বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব

মোস্তাফা জব্বার

পাঁচ ॥

বঙ্গবন্ধুর জীবন ও সংগ্রাম মানেই একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, শোষণহীন এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। তার আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন- ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানব জাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্ত সম্পৃত্তির উৎস ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’

সুতরাং সুখী-সমৃদ্ধ, আত্মনির্ভর, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তার জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে গভীর গবেষণা, নিবিড় অধ্যয়ন ও তা থেকে অর্জিত শিক্ষা রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রয়োগের কোনো বিকল্প নেই। এটি অপ্রিয় সত্য যে, বঙ্গবন্ধুর এসব অমর বাণী সচরাচর আমাদের জীবনে আমরা প্রয়োগই করি না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বললেও যে মৌলিক আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশের জন্ম সেই আদর্শগুলোই আমরা ভুলে থাকার চেষ্টা করি। বিশেষত আমাদের নতুন প্রজন্ম এসব বিষয় জানে বলেও মনে হয় না। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা ও অসাম্প্রদায়িকতা ততটা গুরুত্ব দিয়ে দেখাই হয় না। তাই বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব বা বাকশাল গঠনের ইতিহাস ও তার বিষয়বস্তু জানাটা তাই খুবই জরুরি।

বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বিভিন্ন ভাষণে নতুন এ ব্যবস্থায় একটি শোষণমুক্ত বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি ফুটে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যায় যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না আসে। যদি দুঃখী মানুষ পেট ভরে ভাত খেতে না পারে, কাপড় পরতে না পারে, বেকার যদি কাজ না পায়, বেকার সমস্যা দূর না হয়- তাহলে মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসতে পারে না। দুর্নীতিবাজদের চরিত্র সম্বন্ধে তিনি সম্যক জানতেন। তিনি বলতেন যে ফাঁকি দেয় সে দুর্নীতিবাজ। যে ঘুষ খায় সে দুর্নীতিবাজ। যে স্মাগলিং করে সে দুর্নীতিবাজ। যে ব্লাকমার্কেটিং করে সে দুর্নীতিবাজ। যে হোর্ড করে সে দুর্নীতিবাজ। যারা কর্তব্য পালন করে না তারা দুর্নীতিবাজ। যারা বিবেকের বিরুদ্ধে কাজ করে তারাও দুর্নীতিবাজ। যারা বিদেশের কাছে দেশকে বিক্রি করে তারাও দুর্নীতিবাজ। এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করার জন্য বঙ্গবন্ধু সোচ্চার ছিলেন। তিনি ইংরেজ আমলের, পাকিস্তানি আমলের যে ঘুণে ধরা শাসনব্যবস্থা তা চলতে দেওয়ার ঘোরবিরোধী ছিলেন। একে নতুন করে ঢেলে সাজানোর স্বপ্ন ছিল। দেশের মঙ্গলের জন্য তার অবিরাম চেষ্টা ছিল। বঙ্গবন্ধু তার তিন বছর শাসনামলের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে বলেছিলেন, আমি আমার স্থির বিশ্বাসে পৌঁছেছি এবং তাই জনগণকে পৌঁছিয়ে দিতে হবে শাসনতন্ত্রের মর্মকথা।

তিনি বিশ্বাস করতেন যে, সরকারি আইন করে কোনদিন দুর্নীতিবাজদের দমন করা সম্ভব নয় জনগণের সমর্থন প্রয়োজন। তিনি তার ৭ মার্চ প্রদত্ত বক্তৃতার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে জেহাদ করতে হবে, যুদ্ধ করতে হবে শত্রুর বিরুদ্ধে। আজকে আমি বলবো, বাংলার জনগণের এক নম্বর কাজ হবে, দুর্নীতিবাজদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে। আমি আপনাদের সাহায্য চাই। কেমন করে করতে হবে। আইন চালাবো, ক্ষমা করব না। যাকে পাবো ছাড়বো না। একটা কাজ আপনাদের করতে হবে। গণআন্দোলন করতে হবে। তিনি জাপানের জমির সঙ্গে বাংলাদেশের জমির উর্বরতার কথা তুলে ধরে জনগণকে খাদ্য ফসল উৎপাদনে উৎসাহ জোগান। জনসংখ্যা ও জাতীয় ঐক্যের ওপর তিনি অশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। অত্যন্ত সাধারণ ও জনপ্রিয় ভাষায় তিনি জনগণের কাছে অকপটে এ বিষয় তুলে ধরে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা চেয়েছিলেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি ব্যাপকভিত্তিক জাতীয় দলের শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা সম্বন্ধে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন-

সমাজ ব্যবস্থায় যেন ঘুণে ধরেছে। এ সমাজের প্রতি চরম আঘাত করতে চাই- যে আঘাত করেছিলাম পাকিস্তানিদের। যে আঘাত করতে চাই এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে। আমি আপনাদের সমর্থন চাই...। কিন্তু একটা কথা, এই যে নতুন সিস্টেমে যেতে চাচ্ছি আমি, গ্রামে গ্রামে বহুমুখী কো-অপারেটিভ করা হবে। ... পাঁচ বছরের প্ল্যান- এই বাংলাদেশের ৬৫ হাজার গ্রামে কো-অপারেটিভ হবে। প্রত্যেকটি গ্রামে এই কো-অপারেটিভ এ জমির মালিকের জমি থাকবে। এগুলো বহুমুখী কো-অপারেটিভ হবে। পয়সা যাবে তাদের কাছে, ফাটিলাইজার যাবে তাদের কাছে, টেস্ট রিলিফ যাবে তাদের কাছে, ওয়ার্কস প্রোগ্রাম যাবে তাদের কাছে। ... আমি আজকে ঘোষণা করছি যে, পাঁচ বছরের প্ল্যানে প্রত্যেকটি গ্রামে পাঁচশত থেকে হাজার ফ্যামিলি পর্যন্ত নিয়ে কম্পালসারি কো-অপারেটিভ হবে।

আপনাদের জমির ফসল আপনি নেবেন, একটি অংশ যাবে কো-অপারেটিভের হাতে, একটি অংশ যাবে গভর্নমেন্টের হাতে। ... সমস্ত মহকুমা জেলা হয়ে যাবে। যেখানে তারা সরকার চালাবেন- এভাবে আমি একটা সিস্টেমের চিন্তা করছি এবং করবো বলে ইনশাআল্লাহ আমি ঠিক করেছি। ... কি করে আমরা বাঁচতে পারি তার বন্দোবস্ত করতে হবে। বিচার বিভাগকে নতুন করে এমন করতে হবে যে, থানায় ট্রাইব্যুনাল করার চেষ্টা করছি এবং সেখানে মানুষ এক বছর বা দেড় বছরের মধ্যে বিচার পাবে- তার বন্দোবস্ত করছি। এই যে চারটি প্রোগ্রাম দিলাম, এই যে আমি কো-অপারেটিভ করব, থানা কাউন্সিল করব, সাবডিভিশনাল কাউন্সিল হবে, আর আমি যে আপনাদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ফসল চেয়েছি, জমিতে যে ফসল হয় তার ডাবল, কলকারখানায় কাজ। সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা একটু ইনডিসিপ্লিন হয়ে গেছেন। অফিসে যান ঠিকমতো, কাজ করেন। আপনাদের কষ্ট আছে ... আমি জানি। দুঃখী মানুষ আপনারা। আপনারা কাজ করেন। যাদের পেটে খাবার নাই তাদের ওপর ট্যাক্স বসিয়ে আমি আপনাদের পুষতে পারব না। প্রোডাকশন বাড়লে আপনাদেরও উন্নতি হবে ...।

বহুদিন রাজনীতি করেছি। ১৮ বছর বয়স থেকে। তখন বোধহয় ১৯৩৮ সাল। তারপর চোঙ্গা মুখে দিয়ে রাজনীতি করেছি, রাস্তায় হেঁটেছি, পায়ে হেঁটেছি, ফুটপাতে ঘুমিয়েছি। সেই রাজনীতি থেকে আজ এ পর্যন্ত এসেছি। আমি বলতে চাই না যে, আমি সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছি। সাধারণ মানুষ থেকে আমি চোঙ্গা ফুঁকেছি। সাইকেলে ঘুরেছি, গ্রামে গ্রামে ঘুরে রাজনীতি করেছি। আমি জানি, একটা খবরের কাগজ চলতে পারে না, যদি অ্যাডভার্টাইজমেন্ট না পায়। বছরের পর বছর এই টাকা কোনো পলিটিক্যাল পার্টি ব্যয় করতে পারে বলে আমার জানা নাই। আর আমি হলাম বিগেস্ট পলিটিক্যাল পার্টি লিডার। আমি দেশে একটা পার্টি গড়ে তুলেছি এবং চালিয়েছি, যেটা নাম্বার ওয়ান পলিটিক্যাল পার্টি অব বাংলাদেশ, কিন্তু আমি একটি ডেইলি কাগজ চালাতে পারি না। বরং মানিক ভাইয়ের এবিলিটি এবং এক্সপেরিয়েন্স ছিল, ইত্তেফাক কাগজ চালাতেন তিনি। তা থেকে আমাদের সমর্থন করতেন। অথচ এই তিন বছরের মধ্যে দেখা গেল, এমন কাগজও চললো, যে কাগজ বছরে ১ ইঞ্চি অ্যাডভার্টাইজমেন্ট পায় নাই। কিন্তু একটা কাগজ করতে মাসে কমপক্ষে এক লাখ, সোয়া লাখ, দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। আজকে এ টাকা তারা কোথা থেকে পায়? কে দেয় তাদের এই টাকা, কোথা থেকে আসে? তারপর ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট বলতে যে পদার্থ বাংলাদেশে আছে, তাদের এত টাকা আছে বলে আমার জানা নাই। ... এখন কিছু লোক নতুন টাকার মানুষ হয়েছে। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি তো আমরা নিয়ে নিলাম। দেখা গেল যে, বিদেশের কিছু কিছু জায়গা থেকে পয়সা পেয়ে তারা দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, গোলমাল সৃষ্টি করে।

দ্বিতীয় কথা হলো, আমরা এ সিস্টেম ইন্ট্রোডিউস করলাম কেন? এই যে আমাদের সমাজ এখানে দেখতে পাই- আমি অনেক চিন্তা করেছি, বহুদিন কারাগারে একলা বসে বসে চিন্তা করতে সময় পেয়েছি এসব বিষয়ে যে, আমার দেশের ২০% লোক শিক্ষিত। তার মধ্যে আমরা ১০% বা ৫% লোক লেখাপড়া কিছুটা জানি। কিন্তু একচুয়াল যেটা পিপল, তাদেরসহ সবাইকে একতাবদ্ধ করতে না পারলে সমাজের দুর্দিনে দেশের মঙ্গল হতে পারে না। ... আমার সমাজে তো শতকরা ২০ জনের বেশি শিক্ষিত নন- এদের মধ্যে সমস্ত লোককে একতাবদ্ধ করে দেশের মঙ্গলের জন্য যদি এগিয়ে যেতে না পারি, তবে দেশের মঙ্গল করা কষ্টকর হবে। সেজন্য নতুন সৃষ্টির কথা বহুদিন পর্যন্ত চিন্তা করেছি।

একদল বলে আমরা পলিটিশিয়ান, একদল বলে আমরা ব্যুরোক্রেট। তাদের অ্যাটিটিউড হলো- হাউ টু ডিসক্রেডিট পলিটিশিয়ান। পলিটিশিয়ানরা তাদের স্ট্রেংথ দেখাবার জন্য বলতো যে, অলরাইট, গেট আউট। এ নিয়ে সমস্ত দেশ ভাগ-ভাগ অবস্থার মধ্যে থাকতো। এই সন্দেহটা দূর করা দরকার এবং দূর করে সবাই যে এক এবং সবাই যে দেশকে ভালবাসে এবং মঙ্গল চায়- এটা প্রমাণ করতে হবে। আমার সমাজে যে সমস্ত গুণী-জ্ঞানী লোক আছেন ও অন্য ধরনের যত লোক আছেন তাদের নিয়ে আমার একটা পুল করা দরকার। এ পুল আমি কিনতে পারি যদি আমি নতুন একটা সিস্টেম চালু করি এবং একটা নতুন দল সৃষ্টি করি- জাতীয় দল, যার মধ্যে এক মত, এক পথ, এক ভাব- এক হয়ে দেশকে ভালোবাসা যায়। পয়সা-কড়ি খরচ করে অন্য ধরনের রাজনীতি করা যায়। তাতে দেখা গেছে যে, সত্যিকারের ভালো লোক অনেক সময় নাও আসতে পারে। কিন্তু এতে সত্যিকারের ভালো লোক আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সেজন্য এ সিস্টেম করা হয়েছে। জাতীয় ঐক্য আমরা করতে পারবো। যারা দেশকে ভালোবাসে না, দেশের সঙ্গে বেইমানি করছিল, তাদের সবাইকে আমরা ক্ষমা করলাম। স্বাধীনতার সঙ্গে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করলো, বেইমানি করল, রাজাকার হলো, তাদেরও আমরা ক্ষমা করে দিলাম। অন্য দেশে বিপ্লবের পরে এভাবে ক্ষমা করে নাই। একেবারে নির্মূল করে দিয়েছে। কিন্তু আমরা ক্ষমা করলাম। বললাম যে, ঠিক আছে, তওবা করো, আল্লাহ তোমাদের ঈমান দিক। তোমরা দেশের জন্য কাজ করো। কিন্তু চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী। তাদের মধ্যে একটা গ্রুপ সেই শত্রু- যে শত্রু আমাদের এখানে ম্যাসাকার করল, তাদের মাধ্যমে লন্ডনে বসে অর্থ খরচ করে বাংলাদেশের মধ্যে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে আরম্ভ করল। তাদের কি অধিকার আছে বাংলাদেশের রাজনীতি করবার? প্রভিশন হবে ষাটটি জেলার। প্রত্যেক জেলার জন্য একজন গভর্নর থাকবেন। সেখানে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। তার অধীনে এসপি থাকবেন। দলের প্রতিনিধিরা থাকবেন, সংসদ সদস্যরা থাকবেন, জনগণের প্রতিনিধিরা থাকবেন। শাসন ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। জেলা গভর্নরের কাছে যাবে আমার ওয়ার্কস প্রোগ্রামের টাকা। তার কাছে যাবে আমার খাদ্যসামগ্রী। তার কাছে যাবে আমার টেস্ট রিলিফ, লোন, বিল ও সেচ প্রকল্পের টাকা। আই বিলভ ইন পজিটিভ অ্যাপ্রোচ নট এ নেগেটিভ অ্যাপ্রোচ। সেজন্য আমার পার্টিতে আপনারা যারা আছেন, আসুন আমরা পজিটিভ অ্যাপ্রোচ নিই। আমি যখন খুব ইয়ং ছিলাম; আমার নেতা সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে কেউ গালাগালি করলে আমি রাগ করে তার কাছে যেতাম। তিনি হেসে বলতেন, থাক বলতে দাও। ওতে কী হবে? উনি আমাকে বলতেন, থিংক ফর এ পজিটিভ অ্যাপ্রোচ দ্যান এ নেগেটিভ অ্যাপ্রোচ। আমার লাইফকে আমি এই দৃষ্টিতেই দেখেছি।

নতুন দলে আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স, সরকারি কর্মচারী, বেসরকারি কর্মচারী, পলিটিশিয়ান, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, ডক্টরস, ইঞ্জিনিয়ার্স যতদূর সম্ভবপর এদের রাখার চেষ্টা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। পলিটিশিয়ানদের মধ্যে অনেক এক্সপেরিয়েন্সড-পুরনো বন্ধুদেরও বঙ্গবন্ধু তার নতুন দলে অন্তর্ভুক্ত করেন। তারাও সানন্দে দেশ গড়ার ব্রত নিয়ে এতে যোগদানের বিষয়ে সম্মতি প্রদান করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, সেকেন্ড রেভল্যুশন ইজ নট দ্য অ্যান্ড। সেকেন্ড রেভল্যুশন করে তিনি চারটা প্রোগ্রাম দেন। সেকেন্ড রেভল্যুশনের মূল কথা হলো- শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। বঙ্গবন্ধুর গৃহীত ব্যবস্থাগুলো দেশের পরিস্থিতিতে কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেও বাস্তবিকভাবে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিরোধী দলের উপস্থিতি বিলুপ্ত হয়। গোপন চরমপন্থি দলগুলোর তৎপরতা কমে যায়। উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে থাকে। খাদ্যদ্রব্য এবং ন্যূনতম প্রয়োজনের অন্যান্য পণ্যে মূল্যবৃদ্ধি রহিত হয়- এমনকি কিছু কিছু দ্রব্যের মূল্যও হ্রাস পায়।

