গার্ড অব অনারে নারী থাকা নিয়ে আপত্তি সংসদে ক্ষোভ

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর ‘গার্ড অব অনার’ দেয়ার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কোন নারী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) না রাখার সুপারিশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এর পরপরই সমালোচনার ঝড় ওঠে নানা মহলে। এবার তার রেশ গড়িয়েছে সংসদ পর্যন্ত। বিষয়টি নিয়ে চরম হতাশ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকারি দল ও জাসদের ২ নারী সংসদ সদস্য। যারা এই প্রস্তাব করেছেন তাদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। এজন্য তারা সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

গতকাল সংসদ অধিবেশনের শুরুতে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিষয়টি উত্থাপন করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। এরপর প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি।

সংসদে শিরীন আখতার বলেন, ‘আমি বিস্মিত, হতবাক, ব্যথিত। এমন বিষয় আমার সহকর্মীরা উত্থাপন করতে পেরেছে! সংবিধানে বলা আছে, নারী-পুরুষে কোন বৈষম্য করা যাবে না। সেই দেশে যখন এই ঘটনা ঘটে, তখন আমরা স্তব্ধ হয়ে যাই।’

তিনি বলেন, সংসদীয় কমিটিতে যুক্তি এসেছে, নারী যেহেতু জানাজায় অংশ নিতে পারেন না, সেজন্য গার্ড অব অনারে নারী যাতে না থাকেন। জানাজা ও গার্ড অব অনার এক নয়।

জাসদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যখন দেশজুড়ে মৌলবাদের আস্ফালন দেখা যাচ্ছে, তখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির কাছ থেকে এমন সুপারিশ এসেছে। তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন, যাতে এ রকম কলুষিত সিদ্ধান্ত না নেয়া হয়।

মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নারীদের কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেটার একটা বড় সাক্ষী আপনি (স্পিকার) ওই চেয়ারে বসে আছেন। কোন ক্ষেত্রে নারীদের পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে? বহু উন্নত দেশ এখন বিস্ময় মনে করে নারীদের উন্নয়নকে। সেই জায়গায় আমরা যদি কিছু কিছু মানুষ আবার সেই ধর্মের ভেতরে ঢুকিয়ে নিতে চেষ্টা করি এটা সত্যি দুঃখজনক। আমাদের একটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সেই কমিটি থেকে প্রস্তাব এসেছে যে একজন ইউএনও কিন্তু অনেক শিক্ষার স্তর পার হয়ে তারপর একটা মর্যাদায় আসেন সেখানে নারী বা পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদের সুযোগ নেই। সেখানে গার্ড অব অনার দিতে পারবে না বীর মুক্তিযোদ্ধা বা সম্মানি ব্যক্তিদের যখন সম্মান দেয়া হবে। কিভাবে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে আমি চিন্তাও করতে পারি না। যারা এই ধরনের প্রস্তাব দেয় তারা কয়দিন পরে নারীদের গার্ড অব অনার দেয়া যাবে না এমন প্রস্তাবও তো দিতে পারে।

তিনি বলেন, কাজেই আমি বলব প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের মানসিকতা কিছু কিছু মানুষের কেন পরিবর্তন হচ্ছে না, আর কবে পরিবর্তন হবে আমি সেটা বুঝতে পারছি না। আমাদের সেই জায়গায় কঠোর হতে হবে, আমাদের শক্ত হাতে হবে সেই জায়গাগুলোতে প্রতিবাদ করতে হবে। এই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য এই কাজগুলো করতে হবে। চুমকি বলেন, বাংলাদেশ দুবাই থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন অন্য দেশ থেকে ঋণ নেয়ার জন্য বসে থাকি না বরং এমন এক পর্যায়ে এসেছি আমরা অন্য দেশকে ঋণ দেই। বাংলাদেশ আত্মসম্মান নিয়ে বেচে থাকার সেই অবস্থা ইতোমধ্যে চলে গেছে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি গার্ড অব অনার প্রদানের ক্ষেত্রে দিনের বেলায় আয়োজন করার সুপারিশ করা হয়।

