হেফাজতে ইসলামের নেতারা দেওবন্দ অনুসারী নয়, তারা সবাই তালেবানের অনুসারী বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। গতকাল সংসদে প্রস্তাবিত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসার সনদকে যখন মূল ধারা স্বীকৃতি দেয়া হলো, তখন আমি বলেছিলাম, আমরা ভুল করলাম কিনা ভেবে দেখা দরকার। তখন জাতীয় পার্টির একজন সদস্য বলেছিলেন, আমি ‘ধান ভানতে শিবের গীত গেয়েছি’। প্রধানমন্ত্রীও বলেছিলেন, হেফাজতের নেতারা দেওবন্দের অনুসারী। কিন্তু আসলে হেফাজতের নেতা বাবুনগরী পাকিস্তানের মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। বাস্তবে হেফাজতের সবাই তালেবানের অনুসারী।
মেনন বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা হেফাজতের তা-ব দেখেছি। এই তা-বের সঙ্গে বিএনপি জড়িত ছিল সেটা বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট। বিএনপি মহাসচিব বলছেন, হেফাজত তা-ব করেনি, সরকার করেছে।’
গার্ড অব অনারে নারীদের বাদ মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা : তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় কমিটি দেখলাম মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনারে নারী কর্মকর্তাদের বাদ দেয়ার কথা বলেছে। যে নারীরা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করল, জীবন দিল এই প্রস্তাব করে তাদের অবমাননা করা হলো। এক্ষেত্রে যারা ধর্মীয় ফতোয়া দিয়েছেন, এই ধর্মীয় ফতোয়া দেয়ার অধিকার তাদের নেই। আমি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীকে বলব, মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার দেয়ার ক্ষেত্রে নারী কর্মকর্তাদের বাদ দেয়ার যেন সিদ্ধান্ত না নেয়া হয়। এটা করা হলে মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা করা হবে।’
আমলাদের অশুভ চক্র দেশের অগ্রগতিতে বাধা : বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে ধনী-সামরিক-বেসামরিক আমলাদের ‘অশুভ চক্র’ বাধা বলে মন্তব্য করে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর অভিজ্ঞতা বিশ্বে নতুন। কিন্তু এতে বিমূঢ় না হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জীবন ও জীবিকা রক্ষায় প্রথমেই যে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে। কিন্তু দেশে অতি ধনী সামরিক-বেসামরিক আমলাগোষ্ঠী ও দুর্নীতিবাজদের পাকচক্রে প্রধানমন্ত্রী সেই প্রয়াস অনেকখানিই নিষ্ফল হয়েছে।’
টিকা কার্যক্রম থমকে গেছে : স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম প্রসঙ্গে মেনন বলেন, ‘সরকারি ক্রয়নীতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে সরকারি টাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে টিকা সরবরাহের পরিণতি আমরা এখন হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছি। ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার আগেই মার্চ মাসে ৫০ লাখ ডোজের জায়গায় ২০ লাখ ডোজ এসেছিল। একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক স্বার্থে একক উৎসের ওপর নির্ভরতা, ওই স্বার্থবুদ্ধিতা থেকে চীন ও রাশিয়ার টিকা, এমনকি দেশের বায়োএনটেকের টিকা ট্রায়াল করতে দেয়া হয় নাই। ফলে এখন সমস্ত টিকা কার্যক্রম থমকে দাঁড়িয়েছে। পিপিই, মাস্ক নিয়ে দুর্নীতি আমরা দেখেছি। সাহেদ ও সাবরিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু যারা ছবি তুলে চুক্তি করল তাদের কিছুই হয়নি।’
ব্যবসায়ীবান্ধব বাজেট : ক্ষমতাসীন জোটের শরীক দলের নেতা রাশেদ খান মেনন প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী জীবন-জীবিকার প্রধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর কথা বলেছেন। জীবনের দুরাবস্থার কথা আগেই বলেছি, এখন জীবিকার প্রশ্নেও একই কথা। করোনাকালে আড়াই কোটি মানুষ যারা দরিদ্র হয়ে গেলেন বাজেট তাদের জন্য কিছু করল না। এদের মধ্যে গরিব মানুষ, যেমন আছে, তেমনি আছে নি¤œবিত্ত, মধ্যবিত্তরা। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তার বাজেট ব্যবসাবান্ধব। প্রকৃতপক্ষে এটা ব্যবসায়ীবান্ধব। তাও ক্ষুদ্র বা মধ্য উদ্যোক্তা নয়, বড়দের জন্যই সব ব্যবস্থা। করোনার প্রথম পর্বে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্রস্তাবে ৩৫% অর্থ বিতরণ হয়নি। যে গরিব মানুষের জন্য দুই দফায় ২৫০০ টাকা করে দেয়া হয়েছে তার এক তৃতীয়াংশ অব্যয়িত, তারা পায়নি।’
