ইসির কর্মচারী ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা নারীকে অবৈধ উপায়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তা-কর্মচারী ও হাটহাজারীর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। গতকাল দুপুরে দুদক জেলা কার্যালয়-২ এ মামলাটি দায়ের করেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। মামলায় হাটহাজারী মির্জাপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আবছারকেও আসামি করা হয়েছে।

আসামিরা হলেন- ডবলমুরিং নির্বাচন অফিসের অফিস সহকারী জয়নাল আবেদীন, চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক নুর আহম্মদ, হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. সাইফুদ্দিন চৌধুরী, কেরানীগঞ্জ নির্বাচন অফিসের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সত্য সুন্দর দে, হাটহাজারী মির্জাপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আবছার, ওই ইউপির সদস্য মো. নুরুল ইসলাম, জন্মসনদ প্রস্তুতকারী মোহাম্মদ বেলাল, দালাল মো. আবদুল ছালাম ও তার পিতা মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, রোহিঙ্গা লাকী আক্তার এবং নাজির আহমেদ।

আসামিরা মূলত একে অপরের যোগসাজসে অসৎ উদ্দেশে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার আশ্রয়ে ভুয়া পরিচয়, নাম ঠিকানা ব্যবহার করে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান ও অবৈধ উপায়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে একে অপরের যোগসাজশে স্মার্ট কার্ড প্রদান করে দণ্ডবিধি’র ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/ ৪৭১/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয় মামলায়।

দুদক সূত্রে জানা যায়, অসৎ উদ্দেশে রোহিঙ্গা নাগরিক লাকী আক্তারকে (তার প্রকৃত নাম রমজান বিবি) ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে সরাসরি জড়িত ছিলেন নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন। জয়নাল নিজ বাসায় বসে নির্বাচন কমিশনের ল্যাপটপ ব্যবহার করে ডাটা এন্ট্রি করেন। যাতে হাটহাজারী উপজেলার নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. সাইফু উদ্দিন চৌধুরী সহায়তা করেন। পরবর্তীতে রোহিঙ্গা লাকী ও তার দুই মেয়েকে পাসপোর্ট করতে অসৎ উদ্দেশে জাতীয়তা সনদপত্র ও জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করে হাটহাজারীর ৩ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য নুরুল ইসলাম, জন্মসনদ প্রস্তুতকারী মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, ৩ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আবছার, দালাল মোহাম্মদ আজিজুর রহমান ও তার পিতা মো. আ. ছালাম।

এদিকে অবৈধ উপায়ে রোহিঙ্গা নাগরিকদের জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণের ঘটনায় ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সরফরাজ কাদের রাসেলসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। তিনি ওই ওয়ার্ডের বিএনপি মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী ও ইপিজেড থানা বিএনপির আহ্বায়কও। গতকাল দুপুরে দুদক জেলা কার্যালয়-২ এ মামলাটি দায়ের করেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন।

মামলার আসামিরা হলেন ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সরফরাজ কাদের রাসেল, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের জন্ম নিবন্ধন সহকারী ফরহাদ হোসাইন, ডবলমুরিং নির্বাচন অফিসের সাবেক ডাটা এন্ট্রি অপারেটর শাহ জামাল, পাঁচলাইশ থানা নির্বাচন অফিসের প্রুফ রিডার উৎফল বড়ুয়া, একই পদের রন্তু বড়ুয়া ও সাবেক পাঁচলাইশ থানা নির্বাচন অফিসার আবদুল লতিফ শেখ।

দুদক সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১৪ জানুয়ারি রোহিঙ্গা ডাকাত নুর আলম ও তার স্ত্রী নুর কাইয়াছ বেগমের জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করেন ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সরফরাজ কাদের রাসেল। পরের বছর তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন অফিসে আবেদন করলে সেখানে আসামিরা একে অপরের যোগসাজসে অসৎ উদ্দেশে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার আশ্রয়ে ভুয়া পরিচয়, নাম ঠিকানা ব্যবহার করে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান ও অবৈধ উপায়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে একে অপরের যোগসাজশে স্মার্ট কার্ড প্রদান করেন।

এ ঘটনায় আসামিরা দণ্ডবিধি’র ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয় মামলায়।

বুধবার, ১৬ জুন ২০২১ , ২ আষাড় ১৪২৮ ৪ জিলকদ ১৪৪২

চট্টগ্রামে রোহিঙ্গাকে জাতীয় সনদ

ইসির কর্মচারী ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো

মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা নারীকে অবৈধ উপায়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তা-কর্মচারী ও হাটহাজারীর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। গতকাল দুপুরে দুদক জেলা কার্যালয়-২ এ মামলাটি দায়ের করেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। মামলায় হাটহাজারী মির্জাপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আবছারকেও আসামি করা হয়েছে।

আসামিরা হলেন- ডবলমুরিং নির্বাচন অফিসের অফিস সহকারী জয়নাল আবেদীন, চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক নুর আহম্মদ, হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. সাইফুদ্দিন চৌধুরী, কেরানীগঞ্জ নির্বাচন অফিসের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সত্য সুন্দর দে, হাটহাজারী মির্জাপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আবছার, ওই ইউপির সদস্য মো. নুরুল ইসলাম, জন্মসনদ প্রস্তুতকারী মোহাম্মদ বেলাল, দালাল মো. আবদুল ছালাম ও তার পিতা মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, রোহিঙ্গা লাকী আক্তার এবং নাজির আহমেদ।

আসামিরা মূলত একে অপরের যোগসাজসে অসৎ উদ্দেশে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার আশ্রয়ে ভুয়া পরিচয়, নাম ঠিকানা ব্যবহার করে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান ও অবৈধ উপায়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে একে অপরের যোগসাজশে স্মার্ট কার্ড প্রদান করে দণ্ডবিধি’র ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/ ৪৭১/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয় মামলায়।

দুদক সূত্রে জানা যায়, অসৎ উদ্দেশে রোহিঙ্গা নাগরিক লাকী আক্তারকে (তার প্রকৃত নাম রমজান বিবি) ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে সরাসরি জড়িত ছিলেন নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন। জয়নাল নিজ বাসায় বসে নির্বাচন কমিশনের ল্যাপটপ ব্যবহার করে ডাটা এন্ট্রি করেন। যাতে হাটহাজারী উপজেলার নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. সাইফু উদ্দিন চৌধুরী সহায়তা করেন। পরবর্তীতে রোহিঙ্গা লাকী ও তার দুই মেয়েকে পাসপোর্ট করতে অসৎ উদ্দেশে জাতীয়তা সনদপত্র ও জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করে হাটহাজারীর ৩ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য নুরুল ইসলাম, জন্মসনদ প্রস্তুতকারী মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, ৩ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আবছার, দালাল মোহাম্মদ আজিজুর রহমান ও তার পিতা মো. আ. ছালাম।

এদিকে অবৈধ উপায়ে রোহিঙ্গা নাগরিকদের জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণের ঘটনায় ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সরফরাজ কাদের রাসেলসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। তিনি ওই ওয়ার্ডের বিএনপি মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী ও ইপিজেড থানা বিএনপির আহ্বায়কও। গতকাল দুপুরে দুদক জেলা কার্যালয়-২ এ মামলাটি দায়ের করেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন।

মামলার আসামিরা হলেন ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সরফরাজ কাদের রাসেল, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের জন্ম নিবন্ধন সহকারী ফরহাদ হোসাইন, ডবলমুরিং নির্বাচন অফিসের সাবেক ডাটা এন্ট্রি অপারেটর শাহ জামাল, পাঁচলাইশ থানা নির্বাচন অফিসের প্রুফ রিডার উৎফল বড়ুয়া, একই পদের রন্তু বড়ুয়া ও সাবেক পাঁচলাইশ থানা নির্বাচন অফিসার আবদুল লতিফ শেখ।

দুদক সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১৪ জানুয়ারি রোহিঙ্গা ডাকাত নুর আলম ও তার স্ত্রী নুর কাইয়াছ বেগমের জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করেন ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সরফরাজ কাদের রাসেল। পরের বছর তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন অফিসে আবেদন করলে সেখানে আসামিরা একে অপরের যোগসাজসে অসৎ উদ্দেশে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার আশ্রয়ে ভুয়া পরিচয়, নাম ঠিকানা ব্যবহার করে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান ও অবৈধ উপায়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে একে অপরের যোগসাজশে স্মার্ট কার্ড প্রদান করেন।

এ ঘটনায় আসামিরা দণ্ডবিধি’র ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয় মামলায়।