ধারাবাহিক উপন্যাস : আট

শিকিবু

আবুল কাসেম

(পূর্ব প্রকাশের পর)

তেরো.

সম্রাটের দরবারে কবিতা পাঠকে কেন্দ্র করে দারুণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলো। সম্রাজ্ঞী তেইশি সভাকবি ফুজিওয়ারা নো কিন্তুকে ডাকালেন।

কবি কিন্তু কাচুমাচু হয়ে সম্রাজ্ঞীর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। সম্রাজ্ঞী ক্ষিপ্ত। বললেন, এখানে বড় সম্রাজ্ঞী কে?

আপনি মহামান্যা।

তা হলে আমার লেডি-ইন-ওয়েটিংকে আগে না দিয়ে সম্রাজ্ঞী শোশির ইয়েটি আগে গেল কি করে?

আগে আসে ছোট কবিরা, পরে বড় কবি।

তা নিয়ে অনুষ্ঠানের আগে তুমি আমার সঙ্গে কথা বলেছ?

মহামান্য সম্রাটের সঙ্গে কথা হয়েছে।

সম্রাট তোমাকে বলেছেন এভাবে অনুষ্ঠান সাজাতে?

বলেননি, তাকে জানিয়েছিলাম, এভাবে সাজাব।

তিনি কি বললেন?

তিনি কিছু বলেননি।

আর তুমি তোমার মতোই করলে? আমার কথার বাইরে ভবিষ্যতে কিছু করেছ তো আমি নিজের হাতে তোমার গর্দান নেবো।

সভাকবিকে শাসিয়ে তেইশি সম্রাটের কাছে গেলেন। সম্রাটকে বললেন, মহামান্য, আপনার সাহিত্যপ্রীতিতে সবাই মুগ্ধ। রাজকীয় কবিতা সংকলন হবে শুনে সবাই আনন্দে আত্মহারা। কবে সম্রাট হিগো একটি সংকলন করেছিলেন, তারপর আর সাহিত্যপ্রেমী কোনো সম্রাটের আবির্ভাব হয়নি। আপনার অবদানের কথা হাজার বছর পরও মানুষ মনে রাখবে। আমরা তো সৌভাগ্যবানরা আপনার প্রতি শ্রদ্ধায় নত আছিই।

সম্রাট ভাবলেন এই সম্রাজ্ঞী এত প্রশংসা করছেন কেন, নিশ্চয়ই বড় কিছু চাইবেন। সম্রাজ্ঞী আবার বললেন, কাল আপনি সেই শোনাগনের কবিতা না শুনেই চলে গেলেন।

ইঝোমি আর তাকাকুর কবিতা ভালো লেগেছে। খুব আনন্দ হয়েছে আমার।

ওরা আর কী আনন্দ দেবে আপনাকে। দরবার কাঁপানো পরিবেশনা নিয়ে প্রস্তুত ছিল সেই শোনাগন। সভাকবিকে বলে দেবেন সে যেন সবার আগে সেই শোনাগনকে দেয়।

আচ্ছা বলে দেব।

ইঝোমির কথা ভালো শুনি না। স্বামী থাকা সত্ত্বেও প্রিন্স তামেতাকার সঙ্গে বাজে সম্পর্ক পাতিয়েছে।

তাই নাকি? একটু পর বললেন, কবিদের এরকম কেউ থাকতে হয়, নইলের কবিতা সৃষ্টি হবে কি করে?

খুব দুর্নাম হচ্ছে। প্রশ্রয় দেবেন না আমার প্রিয় মহামান্য সম্রাট।

শোশিও তোমার মতো সাহিত্যপ্রেমী ভালো।

কবিতা বুঝবার বয়স কি হয়েছে তার? সে নয়, আমার সাহিত্য-সংস্কৃতিপ্রীতিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রিন্স মিচিনাগা এসব করাচ্ছে। কিমোনো সামলাতে যার প্রাণান্তকর কসরত করতে হয়, তার আবার সাহিত্যপ্রীতি। শোশির কোনো সাহিত্যপ্রীতি নেই।

হতে পারে, হতে পারে।

হতে পারে কি মহামান্য সম্রাট। প্রিন্স মিচিনাগা আপনাকে প্রতারণা করেছে। তার থেকে সাবধান থাকুন।

মনে মনে বললেন, ইঝোমিকে আমি তাড়াবই। সে আমার ঘুম নষ্ট করেছে।

মিচিনাগা তার স্ত্রীকে নিয়ে সম্রাজ্ঞী শোশির দরবারে উপস্থিত হয়েছেন। সেখানে শোশি তার লেডি-ইন-ওয়েটিংদের নিয়ে গতকালের বিজয় উদযাপন করছেন। আনন্দে আত্মহারা তিনি সম্রাজ্ঞী তেইশিকে দারুণ জব্দ করে।

মিচিনাগাদের দেখে ইমন এবং ইঝোমি উঠে যাচ্ছিলেন। মিচিনাগা বললেন, বসো তোমরা যেয়ো না। কাল ইঝোমির কবিতা শুনে সম্রাট এতটাই মুগ্ধ হয়েছেন যে পরে আর কারো কবিতা শুনতে ইচ্ছেই হয়নি তার। ভালো জব্দ হয়েছে তেইশি। তামেতোকির মেয়েও তো দেখছি ভালো কবিতা লেখে।

ইমন বললেন, লেখার হাত ভালো।

শোশি বললেন, দেখো আবার তেইশির দলে যেন না ভিড়ে যায়।

ইমন বলল, যাবে না সে মহামান্য।

রিনশি মানে শোশির মা বললেন, তুমি কেন পড়নি ইমন। ইমন তার প্রিয় সহকারী ছিলেন, তাকে খুব পছন্দ করেন। ইমন হাসি দিয়ে বললেন, আগামী অনুষ্ঠানে শুনবেন।

মিচিনাগা বললেন, তোমাদের দুজনকেই পুরস্কৃত করা হবে। এখন শোশি চলো সম্রাটের মনোভাবটা জেনে আসি।

সম্রাজ্ঞী তেইশি উঠে যাবার পরপরই এরা সম্রাটের দরবারে হাজির হলেন। সম্রাট গতকাল শোশির দরবারের পরিবেশনায় খুশি। কিন্তু তেইশি যে কানভারী করে দিয়ে গেছেন তাই তার মধ্যে আগের উচ্ছ্বাসটা নেই। তাদের দেখে একরকম শীতল কণ্ঠেই বললেন, বসুন আপনারা।

কিমোনো সামলে সবাই পদ্ম আসন করে বসলেন। সম্রাট লক্ষ করলেন কিশোরী সম্রাজ্ঞী শোশির সত্যিই কিমোনো সামলাতে কসরত করতে হয়ে। সম্রাজ্ঞীর ঐতিহ্যবাহী কিমোনো অলংকরণে বেশ ভারি এবং ঢিলেঢালা। তা সামলাতে গিয়ে সম্রাজ্ঞীর কষ্টই হয়।

মিচিনাগা বললেন, কালকের কবিতা পাঠ বেশ উপভোগ্য ছিল। আপনিও খুব উপভোগ করেছেন দেখলাম।

হ্যাঁ ভালো লেগেছিল। ইঝোমি মেয়েটা কি করে?

শোশি বললেন, আমার দরবারে লেডি-ইন-ওয়েটিং।

তাতো জানি। তার বাবা কে?

মিচিনাগা বললেন, উৎসব অনুষ্ঠান বিভাগের আমলা মাসামুনের মেয়ে সে।

তার বাবা ইচিঝেনের গভর্নর ছিল?

ঠিক বলেছেন।

কবিতা ভালো লেখে, সমস্যাও আছে।

একথা শুনে এরা পরস্পরের দিকে চাওয়া-চাওয়ী করলেন।

এ সময় খানসামা বলল, চা উৎসব থেকে চা এসেছে।

সম্রাট বললেন, ভালো সময়ে পাঠিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের সামনে পরিবেশন কর।

সকলের সামনেই চীন থেকে আনা অভিজাত কাপ। ধোঁয়া উড়ছে কুণ্ডলী পাকিয়ে। সম্রাট বললেন, বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের সঙ্গে মাঝে-মধ্যেই পান করি। কবিতার আসরে কবিতা শুনতে শুনতে পান করলে আরো মজা হতো।

কথা আছে, চায়ের কাপের কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়ার হাত ধরে কবিতার ঐশী শক্তি আচার্য এবং ঋদ্ধ ব্যক্তিদের ধ্যান আসে। চীনের এ

সংস্কৃতি এখন কিয়োটোর সম্রাটের দরকারকেও ধ্যানে ঋদ্ধ করে তোলে।

মিচিনাগা বললেন, আপনি ঠিক বলেছেন সম্রাট। কবিতার রস আস্বাদনকালে চায়ের তুলনা হতো না।

উজি থেকে দিয়ে গেছে। চা উৎসবটা ভালোই করে।

শোশি এখনো কালকের কবিতা পাঠের মধ্যেই আছেন। বললেন, মহামান্য সম্রাটকে খুশি করতে পেরে আমি বেশ আনন্দিত।

তা ঠিক আছে। মেয়েটির দিকে লক্ষ রেখো। সাবেক সম্রাট রেইজেইয়ের তৃতীয় প্রিন্স, তামেতাকা।

হ্যাঁ তামেতাকা। সে সব সময় নিশাচরের দুঃসাহসিক অভিযানে বের হয় কেন? তার কি স্ত্রী-সন্তান নেই?

তা তো জানি না।

আমি সব জানি।

ব্যাপারটা কী, ভেবে সবাই চিন্তিত।

বাইরে সমুরাইদের প্রধান সেনাপতি অপেক্ষা করছেন। ভেতরে মিচিনাগা আছেন বলে ধৈর্য ধারণ করছেন। এরা সম্রাটের দরবারে প্রবেশ করতে সাধারণত বিলম্ব সহ্য করেন না।

মুরাসাকি সম্রাটের সামনে কবিতা পাঠ করতে পেরে কৃতার্থ। কিন্তু নোবুতাকার ওপর কিঞ্চিৎ বিরক্ত। বললেন, দরবারের সামনে কেউ স্ত্রীকে অপ্রস্তুত করে দেয়?

নোবুতাকা বললেন, আমার ভুল হয়েছে। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে, তুমি পারবে। তোমার লেখা কবিতা পড়ে আমি অবাক হয়েছি।

কবিতা লেখার খাতা বা নিক্কি (ডায়েরি) সাথে ছিল না। ভাগ্য ভালো স্মৃতি থেকে বলতে পেরেছিলাম।

এরকম আর হবে না। তবে না দেখে বলায় ব্যাপারটা আরো আকর্ষণীয় হয়েছে।

একটি কথা বলব?

বল।

আমি কিন্তু উদাস বা উশৃঙ্খল কবি না। পুরো একজন জীবনবাদী নারী। বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিই। প্রতিভাবান নৃত্য শিল্পীর কাছেও তা আশা করি।

সম্রাটের উৎসব বিভাগে কাজ করে একেবারে সোজা নাকবরাবর চলা যায় না। নারীপুরুষ সকলের সঙ্গে মিশতে হয়। আমি আশা করি বাস্তববাদী কবির তা বুঝতে অসুবিধা হবে না এবং তা নিয়ে চিন্তিতও হবেন না।

জ্বি জনাব, এই দরবারের আলো বাতাসেই আমি বড় হয়েছি। তবে আর আট দশজনের মতো না। পারিবারিক বাধ্যবাধকতার বাইরেও আত্মসচেতন এবং সংযমী থাকতে চেয়েছি। তার মর্যাদা নিশ্চয়ই চাইতে পারি।

আমি তোমার কথা বুঝতে পেরেছি। সম্রাটের দরবার, প্রাসাদ একটা রটনার জায়গা। কানকে সবসময় বিশ্বাস করলে ঠকতে হবে এবং কষ্ট পাবে।

কষ্ট যাতে না পাই সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

শিন্টু শ্রাইনে দেবতাদের সামনে দাঁড়িয়ে আমি তো শপথ বাক্য উচ্চারণ করেছি।

আমিও বিশ্বাস করেছি। বলে হাসলেন মুরাসাকি।

চৌদ্দ.

ইঝোমির স্বামী মিচিসাদা, নানা ইয়াসুহিরা এবং বাবা মাসামুনে বসে আছেন। কোনো কথা নেই কারো মুখে। মায়ের পাশে বসে আছেন ইঝোমি।

ঘরোয়া বৈঠক। তাই বাইরের কোনো লোকজন নেই। স্তব্ধতা ভঙ্গ করে নানা বললেন, দেখো ইঝোমি হেইয়ান কিয়োটোয় আমাদের একটি মর্যাদা আছে। তোমার স্বামী এবং আমি দু’টি প্রদেশের গভর্নর। তোমার বাবা এই দু’দিন আগেও ইচিঝেনে গভর্নর ছিলো, এখন সম্রাটের দরবারে উৎসব অনুষ্ঠান বিভাগের বড় আমলা। তোমার মা গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরিরত। সর্বোপরি তুমি বিবাহিত। তুমি যা করছো তাতে আমাদের মুখ দেখাবার উপায় আছে?

তার বাবা মাসামুনে বললেন, সম্রাট আমাকে ডেকে বললেন, এসব কী হচ্ছে? কী শুনছি আমি মাসামুনে?

আমার তো তখনই মরে যাওয়া উচিত ছিল।

মিচিসাদা বললেন, শুধু কিয়োটো নয় রাতারাতি এ সংবাদ পৌঁছে গেছে ইঝোমি প্রদেশেও। শুক দেখাবার উপায় নেই। একজন গভর্নরের স্ত্রী প্রকাশ্যে এসব করে বেড়াচ্ছে। আপনারা ব্যবস্থা করে দিন; আমি একে আজই ইঝোমি প্রদেশে নিয়ে যাই।

মা বললেন, আমাকে প্রাসাদে সবাই সম্ভ্রান্ত মানুষ বলে সম্মান করতো। এখন আমাকে দেখলে সবাই, বিশেষ করে মহিলারা উপেক্ষা করে। ঠারে ঠুরে কিসব বলে। আমার অবস্থান কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। বলে কাঁদতে লাগলেন তিনি। পরে বললেন, তুমি যদি এখন জামাইয়ের সঙ্গে ইঝোমিতে চলে যাও সকলর মুখে বন্ধ হবে এবং আমাদের মুখ রক্ষা হবে।

ইঝোমি শিকিবু বললেন, আমি কিয়োটো ছেড়ে কোথাও যাব না, ইঝোমি প্রদেশে তো নয়ই। মিচিসাগা আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে, তাকে আমি স্বামী বলে আর মানতে পারি না।

তাহলে তুমি কি করবে? মাতামহের প্রশ্ন।

যা করছি তাই করবো।

আমাদের মান-সম্মানের দিকে একবারও তাকাবে না?

আমি যা করছি তার সঙ্গে আপনাদের মানসম্মানের কোনো সম্পর্ক নেই। আমি মিচিসাদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করব।

মিচিসাগা বললেন, কেলেঙ্কারিটা তুমি করেছ আমি না। ত্যাগ করতে হলে আমি করব।

ইঝোমি চটে গিয়ে বললেন, কেলেঙ্কারি কি? পুরুষরা করলে কেলেঙ্কারি হয় না, মেয়েরা করলে হয়? এই হেইয়ান কিউতে কয়টা পুরুষ আছে সভ্যÑ যার একাধিক স্ত্রী বা রক্ষিতা নেই। নারী করলেই দোষ। নারীর কোনো ইচ্ছা অনিচ্ছার দাম নেই? আমার যা ভালো লাগে তাই আমি করবো। আমি কোনো কিছুর পরোয়া করি না। আপনাদের যা খুশি করতে পারেন।

বাবা বললেন, এই তোমার শেষ কথা?

হ্যাঁ, এটাই আমার সিদ্ধান্ত।

মাতামহ বললেন, পাগলামি করো না ইঝোমি, আমাদের সমাজ আছে, উচ্চপদ আছে, সামাজিক ও চাকরিগতভাবে আমাদের মাথা উঁচু করে চলতে হবে। তুমি ভালো করেই জানো আমরা ফুজিওয়ারাদের দ্বারা নানাভাবে কোনঠাসা। ওরা এখন আরো সুযোগ পাবে। আমাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইবে। তুমি যার সঙ্গে মেলামেশা করছ সেও ফুজিওয়ারা নয়, দানজু গোত্রের। ওরা একেও সাধারণভাবে নেবে না।

কে কি নিলো বা নিলো না তাতে আমার কিছু যায় আসে না।

মা বললেন, তোমার মেয়ের কি হবে? নিয়মতো সন্তান মায়ের সঙ্গে থাকবে।

আমি ওসব নিয়ম মানি না। সে তার বাবার সঙ্গে যাবে। মিচিসাদা বললেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ আমার সন্তান আমার সঙ্গেই যাবে। অন্তত মায়ের চরিত্র থেকে রক্ষা পাবে।

ইঝোমি চিৎকার করে বললেন, এখানে চরিত্রের কী দেখলে? তোমার চরিত্র পবিত্র? এই সমাজকে তাই আমি ঘৃণা করি। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষরা যা খুশি করবে। হেইয়ানকিউ অনেক এগিয়েছে, কিন্তু অন্ধকার থেকে, নারী পরাধীনতা থেকে বের হতে পারেনি। আমি এ প্রথা ভাঙ্গবো। সম্রাট আমার ফাঁসি দিক। আপনারা সবাই আমাকে পরিত্যাগ করুন।

বাবা বললেন, স্বাধীনতার অর্থ স্বেচ্ছাচারিতা নয়, যা তুমি করছ।

হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি তাই করবো। আপনাদের আমি ত্যাগ করলাম। বিদায়। বলে ইঝোমি বাড়ি থেকে বের হয়ে, চলে গেলেন। মা তাকে বাধা দিতে যাচ্ছিলেন। বাবা মাকে আটকালেন। বললেন, কলঙ্কিনীকে যেতে যাও। তাকে আমি ত্যাজ্য করলাম। আজ থেকে সে আর আমার মেয়ে নয়, কালই আইনি ব্যবস্থা চূড়ান্ত হবে।

ইঝোমির স্বামী মিচিসাদা উঠে গিয়ে তাদের কন্যা নাইশিকে নিয়ে ঝড়ের বেগে বের হয়ে গেলেন। মেয়েটি কাদছে। ভয়ে নাকি বিচ্ছেদে, বুঝবার উপায় নেই। সবাই তাদের গমন পথে তাকিয়ে রইলেন মনভারী করে।

ইঝোমি গিয়ে উঠলেন কবি আকাঝোমি ইমনের বাড়িতে। কয়েক বাড়ি পরেই ইমনের বাড়ি। ইমন অবাক হলো, তবে কারণ জিজ্ঞেস করলো না। সন্ধ্যার পর ঘটনা। টেরামাচি লেন জনশূন্য।

ইমনের স্বামী বাড়িতে নেই। দূরের একটা প্রদেশের চাকরি করেন। ইঝোমি ভাবলো ভালোই হলো। প্রিন্স তামেতাকা যতদিন না খোঁজ করে নিতে আসবে, এখানেই থাকবেন।

রাত্রে ঘটনাটা ইমনকে বললেন। উষ্মা প্রকাশ করলেন তার স্বরে। বললেন, আমাকে বলে কিনা আমি নাকি কলঙ্কিনী। নারীর প্রেমে কলঙ্ক আর পুরুষের প্রেমে পালঙ্ক। অদ্ভুত চিন্তা বাবা-মাসহ সকলের। ভাবলাম বুড়ো মাতামহের সমর্থন মিলবে, পেলাম উল্টোটা, তার নাকি মান সম্মান গেছে। সম্মান থাকলে তো যাবে। একজনের গলায় বেঁধে দিলাম, অসম্মান করলেও গলায় জড়িতে থাকতে হবে?

ইমন প্রসঙ্গটা পরিবর্তন করতে চাইলেন। বললেন, প্রিন্সের সংবাদ কি?

চারদিন হলো খবর জানি না।

ঝগড়া করেছ?

একটু।

সেদিন অনুষ্ঠানে তোমাকে দেখেই বুঝতে পেরেছি। ওকে ঝাড়তে গিয়েছিলাম। সম্রাট বললেন, বৃষ্টিদিনের কবিতা পাঠ করতে হবে। পারলাম না শোধ নিতে।

ভালোই করেছ। প্রিন্স বলে কথা। ছেড়ে যেতে সময় লাগবে না।

না, সেরকম নয়। রাগ একটু আছে, তবে নিষ্ঠুর নয়।

তোমার কবিতা সুন্দর হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে লেখা বৃষ্টির কবিতা অসাধারণ হয়েছে।

ধন্যবাদ। আচ্ছা বলুন তো, আমি কি রাগের মাথায় ভুল করলাম।

কোন বিষয়ে?

মেয়েটাকে ওকে দিয়ে দিয়ে?

ছেলে মেয়েরা মায়ের কাছেই ভালো থাকে।

তা প্রচলিত নিয়মে। আমি চাই নিয়ম ভাঙ্গার মানসিকতা তৈরি হোক তার। নিজের মতো করে চলতে পারবে।

কথায় যুক্তি আছে।

রাত গভীর হচ্ছে। ইমনের ছেলে মেয়েরা ঘুমিয়ে গেছে। ইঝোমি বললেন, সম্রাজ্ঞী শোশিকে সহ্য করেন কি করে?

কেন?

অহংকারী, আর না বুঝে কথা বলেন।

কম বয়সের জন্য তা হয়।

বয়োজ্যেষ্ঠ্যদের সম্মান করতে হয়।

আমাকে তো মানিয়ে চলে, সম্মানও করে।

আপনি দীর্ঘদিন এদের সঙ্গে আছেন বলে।

হতে পারে।

আপনাদেরকে সবাই লাভবার্ড বলে।

আমাদের বোঝাপড়াটা ভালো। ওয়ে নো মাসাহিরা আসলেই ভদ্র এবং মানিয়ে চলার মানুষ। অন্তরটাও ভালো।

আমি তার একটা সাক্ষাৎকার নেব। বিষয় আপনার সম্পর্কে তার ধারণা। বলে ইঝোমি হাসলেন।

ইমন বললেন, তা হলে তো ভালোই হয়। বলে তিনিও হাসলেন। পরে বললেন, রসায়নটাই বড় কথা।

আমার সঙ্গে তার হলো না। মানসিক এবং ভালোবাসার শক্তির প্রয়োজন হয়। তার শুধু স্বার্থবুদ্ধি।

তোমাকে আমি তেমন বুঝতে পারি না ইঝোমি।

আমিও জানিনা কিসে আমার পূর্ণ প্রাপ্তি। মনে হয় ছুটছি, শুধু ছুটছি। তার শেষ কোথায় কে জানে।

তাতে কষ্ট আছে, জানো?

তাতো দেখতেই পাচ্ছি।

একটা গন্তব্য ঠিক করে নাও। সংসারি হও।

বোধ হয় পারবো না।

কেন?

এটাই আমার নিয়তি।

যদি প্রিন্স তোমেতাকা আর খোঁজ না করে?

অন্য কেউ দোরে কড়া নাড়তে আসবে।

তাকে গ্রহণ করতে পারবে?

কি জানি, জানি না তো। সময় এবং অবস্থা বলে দেবে।

যদি আসলেই ব্যর্থ হও?

সর্বশেষ ঠিকানা তো আছে, মহাযান, ঐ প্যাগোডা।

সেটা তো বৃদ্ধ বয়সের ঠিকানা।

একদিন তো আপনিই বলেছিলেন কম বয়সেও ঋদ্ধ হওয়া যায়। যেমন তাকুক হয়েছে।

মনে হয় তোমাকে না বুঝেই বলেছিলাম।

প্রিন্স তামেতাকা এখন সত্যিই প্রেমে পড়েছেন ইঝোমির। প্রথমে চোখের নেশা ছিল। এক সময় তা দেহগত রূপ পায়। এখন মনোগত হয়ে গেছে। আহারে বিহারে, জেগে থেকে ঘুমে স্বপনে শুধু ইঝোমি। সাহিত্যের আসরের পর তা আরো প্রকট হয়েছে। তার একটি সমস্যা আছে। স্বপ্ন সঞ্চরণ। নিশাচর হয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় ঘুরাফেরা করা। তাতে ঝুঁকি আছে ভয়ানক, মৃত্যুঝুঁকি। এ সমস্যাটাও অনেক বেড়ে গেছে। এখন জাগন্ত অবস্থায় ও একা একা খুব হাঁটাহাঁটি করেন।

ইঝোমি প্রথমে প্রিন্সের আহ্বানে সারা দিয়েছিলেন উচ্চাভিলাষে। ওপরে ওঠার সিঁডির প্রয়োজন ছিল তার। বর্তমান সম্র্রাটের এখনো সন্তানাদি নেই। প্রাক্তন সম্রাট পুত্রকে তাই বেছে নেন। ক্রমে তিনি তার প্রেমে মত্ত হয়ে ওঠেন। উজিনদীর প্রমত্ত ঢেউ তার বুকে যেন আছড়ে পড়ে। বাধা না মানা প্রেমের জোয়ার দুকূলকে প্লাবিত করে সব কিছুকে ধ্বংস করে পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছে।

স্বামী তাকে বিবাহবিচ্ছেদের কথা জানিয়ে পত্র দিয়েছেন। পিতা তাকে তাজ্য করেছেন। স্বামী সন্তানকে নিয়ে গেছেন। কঠিন এক সময় পার করছেন তিনি। কবিতা লেখা বন্ধ আছে। শোশির দরবারেও যাচ্ছেন না।

প্রিন্স তামেতাকা সব জানতে পেরেছেন। তার হৃদয় হাহা কার করে উঠলো। তিনি নিজেই ছুটে এলেন। রাজপুত্র যেন রাজকন্যাকে এক মহা অনিশ্চয়তার করাল গ্রাস (রাক্ষস?) থেকে মুক্ত করে নিয়ে গেলেন। ধ্রুতধাবমান অশ্বশকটের মধ্যে এক কবির বদ্ধজীবনের প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া আশায় তা প্রবল হাওয়া দিতে শুরু করলো। ইঝোমি জড়িয়ে ধরলেন সম্রাটপুত্রকে। তখন সন্ধ্যার শ্রাইন এবং প্যাগোড়াগুলোয় ধূপের ধোঁয়ায় সন্ধ্যারতির মিলন সঙ্গীত বেজে উঠলো। অশ্বখুর ও শকটের চাকার শব্দ এবং সঙ্গীতের ধ্বনি, কিছুই যেন সম্রাটপুত্র তামেতাকা এবং যুগের শ্রেষ্ঠ কবি ইঝোমি শিকিবুর কর্ণে প্রবেশ করলো না, সব কিছু সন্ধ্যার অন্ধকারে গভীর প্রেমের অনুরাগে বিলীন হয়ে থাকলো।

কারো মুখে কোনো কথা নেই। ইঝোমির বুকে হাজার কবিতার আসা যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। স্বপ্ন সঞ্চরণের সম্রাটপুত্র তামেতাকার সকল স্বপ্ন যেন ধ্রুতধাবমান অশ্বের এক স্থানে আটকে থাকার মতো থেমে আছে। অথচ সব কিছুই চলছে।

অবশেষে ইঝোমি শুধু বলতে পারলেন, এতটা কাল কোথায় ছিলেন? ক্রমশ...

