের অচেনা শহরে সমস্যা কমবে। এছাড়া অপেক্ষমাণ পঙ্গু বা প্রতিবন্ধী রোগী ও তাদের স্বজনদের জন্য করা হবে আলাদা ব্যবস্থা। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, দালাল প্রতারকমুক্ত করা ও হাসপাতালের সঠিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এই উদ্যোগগুলো নেয়া হয়েছে। হাসপাতালকে আরও আধুনিক করতে যা যা করা দরকার, পর্যায়ক্রমে তার সবকিছুই করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১০ জুন) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত র‌্যাবের অভিযানের পর বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দালালদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে অভিযান পরিচালনা করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযানে পাঁচ নারীকে আটক করে থানায় সোপর্দ করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ২৪ দালালকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়।