বুধবার, ১৬ জুন ২০২১ , ২ আষাড় ১৪২৮ ৪ জিলকদ ১৪৪২

গার্ড অব অনারে নারী থাকা নিয়ে আপত্তি সংসদে ক্ষোভ

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর ‘গার্ড অব অনার’ দেয়ার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কোন নারী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) না রাখার সুপারিশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এর পরপরই সমালোচনার ঝড় ওঠে নানা মহলে। এবার তার রেশ গড়িয়েছে সংসদ পর্যন্ত। বিষয়টি নিয়ে চরম হতাশ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকারি দল ও জাসদের ২ নারী সংসদ সদস্য। যারা এই প্রস্তাব করেছেন তাদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। এজন্য তারা সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

গতকাল সংসদ অধিবেশনের শুরুতে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিষয়টি উত্থাপন করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। এরপর প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি।

সংসদে শিরীন আখতার বলেন, ‘আমি বিস্মিত, হতবাক, ব্যথিত। এমন বিষয় আমার সহকর্মীরা উত্থাপন করতে পেরেছে! সংবিধানে বলা আছে, নারী-পুরুষে কোন বৈষম্য করা যাবে না। সেই দেশে যখন এই ঘটনা ঘটে, তখন আমরা স্তব্ধ হয়ে যাই।’

তিনি বলেন, সংসদীয় কমিটিতে যুক্তি এসেছে, নারী যেহেতু জানাজায় অংশ নিতে পারেন না, সেজন্য গার্ড অব অনারে নারী যাতে না থাকেন। জানাজা ও গার্ড অব অনার এক নয়।

জাসদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যখন দেশজুড়ে মৌলবাদের আস্ফালন দেখা যাচ্ছে, তখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির কাছ থেকে এমন সুপারিশ এসেছে। তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন, যাতে এ রকম কলুষিত সিদ্ধান্ত না নেয়া হয়।

মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নারীদের কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেটার একটা বড় সাক্ষী আপনি (স্পিকার) ওই চেয়ারে বসে আছেন। কোন ক্ষেত্রে নারীদের পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে? বহু উন্নত দেশ এখন বিস্ময় মনে করে নারীদের উন্নয়নকে। সেই জায়গায় আমরা যদি কিছু কিছু মানুষ আবার সেই ধর্মের ভেতরে ঢুকিয়ে নিতে চেষ্টা করি এটা সত্যি দুঃখজনক। আমাদের একটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সেই কমিটি থেকে প্রস্তাব এসেছে যে একজন ইউএনও কিন্তু অনেক শিক্ষার স্তর পার হয়ে তারপর একটা মর্যাদায় আসেন সেখানে নারী বা পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদের সুযোগ নেই। সেখানে গার্ড অব অনার দিতে পারবে না বীর মুক্তিযোদ্ধা বা সম্মানি ব্যক্তিদের যখন সম্মান দেয়া হবে। কিভাবে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে আমি চিন্তাও করতে পারি না। যারা এই ধরনের প্রস্তাব দেয় তারা কয়দিন পরে নারীদের গার্ড অব অনার দেয়া যাবে না এমন প্রস্তাবও তো দিতে পারে।

তিনি বলেন, কাজেই আমি বলব প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের মানসিকতা কিছু কিছু মানুষের কেন পরিবর্তন হচ্ছে না, আর কবে পরিবর্তন হবে আমি সেটা বুঝতে পারছি না। আমাদের সেই জায়গায় কঠোর হতে হবে, আমাদের শক্ত হাতে হবে সেই জায়গাগুলোতে প্রতিবাদ করতে হবে। এই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য এই কাজগুলো করতে হবে। চুমকি বলেন, বাংলাদেশ দুবাই থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন অন্য দেশ থেকে ঋণ নেয়ার জন্য বসে থাকি না বরং এমন এক পর্যায়ে এসেছি আমরা অন্য দেশকে ঋণ দেই। বাংলাদেশ আত্মসম্মান নিয়ে বেচে থাকার সেই অবস্থা ইতোমধ্যে চলে গেছে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি গার্ড অব অনার প্রদানের ক্ষেত্রে দিনের বেলায় আয়োজন করার সুপারিশ করা হয়।