শরণখোলায় বাঁধ হস্তান্তরের আগেই দখল প্রতিযোগিতা

ঝড়-জ্বলোচ্ছাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর অনেকটা রক্ষা কবজ শরনখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী পাউবোর ৩৫/১ পোল্ডারের ভেড়িবাঁধ। যার পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয় গত ৪ বছর আগে। তবে, মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় তার স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা রয়েছে উপকুলবাসীর মধ্যে। পাশাপাশি বাঁধের নির্মাণ কাজও চলছে কচ্ছপ গতিতে । তবে, ঠিকাদার সংশ্লিষ্টরা বাঁধটি সম্পুর্ন নির্মাণের পর তা পাউবোর কাছে হস্তান্তরের কথা রয়েছে কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীরা নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই দখল প্রতিযোগীতায় কোমর বেধে নেমে পড়লেও রহস্যজনক কারনে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেউ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৭ সালে পোল্ডারের ৬৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেন চায়নার (এইচ. সি. ডব্লিউই) নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান । পার্শবর্তী উপজেলা মোড়েলগঞ্জের খাউলিয়া ইউনিয়ন ও শরণখোলা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের অভ্যন্তরে ৬৩ কিমি. বাঁধের মধ্যে ১৯৮৪ সালে নির্মিত বলেশ্বর ও ভোলা নদীর সাথে সংযুক্ত খালগুলোর পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য তৎকালীন সরকারের নির্মাণাধীন জরাজীর্ণ ৩২টিসহ প্রায় অর্ধশত জলকপাট নুতন করে নির্মাণ কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু মেঘা এ প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের নজরদারি কম থাকায় চার বছরেও সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার গ্রুপ ।

এ বিষয়ে, নাম গোপন রাখার শর্তে, উপজেলা রায়েন্দা বাজার এলাকার এক সমাজসেবক বলেন, সরকারি কোটি কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ নিয়ে পুনরায় বাঁধের জমি প্রবাভশালীরা দখল করে সেখানে রাতারাতি পাকা ইমারত নির্মাণ করছেন । প্রসাশন নাকের ডগায় এ প্রতিযোগিতা চললেও তারা বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছেন। যে কারনে ৩৫/১ পোল্ডার জুড়ে জমি দখলের মহোৎসব শুরু হয়েছে। অথচ উপজেলার অনেক ভুমিহীনরা তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছেন না । দখলদার চক্রের এমন দৃশ্য দেখে মনে হয়, ভুমিদস্যুদের কাছে প্রসাশন যেন অনেকটা অসহায়। তাছাড়া রায়েন্দা বাজার ব্যাবসায়ীরা তাদের স্থাপনা নাম মাত্র সরিয়ে বাঁধ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে সরকারি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পুর্বের জায়গায় বহাল তবিয়তে থাকায় চরম ক্ষতির মধ্যে পড়েছে বলেশ্বর নদীর সাথে সংযুক্ত রায়েন্দা এলাকার প্রধান খালটি ।

ঢাকাস্থ দীপ্তবাংলা হিউম্যান রাইটস্ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও শরণখোলা উপজেলার বাসিন্দা মো. রেজাউল করিম খান রেজা বলেন, অবৈধ দখলদারদের বাঁঁচিয়ে ঠিকাদার গ্রুপ রায়েন্দা বাজার ব্যাবসায়ীদের ক্ষুদ্র স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে প্রধান খাল দখল করে তার মধ্যে ৯৫ ফুটের বাঁধ নির্মাণ করে পুরো উপজেলাবাসীর দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতি করেছেন । খালটি রক্ষা করতে না পারলে শুকনো মৌসুমে পানির জন্য হাহাকার পড়বে গোটা উপজেলা জুড়ে । এছাড়া দখল দারদের মধ্যে স্থানীয় সরকার দলীয় নেতারা রয়েছে, প্রসাশন তাদের বিরুদ্ধে কখনো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করেন না । যার কারনে দখল প্রতিযোগীতা দিন দিন বাড়ছে। তাদেরকে কঠোর হাতে দমন করতে প্রসাশনকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে । তা না হলে এদের লাগাম টানা যাবে না।

প্রকল্পটি তদারকির দ্বায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, দখলকারীদের সরানোর কাজ ঠিকাদার গ্রুপের নয়। আমরা বিষয়টি ইতিমধ্যে বেড়িবাঁধ কর্তৃপক্ষ (পাউবোকে) অবহিত করেছি । তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবে এবং বাঁধ হস্তান্তরে আরো সময় লাগবে। এখনো কিছু স্থানে ঘাছ রোপনসহ অনেক কাজ বাকি রয়েছে ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সর্দার মোস্তফা শাহিন জানান, দখলের বিষয়টি আমিও অবগত হয়েছি । পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ হয়েছে । শীঘ্রই বাঁধ দখলকারী ব্যক্তিদের সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে ।

মঙ্গলবার, ১৫ জুন ২০২১ , ১ আষাড় ১৪২৮ ৩ জিলকদ ১৪৪২

শরণখোলায় বাঁধ হস্তান্তরের আগেই দখল প্রতিযোগিতা

প্রতিনিধি, শরণখোলা (বাগেরহাট)

image

ঝড়-জ্বলোচ্ছাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর অনেকটা রক্ষা কবজ শরনখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী পাউবোর ৩৫/১ পোল্ডারের ভেড়িবাঁধ। যার পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয় গত ৪ বছর আগে। তবে, মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় তার স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা রয়েছে উপকুলবাসীর মধ্যে। পাশাপাশি বাঁধের নির্মাণ কাজও চলছে কচ্ছপ গতিতে । তবে, ঠিকাদার সংশ্লিষ্টরা বাঁধটি সম্পুর্ন নির্মাণের পর তা পাউবোর কাছে হস্তান্তরের কথা রয়েছে কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীরা নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই দখল প্রতিযোগীতায় কোমর বেধে নেমে পড়লেও রহস্যজনক কারনে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেউ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৭ সালে পোল্ডারের ৬৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেন চায়নার (এইচ. সি. ডব্লিউই) নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান । পার্শবর্তী উপজেলা মোড়েলগঞ্জের খাউলিয়া ইউনিয়ন ও শরণখোলা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের অভ্যন্তরে ৬৩ কিমি. বাঁধের মধ্যে ১৯৮৪ সালে নির্মিত বলেশ্বর ও ভোলা নদীর সাথে সংযুক্ত খালগুলোর পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য তৎকালীন সরকারের নির্মাণাধীন জরাজীর্ণ ৩২টিসহ প্রায় অর্ধশত জলকপাট নুতন করে নির্মাণ কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু মেঘা এ প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের নজরদারি কম থাকায় চার বছরেও সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার গ্রুপ ।

এ বিষয়ে, নাম গোপন রাখার শর্তে, উপজেলা রায়েন্দা বাজার এলাকার এক সমাজসেবক বলেন, সরকারি কোটি কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ নিয়ে পুনরায় বাঁধের জমি প্রবাভশালীরা দখল করে সেখানে রাতারাতি পাকা ইমারত নির্মাণ করছেন । প্রসাশন নাকের ডগায় এ প্রতিযোগিতা চললেও তারা বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছেন। যে কারনে ৩৫/১ পোল্ডার জুড়ে জমি দখলের মহোৎসব শুরু হয়েছে। অথচ উপজেলার অনেক ভুমিহীনরা তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছেন না । দখলদার চক্রের এমন দৃশ্য দেখে মনে হয়, ভুমিদস্যুদের কাছে প্রসাশন যেন অনেকটা অসহায়। তাছাড়া রায়েন্দা বাজার ব্যাবসায়ীরা তাদের স্থাপনা নাম মাত্র সরিয়ে বাঁধ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে সরকারি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পুর্বের জায়গায় বহাল তবিয়তে থাকায় চরম ক্ষতির মধ্যে পড়েছে বলেশ্বর নদীর সাথে সংযুক্ত রায়েন্দা এলাকার প্রধান খালটি ।

ঢাকাস্থ দীপ্তবাংলা হিউম্যান রাইটস্ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও শরণখোলা উপজেলার বাসিন্দা মো. রেজাউল করিম খান রেজা বলেন, অবৈধ দখলদারদের বাঁঁচিয়ে ঠিকাদার গ্রুপ রায়েন্দা বাজার ব্যাবসায়ীদের ক্ষুদ্র স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে প্রধান খাল দখল করে তার মধ্যে ৯৫ ফুটের বাঁধ নির্মাণ করে পুরো উপজেলাবাসীর দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতি করেছেন । খালটি রক্ষা করতে না পারলে শুকনো মৌসুমে পানির জন্য হাহাকার পড়বে গোটা উপজেলা জুড়ে । এছাড়া দখল দারদের মধ্যে স্থানীয় সরকার দলীয় নেতারা রয়েছে, প্রসাশন তাদের বিরুদ্ধে কখনো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করেন না । যার কারনে দখল প্রতিযোগীতা দিন দিন বাড়ছে। তাদেরকে কঠোর হাতে দমন করতে প্রসাশনকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে । তা না হলে এদের লাগাম টানা যাবে না।

প্রকল্পটি তদারকির দ্বায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, দখলকারীদের সরানোর কাজ ঠিকাদার গ্রুপের নয়। আমরা বিষয়টি ইতিমধ্যে বেড়িবাঁধ কর্তৃপক্ষ (পাউবোকে) অবহিত করেছি । তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবে এবং বাঁধ হস্তান্তরে আরো সময় লাগবে। এখনো কিছু স্থানে ঘাছ রোপনসহ অনেক কাজ বাকি রয়েছে ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সর্দার মোস্তফা শাহিন জানান, দখলের বিষয়টি আমিও অবগত হয়েছি । পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ হয়েছে । শীঘ্রই বাঁধ দখলকারী ব্যক্তিদের সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে ।