বোমা হামলার ২০ বছর, বিচার হয়নি

নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভয়াবহ বোমা হামলার বিশ বছর পূর্ণ হলো। এই ঘটনার পর টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। তবে এখনও হয়নি বোমা হামলার বিচার। বিচার প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলায় ক্ষোভ রয়েছে নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞে নিহত ও আহতদের পরিবারে। অনেকেই বিচার পাওয়ার আশাও ছেড়ে দিয়েছেন।

এদিকে এই বোমা হামলায় আহত হন আওয়ামী লীগ নেতা একেএম শামীম ওসমান। তিনি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য। ঘটনার সময় তিনি একই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। গত বছরের ৭ জুন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই ঘটনার সাক্ষ্য দেন সরকারদলীয় এই সংসদ সদস্য। সাক্ষ্য দেয়ার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘নির্দোষ ব্যক্তিরা এই মামলায় শাস্তি পাক আমি তা চাই না। বিএনপি নেতা তৈমুর আলম ও শকু এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত না বলে আমি মনে করি।’

সাক্ষ্য প্রদান শেষে আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সামনেও কথা বলেন শামীম ওসমান। এক প্রশ্নের জবাবে শামীম ওসমান বলেন, ‘সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত আমি কাউকে অপরাধী মনে করি না। আর আমি মনে করি না যে, কাউন্সিলর শকু এটার সঙ্গে জড়িত।’

২০০১ সালের ১৬ জুন নগরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নৃশংস বোমা হামলায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীসহ ২০ জন প্রাণ হারান। তাদের মধ্যে চারজন নারীও ছিলেন। আহত হন সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ অর্ধশতাধিক। অনেকেই চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করে।

বোমা হামলার ঘটনার পরদিনই তৎকালীন শহর (বর্তমান মহানগর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বাদী হয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে প্রধান ও আরও কয়েকজন বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করে দণ্ডবিধি ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন। পরে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

অন্যদিকে বোমা হামলায় নিহত ফুটপাতের পিঠা বিক্রেতা হালিমা বেগমের ছেলে কালাম বাদী হয়ে শামীম ওসমান ও তার দুই ভাইসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করে পৃথক আরেকটি মামলা করেন। যদিও উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলাটি পরবর্তীতে খারিজ হয়ে যায়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৩ সালে বিস্ফোরক মামলায় ২৭ জনকে ও ২০১৪ সালে হত্যা মামলায় তদন্তকারী সংস্থা ২২ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এ মামলায় গ্রেপ্তার হন তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ঢাকা সিটি করপোরেশনের কমিশনার আরিফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদল নেতা শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১০ জন।

আসামিদের মধ্যে ব্রিটিশ হাই কমিশনারের উপর বোমা হামলার মামলায় মুফতি হান্নানের মত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

কারাগারে রয়েছে আদালতে একমাত্র স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল ও আবদুস সালাম পিন্টু। ভারতে গ্রেপ্তার হন সহোদর আনিসুল মোরছালিন ও মাহাবুবুল মুত্তাকিম। জামিনে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা শওকত হাসেম শকু ও ওবায়দুল হক। বাকি আসামিরা পলাতক রয়েছে।

মামলার বিচারকার্য সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবদুর রহিম বলেন, ‘লকডাউনের কারণে বিচার কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। নিয়মিত আদালত চালু হলে বিচার কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে। সাক্ষীদের আদালতে উপস্থিত থাকার বিষয়ে সমন জারির ব্যবস্থা করা হবে।’

আরও খবর
সুন্দরবনের আয়তন বাড়ছে : প্রধানমন্ত্রী
বোট ক্লাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি সংসদে
পুলিশের শূন্য পদে নিয়োগ শীঘ্রই : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নিবন্ধন ছাড়া ডে-কেয়ার চালালে জেল-জরিমানা
অর্থ পাচারকারী কারা অর্থমন্ত্রী জানেন জাপা এমপি
রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে দ্রুত জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান
সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকলে নির্বাচন বন্ধ : সিইসি
গোপনে বেড বাড়ি নিয়ে যেতে ধরা পড়েন জনতার হাতে চিকিৎসক
১৬ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো দিবস : মির্জা ফখরুল
সিএএর সঙ্গে সম্পর্ক নেই নাগরিকত্ব আইনের
বিএনপির দুর্নীতিবিরোধী বক্তব্য ভূতের মুখে রাম নাম : কাদের
চার দাবিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে শিক্ষার্থীদের মিছিল, পুলিশের বাধা

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন ২০২১ , ৩ আষাড় ১৪২৮ ৫ জিলকদ ১৪৪২

না’গঞ্জ আ’লীগ কার্যালয়ে

বোমা হামলার ২০ বছর, বিচার হয়নি

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভয়াবহ বোমা হামলার বিশ বছর পূর্ণ হলো। এই ঘটনার পর টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। তবে এখনও হয়নি বোমা হামলার বিচার। বিচার প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলায় ক্ষোভ রয়েছে নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞে নিহত ও আহতদের পরিবারে। অনেকেই বিচার পাওয়ার আশাও ছেড়ে দিয়েছেন।

এদিকে এই বোমা হামলায় আহত হন আওয়ামী লীগ নেতা একেএম শামীম ওসমান। তিনি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য। ঘটনার সময় তিনি একই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। গত বছরের ৭ জুন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই ঘটনার সাক্ষ্য দেন সরকারদলীয় এই সংসদ সদস্য। সাক্ষ্য দেয়ার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘নির্দোষ ব্যক্তিরা এই মামলায় শাস্তি পাক আমি তা চাই না। বিএনপি নেতা তৈমুর আলম ও শকু এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত না বলে আমি মনে করি।’

সাক্ষ্য প্রদান শেষে আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সামনেও কথা বলেন শামীম ওসমান। এক প্রশ্নের জবাবে শামীম ওসমান বলেন, ‘সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত আমি কাউকে অপরাধী মনে করি না। আর আমি মনে করি না যে, কাউন্সিলর শকু এটার সঙ্গে জড়িত।’

২০০১ সালের ১৬ জুন নগরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নৃশংস বোমা হামলায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীসহ ২০ জন প্রাণ হারান। তাদের মধ্যে চারজন নারীও ছিলেন। আহত হন সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ অর্ধশতাধিক। অনেকেই চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করে।

বোমা হামলার ঘটনার পরদিনই তৎকালীন শহর (বর্তমান মহানগর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বাদী হয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে প্রধান ও আরও কয়েকজন বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করে দণ্ডবিধি ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন। পরে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

অন্যদিকে বোমা হামলায় নিহত ফুটপাতের পিঠা বিক্রেতা হালিমা বেগমের ছেলে কালাম বাদী হয়ে শামীম ওসমান ও তার দুই ভাইসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করে পৃথক আরেকটি মামলা করেন। যদিও উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলাটি পরবর্তীতে খারিজ হয়ে যায়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৩ সালে বিস্ফোরক মামলায় ২৭ জনকে ও ২০১৪ সালে হত্যা মামলায় তদন্তকারী সংস্থা ২২ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এ মামলায় গ্রেপ্তার হন তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ঢাকা সিটি করপোরেশনের কমিশনার আরিফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদল নেতা শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১০ জন।

আসামিদের মধ্যে ব্রিটিশ হাই কমিশনারের উপর বোমা হামলার মামলায় মুফতি হান্নানের মত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

কারাগারে রয়েছে আদালতে একমাত্র স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল ও আবদুস সালাম পিন্টু। ভারতে গ্রেপ্তার হন সহোদর আনিসুল মোরছালিন ও মাহাবুবুল মুত্তাকিম। জামিনে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা শওকত হাসেম শকু ও ওবায়দুল হক। বাকি আসামিরা পলাতক রয়েছে।

মামলার বিচারকার্য সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবদুর রহিম বলেন, ‘লকডাউনের কারণে বিচার কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। নিয়মিত আদালত চালু হলে বিচার কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে। সাক্ষীদের আদালতে উপস্থিত থাকার বিষয়ে সমন জারির ব্যবস্থা করা হবে।’