হারিয়ে যাচ্ছে রাজধানীর খাল

আর কে চৌধুরী

রাজধানী থেকে একের পর এক খাল ও প্রাকৃতিক জলাধার উধাও হয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে প্রভাবশালীদের কারসাজি। ঢাকার খালগুলো এখন স্থানীয় প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীনদের কব্জায়। তারা খালগুলো ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করে সেখানে বিভিন্ন ব্যবসা কেন্দ্র বসিয়েছেন। ঢাকার খালগুলোর হিসাব নেই কোনো সংস্থার কাছেই। কেউ বলছে ৫১টি, কেউ বলছে ৪৬টি, কেউ বলছে ৩২টি খাল। ঢাকার অন্তত ১০টি খালের এখন অস্তিত্বই নেই। নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী খালটির অস্তিত্ব কেড়ে নিতে সক্রিয় দখলদাররা। ঘোপদক্ষিণ খালেরও এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই।

শাহবাগ থেকে বেগুনবাড়ী খালের সঙ্গে সংযোগ থাকা পরীবাগ খালটি এখন কালভার্ট। ধানমন্ডি সার্কেলে রামচন্দ্রপুরের বিভিন্ন খাল দখলে রেখেছেন খালখেকো প্রভাবশালীরা। রাজধানীর অন্যসব খাল ও জলাশয় দখলের ক্ষেত্রেও এলাকার মস্তান নামধারী কিংবা রাজনৈতিক টাউটদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। গত ৩২ বছরে ঢাকা মহানগরী থেকে উধাও হয়ে গেছে ৩৯টি খাল। রাজধানীতে এ মুহূর্তে ১৫টি খাল থাকলেও এর চারটি বর্তমানে লেক। অন্যগুলো ভরাট-দখলে সংকুচিত হয়ে নর্দমার আকৃতি পেয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার হিসাবেই নগরীতে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ৫৪টি খালের অস্তিত্ব ছিল। এসব খালের সংযোগ ছিল রাজধানী লাগোয়া প্রধান চারটি নদ-নদীর সঙ্গে। রাজধানীর এসব খাল ও অন্যান্য জলাশয় এখন বিস্মৃত অতীত মাত্র। খাল-বিল-জলাশয় যথেচ্ছভাবে দখলের পরিণতিতে বর্ষা হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতার অভিশাপ নেমে আসে। প্রাকৃতিক জলাশয়ের যে সামান্য অংশ টিকে আছে তা দখল-দূষণে স্বাভাবিক অবস্থা হারিয়েছে বহু আগেই। এগুলো কার্যত মশা উৎপাদনের কারখানা। চলতি বর্ষা মৌসুমে রাজধানীতে জলাবদ্ধতার অস্বস্তিকর থাবা নাগরিকদের বুঝিয়ে দিয়েছে খালসহ প্রাকৃতিক জলাশয়ের বিলুপ্তি তাদের জন্য কী অভিশাপ সৃষ্টি করছে। জলাবদ্ধতার অবসান শুধু নয়, রাজধানীতে শ্বাস নেওয়ার মতো পরিবেশ বজায় রাখতে দখল হয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধার ও তা পুনঃখননের উদ্যোগ নিতে হবে।

পরিবেশ সচেতনতার এ যুগে নদীর অপমৃত্যু হবে আর সবাই চেয়ে চেয়ে দেখবে- এটা হতে পারে না। দখলকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া নদী দখল বন্ধ করা যাবে না। নদী দখলে একটি দুষ্টচক্র অত্যন্ত ক্রিয়াশীল। এ চক্র ভাঙতে হবে। প্রশাসনের কোনো গাফিলতি থাকলে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজধানীর হৃৎপি- হিসেবে বিবেচিত খালগুলো বাঁচাতে পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা জরুরি। শুধু উচ্ছেদ অভিযান চালালেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। সেগুলোকে পুনরায় দখল-দূষণের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে ওয়াকওয়ে, ড্রাইভওয়ে নির্মাণ ও গ্রিন বেল্ট গড়ে তুলতে হয়।

[লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক]

