শনাক্ত সামান্য কমলেও বেড়েছে মৃত্যু

রাজধানীর আশপাশের কয়েকটি জেলায় গত একদিনে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। তবে মহানগরসহ ঢাকা জেলায় একদিনে শনাক্তের সংখ্যা ও সংক্রমণের হার কিছুটা কমেছে।

সীমান্তবর্তী এলাকার মধ্যে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের সংখ্যা ও শনাক্তের হার কমেছে। শনাক্ত কমলেও এই দুই বিভাগে মৃত্যু আরও বেড়েছে। সীমান্ত জেলার তিনটি হাসপাতালে মোট শয্যার চেয়ে বেশি কোভিড-১৯ রোগী ভর্তি আছেন।

গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সারাদেশে করোনায় মৃত্যু হওয়া ৬৩ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ জনই খুলনা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ জন ছিলেন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।

এর আগের দিন এই দুই বিভাগেই সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল। ওইদিন রাজশাহী বিভাগে ১৭ জন ও খুলনা বিভাগে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত একদিনে করোনা সংক্রমণে দেশে ৬৩ জনের মৃত্যু এবং তিন হাজার ৮৪০ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

এ নিয়ে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩ হাজার ৩৪৫ জনে। আর মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো আট লাখ ৪১ হাজার ৮৭ জনে। আগের দিন দেশে তিন হাজার ৯৫৬ জন নতুন রোগী শানাক্ত হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বিভিন্ন জেলার ‘কোভিড ডেডিকেটেড’ ন্যূনতম তিনটি হাসাপাতালে মোট শয্যার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি আছেন।

এর মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসাপাতালে মোট ২৫৩টি শয্যা থাকলেও ৮৫ জন রোগী বেশি ভর্তি আছেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ৯০টি শয্যার মধ্যে ১১১ জন, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ৫০টি শয্যায় ৭৫ জন রোগী ভর্তি আছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয়, গত একদিনে সারাদেশের ৫২৮টি ল্যাবে (পরীক্ষাগার) ২৪ হাজার ৮৭১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়ালো ৬২ লাখ ৬৭ হাজার ৬৫৭টিতে।

গত একদিনে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হার ছিল ১৫ দশশিক ৪৪ শতাংশ। আর এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ।

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৭১৪ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়ালো সাত লাখ ৭৬ হাজার ৪৬৬ জনে। এ পর্যন্ত মোট সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৩২ শতাংশ।

গত একদিনে করোনায় মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ৪৫ জন ও নারী ১৮ জন। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪৬ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৯ জন এবং বাসায় আটজনের মৃত্যু হয়।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৬৩ জনের মধ্যে ৩১ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ১৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, সাতজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, একজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, একজনের ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং দুইজনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।

বিভাগভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, গত একদিনে যারা মারা গেছেন, তাদের ২০ জন খুলনা বিভাগের, ১৩ জন রাজশাহী বিভাগের, ১১ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ১০ জন ঢাকা বিভাগের, বরিশাল বিভাগের তিনজন এবং সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের দু’জন করে বাসিন্দা ছিলেন।

ঢাকা মহানগরীসহ জেলায় গত একদিনে ৯১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন এই জেলায় এক হাজার ১৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। আর ঢাকা বিভাগে গত একদিনে এক হাজার ৩২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ১০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। একদিন আগে এই বিভাগে শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ।

ঢাকা বিভাগের অন্য জেলার মধ্যে একদিনে গাজীপুরে ১১৫ জন, ফরিদপুরে ৫৭ জন, গোপালগঞ্জে ৪৩ জন, কিশোরগঞ্জে ২৩ জন, টাঙ্গাইলে ১১৩ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

রাজশাহী বিভাগে গত একদিনে ৬৪৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা আগের দিন ছিল ৮১৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় এই বিভাগে শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ০৩ শতাংশ। আগের দিন রাজশাহী বিভাগে সংক্রমণের হার ছিল ১৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।

খুলনা বিভাগে গত একদিনে ৭৬৫ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যা আগের দিন ছিল ৮১৮ জন। এই বিভাগে গতকাল শনাক্তের হার ছিল ৩৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। আগের দিন খুলনা বিভাগের শনাক্তের হার ছিল ৪০ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে গত একদিনে ৪৬৬ জনের করোনা শনাক্ত, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০২ জনের, রংপুর বিভাগে ৩৯৬ জনের, বরিশাল বিভাগে ৫০ জনের এবং সিলেট বিভাগে ৮৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের চারটি জেলায় ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত বেড়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে গতকাল শনাক্ত হয়েছে ১৬৯ জন, যা আগের দিন ছিল ১০৭ জন। ফেনীতে গতকাল শনাক্ত হয়েছে ৩৬ জন, যা আগের দিন ছিল ২৫ জন। নোয়াখালীতে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ১০১ জন রোগী, যা আগের দিন ছিল ৭৫ জন। কুমিল্লায় একদিন আগে ৩৯ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হলেও গত একদিনে শনাক্ত হয়েছে ৫৪ জন করোনা রোগী।

শুক্রবার, ১৮ জুন ২০২১ , ৪ আষাড় ১৪২৮ ৬ জিলকদ ১৪৪২

শনাক্ত সামান্য কমলেও বেড়েছে মৃত্যু

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীর আশপাশের কয়েকটি জেলায় গত একদিনে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। তবে মহানগরসহ ঢাকা জেলায় একদিনে শনাক্তের সংখ্যা ও সংক্রমণের হার কিছুটা কমেছে।

সীমান্তবর্তী এলাকার মধ্যে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের সংখ্যা ও শনাক্তের হার কমেছে। শনাক্ত কমলেও এই দুই বিভাগে মৃত্যু আরও বেড়েছে। সীমান্ত জেলার তিনটি হাসপাতালে মোট শয্যার চেয়ে বেশি কোভিড-১৯ রোগী ভর্তি আছেন।

গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সারাদেশে করোনায় মৃত্যু হওয়া ৬৩ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ জনই খুলনা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ জন ছিলেন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।

এর আগের দিন এই দুই বিভাগেই সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল। ওইদিন রাজশাহী বিভাগে ১৭ জন ও খুলনা বিভাগে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত একদিনে করোনা সংক্রমণে দেশে ৬৩ জনের মৃত্যু এবং তিন হাজার ৮৪০ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

এ নিয়ে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩ হাজার ৩৪৫ জনে। আর মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো আট লাখ ৪১ হাজার ৮৭ জনে। আগের দিন দেশে তিন হাজার ৯৫৬ জন নতুন রোগী শানাক্ত হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বিভিন্ন জেলার ‘কোভিড ডেডিকেটেড’ ন্যূনতম তিনটি হাসাপাতালে মোট শয্যার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি আছেন।

এর মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসাপাতালে মোট ২৫৩টি শয্যা থাকলেও ৮৫ জন রোগী বেশি ভর্তি আছেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ৯০টি শয্যার মধ্যে ১১১ জন, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ৫০টি শয্যায় ৭৫ জন রোগী ভর্তি আছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয়, গত একদিনে সারাদেশের ৫২৮টি ল্যাবে (পরীক্ষাগার) ২৪ হাজার ৮৭১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়ালো ৬২ লাখ ৬৭ হাজার ৬৫৭টিতে।

গত একদিনে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হার ছিল ১৫ দশশিক ৪৪ শতাংশ। আর এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ।

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৭১৪ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়ালো সাত লাখ ৭৬ হাজার ৪৬৬ জনে। এ পর্যন্ত মোট সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৩২ শতাংশ।

গত একদিনে করোনায় মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ৪৫ জন ও নারী ১৮ জন। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪৬ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৯ জন এবং বাসায় আটজনের মৃত্যু হয়।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৬৩ জনের মধ্যে ৩১ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ১৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, সাতজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, একজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, একজনের ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং দুইজনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।

বিভাগভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, গত একদিনে যারা মারা গেছেন, তাদের ২০ জন খুলনা বিভাগের, ১৩ জন রাজশাহী বিভাগের, ১১ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ১০ জন ঢাকা বিভাগের, বরিশাল বিভাগের তিনজন এবং সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের দু’জন করে বাসিন্দা ছিলেন।

ঢাকা মহানগরীসহ জেলায় গত একদিনে ৯১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন এই জেলায় এক হাজার ১৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। আর ঢাকা বিভাগে গত একদিনে এক হাজার ৩২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ১০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। একদিন আগে এই বিভাগে শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ।

ঢাকা বিভাগের অন্য জেলার মধ্যে একদিনে গাজীপুরে ১১৫ জন, ফরিদপুরে ৫৭ জন, গোপালগঞ্জে ৪৩ জন, কিশোরগঞ্জে ২৩ জন, টাঙ্গাইলে ১১৩ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

রাজশাহী বিভাগে গত একদিনে ৬৪৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা আগের দিন ছিল ৮১৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় এই বিভাগে শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ০৩ শতাংশ। আগের দিন রাজশাহী বিভাগে সংক্রমণের হার ছিল ১৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।

খুলনা বিভাগে গত একদিনে ৭৬৫ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যা আগের দিন ছিল ৮১৮ জন। এই বিভাগে গতকাল শনাক্তের হার ছিল ৩৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। আগের দিন খুলনা বিভাগের শনাক্তের হার ছিল ৪০ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে গত একদিনে ৪৬৬ জনের করোনা শনাক্ত, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০২ জনের, রংপুর বিভাগে ৩৯৬ জনের, বরিশাল বিভাগে ৫০ জনের এবং সিলেট বিভাগে ৮৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের চারটি জেলায় ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত বেড়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে গতকাল শনাক্ত হয়েছে ১৬৯ জন, যা আগের দিন ছিল ১০৭ জন। ফেনীতে গতকাল শনাক্ত হয়েছে ৩৬ জন, যা আগের দিন ছিল ২৫ জন। নোয়াখালীতে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ১০১ জন রোগী, যা আগের দিন ছিল ৭৫ জন। কুমিল্লায় একদিন আগে ৩৯ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হলেও গত একদিনে শনাক্ত হয়েছে ৫৪ জন করোনা রোগী।