বালিশকাণ্ডের সেই ঠিকাদারের অপকাণ্ড, কৃষকের জমিতে পুকুর খনন

শত শত কৃষক রাস্তা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন

রূপপুর বালিশকাণ্ডে আলোচিত ঠিকাদার যুবদল নেতা শাহাদত হোসেন এবার কৃষকের জমি দখল করে জলাশয় ও ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণ করে আলোচনায় এলেন। তবে তিনি কৃষকদের প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন।

শাহাদত বাহিনীর হামলা, গুলিবর্ষণ উপেক্ষা করে শত শত কৃষক এ রাস্তা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে শাহাদত পিছু হটলেও ক্যাডার বাহিনীর অব্যাহত হুমকিতে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। শাহাদত হোসেনের পক্ষে জমি দখলে সুজানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন ও ছাত্রলীগ সভাপতি তমাল বিশ্বাসের ভূমিকায় নেতাকর্মীদের ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের খয়রান মৌজায় শাহাদত হোসেন নিজ নামীয় মৎস্য প্রকল্পের জায়গা বাড়াতে রাতের আঁধারে কৃষকদের আধাপাকা ধানসহ জমি দখল করে পুকুর খনন করেছে। মৎস্য প্রকল্পে ব্যক্তিগত যাতায়াতে পানি নিষ্কাশন ক্যানেল ভরাটসহ কৃষকের জমিতে দেড় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করে। রাস্তা নির্মাণে শাহাদতের হয়ে সুজানগর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তমাল বিশ্বাস ও শফিকুল ইসলাম সুজন মেম্বার প্রকাশ্যে ক্যাডারবাহিনী নিয়ে কৃষকদের বাড়ি বাড়ি হুমকি দেয় বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন।

খয়রানের আরশেদ শেখের বাড়িতে ক্যাডার বাহিনী হামলা চালায়। রাস্তার বিরুদ্ধচারণকারী কলেজ শিক্ষক জহুরুল ইসলাম বুলবুলের বাড়ির উপর বোমা বিস্ফোরণ ও ১ রাউন্ড গুলি করে। খয়রান বাজারের আয়েন উদ্দিনের দোকানঘরে গুলি ছুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করা হয় বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে খয়রান শাহাদত হোসেনের মৎস্য প্রকল্পে নিজের ২০-২৫ বিঘা জমি থাকলেও কৃষকদের প্রায় ৫০ বিঘা ফসলি জমি রাতের আঁধারে ভেকু দিয়ে কেটে সেখানে জলাশয় করে।

গাবগাছি গ্রামের ওহাব খন্দকার জানান, তার ৪ বিঘা ধানসহ জমি পুকুর কেটে দখল করেছে শাহাদত ঠিকাদার। জমি হারিয়ে তিনি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। তার সহোদর পাখি খন্দকারের ২ বিঘা, মান্নান মৃধাসহ কয়েকজন কৃষকের জমি দখল করে পুকুর কেটেছে শাহাদত। মৎস্য প্রকল্পের সঙ্গে মো. হেলাল উদ্দিন বিশ্বাস ও মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের খাঁর ৭ বিঘা জমির ধানসহ কেটে পুকুরের চালা করেন শাহাদত হোসেন।

এরপর প্রকল্প থেকে পাকা সড়ক পর্যন্ত ব্যক্তিগত গাড়ি যাতায়াতের জন্য পানি নিষ্কাশন ক্যানেল ভরাটসহ এখানে ও কৃষকদের ৩ ফসলি জমি দখল করে রাস্তা নির্মাণ করেন। যেখানে শাহাদত হোসেনের ১ শতাংশ ও জমি নেই।

কাদোয়া, সাহাপুর, গাবগাছি, দুর্গাপুর, খয়রান, বিন্নাডাঙ্গসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ৪-৫ হাজার বিঘা জমির বৃষ্টি ও বর্ষায় জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখে কৃষকরা চাঁদা তুলে ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আহম্মদ ফিরোজ কবিরের নিজস্ব অর্থায়নে গত বছর এ ক্যানেল নির্মাণ করেন কৃষকরা। জলাবদ্ধতা নিরসন ক্যানেল ভরাট করে ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণ করায় ঠিকাদার শাহাদত ব্যাপক জনরোষের কবলে পড়ে। পরে এসব গ্রামের কৃষকরা দখলকৃত জমির মালিকদের সঙ্গে যোগ দিয়ে শাহাদতের নির্মিত রাস্তা ভেঙে ক্যানেল উদ্ধার করেন। কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ঠিকাদার শাহাদতের পক্ষে অবস্থান নেয়। আরশেদ শেখ বাড়ি ভাঙচুর ও ইকরাম বিশ্বাস মারপিটের ঘটনায় সুজানগর থানায় মামলা করতে গেলে তাদের ফিরিয়ে দেন সদ্য বদলিকৃত ওসি।

