জি-৭ নেতাদের টিকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গে

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দরিদ্র দেশগুলোকে ১০০ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শীর্ষ শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট-৭ এর নেতারা। সম্মেলন শেষে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে দেশগুলো যে ‘জাতীয়তাবাদী আচরণ’ করছিল, জি-৭ এর নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র জি-৭ জোটের সদস্য দেশ। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ জোটের একটি অংশ। জোটভুক্ত দেশগুলো প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টিকা নিজ থেকে দরিদ্র দেশগুলোর হাতে তুলে দেবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স কর্মসূচিতেও এসব টিকা দেয়া হতে পারে।

মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের যে ধরন তাতে একে প্রতিরোধ করতে হলে বিশ্বের প্রতিটি মানুষকেই টিকার আওতায় আনতে হবে। টিকা আবিষ্কার করা দেশগুলো ইতোমধ্যে তাদের নাগরিকদের টিকা দেয়া শুরু করেছে। আর্থিকভাবে সক্ষম অনেক দেশও আমদানি করে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছিলেন, দরিদ্র দেশগুলোকে পেছনে ফেলে বিশ্ব ভালোভাবে করোনাকে মোকাবিলা করতে পারবে না। জি-৭ যে পরিমাণ টিকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সেটা দরিদ্র দেশগুলোর জন্য যথেষ্ট নয়। ১০০ কোটি ডোজ দেয়ার পরও দরিদ্র দেশগুলোর জনসংখ্যার বড় অংশই টিকা থেকে বঞ্চিত হবে। জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক মার্ক লোকক বলেছেন, ‘দরিদ্র দেশগুলোর জন্য বিক্ষিপ্ত, ছোট আকারের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মহামারীর অবসান ঘটবে না।’

বরিস জনসন বলেছেন, ‘মহামারী মোকাবিলায় আমরা স্বার্থপরতা আর জাতীয়তাবাদী আচরণ থেকে বেরিয়ে আসব এমন দৃশ্য দেখার জন্য বিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় স্বার্থপরতা, জাতীয়তাবাদী আচরণ আমাদের ক্ষতি করেছে।’ আমরা বলতে চাই, টিকা নিয়ে দরিদ্র দেশগুলো যেন কোন রাজনীতির শিকার না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে জোটভুক্ত দেশগুলোকেই। টিকার আড়ালে যেন নতুন কোন স্বার্থ তৈরি না হয় সেটা আমাদের চাওয়া। এটা স্বার্থ দিয়ে বিশ্বকে বিভক্ত করার সময় নয়। বৈশ্বিক মহামারী থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে হলে চাই- সম্প্রীতি আর মানবতার দৃঢ় বন্ধন।

কোভিড-১৯ রোগের টিকার অপেক্ষায় আছে বিশ্বের বহু দেশ। হাতেগোনা কয়েকটি দেশ টিকা উৎপাদন করছে। বিশ্বের চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। সব দেশের মানুষকে দ্রুত টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যে টিকার মেধাস্বত্ব উন্মুক্ত করার দাবি উঠেছে। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো একমত হতে পারেনি এখনো। জার্মানির টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ফাইজারের টিকা বিশ্বজুড়েই ব্যবহৃত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র রাজি হলেও জার্মানি মেধাস্বত্ব ছাড়তে চাচ্ছে না। জার্মানি মেধাস্বত্ব না ছাড়লে টিকা সহজলভ্য করার প্রক্রিয়া হোঁচট খাবে। আশার কথা, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও আরও কিছু দেশ মেধাস্বত্ব ছাড়ার বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। আমরা টিকার বৈশ্বিক উৎপাদন বাড়ানোর পক্ষে। আমরা মনে করি, বিশ্ব মানবতার স্বার্থে টিকার মেধাস্বত্বে ছাড় দেয়া জরুরি। সেটা হলে অনেক প্রতিষ্ঠানই জীবনরক্ষাকারী টিকা তৈরি করতে পারবে। তখন দরিদ্র দেশগুলোর মানুষের কাছে সুলভে টিকা পৌঁছানো যাবে। এ বিষয়ে বিশ্ব নেতারা দ্রুতই ঐকমত্যে পৌঁছাবে সেই প্রত্যাশা করি।

আরও খবর
অগ্রহণযোগ্য

বুধবার, ১৬ জুন ২০২১ , ২ আষাড় ১৪২৮ ৪ জিলকদ ১৪৪২

জি-৭ নেতাদের টিকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গে

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দরিদ্র দেশগুলোকে ১০০ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শীর্ষ শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট-৭ এর নেতারা। সম্মেলন শেষে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে দেশগুলো যে ‘জাতীয়তাবাদী আচরণ’ করছিল, জি-৭ এর নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র জি-৭ জোটের সদস্য দেশ। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ জোটের একটি অংশ। জোটভুক্ত দেশগুলো প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টিকা নিজ থেকে দরিদ্র দেশগুলোর হাতে তুলে দেবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স কর্মসূচিতেও এসব টিকা দেয়া হতে পারে।

মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের যে ধরন তাতে একে প্রতিরোধ করতে হলে বিশ্বের প্রতিটি মানুষকেই টিকার আওতায় আনতে হবে। টিকা আবিষ্কার করা দেশগুলো ইতোমধ্যে তাদের নাগরিকদের টিকা দেয়া শুরু করেছে। আর্থিকভাবে সক্ষম অনেক দেশও আমদানি করে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছিলেন, দরিদ্র দেশগুলোকে পেছনে ফেলে বিশ্ব ভালোভাবে করোনাকে মোকাবিলা করতে পারবে না। জি-৭ যে পরিমাণ টিকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সেটা দরিদ্র দেশগুলোর জন্য যথেষ্ট নয়। ১০০ কোটি ডোজ দেয়ার পরও দরিদ্র দেশগুলোর জনসংখ্যার বড় অংশই টিকা থেকে বঞ্চিত হবে। জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক মার্ক লোকক বলেছেন, ‘দরিদ্র দেশগুলোর জন্য বিক্ষিপ্ত, ছোট আকারের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মহামারীর অবসান ঘটবে না।’

বরিস জনসন বলেছেন, ‘মহামারী মোকাবিলায় আমরা স্বার্থপরতা আর জাতীয়তাবাদী আচরণ থেকে বেরিয়ে আসব এমন দৃশ্য দেখার জন্য বিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় স্বার্থপরতা, জাতীয়তাবাদী আচরণ আমাদের ক্ষতি করেছে।’ আমরা বলতে চাই, টিকা নিয়ে দরিদ্র দেশগুলো যেন কোন রাজনীতির শিকার না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে জোটভুক্ত দেশগুলোকেই। টিকার আড়ালে যেন নতুন কোন স্বার্থ তৈরি না হয় সেটা আমাদের চাওয়া। এটা স্বার্থ দিয়ে বিশ্বকে বিভক্ত করার সময় নয়। বৈশ্বিক মহামারী থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে হলে চাই- সম্প্রীতি আর মানবতার দৃঢ় বন্ধন।

কোভিড-১৯ রোগের টিকার অপেক্ষায় আছে বিশ্বের বহু দেশ। হাতেগোনা কয়েকটি দেশ টিকা উৎপাদন করছে। বিশ্বের চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। সব দেশের মানুষকে দ্রুত টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যে টিকার মেধাস্বত্ব উন্মুক্ত করার দাবি উঠেছে। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো একমত হতে পারেনি এখনো। জার্মানির টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ফাইজারের টিকা বিশ্বজুড়েই ব্যবহৃত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র রাজি হলেও জার্মানি মেধাস্বত্ব ছাড়তে চাচ্ছে না। জার্মানি মেধাস্বত্ব না ছাড়লে টিকা সহজলভ্য করার প্রক্রিয়া হোঁচট খাবে। আশার কথা, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও আরও কিছু দেশ মেধাস্বত্ব ছাড়ার বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। আমরা টিকার বৈশ্বিক উৎপাদন বাড়ানোর পক্ষে। আমরা মনে করি, বিশ্ব মানবতার স্বার্থে টিকার মেধাস্বত্বে ছাড় দেয়া জরুরি। সেটা হলে অনেক প্রতিষ্ঠানই জীবনরক্ষাকারী টিকা তৈরি করতে পারবে। তখন দরিদ্র দেশগুলোর মানুষের কাছে সুলভে টিকা পৌঁছানো যাবে। এ বিষয়ে বিশ্ব নেতারা দ্রুতই ঐকমত্যে পৌঁছাবে সেই প্রত্যাশা করি।