গোপালভোগ আম শেষ পর্যায়ে। বাজারে মিলছে ল্যাংড়া, খিরশাপতি, লক্ষণভোগ ও রাণীপছন্দ আম। তবে ক্রেতার অভাবে দাম কমেছে বলেছে জানিয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। হাটটিতে রোববার ল্যাংড়া আম বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। খিরশাপাতি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা মণ দরে। এছাড়া লক্ষণভোগ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ।
রাজশাহীর সাহেববাজারে আম বিক্রেতা সুমন হোসেন জানান, প্রতিকেজি খিরশাপাতি আম বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ল্যাংড়া আম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লক্ষণভোগ ২০ থেকে ২৫ টাকা ও রাণীপছন্দ ২৫ থেকে ৩০ টাকা, গুটি জাতের আম ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আম ব্যবসায়ী ও চাষিদের দাবি, বাইরের ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না লকডাউন ও করোনা সংক্রমণের ভয়ে। এমন অবস্থায় প্রতিদিনই লোকসান হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে, বিভিন্ন আমের দামে মণপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কমেছে। এছাড়া ক’দিন ধরে জেলায় থেমে থেমে বৃষ্টির কারণেও ক্রেতা সংকটে ভুগছেন রাজশাহীর আম ব্যবসায়ীরা।
চলমান লকডাউনে রাজশাহীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারগুলোতে শুধু ক্রেতা সংকটই নয়, কমেছে আমের মূল্যও। প্রতি মণে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কমেছে। উত্তরের দ্বিতীয় বৃহৎ আমের হাট বানেশ্বর, রাজশাহীর সাহেব বাজার, শালবাগান, রাজশাহী বাসস্ট্যান্ড আমের বাজারেও এমন অবস্থা চলছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বিক্রেতারা জানান, হাটে প্রচুর আম আমদানি হচ্ছে। সে তুলনায় ক্রেতা কম। তাই আম বিক্রি করতে হচ্ছে অল্প দামে। এতে চাষি ও বাগান ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পুঠিয়া ঝলমলিয়ার আম বাগান ব্যবসায়ী মিনহাজ সাকিল গাছের পাতা ও মুকুল দেখে কিনেছিলেন ১০ বিঘা আমের বাগান। আমের ফলনও হয়েছে ভালো। তবে ক্রেতা সংকটে পাচ্ছেন না আমের দাম।
আমের দাম কমার বিষয়ে মো. রহমত আলী নামের বিক্রেতা বলেন, ‘আগে ৩০ থেকে ৫০ মণ আম আমরা নিয়ে আসতাম। বর্তমানে ১০ থেকে ২০ মণ আম বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে আসা হয়।
কারণ, ক্রেতা কম থাকায় সব আম বিক্রি সম্ভব হয় না। তখন আবার মণপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা লসে বিক্রি করতে হয়।’
রাজশাহীর অন্যতম আমের বাজার নগরীর শিরোইল বাসস্ট্যান্ড। প্রতিবছরই এখানে নগরীর আশপাশ থেকে আশা আমের ব্যবসায়ীরা আসেন তাদের বাগানের রসালো আম নিয়ে। পাশেই রেলস্টেশন ও বাসটার্মিনাল হওয়ায় বেচাকেনাও বেশ ভালো হয়। তবে হুট করে লকডাউন জারি হওয়ায় ব্যবসায়িক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন তারা।
এই চত্বরের আম ব্যবসায়ী আফসার আলী বলেন, ‘রাজশাহীর সবচেয়ে জমজমাট জায়গা এই বাসস্ট্যান্ড আম বাজার। প্রতিবছরই আমি এখানে আমার বাগানের আম এনে বিক্রি করি। বাস টার্মিনাল ও রেল স্টেশনের পাশে হওয়ায় অনেক যাত্রীরা এখান থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে আম কেনেন। এতে ব্যবসাও বেশ ভালো হয়। তবে লকডাউনের পর থেকে ক্রেতা নেই। এখন আম নিয়ে বিপদে আছি।’
পবা উপজেলার হরিয়ানের আম ব্যবসায়ী সাজ্জাত রাজশাহীতে ভ্যানে করে ঘুরে আম বেচেন। তিনি বলেন, ‘বানেশ্বর বাজার থেকে আম কিনে রাজশাহীর বিভিন্ন বাজার ও এলাকা ঘুরে আম বিক্রি করি। লকডাউনের কারণে খুব সমস্যা হয়ে গেছে। বাজারে মানুষ কম আবার করোনার কারণে মানুষ বাড়ি থেকে বেরও হচ্ছে না। তাই ব্যবসাও খুব খারাপ যাচ্ছে।’
