জলাবদ্ধতা থেকে ফতুল্লাবাসীকে মুক্তি দিন

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দী হয়ে আছেন হাজারও মানুষ। জলাবদ্ধতায় তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, যতদিন বৃষ্টি থাকবে ততদিন তাদের পানিবন্দী থাকতে হবে। গত কয়েক বছর ধরে সেখানকার বাসিন্দাদের এমন অভিজ্ঞতাই হচ্ছে।

ফতুল্লার পশ্চিম দিকে বুড়িগঙ্গা। তাছাড়া এ এলাকার মধ্য দিয়ে অসংখ্য খাল প্রবাহিত হয়েছে। এক সময় এসব খাল দিয়ে প্রতিনিয়ত নৌকা চলাচল করত এবং সহজে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হতো। কিন্তু অব্যবস্থাপনা, দূষণ ও দখলে অধিকাংশ খাল মৃতপ্রায়। বাকিগুলো অস্তিত্বহীন হয়ে গেছে। এলাকাগুলো নিচু হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো কাজে আসছে না। তাছাড়া ফতুল্লার ওইসব এলাকা ডিএনডি বাঁধের মধ্যে হলেও চলমান প্রকল্পে সব এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাই বৃষ্টির দিনে পানি জমলে তা আর নিষ্কাশন হয় না।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত কয়েকদিনে ভারি বর্ষণে সেখানকার পৌষার পুকুর পাড়, দক্ষিণ সস্তাপুর, সেহাচর ও ইসদাইরসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার রাস্তায় কোথাও হাঁটু বা কোমরপানি থাকায় নৌকায় করে বাসিন্দাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে কলকারখানার বিষক্ত পানি ও বর্জ্য এবং বাসাবাড়ির পয়োবর্জ্য মিশে একাকার হয়ে আছে। ফলে পরিবেশের মারাত্মক দূষণসহ প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আর বাসিন্দাদের তো দুরবস্থার শেষ নেই।

পানি নিষ্কাশনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে পাম্প বসানো হয়েছে তা যথেষ্ট প্রমাণিত হয়নি। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার জন্য তাও বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। এরপর স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে আরও তিনিটি পাম্প বসানো হয়েছে এবং তা চালানোর জন্য এলাকা থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদাও তোলা হয়। এর পরেও সেখানকার পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হচ্ছে না। একটি এলাকায় হাজার হাজার মানুষ নির্দিষ্ট একটি মৌসুমে জলাবদ্ধ হয়ে থাকছেন। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে তারা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে পাম্প বসিয়েছেন, চাঁদা তুলে সেগুলোর ব্যয় মেটাচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সেখানে স্থানীয় জানপ্রতিনিধি ও প্রশাসন আছে কী করতে। জনদুর্ভোগ লাঘবে তাদের কোন দায়-দায়িত্ব আছে কিনা সেটা আমরা জানতে চাইব।

আমরা ফতুল্লার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের অবসান চাই। এজন্য জলাবদ্ধ এলাকা থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্ধ হওয়া পাম্পগুলো চালু করতে হবে। প্রয়োজনে নতুন পাম্প বসাতে হবে। তবে পাম্প বসানো কোন স্থায়ী সমাধান নয়। দখল হওয়া খালগুলো উদ্ধার করা ও নিয়মিত সংস্কার করা জরুরি। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন ২০২১ , ৩ আষাড় ১৪২৮ ৫ জিলকদ ১৪৪২

জলাবদ্ধতা থেকে ফতুল্লাবাসীকে মুক্তি দিন

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দী হয়ে আছেন হাজারও মানুষ। জলাবদ্ধতায় তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, যতদিন বৃষ্টি থাকবে ততদিন তাদের পানিবন্দী থাকতে হবে। গত কয়েক বছর ধরে সেখানকার বাসিন্দাদের এমন অভিজ্ঞতাই হচ্ছে।

ফতুল্লার পশ্চিম দিকে বুড়িগঙ্গা। তাছাড়া এ এলাকার মধ্য দিয়ে অসংখ্য খাল প্রবাহিত হয়েছে। এক সময় এসব খাল দিয়ে প্রতিনিয়ত নৌকা চলাচল করত এবং সহজে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হতো। কিন্তু অব্যবস্থাপনা, দূষণ ও দখলে অধিকাংশ খাল মৃতপ্রায়। বাকিগুলো অস্তিত্বহীন হয়ে গেছে। এলাকাগুলো নিচু হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো কাজে আসছে না। তাছাড়া ফতুল্লার ওইসব এলাকা ডিএনডি বাঁধের মধ্যে হলেও চলমান প্রকল্পে সব এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাই বৃষ্টির দিনে পানি জমলে তা আর নিষ্কাশন হয় না।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত কয়েকদিনে ভারি বর্ষণে সেখানকার পৌষার পুকুর পাড়, দক্ষিণ সস্তাপুর, সেহাচর ও ইসদাইরসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার রাস্তায় কোথাও হাঁটু বা কোমরপানি থাকায় নৌকায় করে বাসিন্দাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে কলকারখানার বিষক্ত পানি ও বর্জ্য এবং বাসাবাড়ির পয়োবর্জ্য মিশে একাকার হয়ে আছে। ফলে পরিবেশের মারাত্মক দূষণসহ প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আর বাসিন্দাদের তো দুরবস্থার শেষ নেই।

পানি নিষ্কাশনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে পাম্প বসানো হয়েছে তা যথেষ্ট প্রমাণিত হয়নি। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার জন্য তাও বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। এরপর স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে আরও তিনিটি পাম্প বসানো হয়েছে এবং তা চালানোর জন্য এলাকা থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদাও তোলা হয়। এর পরেও সেখানকার পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হচ্ছে না। একটি এলাকায় হাজার হাজার মানুষ নির্দিষ্ট একটি মৌসুমে জলাবদ্ধ হয়ে থাকছেন। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে তারা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে পাম্প বসিয়েছেন, চাঁদা তুলে সেগুলোর ব্যয় মেটাচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সেখানে স্থানীয় জানপ্রতিনিধি ও প্রশাসন আছে কী করতে। জনদুর্ভোগ লাঘবে তাদের কোন দায়-দায়িত্ব আছে কিনা সেটা আমরা জানতে চাইব।

আমরা ফতুল্লার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের অবসান চাই। এজন্য জলাবদ্ধ এলাকা থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্ধ হওয়া পাম্পগুলো চালু করতে হবে। প্রয়োজনে নতুন পাম্প বসাতে হবে। তবে পাম্প বসানো কোন স্থায়ী সমাধান নয়। দখল হওয়া খালগুলো উদ্ধার করা ও নিয়মিত সংস্কার করা জরুরি। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।