উইঘুর নির্যাতনে সমালোচনা করায় জি-৭ এর ওপর ক্ষুব্ধ চীন

দরিদ্র দেশগুলোকে ১০০ কোটি টিকা দেয়ার অঙ্গীকার জি-সেভেনের

জিনজিয়াংয়ের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় উইঘুর ও হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থিদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে চীনের সমালোচনা করায় জি-৭ এর ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে দেশটি। এএফপি

যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত জি-৭ নেতাদের সম্মেলনের পর জোটের পক্ষ থেকে জিনজিয়াংয়ে উইঘুর সম্প্রদায় ও হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীদের ওপর চীনের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে করা সমালোচনা করা হয়। জোটের অন্যতম শরিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনের উদ্দেশ্যে বলেছেন, মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করুন। যুক্তরাজ্যে অবস্থিত চীনের দূতাবাস জি-৭ এর এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

দূতাবাসের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে এবং চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের উদ্দেশ্যে জিনজিয়াং সংক্রান্ত ইস্যুর সুবিধা নিচ্ছে জি-৭, যা আমরা তীব্রভাবে বিরোধিতা করছি।’

বিবৃতিতে জি-৭ এর বক্তব্যকে ‘মিথ্যা, গুজব ও ভিত্তিহীন দাবি বলে’ উল্লেখ করে চীনা দূতাবাস। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা দাবি করে আসছে, জিনজিয়াংয়ে উইঘুরসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের চীন বন্দি শিবিরে আটকে রেখেছে। তবে চীন বারবার দাবি করে আসছে, তারা জিনজিয়াংয়ে ইসলামিক চরমপন্থা দমনের লক্ষ্যে কাজ করছে।

জি-৭ এর বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘আমরা আমাদের মূল্যবোধ তুলে ধরব, যার মধ্যে রয়েছে চীনকে মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা মেনে চলতে আহ্বান জানানো।’

জি-৭ এর নেতারা করোনাভাইরাসের উৎস জানতে চীনে একটি নতুন অনুসন্ধান চালানোরও দাবি তোলেন।

এ প্রসঙ্গে চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বর্তমান মহামারিটি এখনও বিশ্ব জুড়ে চলছে এবং উৎস সন্ধানের কাজটি বৈশ্বিক বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত, এটিকে রাজনীতিকরণ করা উচিত নয়।’

এদিকে, দরিদ্র দেশগুলোকে ১০০ কোটি টিকা দিতে বিশ্বের ৭ ধনী দেশের জোট জি-সেভেনের নেতারা অঙ্গীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। জি-সেভেনের সম্মেলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিবিসি

যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কর্নওয়াল কাউন্টিতে শুক্রবার থেকে টানা ৩ দিনব্যাপী সম্মেলনে বসেন জি-সেভেনের নেতারা। করোনাভাইরাস সৃষ্ট বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় করণীয় পদক্ষেপ নিয়ে জি-সেভেনভুক্ত ৭ দেশ কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের মধ্যে আলোচনা হয়।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন বলেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় বৈশ্বিক প্রাথমিক উদ্যোগ কিছু স্বার্থপর ও জাতীয়তাবাদী প্রস্তাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। করোনাকে চিরতরে বিদায় জানাতে আমাদের কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক সামর্থ্যও এসবের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়। বিশ্ব চায় আমরা যেন এসব সংকীর্ণ চিন্তাভাবনা থেকে মুক্ত হই।

জনসন বলেন, সরাসরি বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উদ্যোগে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে দরিদ্র দেশগুলোতে ১০০ কোটি করোনার টিকা সরবরাহে অঙ্গীকার করেছেন জি-সেভেনের নেতারা। এগুলোর মধ্যে ১০ কোটি টিকা যুক্তরাজ্য দেবে। জি-সেভেন সম্মেলনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিশ্ববাসীকে দ্রুত নিরাপদ টিকা দেয়ার মধ্য দিয়ে করোনা মহামারির ইতি টানতে এবং জোরালো আন্তর্জাতিক উদ্যোগের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নির্মাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে জি-সেভেন।

জি-সেভেন সম্মেলনে বিশ্বের শিল্পোন্নত সাত দেশের নেতাদের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা হয়। এবারও ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের হার শূন্যের ঘরে এবং কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধে ফের অঙ্গীকার করেন জি-সেভেনের নেতারা।

মঙ্গলবার, ১৫ জুন ২০২১ , ১ আষাড় ১৪২৮ ৩ জিলকদ ১৪৪২

উইঘুর নির্যাতনে সমালোচনা করায় জি-৭ এর ওপর ক্ষুব্ধ চীন

দরিদ্র দেশগুলোকে ১০০ কোটি টিকা দেয়ার অঙ্গীকার জি-সেভেনের

image

যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে ধনী সাত দেশের প্রধানরা অংশগ্রহণ করেন -রয়টার্স

জিনজিয়াংয়ের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় উইঘুর ও হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থিদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে চীনের সমালোচনা করায় জি-৭ এর ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে দেশটি। এএফপি

যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত জি-৭ নেতাদের সম্মেলনের পর জোটের পক্ষ থেকে জিনজিয়াংয়ে উইঘুর সম্প্রদায় ও হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীদের ওপর চীনের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে করা সমালোচনা করা হয়। জোটের অন্যতম শরিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনের উদ্দেশ্যে বলেছেন, মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করুন। যুক্তরাজ্যে অবস্থিত চীনের দূতাবাস জি-৭ এর এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

দূতাবাসের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে এবং চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের উদ্দেশ্যে জিনজিয়াং সংক্রান্ত ইস্যুর সুবিধা নিচ্ছে জি-৭, যা আমরা তীব্রভাবে বিরোধিতা করছি।’

বিবৃতিতে জি-৭ এর বক্তব্যকে ‘মিথ্যা, গুজব ও ভিত্তিহীন দাবি বলে’ উল্লেখ করে চীনা দূতাবাস। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা দাবি করে আসছে, জিনজিয়াংয়ে উইঘুরসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের চীন বন্দি শিবিরে আটকে রেখেছে। তবে চীন বারবার দাবি করে আসছে, তারা জিনজিয়াংয়ে ইসলামিক চরমপন্থা দমনের লক্ষ্যে কাজ করছে।

জি-৭ এর বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘আমরা আমাদের মূল্যবোধ তুলে ধরব, যার মধ্যে রয়েছে চীনকে মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা মেনে চলতে আহ্বান জানানো।’

জি-৭ এর নেতারা করোনাভাইরাসের উৎস জানতে চীনে একটি নতুন অনুসন্ধান চালানোরও দাবি তোলেন।

এ প্রসঙ্গে চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বর্তমান মহামারিটি এখনও বিশ্ব জুড়ে চলছে এবং উৎস সন্ধানের কাজটি বৈশ্বিক বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত, এটিকে রাজনীতিকরণ করা উচিত নয়।’

এদিকে, দরিদ্র দেশগুলোকে ১০০ কোটি টিকা দিতে বিশ্বের ৭ ধনী দেশের জোট জি-সেভেনের নেতারা অঙ্গীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। জি-সেভেনের সম্মেলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিবিসি

যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কর্নওয়াল কাউন্টিতে শুক্রবার থেকে টানা ৩ দিনব্যাপী সম্মেলনে বসেন জি-সেভেনের নেতারা। করোনাভাইরাস সৃষ্ট বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় করণীয় পদক্ষেপ নিয়ে জি-সেভেনভুক্ত ৭ দেশ কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের মধ্যে আলোচনা হয়।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন বলেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় বৈশ্বিক প্রাথমিক উদ্যোগ কিছু স্বার্থপর ও জাতীয়তাবাদী প্রস্তাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। করোনাকে চিরতরে বিদায় জানাতে আমাদের কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক সামর্থ্যও এসবের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়। বিশ্ব চায় আমরা যেন এসব সংকীর্ণ চিন্তাভাবনা থেকে মুক্ত হই।

জনসন বলেন, সরাসরি বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উদ্যোগে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে দরিদ্র দেশগুলোতে ১০০ কোটি করোনার টিকা সরবরাহে অঙ্গীকার করেছেন জি-সেভেনের নেতারা। এগুলোর মধ্যে ১০ কোটি টিকা যুক্তরাজ্য দেবে। জি-সেভেন সম্মেলনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিশ্ববাসীকে দ্রুত নিরাপদ টিকা দেয়ার মধ্য দিয়ে করোনা মহামারির ইতি টানতে এবং জোরালো আন্তর্জাতিক উদ্যোগের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নির্মাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে জি-সেভেন।

জি-সেভেন সম্মেলনে বিশ্বের শিল্পোন্নত সাত দেশের নেতাদের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা হয়। এবারও ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের হার শূন্যের ঘরে এবং কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধে ফের অঙ্গীকার করেন জি-সেভেনের নেতারা।