রাজশাহীর চারঘাটের আম বাগান চাষি সোমেন কয়েক বছর ধরে অনলাইনেই বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, ‘ধরা বাধা কয়েকটা কাস্টমার আছে আমার। তারা এক চালানে দু’ একশ’ মণ আম কুরিয়ারে অর্ডার নেয়। বাইরের জেলা ছাড়াও রাজশাহীতেই অনেক খুচরা ক্রেতা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে অর্ডার পাচ্ছি কম। কোন কোন দিন ফাঁকাও যাচ্ছে।’
রাজশাহী থেকে আম পরিবহন করেন ট্রাকচালক মোস্তাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমের ট্রিপ চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেটে নিয়ে যাই। করোনার আগে সপ্তাহে ৪-৫টা করে ট্রিপ হতো। এ বছর সপ্তাহে একটি করে ট্রিপ হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আম কম পাঠাচ্ছেন।’
বানেশ্বর হাটের ইজারাদার ওসমান আলী বলেন, ‘করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের। এবার হাটে আমের ক্রেতা অনেক কম, কিন্তু উৎপাদন অনেক বেশি। সে তুলনায় খরচ অনুযায়ী পোষাচ্ছে না তাদের।’
তিনি আরও বলেন, ‘দাম কমে যাওয়ায় চাষিরা এবার বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। তবে রাজশাহীতে যদি আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যেত তবে আম ব্যবসায় পুষিয়ে নিতে পারতেন ব্যবসায়ীরা।’ কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাগানে আমের পর্যাপ্ত উৎপাদন হয়েছে। মূলত, করোনার কারণে আমের ক্রেতা বাজারে নেই। লকডাউনের কঠোরতায় দূরবর্তী স্থানে আম পাঠানোতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের।
মঙ্গলবার, ১৫ জুন ২০২১ , ১ আষাড় ১৪২৮ ৩ জিলকদ ১৪৪২
জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী
গোপালভোগ আম শেষ পর্যায়ে। বাজারে মিলছে ল্যাংড়া, খিরশাপতি, লক্ষণভোগ ও রাণীপছন্দ আম। তবে ক্রেতার অভাবে দাম কমেছে বলেছে জানিয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। হাটটিতে রোববার ল্যাংড়া আম বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। খিরশাপাতি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা মণ দরে। এছাড়া লক্ষণভোগ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ।
রাজশাহীর সাহেববাজারে আম বিক্রেতা সুমন হোসেন জানান, প্রতিকেজি খিরশাপাতি আম বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ল্যাংড়া আম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লক্ষণভোগ ২০ থেকে ২৫ টাকা ও রাণীপছন্দ ২৫ থেকে ৩০ টাকা, গুটি জাতের আম ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আম ব্যবসায়ী ও চাষিদের দাবি, বাইরের ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না লকডাউন ও করোনা সংক্রমণের ভয়ে। এমন অবস্থায় প্রতিদিনই লোকসান হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে, বিভিন্ন আমের দামে মণপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কমেছে। এছাড়া ক’দিন ধরে জেলায় থেমে থেমে বৃষ্টির কারণেও ক্রেতা সংকটে ভুগছেন রাজশাহীর আম ব্যবসায়ীরা।