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন ২০২১ , ৩ আষাড় ১৪২৮ ৫ জিলকদ ১৪৪২

ধারাবাহিক উপন্যাস : আট

শিকিবু

আবুল কাসেম

image

(পূর্ব প্রকাশের পর)

তেরো.

সম্রাটের দরবারে কবিতা পাঠকে কেন্দ্র করে দারুণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলো। সম্রাজ্ঞী তেইশি সভাকবি ফুজিওয়ারা নো কিন্তুকে ডাকালেন।

কবি কিন্তু কাচুমাচু হয়ে সম্রাজ্ঞীর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। সম্রাজ্ঞী ক্ষিপ্ত। বললেন, এখানে বড় সম্রাজ্ঞী কে?

আপনি মহামান্যা।

তা হলে আমার লেডি-ইন-ওয়েটিংকে আগে না দিয়ে সম্রাজ্ঞী শোশির ইয়েটি আগে গেল কি করে?

আগে আসে ছোট কবিরা, পরে বড় কবি।

তা নিয়ে অনুষ্ঠানের আগে তুমি আমার সঙ্গে কথা বলেছ?

মহামান্য সম্রাটের সঙ্গে কথা হয়েছে।

সম্রাট তোমাকে বলেছেন এভাবে অনুষ্ঠান সাজাতে?

বলেননি, তাকে জানিয়েছিলাম, এভাবে সাজাব।

তিনি কি বললেন?

তিনি কিছু বলেননি।

আর তুমি তোমার মতোই করলে? আমার কথার বাইরে ভবিষ্যতে কিছু করেছ তো আমি নিজের হাতে তোমার গর্দান নেবো।

সভাকবিকে শাসিয়ে তেইশি সম্রাটের কাছে গেলেন। সম্রাটকে বললেন, মহামান্য, আপনার সাহিত্যপ্রীতিতে সবাই মুগ্ধ। রাজকীয় কবিতা সংকলন হবে শুনে সবাই আনন্দে আত্মহারা। কবে সম্রাট হিগো একটি সংকলন করেছিলেন, তারপর আর সাহিত্যপ্রেমী কোনো সম্রাটের আবির্ভাব হয়নি। আপনার অবদানের কথা হাজার বছর পরও মানুষ মনে রাখবে। আমরা তো সৌভাগ্যবানরা আপনার প্রতি শ্রদ্ধায় নত আছিই।

সম্রাট ভাবলেন এই সম্রাজ্ঞী এত প্রশংসা করছেন কেন, নিশ্চয়ই বড় কিছু চাইবেন। সম্রাজ্ঞী আবার বললেন, কাল আপনি সেই শোনাগনের কবিতা না শুনেই চলে গেলেন।

ইঝোমি আর তাকাকুর কবিতা ভালো লেগেছে। খুব আনন্দ হয়েছে আমার।

ওরা আর কী আনন্দ দেবে আপনাকে। দরবার কাঁপানো পরিবেশনা নিয়ে প্রস্তুত ছিল সেই শোনাগন। সভাকবিকে বলে দেবেন সে যেন সবার আগে সেই শোনাগনকে দেয়।

আচ্ছা বলে দেব।

ইঝোমির কথা ভালো শুনি না। স্বামী থাকা সত্ত্বেও প্রিন্স তামেতাকার সঙ্গে বাজে সম্পর্ক পাতিয়েছে।

তাই নাকি? একটু পর বললেন, কবিদের এরকম কেউ থাকতে হয়, নইলের কবিতা সৃষ্টি হবে কি করে?

খুব দুর্নাম হচ্ছে। প্রশ্রয় দেবেন না আমার প্রিয় মহামান্য সম্রাট।

শোশিও তোমার মতো সাহিত্যপ্রেমী ভালো।

কবিতা বুঝবার বয়স কি হয়েছে তার? সে নয়, আমার সাহিত্য-সংস্কৃতিপ্রীতিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রিন্স মিচিনাগা এসব করাচ্ছে। কিমোনো সামলাতে যার প্রাণান্তকর কসরত করতে হয়, তার আবার সাহিত্যপ্রীতি। শোশির কোনো সাহিত্যপ্রীতি নেই।

হতে পারে, হতে পারে।

হতে পারে কি মহামান্য সম্রাট। প্রিন্স মিচিনাগা আপনাকে প্রতারণা করেছে। তার থেকে সাবধান থাকুন।

মনে মনে বললেন, ইঝোমিকে আমি তাড়াবই। সে আমার ঘুম নষ্ট করেছে।

মিচিনাগা তার স্ত্রীকে নিয়ে সম্রাজ্ঞী শোশির দরবারে উপস্থিত হয়েছেন। সেখানে শোশি তার লেডি-ইন-ওয়েটিংদের নিয়ে গতকালের বিজয় উদযাপন করছেন। আনন্দে আত্মহারা তিনি সম্রাজ্ঞী তেইশিকে দারুণ জব্দ করে।

মিচিনাগাদের দেখে ইমন এবং ইঝোমি উঠে যাচ্ছিলেন। মিচিনাগা বললেন, বসো তোমরা যেয়ো না। কাল ইঝোমির কবিতা শুনে সম্রাট এতটাই মুগ্ধ হয়েছেন যে পরে আর কারো কবিতা শুনতে ইচ্ছেই হয়নি তার। ভালো জব্দ হয়েছে তেইশি। তামেতোকির মেয়েও তো দেখছি ভালো কবিতা লেখে।

ইমন বললেন, লেখার হাত ভালো।

শোশি বললেন, দেখো আবার তেইশির দলে যেন না ভিড়ে যায়।

ইমন বলল, যাবে না সে মহামান্য।

রিনশি মানে শোশির মা বললেন, তুমি কেন পড়নি ইমন। ইমন তার প্রিয় সহকারী ছিলেন, তাকে খুব পছন্দ করেন। ইমন হাসি দিয়ে বললেন, আগামী অনুষ্ঠানে শুনবেন।

মিচিনাগা বললেন, তোমাদের দুজনকেই পুরস্কৃত করা হবে। এখন শোশি চলো সম্রাটের মনোভাবটা জেনে আসি।

সম্রাজ্ঞী তেইশি উঠে যাবার পরপরই এরা সম্রাটের দরবারে হাজির হলেন। সম্রাট গতকাল শোশির দরবারের পরিবেশনায় খুশি। কিন্তু তেইশি যে কানভারী করে দিয়ে গেছেন তাই তার মধ্যে আগের উচ্ছ্বাসটা নেই। তাদের দেখে একরকম শীতল কণ্ঠেই বললেন, বসুন আপনারা।

কিমোনো সামলে সবাই পদ্ম আসন করে বসলেন। সম্রাট লক্ষ করলেন কিশোরী সম্রাজ্ঞী শোশির সত্যিই কিমোনো সামলাতে কসরত করতে হয়ে। সম্রাজ্ঞীর ঐতিহ্যবাহী কিমোনো অলংকরণে বেশ ভারি এবং ঢিলেঢালা। তা সামলাতে গিয়ে সম্রাজ্ঞীর কষ্টই হয়।

মিচিনাগা বললেন, কালকের কবিতা পাঠ বেশ উপভোগ্য ছিল। আপনিও খুব উপভোগ করেছেন দেখলাম।

হ্যাঁ ভালো লেগেছিল। ইঝোমি মেয়েটা কি করে?

শোশি বললেন, আমার দরবারে লেডি-ইন-ওয়েটিং।

তাতো জানি। তার বাবা কে?

মিচিনাগা বললেন, উৎসব অনুষ্ঠান বিভাগের আমলা মাসামুনের মেয়ে সে।

তার বাবা ইচিঝেনের গভর্নর ছিল?

ঠিক বলেছেন।

কবিতা ভালো লেখে, সমস্যাও আছে।

একথা শুনে এরা পরস্পরের দিকে চাওয়া-চাওয়ী করলেন।

এ সময় খানসামা বলল, চা উৎসব থেকে চা এসেছে।

সম্রাট বললেন, ভালো সময়ে পাঠিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের সামনে পরিবেশন কর।

সকলের সামনেই চীন থেকে আনা অভিজাত কাপ। ধোঁয়া উড়ছে কুণ্ডলী পাকিয়ে। সম্রাট বললেন, বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের সঙ্গে মাঝে-মধ্যেই পান করি। কবিতার আসরে কবিতা শুনতে শুনতে পান করলে আরো মজা হতো।

কথা আছে, চায়ের কাপের কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়ার হাত ধরে কবিতার ঐশী শক্তি আচার্য এবং ঋদ্ধ ব্যক্তিদের ধ্যান আসে। চীনের এ

সংস্কৃতি এখন কিয়োটোর সম্রাটের দরকারকেও ধ্যানে ঋদ্ধ করে তোলে।

মিচিনাগা বললেন, আপনি ঠিক বলেছেন সম্রাট। কবিতার রস আস্বাদনকালে চায়ের তুলনা হতো না।

উজি থেকে দিয়ে গেছে। চা উৎসবটা ভালোই করে।

শোশি এখনো কালকের কবিতা পাঠের মধ্যেই আছেন। বললেন, মহামান্য সম্রাটকে খুশি করতে পেরে আমি বেশ আনন্দিত।

তা ঠিক আছে। মেয়েটির দিকে লক্ষ রেখো। সাবেক সম্রাট রেইজেইয়ের তৃতীয় প্রিন্স, তামেতাকা।

হ্যাঁ তামেতাকা। সে সব সময় নিশাচরের দুঃসাহসিক অভিযানে বের হয় কেন? তার কি স্ত্রী-সন্তান নেই?

তা তো জানি না।

আমি সব জানি।

ব্যাপারটা কী, ভেবে সবাই চিন্তিত।

বাইরে সমুরাইদের প্রধান সেনাপতি অপেক্ষা করছেন। ভেতরে মিচিনাগা আছেন বলে ধৈর্য ধারণ করছেন। এরা সম্রাটের দরবারে প্রবেশ করতে সাধারণত বিলম্ব সহ্য করেন না।

মুরাসাকি সম্রাটের সামনে কবিতা পাঠ করতে পেরে কৃতার্থ। কিন্তু নোবুতাকার ওপর কিঞ্চিৎ বিরক্ত। বললেন, দরবারের সামনে কেউ স্ত্রীকে অপ্রস্তুত করে দেয়?

নোবুতাকা বললেন, আমার ভুল হয়েছে। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে, তুমি পারবে। তোমার লেখা কবিতা পড়ে আমি অবাক হয়েছি।

কবিতা লেখার খাতা বা নিক্কি (ডায়েরি) সাথে ছিল না। ভাগ্য ভালো স্মৃতি থেকে বলতে পেরেছিলাম।

এরকম আর হবে না। তবে না দেখে বলায় ব্যাপারটা আরো আকর্ষণীয় হয়েছে।

একটি কথা বলব?

বল।

আমি কিন্তু উদাস বা উশৃঙ্খল কবি না। পুরো একজন জীবনবাদী নারী। বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিই। প্রতিভাবান নৃত্য শিল্পীর কাছেও তা আশা করি।

সম্রাটের উৎসব বিভাগে কাজ করে একেবারে সোজা নাকবরাবর চলা যায় না। নারীপুরুষ সকলের সঙ্গে মিশতে হয়। আমি আশা করি বাস্তববাদী কবির তা বুঝতে অসুবিধা হবে না এবং তা নিয়ে চিন্তিতও হবেন না।

জ্বি জনাব, এই দরবারের আলো বাতাসেই আমি বড় হয়েছি। তবে আর আট দশজনের মতো না। পারিবারিক বাধ্যবাধকতার বাইরেও আত্মসচেতন এবং সংযমী থাকতে চেয়েছি। তার মর্যাদা নিশ্চয়ই চাইতে পারি।

আমি তোমার কথা বুঝতে পেরেছি। সম্রাটের দরবার, প্রাসাদ একটা রটনার জায়গা। কানকে সবসময় বিশ্বাস করলে ঠকতে হবে এবং কষ্ট পাবে।

কষ্ট যাতে না পাই সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

শিন্টু শ্রাইনে দেবতাদের সামনে দাঁড়িয়ে আমি তো শপথ বাক্য উচ্চারণ করেছি।

আমিও বিশ্বাস করেছি। বলে হাসলেন মুরাসাকি।

চৌদ্দ.

ইঝোমির স্বামী মিচিসাদা, নানা ইয়াসুহিরা এবং বাবা মাসামুনে বসে আছেন। কোনো কথা নেই কারো মুখে। মায়ের পাশে বসে আছেন ইঝোমি।

ঘরোয়া বৈঠক। তাই বাইরের কোনো লোকজন নেই। স্তব্ধতা ভঙ্গ করে নানা বললেন, দেখো ইঝোমি হেইয়ান কিয়োটোয় আমাদের একটি মর্যাদা আছে। তোমার স্বামী এবং আমি দু’টি প্রদেশের গভর্নর। তোমার বাবা এই দু’দিন আগেও ইচিঝেনে গভর্নর ছিলো, এখন সম্রাটের দরবারে উৎসব অনুষ্ঠান বিভাগের বড় আমলা। তোমার মা গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরিরত। সর্বোপরি তুমি বিবাহিত। তুমি যা করছো তাতে আমাদের মুখ দেখাবার উপায় আছে?

তার বাবা মাসামুনে বললেন, সম্রাট আমাকে ডেকে বললেন, এসব কী হচ্ছে? কী শুনছি আমি মাসামুনে?