ঢাকা। ২৬ মার্চ, ২০১৯। আপডেট : ৬ জুন, ২০২১।

[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান; সাংবাদিক, বিজয় কিবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং বিজয় ডিজিটাল শিক্ষা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক]

mustafajabbar@gmail.com

মঙ্গলবার, ১৫ জুন ২০২১ , ১ আষাড় ১৪২৮ ৩ জিলকদ ১৪৪২

বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব

মোস্তাফা জব্বার

পাঁচ ॥

বঙ্গবন্ধুর জীবন ও সংগ্রাম মানেই একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, শোষণহীন এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। তার আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন- ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানব জাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্ত সম্পৃত্তির উৎস ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’

সুতরাং সুখী-সমৃদ্ধ, আত্মনির্ভর, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তার জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে গভীর গবেষণা, নিবিড় অধ্যয়ন ও তা থেকে অর্জিত শিক্ষা রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রয়োগের কোনো বিকল্প নেই। এটি অপ্রিয় সত্য যে, বঙ্গবন্ধুর এসব অমর বাণী সচরাচর আমাদের জীবনে আমরা প্রয়োগই করি না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বললেও যে মৌলিক আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশের জন্ম সেই আদর্শগুলোই আমরা ভুলে থাকার চেষ্টা করি। বিশেষত আমাদের নতুন প্রজন্ম এসব বিষয় জানে বলেও মনে হয় না। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা ও অসাম্প্রদায়িকতা ততটা গুরুত্ব দিয়ে দেখাই হয় না। তাই বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব বা বাকশাল গঠনের ইতিহাস ও তার বিষয়বস্তু জানাটা তাই খুবই জরুরি।

বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বিভিন্ন ভাষণে নতুন এ ব্যবস্থায় একটি শোষণমুক্ত বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি ফুটে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যায় যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না আসে। যদি দুঃখী মানুষ পেট ভরে ভাত খেতে না পারে, কাপড় পরতে না পারে, বেকার যদি কাজ না পায়, বেকার সমস্যা দূর না হয়- তাহলে মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসতে পারে না। দুর্নীতিবাজদের চরিত্র সম্বন্ধে তিনি সম্যক জানতেন। তিনি বলতেন যে ফাঁকি দেয় সে দুর্নীতিবাজ। যে ঘুষ খায় সে দুর্নীতিবাজ। যে স্মাগলিং করে সে দুর্নীতিবাজ। যে ব্লাকমার্কেটিং করে সে দুর্নীতিবাজ। যে হোর্ড করে সে দুর্নীতিবাজ। যারা কর্তব্য পালন করে না তারা দুর্নীতিবাজ। যারা বিবেকের বিরুদ্ধে কাজ করে তারাও দুর্নীতিবাজ। যারা বিদেশের কাছে দেশকে বিক্রি করে তারাও দুর্নীতিবাজ। এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করার জন্য বঙ্গবন্ধু সোচ্চার ছিলেন। তিনি ইংরেজ আমলের, পাকিস্তানি আমলের যে ঘুণে ধরা শাসনব্যবস্থা তা চলতে দেওয়ার ঘোরবিরোধী ছিলেন। একে নতুন করে ঢেলে সাজানোর স্বপ্ন ছিল। দেশের মঙ্গলের জন্য তার অবিরাম চেষ্টা ছিল। বঙ্গবন্ধু তার তিন বছর শাসনামলের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে বলেছিলেন, আমি আমার স্থির বিশ্বাসে পৌঁছেছি এবং তাই জনগণকে পৌঁছিয়ে দিতে হবে শাসনতন্ত্রের মর্মকথা।

তিনি বিশ্বাস করতেন যে, সরকারি আইন করে কোনদিন দুর্নীতিবাজদের দমন করা সম্ভব নয় জনগণের সমর্থন প্রয়োজন। তিনি তার ৭ মার্চ প্রদত্ত বক্তৃতার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে জেহাদ করতে হবে, যুদ্ধ করতে হবে শত্রুর বিরুদ্ধে। আজকে আমি বলবো, বাংলার জনগণের এক নম্বর কাজ হবে, দুর্নীতিবাজদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে। আমি আপনাদের সাহায্য চাই। কেমন করে করতে হবে। আইন চালাবো, ক্ষমা করব না। যাকে পাবো ছাড়বো না। একটা কাজ আপনাদের করতে হবে। গণআন্দোলন করতে হবে। তিনি জাপানের জমির সঙ্গে বাংলাদেশের জমির উর্বরতার কথা তুলে ধরে জনগণকে খাদ্য ফসল উৎপাদনে উৎসাহ জোগান। জনসংখ্যা ও জাতীয় ঐক্যের ওপর তিনি অশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। অত্যন্ত সাধারণ ও জনপ্রিয় ভাষায় তিনি জনগণের কাছে অকপটে এ বিষয় তুলে ধরে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা চেয়েছিলেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি ব্যাপকভিত্তিক জাতীয় দলের শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা সম্বন্ধে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন-

