রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতুর পাশে দখল হওয়া জায়গা বাদ রেখেই সীমানাখুঁটি বসানোর কাজ করছে বিআইডাব্লিউটিএ। গত রোববার এ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত বছরের মার্চ মাসে বিআইডব্লিউটিএ উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। পরে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এর প্রেক্ষিতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, ঢাকা জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএসহ সরকারের আটটি সংস্থা যৌথ জরিপ করে বলেছিল, বুড়িগঙ্গা নদী, তুরাগ নদ ও জলাশয়ের ৫৪ একরের বেশি জায়গা দখল করে নানান স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। সেই সময় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সুপারিশও করেছিল নদী রক্ষা কমিশন। অথচ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করেই সীমানা খুঁটি বসাচ্ছে বিআইডাব্লিউটিএ।
দখল উচ্ছেদ করে সীমানা খুঁটি বসানো হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা না করে বিআইডব্লিউটিএ সীমানা খুঁটি বসানোর কাজ করছে কার স্বার্থেÑ সেই প্রশ্ন উঠেছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করে সীমানা খুঁটি বসিয়ে নদী দখলকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে বলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার গণমাধ্যমকে বলেছেন, এককভাবে বিআইডব্লিউটিএ সেখানে নদীর সীমানা খুঁটি বসাতে পারে না। তারা অন্যায় করছে। হাইকোর্টের রায়ের পরিপন্থী কাজ করছে। এখানে কোনো যোগসাজশ আছে বলে মনে হয়।
বিআইডব্লিউটিএর সীমানা খুঁটি বসানো সম্পর্কে নদী রক্ষা কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান এএসএম আলী কবীর বলেছেন, ‘আমাদের কনসার্ন নেয়নি বলেই আমি জানি।’ বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেকে বলেছেন, আমরা তো নদী রক্ষা কমিশনের অধীনে কাজ করি না। আমরা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করি। আমাদের দায়িত্ব সীমানা খুঁটি বসিয়ে দেওয়া, কারণ প্রকল্পটা তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে।
বিআইডব্লিউটিএ কার অধীনে কাজ করে বা অভিযোগ অনুযায়ী কারো স্বার্থ রক্ষা করে কাজ করে কিনাÑ সেটা একটা প্রশ্ন। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের নদ-নদীগুলোর অভিভাবক কে? এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার তুরাগ নদকে ‘জীবন্ত সত্তা’ ঘোষণা করে দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়কে রক্ষার জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে ‘আইনগত অভিভাবক’ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। পরে ওই বছরের ১ জুলাই প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘নদ-নদীসংশ্লিষ্ট সব সংস্থা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আজ থেকে বাংলাদেশের সব নদ-নদীর দূষণ ও দখলমুক্ত করে স্বাভাবিক নৌ চলাচলের উপযোগী করে সুরক্ষা, সংরক্ষণ, উন্নয়ন, শ্রীবৃদ্ধিসহ যাবতীয় উন্নয়নে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বাধ্য থাকবে। নদ-নদীসংশ্লিষ্ট সব সংস্থা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নদী কমিশনকে সঠিক এবং যথাযথ সাহায্য-সহযোগিতা দিতে বাধ্য থাকবে।’
আদালতের এ রায় তখনকার সময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে প্রচারিত হয়েছিল। এটা কারও না জানার কথা নয়। বিশেষ করে নদীর সীমানা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের তো জানবার কথাই যে, নদ-নদীর ‘আইনগত অভিভাবক’ জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। নদ-নদী নিয়ে কিছু করতে হলে কমিশনকে জানাতে হবে বা তাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। অথচ তুরাগ ও বুড়িগঙ্গার সংযোগস্থলের পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করে সীমানাখুঁটি বসানোর ক্ষেত্রে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে উপেক্ষা করা হয়েছে। কোন অবস্থাতেই এটা মেনে নেয়া যায় না। সীমানা খুঁটি বসানোর আগে অবশ্যই দখল উচ্ছেদ করতে হবে। দখল উচ্ছেদ না করেই সীমানা খুঁটি বসানোর কারণ খুঁজে দেখতে হবে ও সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