কৃষকদের আক্রোশের শিকার ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম সুজন এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে। জমি হারানো কৃষকরা প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।

এ ব্যাপারে পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহম্মদ ফিরোজ কবির জানান, জমি দখলের শিকার কৃষকদের আবেদন তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছেন তবে প্রভাবশালী ঠিকাদারের কব্জা থেকে কৃষকরা জমি ফেরত পাবেন কিনা এ নিয়ে তিনি সন্দিহান। যুবদল নেতার জমি দখলে সহায়তাকারী নিজ দলীয় ২ নেতার জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারা জড়িত এটা জনসাধারণের সামনে দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার এখানে আর কী বলার আছে? এ ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিষয়টি উদ্বেগজনক।

সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঠিকাদার শাহাদত হোসেনের পক্ষে জমি দখলে সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন। খয়রানের কৃষক প্রতিনিধিদের উন্নয়ন কাজে বাধা দেয়ার উল্টো অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান ‘আমি জেনারেলি বলেছি, রাস্তা যত হবে যোগাযোগের উন্নতি হবে তত, দেশের উন্নয়ন হবে আমি এ রাস্তার কথা বলিনি।’ ছাত্রলীগ সভাপতি তমাল বিশ্বাসকে ঠিকাদার শাহাদত হোসেনের পক্ষে জমি দখলে কৃষকদের প্রকাশ্য অস্ত্র প্রদর্শন, ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, কেউ সামনে এসে প্রমাণ দিক আমি ছিলাম। তার দাবি ভূমি দখলের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। শাহাদত হোসেন ও ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম সুজনকে বারবার ফোন দিলেও ধরেননি।

মঙ্গলবার, ১৫ জুন ২০২১ , ১ আষাড় ১৪২৮ ৩ জিলকদ ১৪৪২

বালিশকাণ্ডের সেই ঠিকাদারের অপকাণ্ড, কৃষকের জমিতে পুকুর খনন

শত শত কৃষক রাস্তা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পাবনা

রূপপুর বালিশকাণ্ডে আলোচিত ঠিকাদার যুবদল নেতা শাহাদত হোসেন এবার কৃষকের জমি দখল করে জলাশয় ও ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণ করে আলোচনায় এলেন। তবে তিনি কৃষকদের প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন।

শাহাদত বাহিনীর হামলা, গুলিবর্ষণ উপেক্ষা করে শত শত কৃষক এ রাস্তা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে শাহাদত পিছু হটলেও ক্যাডার বাহিনীর অব্যাহত হুমকিতে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। শাহাদত হোসেনের পক্ষে জমি দখলে সুজানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন ও ছাত্রলীগ সভাপতি তমাল বিশ্বাসের ভূমিকায় নেতাকর্মীদের ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের খয়রান মৌজায় শাহাদত হোসেন নিজ নামীয় মৎস্য প্রকল্পের জায়গা বাড়াতে রাতের আঁধারে কৃষকদের আধাপাকা ধানসহ জমি দখল করে পুকুর খনন করেছে। মৎস্য প্রকল্পে ব্যক্তিগত যাতায়াতে পানি নিষ্কাশন ক্যানেল ভরাটসহ কৃষকের জমিতে দেড় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করে। রাস্তা নির্মাণে শাহাদতের হয়ে সুজানগর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তমাল বিশ্বাস ও শফিকুল ইসলাম সুজন মেম্বার প্রকাশ্যে ক্যাডারবাহিনী নিয়ে কৃষকদের বাড়ি বাড়ি হুমকি দেয় বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন।

খয়রানের আরশেদ শেখের বাড়িতে ক্যাডার বাহিনী হামলা চালায়। রাস্তার বিরুদ্ধচারণকারী কলেজ শিক্ষক জহুরুল ইসলাম বুলবুলের বাড়ির উপর বোমা বিস্ফোরণ ও ১ রাউন্ড গুলি করে। খয়রান বাজারের আয়েন উদ্দিনের দোকানঘরে গুলি ছুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করা হয় বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে খয়রান শাহাদত হোসেনের মৎস্য প্রকল্পে নিজের ২০-২৫ বিঘা জমি থাকলেও কৃষকদের প্রায় ৫০ বিঘা ফসলি জমি রাতের আঁধারে ভেকু দিয়ে কেটে সেখানে জলাশয় করে।

গাবগাছি গ্রামের ওহাব খন্দকার জানান, তার ৪ বিঘা ধানসহ জমি পুকুর কেটে দখল করেছে শাহাদত ঠিকাদার। জমি হারিয়ে তিনি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। তার সহোদর পাখি খন্দকারের ২ বিঘা, মান্নান মৃধাসহ কয়েকজন কৃষকের জমি দখল করে পুকুর কেটেছে শাহাদত। মৎস্য প্রকল্পের সঙ্গে মো. হেলাল উদ্দিন বিশ্বাস ও মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের খাঁর ৭ বিঘা জমির ধানসহ কেটে পুকুরের চালা করেন শাহাদত হোসেন।

এরপর প্রকল্প থেকে পাকা সড়ক পর্যন্ত ব্যক্তিগত গাড়ি যাতায়াতের জন্য পানি নিষ্কাশন ক্যানেল ভরাটসহ এখানে ও কৃষকদের ৩ ফসলি জমি দখল করে রাস্তা নির্মাণ করেন। যেখানে শাহাদত হোসেনের ১ শতাংশ ও জমি নেই।

কাদোয়া, সাহাপুর, গাবগাছি, দুর্গাপুর, খয়রান, বিন্নাডাঙ্গসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ৪-৫ হাজার বিঘা জমির বৃষ্টি ও বর্ষায় জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখে কৃষকরা চাঁদা তুলে ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আহম্মদ ফিরোজ কবিরের নিজস্ব অর্থায়নে গত বছর এ ক্যানেল নির্মাণ করেন কৃষকরা। জলাবদ্ধতা নিরসন ক্যানেল ভরাট করে ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণ করায় ঠিকাদার শাহাদত ব্যাপক জনরোষের কবলে পড়ে। পরে এসব গ্রামের কৃষকরা দখলকৃত জমির মালিকদের সঙ্গে যোগ দিয়ে শাহাদতের নির্মিত রাস্তা ভেঙে ক্যানেল উদ্ধার করেন। কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ঠিকাদার শাহাদতের পক্ষে অবস্থান নেয়। আরশেদ শেখ বাড়ি ভাঙচুর ও ইকরাম বিশ্বাস মারপিটের ঘটনায় সুজানগর থানায় মামলা করতে গেলে তাদের ফিরিয়ে দেন সদ্য বদলিকৃত ওসি।

কৃষকদের আক্রোশের শিকার ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম সুজন এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে। জমি হারানো কৃষকরা প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।

এ ব্যাপারে পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহম্মদ ফিরোজ কবির জানান, জমি দখলের শিকার কৃষকদের আবেদন তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছেন তবে প্রভাবশালী ঠিকাদারের কব্জা থেকে কৃষকরা জমি ফেরত পাবেন কিনা এ নিয়ে তিনি সন্দিহান। যুবদল নেতার জমি দখলে সহায়তাকারী নিজ দলীয় ২ নেতার জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারা জড়িত এটা জনসাধারণের সামনে দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার এখানে আর কী বলার আছে? এ ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিষয়টি উদ্বেগজনক।

সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঠিকাদার শাহাদত হোসেনের পক্ষে জমি দখলে সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন। খয়রানের কৃষক প্রতিনিধিদের উন্নয়ন কাজে বাধা দেয়ার উল্টো অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান ‘আমি জেনারেলি বলেছি, রাস্তা যত হবে যোগাযোগের উন্নতি হবে তত, দেশের উন্নয়ন হবে আমি এ রাস্তার কথা বলিনি।’ ছাত্রলীগ সভাপতি তমাল বিশ্বাসকে ঠিকাদার শাহাদত হোসেনের পক্ষে জমি দখলে কৃষকদের প্রকাশ্য অস্ত্র প্রদর্শন, ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, কেউ সামনে এসে প্রমাণ দিক আমি ছিলাম। তার দাবি ভূমি দখলের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। শাহাদত হোসেন ও ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম সুজনকে বারবার ফোন দিলেও ধরেননি।