মঙ্গলবার, ১৫ জুন ২০২১ , ১ আষাড় ১৪২৮ ৩ জিলকদ ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
হেফাজতে ইসলামের নেতারা দেওবন্দ অনুসারী নয়, তারা সবাই তালেবানের অনুসারী বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। গতকাল সংসদে প্রস্তাবিত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসার সনদকে যখন মূল ধারা স্বীকৃতি দেয়া হলো, তখন আমি বলেছিলাম, আমরা ভুল করলাম কিনা ভেবে দেখা দরকার। তখন জাতীয় পার্টির একজন সদস্য বলেছিলেন, আমি ‘ধান ভানতে শিবের গীত গেয়েছি’। প্রধানমন্ত্রীও বলেছিলেন, হেফাজতের নেতারা দেওবন্দের অনুসারী। কিন্তু আসলে হেফাজতের নেতা বাবুনগরী পাকিস্তানের মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। বাস্তবে হেফাজতের সবাই তালেবানের অনুসারী।
মেনন বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা হেফাজতের তা-ব দেখেছি। এই তা-বের সঙ্গে বিএনপি জড়িত ছিল সেটা বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট। বিএনপি মহাসচিব বলছেন, হেফাজত তা-ব করেনি, সরকার করেছে।’
গার্ড অব অনারে নারীদের বাদ মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা : তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় কমিটি দেখলাম মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনারে নারী কর্মকর্তাদের বাদ দেয়ার কথা বলেছে। যে নারীরা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করল, জীবন দিল এই প্রস্তাব করে তাদের অবমাননা করা হলো। এক্ষেত্রে যারা ধর্মীয় ফতোয়া দিয়েছেন, এই ধর্মীয় ফতোয়া দেয়ার অধিকার তাদের নেই। আমি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীকে বলব, মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার দেয়ার ক্ষেত্রে নারী কর্মকর্তাদের বাদ দেয়ার যেন সিদ্ধান্ত না নেয়া হয়। এটা করা হলে মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা করা হবে।’
আমলাদের অশুভ চক্র দেশের অগ্রগতিতে বাধা : বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে ধনী-সামরিক-বেসামরিক আমলাদের ‘অশুভ চক্র’ বাধা বলে মন্তব্য করে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর অভিজ্ঞতা বিশ্বে নতুন। কিন্তু এতে বিমূঢ় না হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জীবন ও জীবিকা রক্ষায় প্রথমেই যে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে। কিন্তু দেশে অতি ধনী সামরিক-বেসামরিক আমলাগোষ্ঠী ও দুর্নীতিবাজদের পাকচক্রে প্রধানমন্ত্রী সেই প্রয়াস অনেকখানিই নিষ্ফল হয়েছে।’
টিকা কার্যক্রম থমকে গেছে : স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম প্রসঙ্গে মেনন বলেন, ‘সরকারি ক্রয়নীতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে সরকারি টাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে টিকা সরবরাহের পরিণতি আমরা এখন হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছি। ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার আগেই মার্চ মাসে ৫০ লাখ ডোজের জায়গায় ২০ লাখ ডোজ এসেছিল। একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক স্বার্থে একক উৎসের ওপর নির্ভরতা, ওই স্বার্থবুদ্ধিতা থেকে চীন ও রাশিয়ার টিকা, এমনকি দেশের বায়োএনটেকের টিকা ট্রায়াল করতে দেয়া হয় নাই। ফলে এখন সমস্ত টিকা কার্যক্রম থমকে দাঁড়িয়েছে। পিপিই, মাস্ক নিয়ে দুর্নীতি আমরা দেখেছি। সাহেদ ও সাবরিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু যারা ছবি তুলে চুক্তি করল তাদের কিছুই হয়নি।’
ব্যবসায়ীবান্ধব বাজেট : ক্ষমতাসীন জোটের শরীক দলের নেতা রাশেদ খান মেনন প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী জীবন-জীবিকার প্রধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর কথা বলেছেন। জীবনের দুরাবস্থার কথা আগেই বলেছি, এখন জীবিকার প্রশ্নেও একই কথা। করোনাকালে আড়াই কোটি মানুষ যারা দরিদ্র হয়ে গেলেন বাজেট তাদের জন্য কিছু করল না। এদের মধ্যে গরিব মানুষ, যেমন আছে, তেমনি আছে নি¤œবিত্ত, মধ্যবিত্তরা। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তার বাজেট ব্যবসাবান্ধব। প্রকৃতপক্ষে এটা ব্যবসায়ীবান্ধব। তাও ক্ষুদ্র বা মধ্য উদ্যোক্তা নয়, বড়দের জন্যই সব ব্যবস্থা। করোনার প্রথম পর্বে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্রস্তাবে ৩৫% অর্থ বিতরণ হয়নি। যে গরিব মানুষের জন্য দুই দফায় ২৫০০ টাকা করে দেয়া হয়েছে তার এক তৃতীয়াংশ অব্যয়িত, তারা পায়নি।’