মঙ্গলবার, ১৫ জুন ২০২১ , ১ আষাড় ১৪২৮ ৩ জিলকদ ১৪৪২

হারিয়ে যাচ্ছে রাজধানীর খাল

আর কে চৌধুরী

রাজধানী থেকে একের পর এক খাল ও প্রাকৃতিক জলাধার উধাও হয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে প্রভাবশালীদের কারসাজি। ঢাকার খালগুলো এখন স্থানীয় প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীনদের কব্জায়। তারা খালগুলো ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করে সেখানে বিভিন্ন ব্যবসা কেন্দ্র বসিয়েছেন। ঢাকার খালগুলোর হিসাব নেই কোনো সংস্থার কাছেই। কেউ বলছে ৫১টি, কেউ বলছে ৪৬টি, কেউ বলছে ৩২টি খাল। ঢাকার অন্তত ১০টি খালের এখন অস্তিত্বই নেই। নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী খালটির অস্তিত্ব কেড়ে নিতে সক্রিয় দখলদাররা। ঘোপদক্ষিণ খালেরও এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই।

শাহবাগ থেকে বেগুনবাড়ী খালের সঙ্গে সংযোগ থাকা পরীবাগ খালটি এখন কালভার্ট। ধানমন্ডি সার্কেলে রামচন্দ্রপুরের বিভিন্ন খাল দখলে রেখেছেন খালখেকো প্রভাবশালীরা। রাজধানীর অন্যসব খাল ও জলাশয় দখলের ক্ষেত্রেও এলাকার মস্তান নামধারী কিংবা রাজনৈতিক টাউটদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। গত ৩২ বছরে ঢাকা মহানগরী থেকে উধাও হয়ে গেছে ৩৯টি খাল। রাজধানীতে এ মুহূর্তে ১৫টি খাল থাকলেও এর চারটি বর্তমানে লেক। অন্যগুলো ভরাট-দখলে সংকুচিত হয়ে নর্দমার আকৃতি পেয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার হিসাবেই নগরীতে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ৫৪টি খালের অস্তিত্ব ছিল। এসব খালের সংযোগ ছিল রাজধানী লাগোয়া প্রধান চারটি নদ-নদীর সঙ্গে। রাজধানীর এসব খাল ও অন্যান্য জলাশয় এখন বিস্মৃত অতীত মাত্র। খাল-বিল-জলাশয় যথেচ্ছভাবে দখলের পরিণতিতে বর্ষা হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতার অভিশাপ নেমে আসে। প্রাকৃতিক জলাশয়ের যে সামান্য অংশ টিকে আছে তা দখল-দূষণে স্বাভাবিক অবস্থা হারিয়েছে বহু আগেই। এগুলো কার্যত মশা উৎপাদনের কারখানা। চলতি বর্ষা মৌসুমে রাজধানীতে জলাবদ্ধতার অস্বস্তিকর থাবা নাগরিকদের বুঝিয়ে দিয়েছে খালসহ প্রাকৃতিক জলাশয়ের বিলুপ্তি তাদের জন্য কী অভিশাপ সৃষ্টি করছে। জলাবদ্ধতার অবসান শুধু নয়, রাজধানীতে শ্বাস নেওয়ার মতো পরিবেশ বজায় রাখতে দখল হয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধার ও তা পুনঃখননের উদ্যোগ নিতে হবে।

পরিবেশ সচেতনতার এ যুগে নদীর অপমৃত্যু হবে আর সবাই চেয়ে চেয়ে দেখবে- এটা হতে পারে না। দখলকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া নদী দখল বন্ধ করা যাবে না। নদী দখলে একটি দুষ্টচক্র অত্যন্ত ক্রিয়াশীল। এ চক্র ভাঙতে হবে। প্রশাসনের কোনো গাফিলতি থাকলে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজধানীর হৃৎপি- হিসেবে বিবেচিত খালগুলো বাঁচাতে পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা জরুরি। শুধু উচ্ছেদ অভিযান চালালেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। সেগুলোকে পুনরায় দখল-দূষণের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে ওয়াকওয়ে, ড্রাইভওয়ে নির্মাণ ও গ্রিন বেল্ট গড়ে তুলতে হয়।

[লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক]