পুলিশ ও ইসি কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাদ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মায়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত একটি পরিবারের সদস্য সংখ্যা ২ শতাধিক। বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত এ পরিবারের অধিকাংশ সদস্য বর্তমানে বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয়ে বিদেশেও আছে। রোহিঙ্গা নাগরিক হয়েও তারা বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, ভূমিহীন সনদ, এমনকি পাসপোর্টও পেয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের নেতৃত্বে টিমের অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

গতকাল জাল জালিয়াতির মাধ্যমে এ পরিবারের সদস্যদের বাংলাদেশি হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদ, পাসপোর্ট দেয়ার অভিযোগে ৩ পুলিশ কর্মকর্তা এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয় ২-এর কার্যালয়ে মামলায় ১৭ আসামির মধ্যে ১৩ জনই রোহিