প্রতারক চক্র রাজা-বাদশাহ গ্রুপ ১৬ সদস্য গ্রেপ্তার

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা ভয়াবহ জালিয়াত চক্রের সন্ধান পেয়েছে। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় ‘রাজা-বাদশা গ্রুপ’ নাম দিয়ে একটি কার্যালয় চালু করে। র‌্যাবের গোয়েন্দা টিম ও র‌্যাব-১ সদস্যরা ওই কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের মূল হোতা সাইফুল ইসলাম ওরফে বিজ্ঞানী সাইফুল ওরফে সায়েন্টিস্ট সাইফুলসহ ১৬ জালিয়াতকে গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার গভীররাতে উত্তরা ও টাঙ্গাইলে তাদের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন আলামত জব্দ করেছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা প্রতারক বিজ্ঞানী সাইফুল ইসলাম, বকুলি ইয়াসমিন, কাকলী আক্তার, ইমরান রাজা, রোমান বাদশা, আনিসুজ্জামান সিদ্দিকী, নাজমুল হক, তারেক আজিজ, বেল্লাল হোসেন, আবদুল মান্নান, শিমুল মিয়া, নুরনবী, আবুল হাশেম, আলি হোসেন, শওকত আলী ও রোকনুজ্জামান।

আস্তানা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ২ রাউন্ড গুলি, ২০টি মোবাইল ফোন, ১৪টি চেকবই, ১২টি ভিজিটিং কার্ড, ৬টি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চিঠি, বিভিন্ন মূল্যের ১২টি জাল স্ট্যাম্প, ৩টি চুক্তিনামা দলিল, ৩টি বই, ৯টি স্বাক্ষরিত চেক, বিদেশি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে চিঠিপত্র আদান প্রদানের ভুয়া কপি।

গ্রেপ্তারকৃত সাইফুল রাজা বাদশাহ চক্রের মূল হোতা। সে সংগঠন তৈরি করে ২০১১ সাল থেকে প্রতারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। যে নিজেকে রাজা বাদশা গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিত। এ চক্রের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা জড়িত। তার স্ত্রী বকুলী ইয়াসমিন ও পুত্র ইমরান রাজা ও রোমান বাদশা এবং পুত্রবধূ কাকলী আক্তার ভুয়া সংস্থাটির গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিল বলে র‌্যাব জানায়। র‌্যাব জানায়, প্রতারক সাইফুল লেখাপড়া জানা বিএসসি পাস। সে নিজেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী হিসেবে ভুয়া পরিচয় দিত। বিদেশে তার বিভিন্ন আবিষ্কার ও গবেষণা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে বলে দাবি করে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রতিকার, জ্বালানি বিহীন জেনারেটর দ্বারা পরিচালিত পাওয়ার প্ল্যান্ট ও করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থার উদ্ভাবক ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে তার কয়েল টেকনিক পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী করোনা প্রতিরোধে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে ইত্যাদি ধরনের ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার করতো।

প্রচার করে বেড়াতো তার প্রজেক্টসমূহ বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় নীতিগত, সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বিদেশি নেতা ও গবেষকদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। বিদেশে তার প্রজেক্টে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে সম্মত হয়েছে বলে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করতো।

সে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ছাড়াও সৌদি আরবের তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং সাইপ্রাস ও জাপানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া তথ্য প্রচার করে প্রতারিতদের উদ্বুদ্ধ করতো। এছাড়াও ইরাকের একজন আইনজীবী তার উদ্ভাবিত প্রজেক্টে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে ইচ্ছা পোষণ করেছে। এভাবে সে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করে মানুষকে প্রতারিত করতো।

ভয়াবহ এ জালিয়াত ইতোমধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রজেক্টের আওতায় নোয়াখালীতে প্রায় ৪৫০ বিঘা জমি ছাড়াও লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহের ভালুকায় আরও এক হাজার বিঘা জমি প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল। ইতোমধ্যে কয়েকশ মানুষ তার কাছে প্রতারিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ প্রতারক চক্রের উত্তরা অফিস ছাড়াও টাঙ্গাইলে বেপারী পাড়ায় একটি শাখা অফিস আছে। মাঠ পর্যায়ে অনেকেই তার অফিসের হয়ে কাজ করছেন। তারা এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। পরে তার কাছে নিয়ে যেত।

এ সম্পর্কে র‌্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল রাতে সংবাদকে বলেন, এ চক্রে আরও কেউ কেউ জড়িত আছে। তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

আরও খবর
সংক্রমণ বেড়েই চলেছে
দাম প্রকাশ করায় চীন থেকে টিকা পেতে দেরি হচ্ছে
‘ত্রাণ চাই না বাঁধ চাই’, গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে সংসদে
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ লাখ শিক্ষার্থী প্রমোশন পেলেন তবে শর্তসাপেক্ষে 
মুক্তি পেলেন অন্যের সাজা খাটা শিমু আক্তার
সিলেটে এক পরিবারের ৩ জনকে জবাই করে হত্যা
পরীমনিকে যেভাবে দেখা গেল বোট ক্লাবের সিসি ক্যামেরায়
অমির রিক্রুটিং এজেন্সিতে অভিযান, শতাধিক পাসপোর্ট জব্দ, গ্রেপ্তার ২
অল কমিউনিটি ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ পরীমনির বিরুদ্ধে
বিভিন্ন ব্যাংকের ৩০০ কোটি টাকা লোপাটের ৫৪ মামলা, ১০টির বিচার শেষ
মামুনুলসহ ৪৩ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন ২০২১ , ৩ আষাড় ১৪২৮ ৫ জিলকদ ১৪৪২

প্রতারক চক্র রাজা-বাদশাহ গ্রুপ ১৬ সদস্য গ্রেপ্তার

বাকী বিল্লাহ

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা ভয়াবহ জালিয়াত চক্রের সন্ধান পেয়েছে। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় ‘রাজা-বাদশা গ্রুপ’ নাম দিয়ে একটি কার্যালয় চালু করে। র‌্যাবের গোয়েন্দা টিম ও র‌্যাব-১ সদস্যরা ওই কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের মূল হোতা সাইফুল ইসলাম ওরফে বিজ্ঞানী সাইফুল ওরফে সায়েন্টিস্ট সাইফুলসহ ১৬ জালিয়াতকে গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার গভীররাতে উত্তরা ও টাঙ্গাইলে তাদের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন আলামত জব্দ করেছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা প্রতারক বিজ্ঞানী সাইফুল ইসলাম, বকুলি ইয়াসমিন, কাকলী আক্তার, ইমরান রাজা, রোমান বাদশা, আনিসুজ্জামান সিদ্দিকী, নাজমুল হক, তারেক আজিজ, বেল্লাল হোসেন, আবদুল মান্নান, শিমুল মিয়া, নুরনবী, আবুল হাশেম, আলি হোসেন, শওকত আলী ও রোকনুজ্জামান।

আস্তানা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ২ রাউন্ড গুলি, ২০টি মোবাইল ফোন, ১৪টি চেকবই, ১২টি ভিজিটিং কার্ড, ৬টি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চিঠি, বিভিন্ন মূল্যের ১২টি জাল স্ট্যাম্প, ৩টি চুক্তিনামা দলিল, ৩টি বই, ৯টি স্বাক্ষরিত চেক, বিদেশি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে চিঠিপত্র আদান প্রদানের ভুয়া কপি।

গ্রেপ্তারকৃত সাইফুল রাজা বাদশাহ চক্রের মূল হোতা। সে সংগঠন তৈরি করে ২০১১ সাল থেকে প্রতারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। যে নিজেকে রাজা বাদশা গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিত। এ চক্রের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা জড়িত। তার স্ত্রী বকুলী ইয়াসমিন ও পুত্র ইমরান রাজা ও রোমান বাদশা এবং পুত্রবধূ কাকলী আক্তার ভুয়া সংস্থাটির গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিল বলে র‌্যাব জানায়। র‌্যাব জানায়, প্রতারক সাইফুল লেখাপড়া জানা বিএসসি পাস। সে নিজেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী হিসেবে ভুয়া পরিচয় দিত। বিদেশে তার বিভিন্ন আবিষ্কার ও গবেষণা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে বলে দাবি করে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রতিকার, জ্বালানি বিহীন জেনারেটর দ্বারা পরিচালিত পাওয়ার প্ল্যান্ট ও করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থার উদ্ভাবক ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে তার কয়েল টেকনিক পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী করোনা প্রতিরোধে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে ইত্যাদি ধরনের ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার করতো।

প্রচার করে বেড়াতো তার প্রজেক্টসমূহ বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় নীতিগত, সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বিদেশি নেতা ও গবেষকদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। বিদেশে তার প্রজেক্টে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে সম্মত হয়েছে বলে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করতো।

সে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ছাড়াও সৌদি আরবের তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং সাইপ্রাস ও জাপানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া তথ্য প্রচার করে প্রতারিতদের উদ্বুদ্ধ করতো। এছাড়াও ইরাকের একজন আইনজীবী তার উদ্ভাবিত প্রজেক্টে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে ইচ্ছা পোষণ করেছে। এভাবে সে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করে মানুষকে প্রতারিত করতো।

ভয়াবহ এ জালিয়াত ইতোমধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রজেক্টের আওতায় নোয়াখালীতে প্রায় ৪৫০ বিঘা জমি ছাড়াও লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহের ভালুকায় আরও এক হাজার বিঘা জমি প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল। ইতোমধ্যে কয়েকশ মানুষ তার কাছে প্রতারিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ প্রতারক চক্রের উত্তরা অফিস ছাড়াও টাঙ্গাইলে বেপারী পাড়ায় একটি শাখা অফিস আছে। মাঠ পর্যায়ে অনেকেই তার অফিসের হয়ে কাজ করছেন। তারা এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। পরে তার কাছে নিয়ে যেত।

এ সম্পর্কে র‌্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল রাতে সংবাদকে বলেন, এ চক্রে আরও কেউ কেউ জড়িত আছে। তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।