গার্ড অব অনার প্রদানে নারী ইউএনওর বিকল্প সুপারিশের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড়

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু-পরবর্তী গার্ড অব অনার প্রদানে নারী ইউএনওর বিকল্প কর্মকর্তা নির্ধারণের সুপারিশের নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। তারা মনে করে এই সিদ্ধান্ত নারীর প্রতি অবমাননাকর ও অসাংবিধানিক। তাই অবিলম্বে সংসদীয় কমিটির প্রস্তাব ও সুপারিশ প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্টজন। গতকাল পৃথক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি : মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রদত্ত গার্ড অব অনারে নারী কর্মকর্তার উপস্থিতি সম্পর্কে আপত্তি জানিয়ে গত রোববার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় কমিটি যে প্রস্তাব করেছে তার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দাজ্ঞাপন করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

বিবৃতিতে নির্মূল কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রদত্ত গার্ড অব অনারে সরকারের নারী কর্মকর্তা বা পুলিশ বাহিনীর নারী সদস্যদের উপস্থিতির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি যে সুপারিশ করেছে গণমাধ্যমে এ বিষয়ে জানতে পেরে আমরা হতভম্ব হয়ে গিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় কমিটি ধর্মের দোহাই দিয়ে কীভাবে এ ধরনের নারীবিদ্বেষী, মানবাধিকারবিরোধী, সংবিধানবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সুপারিশ করতে পারে তা আমাদের বোধের অতীত। এই ন্যক্কারজনক প্রস্তাবের প্রতি তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি।’ তাই অবিলম্বে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানবিরোধী সুপারিশ প্রত্যাহার এবং এ ধরনের নিন্দনীয় আচরণের জন্য তাদের দুঃখ প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে এই ধরনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যানের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান নেতারা।

জাসদ : বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান অনুষ্ঠানে নারী কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বক্তব্য সংবিধানবিরোধী, চরম নারীবিদ্বেষী, বৈষম্যমূলক ও কুৎসিত বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। গতকাল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। তারা বলেন, জানাজায় অংশগ্রহণ করা বা না করার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানের বিষয় সম্পর্কিত নয়। জাসদ নেতারা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে তাদের এ কুৎসিত সুপারিশ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন : অনতিবিলম্বে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রস্তাব ও সুপারিশ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন। এছাড়া এ ধরনের সুপারিশ ও ধর্মের নামে যারা নারীর সমÑঅধিকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধেও দেশের বিবেকবান মানুষদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানায় সংগঠনটি। বিশিষ্ট নাগরিকদের স্বাক্ষর করা বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, এ ধরনের প্রস্তাব ও সুপারিশ ধর্মীয় মিশেলে রাষ্ট্রাচার তৈরির একটি গভীর ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। এই প্রস্তাব সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৮ (১) ও (২) এ বর্ণিত যথাক্রমে- “কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীÑপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না” এবং “রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরের নারীÑপুরুষ সমান অধিকার লাভ করিবেন” এর লঙ্ঘন। সংসদ সদস্যের কর্তৃক সংবিধান লঙ্ঘনের অপরাধ অগ্রহণযোগ্য ও নৈতিকতার পরিপন্থী।

ঐক্য ন্যাপ : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রস্তাবে নিন্দা জানিয়েছে ঐক্য ন্যাপ। গতকাল এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ তারেক বলেন, “আমরা বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর ‘গার্ড অব অনার’ দেয়ার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কোন নারী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) না রাখার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ নারীর প্রতি অবমাননাকর, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ও সংবিধানবিরোধী। এটি শেখ হাসিনা সরকারের ঘোষিত নারীনীতির বিরুদ্ধাচরণও বটে। এহেন আত্মঘাতী সুপারিশ প্রত্যাহার করার দাবি জানাই।’

মঙ্গলবার, ১৫ জুন ২০২১ , ১ আষাড় ১৪২৮ ৩ জিলকদ ১৪৪২

গার্ড অব অনার প্রদানে নারী ইউএনওর বিকল্প সুপারিশের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড়

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু-পরবর্তী গার্ড অব অনার প্রদানে নারী ইউএনওর বিকল্প কর্মকর্তা নির্ধারণের সুপারিশের নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। তারা মনে করে এই সিদ্ধান্ত নারীর প্রতি অবমাননাকর ও অসাংবিধানিক। তাই অবিলম্বে সংসদীয় কমিটির প্রস্তাব ও সুপারিশ প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্টজন। গতকাল পৃথক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি : মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রদত্ত গার্ড অব অনারে নারী কর্মকর্তার উপস্থিতি সম্পর্কে আপত্তি জানিয়ে গত রোববার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় কমিটি যে প্রস্তাব করেছে তার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দাজ্ঞাপন করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

বিবৃতিতে নির্মূল কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রদত্ত গার্ড অব অনারে সরকারের নারী কর্মকর্তা বা পুলিশ বাহিনীর নারী সদস্যদের উপস্থিতির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি যে সুপারিশ করেছে গণমাধ্যমে এ বিষয়ে জানতে পেরে আমরা হতভম্ব হয়ে গিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় কমিটি ধর্মের দোহাই দিয়ে কীভাবে এ ধরনের নারীবিদ্বেষী, মানবাধিকারবিরোধী, সংবিধানবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সুপারিশ করতে পারে তা আমাদের বোধের অতীত। এই ন্যক্কারজনক প্রস্তাবের প্রতি তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি।’ তাই অবিলম্বে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানবিরোধী সুপারিশ প্রত্যাহার এবং এ ধরনের নিন্দনীয় আচরণের জন্য তাদের দুঃখ প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে এই ধরনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যানের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান নেতারা।

জাসদ : বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান অনুষ্ঠানে নারী কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বক্তব্য সংবিধানবিরোধী, চরম নারীবিদ্বেষী, বৈষম্যমূলক ও কুৎসিত বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। গতকাল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। তারা বলেন, জানাজায় অংশগ্রহণ করা বা না করার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানের বিষয় সম্পর্কিত নয়। জাসদ নেতারা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে তাদের এ কুৎসিত সুপারিশ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন : অনতিবিলম্বে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রস্তাব ও সুপারিশ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন। এছাড়া এ ধরনের সুপারিশ ও ধর্মের নামে যারা নারীর সমÑঅধিকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধেও দেশের বিবেকবান মানুষদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানায় সংগঠনটি। বিশিষ্ট নাগরিকদের স্বাক্ষর করা বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, এ ধরনের প্রস্তাব ও সুপারিশ ধর্মীয় মিশেলে রাষ্ট্রাচার তৈরির একটি গভীর ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। এই প্রস্তাব সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৮ (১) ও (২) এ বর্ণিত যথাক্রমে- “কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীÑপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না” এবং “রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরের নারীÑপুরুষ সমান অধিকার লাভ করিবেন” এর লঙ্ঘন। সংসদ সদস্যের কর্তৃক সংবিধান লঙ্ঘনের অপরাধ অগ্রহণযোগ্য ও নৈতিকতার পরিপন্থী।

ঐক্য ন্যাপ : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রস্তাবে নিন্দা জানিয়েছে ঐক্য ন্যাপ। গতকাল এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ তারেক বলেন, “আমরা বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর ‘গার্ড অব অনার’ দেয়ার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কোন নারী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) না রাখার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ নারীর প্রতি অবমাননাকর, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ও সংবিধানবিরোধী। এটি শেখ হাসিনা সরকারের ঘোষিত নারীনীতির বিরুদ্ধাচরণও বটে। এহেন আত্মঘাতী সুপারিশ প্রত্যাহার করার দাবি জানাই।’