আমার তো তখনই মরে যাওয়া উচিত ছিল।

মিচিসাদা বললেন, শুধু কিয়োটো নয় রাতারাতি এ সংবাদ পৌঁছে গেছে ইঝোমি প্রদেশেও। শুক দেখাবার উপায় নেই। একজন গভর্নরের স্ত্রী প্রকাশ্যে এসব করে বেড়াচ্ছে। আপনারা ব্যবস্থা করে দিন; আমি একে আজই ইঝোমি প্রদেশে নিয়ে যাই।

মা বললেন, আমাকে প্রাসাদে সবাই সম্ভ্রান্ত মানুষ বলে সম্মান করতো। এখন আমাকে দেখলে সবাই, বিশেষ করে মহিলারা উপেক্ষা করে। ঠারে ঠুরে কিসব বলে। আমার অবস্থান কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। বলে কাঁদতে লাগলেন তিনি। পরে বললেন, তুমি যদি এখন জামাইয়ের সঙ্গে ইঝোমিতে চলে যাও সকলর মুখে বন্ধ হবে এবং আমাদের মুখ রক্ষা হবে।

ইঝোমি শিকিবু বললেন, আমি কিয়োটো ছেড়ে কোথাও যাব না, ইঝোমি প্রদেশে তো নয়ই। মিচিসাগা আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে, তাকে আমি স্বামী বলে আর মানতে পারি না।

তাহলে তুমি কি করবে? মাতামহের প্রশ্ন।

যা করছি তাই করবো।

আমাদের মান-সম্মানের দিকে একবারও তাকাবে না?

আমি যা করছি তার সঙ্গে আপনাদের মানসম্মানের কোনো সম্পর্ক নেই। আমি মিচিসাদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করব।

মিচিসাগা বললেন, কেলেঙ্কারিটা তুমি করেছ আমি না। ত্যাগ করতে হলে আমি করব।

ইঝোমি চটে গিয়ে বললেন, কেলেঙ্কারি কি? পুরুষরা করলে কেলেঙ্কারি হয় না, মেয়েরা করলে হয়? এই হেইয়ান কিউতে কয়টা পুরুষ আছে সভ্যÑ যার একাধিক স্ত্রী বা রক্ষিতা নেই। নারী করলেই দোষ। নারীর কোনো ইচ্ছা অনিচ্ছার দাম নেই? আমার যা ভালো লাগে তাই আমি করবো। আমি কোনো কিছুর পরোয়া করি না। আপনাদের যা খুশি করতে পারেন।

বাবা বললেন, এই তোমার শেষ কথা?

হ্যাঁ, এটাই আমার সিদ্ধান্ত।

মাতামহ বললেন, পাগলামি করো না ইঝোমি, আমাদের সমাজ আছে, উচ্চপদ আছে, সামাজিক ও চাকরিগতভাবে আমাদের মাথা উঁচু করে চলতে হবে। তুমি ভালো করেই জানো আমরা ফুজিওয়ারাদের দ্বারা নানাভাবে কোনঠাসা। ওরা এখন আরো সুযোগ পাবে। আমাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইবে। তুমি যার সঙ্গে মেলামেশা করছ সেও ফুজিওয়ারা নয়, দানজু গোত্রের। ওরা একেও সাধারণভাবে নেবে না।

কে কি নিলো বা নিলো না তাতে আমার কিছু যায় আসে না।

মা বললেন, তোমার মেয়ের কি হবে? নিয়মতো সন্তান মায়ের সঙ্গে থাকবে।

আমি ওসব নিয়ম মানি না। সে তার বাবার সঙ্গে যাবে। মিচিসাদা বললেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ আমার সন্তান আমার সঙ্গেই যাবে। অন্তত মায়ের চরিত্র থেকে রক্ষা পাবে।

ইঝোমি চিৎকার করে বললেন, এখানে চরিত্রের কী দেখলে? তোমার চরিত্র পবিত্র? এই সমাজকে তাই আমি ঘৃণা করি। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষরা যা খুশি করবে। হেইয়ানকিউ অনেক এগিয়েছে, কিন্তু অন্ধকার থেকে, নারী পরাধীনতা থেকে বের হতে পারেনি। আমি এ প্রথা ভাঙ্গবো। সম্রাট আমার ফাঁসি দিক। আপনারা সবাই আমাকে পরিত্যাগ করুন।

বাবা বললেন, স্বাধীনতার অর্থ স্বেচ্ছাচারিতা নয়, যা তুমি করছ।

হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি তাই করবো। আপনাদের আমি ত্যাগ করলাম। বিদায়। বলে ইঝোমি বাড়ি থেকে বের হয়ে, চলে গেলেন। মা তাকে বাধা দিতে যাচ্ছিলেন। বাবা মাকে আটকালেন। বললেন, কলঙ্কিনীকে যেতে যাও। তাকে আমি ত্যাজ্য করলাম। আজ থেকে সে আর আমার মেয়ে নয়, কালই আইনি ব্যবস্থা চূড়ান্ত হবে।

ইঝোমির স্বামী মিচিসাদা উঠে গিয়ে তাদের কন্যা নাইশিকে নিয়ে ঝড়ের বেগে বের হয়ে গেলেন। মেয়েটি কাদছে। ভয়ে নাকি বিচ্ছেদে, বুঝবার উপায় নেই। সবাই তাদের গমন পথে তাকিয়ে রইলেন মনভারী করে।

ইঝোমি গিয়ে উঠলেন কবি আকাঝোমি ইমনের বাড়িতে। কয়েক বাড়ি পরেই ইমনের বাড়ি। ইমন অবাক হলো, তবে কারণ জিজ্ঞেস করলো না। সন্ধ্যার পর ঘটনা। টেরামাচি লেন জনশূন্য।

ইমনের স্বামী বাড়িতে নেই। দূরের একটা প্রদেশের চাকরি করেন। ইঝোমি ভাবলো ভালোই হলো। প্রিন্স তামেতাকা যতদিন না খোঁজ করে নিতে আসবে, এখানেই থাকবেন।

রাত্রে ঘটনাটা ইমনকে বললেন। উষ্মা প্রকাশ করলেন তার স্বরে। বললেন, আমাকে বলে কিনা আমি নাকি কলঙ্কিনী। নারীর প্রেমে কলঙ্ক আর পুরুষের প্রেমে পালঙ্ক। অদ্ভুত চিন্তা বাবা-মাসহ সকলের। ভাবলাম বুড়ো মাতামহের সমর্থন মিলবে, পেলাম উল্টোটা, তার নাকি মান সম্মান গেছে। সম্মান থাকলে তো যাবে। একজনের গলায় বেঁধে দিলাম, অসম্মান করলেও গলায় জড়িতে থাকতে হবে?

ইমন প্রসঙ্গটা পরিবর্তন করতে চাইলেন। বললেন, প্রিন্সের সংবাদ কি?

চারদিন হলো খবর জানি না।

ঝগড়া করেছ?

একটু।

সেদিন অনুষ্ঠানে তোমাকে দেখেই বুঝতে পেরেছি। ওকে ঝাড়তে গিয়েছিলাম। সম্রাট বললেন, বৃষ্টিদিনের কবিতা পাঠ করতে হবে। পারলাম না শোধ নিতে।

ভালোই করেছ। প্রিন্স বলে কথা। ছেড়ে যেতে সময় লাগবে না।

না, সেরকম নয়। রাগ একটু আছে, তবে নিষ্ঠুর নয়।

তোমার কবিতা সুন্দর হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে লেখা বৃষ্টির কবিতা অসাধারণ হয়েছে।

ধন্যবাদ। আচ্ছা বলুন তো, আমি কি রাগের মাথায় ভুল করলাম।

কোন বিষয়ে?

মেয়েটাকে ওকে দিয়ে দিয়ে?

ছেলে মেয়েরা মায়ের কাছেই ভালো থাকে।

তা প্রচলিত নিয়মে। আমি চাই নিয়ম ভাঙ্গার মানসিকতা তৈরি হোক তার। নিজের মতো করে চলতে পারবে।

কথায় যুক্তি আছে।

রাত গভীর হচ্ছে। ইমনের ছেলে মেয়েরা ঘুমিয়ে গেছে। ইঝোমি বললেন, সম্রাজ্ঞী শোশিকে সহ্য করেন কি করে?

কেন?

অহংকারী, আর না বুঝে কথা বলেন।

কম বয়সের জন্য তা হয়।

বয়োজ্যেষ্ঠ্যদের সম্মান করতে হয়।

আমাকে তো মানিয়ে চলে, সম্মানও করে।

আপনি দীর্ঘদিন এদের সঙ্গে আছেন বলে।

হতে পারে।

আপনাদেরকে সবাই লাভবার্ড বলে।

আমাদের বোঝাপড়াটা ভালো। ওয়ে নো মাসাহিরা আসলেই ভদ্র এবং মানিয়ে চলার মানুষ। অন্তরটাও ভালো।

আমি তার একটা সাক্ষাৎকার নেব। বিষয় আপনার সম্পর্কে তার ধারণা। বলে ইঝোমি হাসলেন।

ইমন বললেন, তা হলে তো ভালোই হয়। বলে তিনিও হাসলেন। পরে বললেন, রসায়নটাই বড় কথা।

আমার সঙ্গে তার হলো না। মানসিক এবং ভালোবাসার শক্তির প্রয়োজন হয়। তার শুধু স্বার্থবুদ্ধি।

তোমাকে আমি তেমন বুঝতে পারি না ইঝোমি।

আমিও জানিনা কিসে আমার পূর্ণ প্রাপ্তি। মনে হয় ছুটছি, শুধু ছুটছি। তার শেষ কোথায় কে জানে।

তাতে কষ্ট আছে, জানো?

তাতো দেখতেই পাচ্ছি।

একটা গন্তব্য ঠিক করে নাও। সংসারি হও।

বোধ হয় পারবো না।

কেন?

এটাই আমার নিয়তি।

যদি প্রিন্স তোমেতাকা আর খোঁজ না করে?

অন্য কেউ দোরে কড়া নাড়তে আসবে।

তাকে গ্রহণ করতে পারবে?

কি জানি, জানি না তো। সময় এবং অবস্থা বলে দেবে।

যদি আসলেই ব্যর্থ হও?

সর্বশেষ ঠিকানা তো আছে, মহাযান, ঐ প্যাগোডা।

সেটা তো বৃদ্ধ বয়সের ঠিকানা।

একদিন তো আপনিই বলেছিলেন কম বয়সেও ঋদ্ধ হওয়া যায়। যেমন তাকুক হয়েছে।

মনে হয় তোমাকে না বুঝেই বলেছিলাম।

প্রিন্স তামেতাকা এখন সত্যিই প্রেমে পড়েছেন ইঝোমির। প্রথমে চোখের নেশা ছিল। এক সময় তা দেহগত রূপ পায়। এখন মনোগত হয়ে গেছে। আহারে বিহারে, জেগে থেকে ঘুমে স্বপনে শুধু ইঝোমি। সাহিত্যের আসরের পর তা আরো প্রকট হয়েছে। তার একটি সমস্যা আছে। স্বপ্ন সঞ্চরণ। নিশাচর হয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় ঘুরাফেরা করা। তাতে ঝুঁকি আছে ভয়ানক, মৃত্যুঝুঁকি। এ সমস্যাটাও অনেক বেড়ে গেছে। এখন জাগন্ত অবস্থায় ও একা একা খুব হাঁটাহাঁটি করেন।

ইঝোমি প্রথমে প্রিন্সের আহ্বানে সারা দিয়েছিলেন উচ্চাভিলাষে। ওপরে ওঠার সিঁডির প্রয়োজন ছিল তার। বর্তমান সম্র্রাটের এখনো সন্তানাদি নেই। প্রাক্তন সম্রাট পুত্রকে তাই বেছে নেন। ক্রমে তিনি তার প্রেমে মত্ত হয়ে ওঠেন। উজিনদীর প্রমত্ত ঢেউ তার বুকে যেন আছড়ে পড়ে। বাধা না মানা প্রেমের জোয়ার দুকূলকে প্লাবিত করে সব কিছুকে ধ্বংস করে পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছে।

স্বামী তাকে বিবাহবিচ্ছেদের কথা জানিয়ে পত্র দিয়েছেন। পিতা তাকে তাজ্য করেছেন। স্বামী সন্তানকে নিয়ে গেছেন। কঠিন এক সময় পার করছেন তিনি। কবিতা লেখা বন্ধ আছে। শোশির দরবারেও যাচ্ছেন না।

প্রিন্স তামেতাকা সব জানতে পেরেছেন। তার হৃদয় হাহা কার করে উঠলো। তিনি নিজেই ছুটে এলেন। রাজপুত্র যেন রাজকন্যাকে এক মহা অনিশ্চয়তার করাল গ্রাস (রাক্ষস?) থেকে মুক্ত করে নিয়ে গেলেন। ধ্রুতধাবমান অশ্বশকটের মধ্যে এক কবির বদ্ধজীবনের প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া আশায় তা প্রবল হাওয়া দিতে শুরু করলো। ইঝোমি জড়িয়ে ধরলেন সম্রাটপুত্রকে। তখন সন্ধ্যার শ্রাইন এবং প্যাগোড়াগুলোয় ধূপের ধোঁয়ায় সন্ধ্যারতির মিলন সঙ্গীত বেজে উঠলো। অশ্বখুর ও শকটের চাকার শব্দ এবং সঙ্গীতের ধ্বনি, কিছুই যেন সম্রাটপুত্র তামেতাকা এবং যুগের শ্রেষ্ঠ কবি ইঝোমি শিকিবুর কর্ণে প্রবেশ করলো না, সব কিছু সন্ধ্যার অন্ধকারে গভীর প্রেমের অনুরাগে বিলীন হয়ে থাকলো।

কারো মুখে কোনো কথা নেই। ইঝোমির বুকে হাজার কবিতার আসা যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। স্বপ্ন সঞ্চরণের সম্রাটপুত্র তামেতাকার সকল স্বপ্ন যেন ধ্রুতধাবমান অশ্বের এক স্থানে আটকে থাকার মতো থেমে আছে। অথচ সব কিছুই চলছে।

অবশেষে ইঝোমি শুধু বলতে পারলেন, এতটা কাল কোথায় ছিলেন? ক্রমশ...