মঙ্গলবার, ১৫ জুন ২০২১ , ১ আষাড় ১৪২৮ ৩ জিলকদ ১৪৪২
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতুর পাশে দখল হওয়া জায়গা বাদ রেখেই সীমানাখুঁটি বসানোর কাজ করছে বিআইডাব্লিউটিএ। গত রোববার এ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত বছরের মার্চ মাসে বিআইডব্লিউটিএ উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। পরে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এর প্রেক্ষিতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, ঢাকা জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএসহ সরকারের আটটি সংস্থা যৌথ জরিপ করে বলেছিল, বুড়িগঙ্গা নদী, তুরাগ নদ ও জলাশয়ের ৫৪ একরের বেশি জায়গা দখল করে নানান স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। সেই সময় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সুপারিশও করেছিল নদী রক্ষা কমিশন। অথচ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করেই সীমানা খুঁটি বসাচ্ছে বিআইডাব্লিউটিএ।
দখল উচ্ছেদ করে সীমানা খুঁটি বসানো হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা না করে বিআইডব্লিউটিএ সীমানা খুঁটি বসানোর কাজ করছে কার স্বার্থেÑ সেই প্রশ্ন উঠেছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করে সীমানা খুঁটি বসিয়ে নদী দখলকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে বলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার গণমাধ্যমকে বলেছেন, এককভাবে বিআইডব্লিউটিএ সেখানে নদীর সীমানা খুঁটি বসাতে পারে না। তারা অন্যায় করছে। হাইকোর্টের রায়ের পরিপন্থী কাজ করছে। এখানে কোনো যোগসাজশ আছে বলে মনে হয়।
বিআইডব্লিউটিএর সীমানা খুঁটি বসানো সম্পর্কে নদী রক্ষা কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান এএসএম আলী কবীর বলেছেন, ‘আমাদের কনসার্ন নেয়নি বলেই আমি জানি।’ বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেকে বলেছেন, আমরা তো নদী রক্ষা কমিশনের অধীনে কাজ করি না। আমরা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করি। আমাদের দায়িত্ব সীমানা খুঁটি বসিয়ে দেওয়া, কারণ প্রকল্পটা তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে।
বিআইডব্লিউটিএ কার অধীনে কাজ করে বা অভিযোগ অনুযায়ী কারো স্বার্থ রক্ষা করে কাজ করে কিনাÑ সেটা একটা প্রশ্ন। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের নদ-নদীগুলোর অভিভাবক কে? এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার তুরাগ নদকে ‘জীবন্ত সত্তা’ ঘোষণা করে দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়কে রক্ষার জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে ‘আইনগত অভিভাবক’ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। পরে ওই বছরের ১ জুলাই প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘নদ-নদীসংশ্লিষ্ট সব সংস্থা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আজ থেকে বাংলাদেশের সব নদ-নদীর দূষণ ও দখলমুক্ত করে স্বাভাবিক নৌ চলাচলের উপযোগী করে সুরক্ষা, সংরক্ষণ, উন্নয়ন, শ্রীবৃদ্ধিসহ যাবতীয় উন্নয়নে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বাধ্য থাকবে। নদ-নদীসংশ্লিষ্ট সব সংস্থা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নদী কমিশনকে সঠিক এবং যথাযথ সাহায্য-সহযোগিতা দিতে বাধ্য থাকবে।’
আদালতের এ রায় তখনকার সময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে প্রচারিত হয়েছিল। এটা কারও না জানার কথা নয়। বিশেষ করে নদীর সীমানা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের তো জানবার কথাই যে, নদ-নদীর ‘আইনগত অভিভাবক’ জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। নদ-নদী নিয়ে কিছু করতে হলে কমিশনকে জানাতে হবে বা তাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। অথচ তুরাগ ও বুড়িগঙ্গার সংযোগস্থলের পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করে সীমানাখুঁটি বসানোর ক্ষেত্রে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে উপেক্ষা করা হয়েছে। কোন অবস্থাতেই এটা মেনে নেয়া যায় না। সীমানা খুঁটি বসানোর আগে অবশ্যই দখল উচ্ছেদ করতে হবে। দখল উচ্ছেদ না করেই সীমানা খুঁটি বসানোর কারণ খুঁজে দেখতে হবে ও সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।