চলমান লকডাউনে রাজশাহীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারগুলোতে শুধু ক্রেতা সংকটই নয়, কমেছে আমের মূল্যও। প্রতি মণে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কমেছে। উত্তরের দ্বিতীয় বৃহৎ আমের হাট বানেশ্বর, রাজশাহীর সাহেব বাজার, শালবাগান, রাজশাহী বাসস্ট্যান্ড আমের বাজারেও এমন অবস্থা চলছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বিক্রেতারা জানান, হাটে প্রচুর আম আমদানি হচ্ছে। সে তুলনায় ক্রেতা কম। তাই আম বিক্রি করতে হচ্ছে অল্প দামে। এতে চাষি ও বাগান ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পুঠিয়া ঝলমলিয়ার আম বাগান ব্যবসায়ী মিনহাজ সাকিল গাছের পাতা ও মুকুল দেখে কিনেছিলেন ১০ বিঘা আমের বাগান। আমের ফলনও হয়েছে ভালো। তবে ক্রেতা সংকটে পাচ্ছেন না আমের দাম।
আমের দাম কমার বিষয়ে মো. রহমত আলী নামের বিক্রেতা বলেন, ‘আগে ৩০ থেকে ৫০ মণ আম আমরা নিয়ে আসতাম। বর্তমানে ১০ থেকে ২০ মণ আম বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে আসা হয়।
কারণ, ক্রেতা কম থাকায় সব আম বিক্রি সম্ভব হয় না। তখন আবার মণপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা লসে বিক্রি করতে হয়।’
রাজশাহীর অন্যতম আমের বাজার নগরীর শিরোইল বাসস্ট্যান্ড। প্রতিবছরই এখানে নগরীর আশপাশ থেকে আশা আমের ব্যবসায়ীরা আসেন তাদের বাগানের রসালো আম নিয়ে। পাশেই রেলস্টেশন ও বাসটার্মিনাল হওয়ায় বেচাকেনাও বেশ ভালো হয়। তবে হুট করে লকডাউন জারি হওয়ায় ব্যবসায়িক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন তারা।
এই চত্বরের আম ব্যবসায়ী আফসার আলী বলেন, ‘রাজশাহীর সবচেয়ে জমজমাট জায়গা এই বাসস্ট্যান্ড আম বাজার। প্রতিবছরই আমি এখানে আমার বাগানের আম এনে বিক্রি করি। বাস টার্মিনাল ও রেল স্টেশনের পাশে হওয়ায় অনেক যাত্রীরা এখান থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে আম কেনেন। এতে ব্যবসাও বেশ ভালো হয়। তবে লকডাউনের পর থেকে ক্রেতা নেই। এখন আম নিয়ে বিপদে আছি।’
পবা উপজেলার হরিয়ানের আম ব্যবসায়ী সাজ্জাত রাজশাহীতে ভ্যানে করে ঘুরে আম বেচেন। তিনি বলেন, ‘বানেশ্বর বাজার থেকে আম কিনে রাজশাহীর বিভিন্ন বাজার ও এলাকা ঘুরে আম বিক্রি করি। লকডাউনের কারণে খুব সমস্যা হয়ে গেছে। বাজারে মানুষ কম আবার করোনার কারণে মানুষ বাড়ি থেকে বেরও হচ্ছে না। তাই ব্যবসাও খুব খারাপ যাচ্ছে।’
রাজশাহীর চারঘাটের আম বাগান চাষি সোমেন কয়েক বছর ধরে অনলাইনেই বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, ‘ধরা বাধা কয়েকটা কাস্টমার আছে আমার। তারা এক চালানে দু’ একশ’ মণ আম কুরিয়ারে অর্ডার নেয়। বাইরের জেলা ছাড়াও রাজশাহীতেই অনেক খুচরা ক্রেতা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে অর্ডার পাচ্ছি কম। কোন কোন দিন ফাঁকাও যাচ্ছে।’
রাজশাহী থেকে আম পরিবহন করেন ট্রাকচালক মোস্তাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমের ট্রিপ চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেটে নিয়ে যাই। করোনার আগে সপ্তাহে ৪-৫টা করে ট্রিপ হতো। এ বছর সপ্তাহে একটি করে ট্রিপ হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আম কম পাঠাচ্ছেন।’
বানেশ্বর হাটের ইজারাদার ওসমান আলী বলেন, ‘করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের। এবার হাটে আমের ক্রেতা অনেক কম, কিন্তু উৎপাদন অনেক বেশি। সে তুলনায় খরচ অনুযায়ী পোষাচ্ছে না তাদের।’
তিনি আরও বলেন, ‘দাম কমে যাওয়ায় চাষিরা এবার বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। তবে রাজশাহীতে যদি আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যেত তবে আম ব্যবসায় পুষিয়ে নিতে পারতেন ব্যবসায়ীরা।’ কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাগানে আমের পর্যাপ্ত উৎপাদন হয়েছে। মূলত, করোনার কারণে আমের ক্রেতা বাজারে নেই। লকডাউনের কঠোরতায় দূরবর্তী স্থানে আম পাঠানোতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের।