বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে চাই সচেতনতা

মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ

বজ্রপাত আজ বাংলাদেশে এক মহা আতঙ্কের নাম। বর্ষাকাল এলেই আকাশে মেঘের আনাগোনা, বৃষ্টি আর বজ্রপাত এখন স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন বজ্রপাতের ঘটনা বেড়ে চলেছে আর বজ্রপাতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। সাধারণত অন্যসব গাছের চেয়ে ওকগাছে বেশি বজ্রপাত হয়। বাংলাদেশে ওকগাছ নেই। তবে কেন এত বজ্রপাত, এত মৃত্যু মানুষের?

গবেষণা বলছে, ভৌগলিক ও আবহাওয়াজনিত কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে বজ্রপাত বেশি হচ্ছে। সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসে বজ্রপাতের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তবে মৌসুমগত আবহাওয়ার পরিবর্তনই বজ্রপাতের মূল কারণ। এ জন্য জুন-জুলাইয়েও বজ্রপাতের বড় বড় ঘটনা ঘটে। সারা বিশে^ প্রতি বছর ২০ হাজার মানুষ বজ্রপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার মধ্যে ২ হাজার মারাই যায়। সারা বিশে^ বজ্রপাতে বর্তমানে যত লোক মারা যাচ্ছে তার এক-চতুর্থাংশই মারা যাচ্ছে বাংলাদেশে। গড়ে প্রতি বছর বাংলাদেশে ২০০ মানুষ মারা যায় বলে ধারণা করা হয়ে। তবে এ সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে বজ্রপাতে নিহতের সংখ্যা বেশি।

আবহাওয়াবিদদের মতে, সত্যিকারে বজ্রপাত হয় আনেক বেশি, তবে সব বজ্রপাত মাটি পর্যন্ত স্পর্শ করে না বলে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সারাদেশে বজ্রপাতে বিপুলসংখ্যক গবাদি পশু এবং এক হাজার ৪৭৬ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। ১৯১৬ সালেই বজ্রপাতের ঘটনা আনেক বেশি ঘটেছে। তবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের গবেষণা মতে, বিগত ৬ বছরে বজ্রপাতে মানুষের হতাহতের সংখ্যা দুই হাজার ১০০। আর সেখানে এ বছরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জুন একদিনেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে ঝড়, বন্যা, টর্নেডোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্বিপাক। দেশে গাছপালা কমে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ১ থেকে এক দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়ে চলেছে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও। আবহাওয়ার উত্তাপ বাড়াকে বজ্রপাতের অন্যতম কারণ হিসাবে ধরা হয়। আবার সেলফোনের অসংখ্য টাওয়ার নির্মাণও বজ্রপাতের অন্যতম কারণ হিসাবে মনে করেন অনেকে। সাধারণত মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে বজ্রপাত বেশি হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত লক্ষ্য করা যায় বর্ষার সময়। শীতের পরে দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর থেকে শুকনো গরম বাতাস আসতে শুরু করে। অন্যদিকে হিমালয় থেকে আসে ঠাণ্ডা বাতাস। এই দুই ধরনের বাতাসের সংমিশ্রণে এক ধরনের অস্থিতিশীল বাতাস তৈরি করে। মেঘ চলাচলের সময় বাতাস এক মেঘের সঙ্গে অন্য মেঘের ঘর্ষণের সৃষ্টি করে, যার ফলে বজ্রের সৃষ্টি হয়। বজ্র যখন মাটি অবধি চলে আসে তখনই তাকে বজ্রপাত বলে অভিহিত করা হয়। আবহাওয়াবিদের মতে, ঊর্ধ্বাকালে যখন প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকার সময়ে উত্তর থেকে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহের কারণে একদিক থেকে গরম ও আর্দ্র বাতাস আর অন্য দিক থেকে শীতল বাতাস প্রবাহে বজ্রপাত এক স্বাভাবিক ব্যাপর হয়ে দাঁড়ায়, যা অল্প সময়ে তীব্র রূপ নিতে পারে।

বজ্রপাত সাধারণত চার রকমের হয়ে থাকে। প্রথম হলো, বজ্রপাত সরাসরি আকাশ থেকে মাটিতে চলে আসে। এই ধরনের বজ্রপাতই বেশি প্রাণহানি ঘটায়। অপর তিনটি হলে আকাশ থেকে আকাশে, এক মেঘ থেকে অন্য মেঘে এবং অন্যটি মেঘের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। উঁচু স্থানে বজ্রপাত বেশি হয়। আগে গ্রামগঞ্জে বট, তাল ও নারকেল গাছের মতো উঁচু গাছপালায় পরিপূর্ণ ছিল। এসব গাছপালাই বজ্রপাতকে আকর্ষণ করে নিত। ফলে বজ্র মাটির কাছে খুব একটা পৌঁছাত না। তাই বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুও কম ঘটতো। এখন উঁচু গাছের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় বজ্র সরাসরি মাটিতে লোকালয়ে এসে পড়ে এবং মানুষের মৃত্যু ঘটায়। একই ভাবে বজ্রপাতের সময় যারা খোলা মাঠের মতো বিশাল উন্মুক্ত স্থানে অবস্থান করেন তারাই বজ্রপাতে বেশি আক্রান্ত হন।

বজ্রপাত এক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ইচ্ছে করলেই এই বজ্রপাতকে প্রতিরোধ করা যাবে না। তবে বজ্রপাতে মৃত্যুহার কমাতে অবশ্যই বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। বজ্রাঘাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে দেশের সর্বত্র বেশি করে উঁচু গাছ যেমন তাল, নারিকেল, সুপারি, খেজুর গাছ লাগাতে হবে। বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে দেশব্যাপী ২৮ লাখ তাল গাছের চারা বা বীজ রোপণ করেছে। বজ্রঝড় সাধারণত ৩০ থেকে ৪৫ সেকেন্ড স্থায়ী হয়। এই সময়ে বাড়ির বাইরে বের না হওয়া শ্রেয়। ঘরে থেকে দরজা, জানালা বন্ধ রেখে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে সরে থাকতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে রাবারের জুতা পরে নিতে হবে। বজ্রপাতের সময় ঘরের বাইরে অবস্থান করলে খোলা মাঠে বা উঁচু স্থানে থাকা যাবে না। একান্তই যদি থাকা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে, তবে পায়ের আঙুলের ওপর ভর করে কানে আঙুল দিয়ে চেপে ধরে নিচু হয়ে বসে পড়তে হবে। আর যত দ্রুত সম্ভব কোন ভবন বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেয়া নিরাপদ।

বজ্রপাতের সম্ভাবনা দেখা দিলে উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি বা তার, সেলফোন টাওয়ার থেকে দূরে চলে যেতে হবে। এমনকি আকাশে ঘন মেঘে বজ্রপাতের আশঙ্কা দেখলে নদী, পুকুর বা ডোবা এবং যে কোন জলাশয় থেকে দূরে থাকতে হবে। এসব স্থান বজ্রকে বেশি আকর্ষণ করে। বজ্রপাতের সময় গাড়ি বা বাসের ভেতর থাকলে কোন ধাতব অংশকে শরীরের সঙ্গে সংযুক্ত রাখা যাবে না। বজ্রপাতের সময় লোহা বা অন্য ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহারও নিরাপদ নয়।

একইভাবে বজ্রপাতের সময় বাড়ির থাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ স্পর্শ করা যাবে না। বজ্রপাতের সময় সেলফোন ও কম্পিউটার ব্যবহার এবং টেলিভিশন দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে। ফ্রিজসহ সব রকম বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের সুইচ বন্ধ রাখতে হবে। তা নাহলে বজ্রপাতে এসব নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রতিটি ভবনে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড রাখা বাধ্যতামূলক করা দরকার। সরকার ২০১৫ সালের বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসাবে পালন করেছে। বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুহার কমাতে সরকারের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে বেশি করে উঁচু গাছ লাগাতে উদ্যোগী হতে হবে। আর গড়ে তুলতে হবে গণসচেতনতা। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বজ্রপাতের মতো অপ্রতিরোধ্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মৃত্যু কমানো সম্ভব। জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সংবাদপত্র এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারাভিযান ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

[লেখক : সাবেক প্রকৌশলী ও শিক্ষক]

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন ২০২১ , ৩ আষাড় ১৪২৮ ৫ জিলকদ ১৪৪২

বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে চাই সচেতনতা

মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ

বজ্রপাত আজ বাংলাদেশে এক মহা আতঙ্কের নাম। বর্ষাকাল এলেই আকাশে মেঘের আনাগোনা, বৃষ্টি আর বজ্রপাত এখন স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন বজ্রপাতের ঘটনা বেড়ে চলেছে আর বজ্রপাতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। সাধারণত অন্যসব গাছের চেয়ে ওকগাছে বেশি বজ্রপাত হয়। বাংলাদেশে ওকগাছ নেই। তবে কেন এত বজ্রপাত, এত মৃত্যু মানুষের?

গবেষণা বলছে, ভৌগলিক ও আবহাওয়াজনিত কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে বজ্রপাত বেশি হচ্ছে। সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসে বজ্রপাতের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তবে মৌসুমগত আবহাওয়ার পরিবর্তনই বজ্রপাতের মূল কারণ। এ জন্য জুন-জুলাইয়েও বজ্রপাতের বড় বড় ঘটনা ঘটে। সারা বিশে^ প্রতি বছর ২০ হাজার মানুষ বজ্রপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার মধ্যে ২ হাজার মারাই যায়। সারা বিশে^ বজ্রপাতে বর্তমানে যত লোক মারা যাচ্ছে তার এক-চতুর্থাংশই মারা যাচ্ছে বাংলাদেশে। গড়ে প্রতি বছর বাংলাদেশে ২০০ মানুষ মারা যায় বলে ধারণা করা হয়ে। তবে এ সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে বজ্রপাতে নিহতের সংখ্যা বেশি।

আবহাওয়াবিদদের মতে, সত্যিকারে বজ্রপাত হয় আনেক বেশি, তবে সব বজ্রপাত মাটি পর্যন্ত স্পর্শ করে না বলে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সারাদেশে বজ্রপাতে বিপুলসংখ্যক গবাদি পশু এবং এক হাজার ৪৭৬ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। ১৯১৬ সালেই বজ্রপাতের ঘটনা আনেক বেশি ঘটেছে। তবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের গবেষণা মতে, বিগত ৬ বছরে বজ্রপাতে মানুষের হতাহতের সংখ্যা দুই হাজার ১০০। আর সেখানে এ বছরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জুন একদিনেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে ঝড়, বন্যা, টর্নেডোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্বিপাক। দেশে গাছপালা কমে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ১ থেকে এক দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়ে চলেছে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও। আবহাওয়ার উত্তাপ বাড়াকে বজ্রপাতের অন্যতম কারণ হিসাবে ধরা হয়। আবার সেলফোনের অসংখ্য টাওয়ার নির্মাণও বজ্রপাতের অন্যতম কারণ হিসাবে মনে করেন অনেকে। সাধারণত মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে বজ্রপাত বেশি হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত লক্ষ্য করা যায় বর্ষার সময়। শীতের পরে দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর থেকে শুকনো গরম বাতাস আসতে শুরু করে। অন্যদিকে হিমালয় থেকে আসে ঠাণ্ডা বাতাস। এই দুই ধরনের বাতাসের সংমিশ্রণে এক ধরনের অস্থিতিশীল বাতাস তৈরি করে। মেঘ চলাচলের সময় বাতাস এক মেঘের সঙ্গে অন্য মেঘের ঘর্ষণের সৃষ্টি করে, যার ফলে বজ্রের সৃষ্টি হয়। বজ্র যখন মাটি অবধি চলে আসে তখনই তাকে বজ্রপাত বলে অভিহিত করা হয়। আবহাওয়াবিদের মতে, ঊর্ধ্বাকালে যখন প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকার সময়ে উত্তর থেকে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহের কারণে একদিক থেকে গরম ও আর্দ্র বাতাস আর অন্য দিক থেকে শীতল বাতাস প্রবাহে বজ্রপাত এক স্বাভাবিক ব্যাপর হয়ে দাঁড়ায়, যা অল্প সময়ে তীব্র রূপ নিতে পারে।

বজ্রপাত সাধারণত চার রকমের হয়ে থাকে। প্রথম হলো, বজ্রপাত সরাসরি আকাশ থেকে মাটিতে চলে আসে। এই ধরনের বজ্রপাতই বেশি প্রাণহানি ঘটায়। অপর তিনটি হলে আকাশ থেকে আকাশে, এক মেঘ থেকে অন্য মেঘে এবং অন্যটি মেঘের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। উঁচু স্থানে বজ্রপাত বেশি হয়। আগে গ্রামগঞ্জে বট, তাল ও নারকেল গাছের মতো উঁচু গাছপালায় পরিপূর্ণ ছিল। এসব গাছপালাই বজ্রপাতকে আকর্ষণ করে নিত। ফলে বজ্র মাটির কাছে খুব একটা পৌঁছাত না। তাই বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুও কম ঘটতো। এখন উঁচু গাছের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় বজ্র সরাসরি মাটিতে লোকালয়ে এসে পড়ে এবং মানুষের মৃত্যু ঘটায়। একই ভাবে বজ্রপাতের সময় যারা খোলা মাঠের মতো বিশাল উন্মুক্ত স্থানে অবস্থান করেন তারাই বজ্রপাতে বেশি আক্রান্ত হন।

বজ্রপাত এক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ইচ্ছে করলেই এই বজ্রপাতকে প্রতিরোধ করা যাবে না। তবে বজ্রপাতে মৃত্যুহার কমাতে অবশ্যই বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। বজ্রাঘাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে দেশের সর্বত্র বেশি করে উঁচু গাছ যেমন তাল, নারিকেল, সুপারি, খেজুর গাছ লাগাতে হবে। বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে দেশব্যাপী ২৮ লাখ তাল গাছের চারা বা বীজ রোপণ করেছে। বজ্রঝড় সাধারণত ৩০ থেকে ৪৫ সেকেন্ড স্থায়ী হয়। এই সময়ে বাড়ির বাইরে বের না হওয়া শ্রেয়। ঘরে থেকে দরজা, জানালা বন্ধ রেখে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে সরে থাকতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে রাবারের জুতা পরে নিতে হবে। বজ্রপাতের সময় ঘরের বাইরে অবস্থান করলে খোলা মাঠে বা উঁচু স্থানে থাকা যাবে না। একান্তই যদি থাকা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে, তবে পায়ের আঙুলের ওপর ভর করে কানে আঙুল দিয়ে চেপে ধরে নিচু হয়ে বসে পড়তে হবে। আর যত দ্রুত সম্ভব কোন ভবন বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেয়া নিরাপদ।

বজ্রপাতের সম্ভাবনা দেখা দিলে উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি বা তার, সেলফোন টাওয়ার থেকে দূরে চলে যেতে হবে। এমনকি আকাশে ঘন মেঘে বজ্রপাতের আশঙ্কা দেখলে নদী, পুকুর বা ডোবা এবং যে কোন জলাশয় থেকে দূরে থাকতে হবে। এসব স্থান বজ্রকে বেশি আকর্ষণ করে। বজ্রপাতের সময় গাড়ি বা বাসের ভেতর থাকলে কোন ধাতব অংশকে শরীরের সঙ্গে সংযুক্ত রাখা যাবে না। বজ্রপাতের সময় লোহা বা অন্য ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহারও নিরাপদ নয়।

একইভাবে বজ্রপাতের সময় বাড়ির থাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ স্পর্শ করা যাবে না। বজ্রপাতের সময় সেলফোন ও কম্পিউটার ব্যবহার এবং টেলিভিশন দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে। ফ্রিজসহ সব রকম বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের সুইচ বন্ধ রাখতে হবে। তা নাহলে বজ্রপাতে এসব নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রতিটি ভবনে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড রাখা বাধ্যতামূলক করা দরকার। সরকার ২০১৫ সালের বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসাবে পালন করেছে। বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুহার কমাতে সরকারের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে বেশি করে উঁচু গাছ লাগাতে উদ্যোগী হতে হবে। আর গড়ে তুলতে হবে গণসচেতনতা। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বজ্রপাতের মতো অপ্রতিরোধ্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মৃত্যু কমানো সম্ভব। জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সংবাদপত্র এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারাভিযান ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

[লেখক : সাবেক প্রকৌশলী ও শিক্ষক]