সমাজ ব্যবস্থায় যেন ঘুণে ধরেছে। এ সমাজের প্রতি চরম আঘাত করতে চাই- যে আঘাত করেছিলাম পাকিস্তানিদের। যে আঘাত করতে চাই এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে। আমি আপনাদের সমর্থন চাই...। কিন্তু একটা কথা, এই যে নতুন সিস্টেমে যেতে চাচ্ছি আমি, গ্রামে গ্রামে বহুমুখী কো-অপারেটিভ করা হবে। ... পাঁচ বছরের প্ল্যান- এই বাংলাদেশের ৬৫ হাজার গ্রামে কো-অপারেটিভ হবে। প্রত্যেকটি গ্রামে এই কো-অপারেটিভ এ জমির মালিকের জমি থাকবে। এগুলো বহুমুখী কো-অপারেটিভ হবে। পয়সা যাবে তাদের কাছে, ফাটিলাইজার যাবে তাদের কাছে, টেস্ট রিলিফ যাবে তাদের কাছে, ওয়ার্কস প্রোগ্রাম যাবে তাদের কাছে। ... আমি আজকে ঘোষণা করছি যে, পাঁচ বছরের প্ল্যানে প্রত্যেকটি গ্রামে পাঁচশত থেকে হাজার ফ্যামিলি পর্যন্ত নিয়ে কম্পালসারি কো-অপারেটিভ হবে।

আপনাদের জমির ফসল আপনি নেবেন, একটি অংশ যাবে কো-অপারেটিভের হাতে, একটি অংশ যাবে গভর্নমেন্টের হাতে। ... সমস্ত মহকুমা জেলা হয়ে যাবে। যেখানে তারা সরকার চালাবেন- এভাবে আমি একটা সিস্টেমের চিন্তা করছি এবং করবো বলে ইনশাআল্লাহ আমি ঠিক করেছি। ... কি করে আমরা বাঁচতে পারি তার বন্দোবস্ত করতে হবে। বিচার বিভাগকে নতুন করে এমন করতে হবে যে, থানায় ট্রাইব্যুনাল করার চেষ্টা করছি এবং সেখানে মানুষ এক বছর বা দেড় বছরের মধ্যে বিচার পাবে- তার বন্দোবস্ত করছি। এই যে চারটি প্রোগ্রাম দিলাম, এই যে আমি কো-অপারেটিভ করব, থানা কাউন্সিল করব, সাবডিভিশনাল কাউন্সিল হবে, আর আমি যে আপনাদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ফসল চেয়েছি, জমিতে যে ফসল হয় তার ডাবল, কলকারখানায় কাজ। সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা একটু ইনডিসিপ্লিন হয়ে গেছেন। অফিসে যান ঠিকমতো, কাজ করেন। আপনাদের কষ্ট আছে ... আমি জানি। দুঃখী মানুষ আপনারা। আপনারা কাজ করেন। যাদের পেটে খাবার নাই তাদের ওপর ট্যাক্স বসিয়ে আমি আপনাদের পুষতে পারব না। প্রোডাকশন বাড়লে আপনাদেরও উন্নতি হবে ...।

বহুদিন রাজনীতি করেছি। ১৮ বছর বয়স থেকে। তখন বোধহয় ১৯৩৮ সাল। তারপর চোঙ্গা মুখে দিয়ে রাজনীতি করেছি, রাস্তায় হেঁটেছি, পায়ে হেঁটেছি, ফুটপাতে ঘুমিয়েছি। সেই রাজনীতি থেকে আজ এ পর্যন্ত এসেছি। আমি বলতে চাই না যে, আমি সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছি। সাধারণ মানুষ থেকে আমি চোঙ্গা ফুঁকেছি। সাইকেলে ঘুরেছি, গ্রামে গ্রামে ঘুরে রাজনীতি করেছি। আমি জানি, একটা খবরের কাগজ চলতে পারে না, যদি অ্যাডভার্টাইজমেন্ট না পায়। বছরের পর বছর এই টাকা কোনো পলিটিক্যাল পার্টি ব্যয় করতে পারে বলে আমার জানা নাই। আর আমি হলাম বিগেস্ট পলিটিক্যাল পার্টি লিডার। আমি দেশে একটা পার্টি গড়ে তুলেছি এবং চালিয়েছি, যেটা নাম্বার ওয়ান পলিটিক্যাল পার্টি অব বাংলাদেশ, কিন্তু আমি একটি ডেইলি কাগজ চালাতে পারি না। বরং মানিক ভাইয়ের এবিলিটি এবং এক্সপেরিয়েন্স ছিল, ইত্তেফাক কাগজ চালাতেন তিনি। তা থেকে আমাদের সমর্থন করতেন। অথচ এই তিন বছরের মধ্যে দেখা গেল, এমন কাগজও চললো, যে কাগজ বছরে ১ ইঞ্চি অ্যাডভার্টাইজমেন্ট পায় নাই। কিন্তু একটা কাগজ করতে মাসে কমপক্ষে এক লাখ, সোয়া লাখ, দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। আজকে এ টাকা তারা কোথা থেকে পায়? কে দেয় তাদের এই টাকা, কোথা থেকে আসে? তারপর ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট বলতে যে পদার্থ বাংলাদেশে আছে, তাদের এত টাকা আছে বলে আমার জানা নাই। ... এখন কিছু লোক নতুন টাকার মানুষ হয়েছে। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি তো আমরা নিয়ে নিলাম। দেখা গেল যে, বিদেশের কিছু কিছু জায়গা থেকে পয়সা পেয়ে তারা দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, গোলমাল সৃষ্টি করে।

দ্বিতীয় কথা হলো, আমরা এ সিস্টেম ইন্ট্রোডিউস করলাম কেন? এই যে আমাদের সমাজ এখানে দেখতে পাই- আমি অনেক চিন্তা করেছি, বহুদিন কারাগারে একলা বসে বসে চিন্তা করতে সময় পেয়েছি এসব বিষয়ে যে, আমার দেশের ২০% লোক শিক্ষিত। তার মধ্যে আমরা ১০% বা ৫% লোক লেখাপড়া কিছুটা জানি। কিন্তু একচুয়াল যেটা পিপল, তাদেরসহ সবাইকে একতাবদ্ধ করতে না পারলে সমাজের দুর্দিনে দেশের মঙ্গল হতে পারে না। ... আমার সমাজে তো শতকরা ২০ জনের বেশি শিক্ষিত নন- এদের মধ্যে সমস্ত লোককে একতাবদ্ধ করে দেশের মঙ্গলের জন্য যদি এগিয়ে যেতে না পারি, তবে দেশের মঙ্গল করা কষ্টকর হবে। সেজন্য নতুন সৃষ্টির কথা বহুদিন পর্যন্ত চিন্তা করেছি।

একদল বলে আমরা পলিটিশিয়ান, একদল বলে আমরা ব্যুরোক্রেট। তাদের অ্যাটিটিউড হলো- হাউ টু ডিসক্রেডিট পলিটিশিয়ান। পলিটিশিয়ানরা তাদের স্ট্রেংথ দেখাবার জন্য বলতো যে, অলরাইট, গেট আউট। এ নিয়ে সমস্ত দেশ ভাগ-ভাগ অবস্থার মধ্যে থাকতো। এই সন্দেহটা দূর করা দরকার এবং দূর করে সবাই যে এক এবং সবাই যে দেশকে ভালবাসে এবং মঙ্গল চায়- এটা প্রমাণ করতে হবে। আমার সমাজে যে সমস্ত গুণী-জ্ঞানী লোক আছেন ও অন্য ধরনের যত লোক আছেন তাদের নিয়ে আমার একটা পুল করা দরকার। এ পুল আমি কিনতে পারি যদি আমি নতুন একটা সিস্টেম চালু করি এবং একটা নতুন দল সৃষ্টি করি- জাতীয় দল, যার মধ্যে এক মত, এক পথ, এক ভাব- এক হয়ে দেশকে ভালোবাসা যায়। পয়সা-কড়ি খরচ করে অন্য ধরনের রাজনীতি করা যায়। তাতে দেখা গেছে যে, সত্যিকারের ভালো লোক অনেক সময় নাও আসতে পারে। কিন্তু এতে সত্যিকারের ভালো লোক আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সেজন্য এ সিস্টেম করা হয়েছে। জাতীয় ঐক্য আমরা করতে পারবো। যারা দেশকে ভালোবাসে না, দেশের সঙ্গে বেইমানি করছিল, তাদের সবাইকে আমরা ক্ষমা করলাম। স্বাধীনতার সঙ্গে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করলো, বেইমানি করল, রাজাকার হলো, তাদেরও আমরা ক্ষমা করে দিলাম। অন্য দেশে বিপ্লবের পরে এভাবে ক্ষমা করে নাই। একেবারে নির্মূল করে দিয়েছে। কিন্তু আমরা ক্ষমা করলাম। বললাম যে, ঠিক আছে, তওবা করো, আল্লাহ তোমাদের ঈমান দিক। তোমরা দেশের জন্য কাজ করো। কিন্তু চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী। তাদের মধ্যে একটা গ্রুপ সেই শত্রু- যে শত্রু আমাদের এখানে ম্যাসাকার করল, তাদের মাধ্যমে লন্ডনে বসে অর্থ খরচ করে বাংলাদেশের মধ্যে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে আরম্ভ করল। তাদের কি অধিকার আছে বাংলাদেশের রাজনীতি করবার? প্রভিশন হবে ষাটটি জেলার। প্রত্যেক জেলার জন্য একজন গভর্নর থাকবেন। সেখানে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। তার অধীনে এসপি থাকবেন। দলের প্রতিনিধিরা থাকবেন, সংসদ সদস্যরা থাকবেন, জনগণের প্রতিনিধিরা থাকবেন। শাসন ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। জেলা গভর্নরের কাছে যাবে আমার ওয়ার্কস প্রোগ্রামের টাকা। তার কাছে যাবে আমার খাদ্যসামগ্রী। তার কাছে যাবে আমার টেস্ট রিলিফ, লোন, বিল ও সেচ প্রকল্পের টাকা। আই বিলভ ইন পজিটিভ অ্যাপ্রোচ নট এ নেগেটিভ অ্যাপ্রোচ। সেজন্য আমার পার্টিতে আপনারা যারা আছেন, আসুন আমরা পজিটিভ অ্যাপ্রোচ নিই। আমি যখন খুব ইয়ং ছিলাম; আমার নেতা সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে কেউ গালাগালি করলে আমি রাগ করে তার কাছে যেতাম। তিনি হেসে বলতেন, থাক বলতে দাও। ওতে কী হবে? উনি আমাকে বলতেন, থিংক ফর এ পজিটিভ অ্যাপ্রোচ দ্যান এ নেগেটিভ অ্যাপ্রোচ। আমার লাইফকে আমি এই দৃষ্টিতেই দেখেছি।

নতুন দলে আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স, সরকারি কর্মচারী, বেসরকারি কর্মচারী, পলিটিশিয়ান, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, ডক্টরস, ইঞ্জিনিয়ার্স যতদূর সম্ভবপর এদের রাখার চেষ্টা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। পলিটিশিয়ানদের মধ্যে অনেক এক্সপেরিয়েন্সড-পুরনো বন্ধুদেরও বঙ্গবন্ধু তার নতুন দলে অন্তর্ভুক্ত করেন। তারাও সানন্দে দেশ গড়ার ব্রত নিয়ে এতে যোগদানের বিষয়ে সম্মতি প্রদান করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, সেকেন্ড রেভল্যুশন ইজ নট দ্য অ্যান্ড। সেকেন্ড রেভল্যুশন করে তিনি চারটা প্রোগ্রাম দেন। সেকেন্ড রেভল্যুশনের মূল কথা হলো- শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। বঙ্গবন্ধুর গৃহীত ব্যবস্থাগুলো দেশের পরিস্থিতিতে কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেও বাস্তবিকভাবে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিরোধী দলের উপস্থিতি বিলুপ্ত হয়। গোপন চরমপন্থি দলগুলোর তৎপরতা কমে যায়। উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে থাকে। খাদ্যদ্রব্য এবং ন্যূনতম প্রয়োজনের অন্যান্য পণ্যে মূল্যবৃদ্ধি রহিত হয়- এমনকি কিছু কিছু দ্রব্যের মূল্যও হ্রাস পায়।

ঢাকা। ২৬ মার্চ, ২০১৯। আপডেট : ৬ জুন, ২০২১।

[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান; সাংবাদিক, বিজয় কিবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং বিজয় ডিজিটাল শিক্ষা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক]

mustafajabbar@gmail.com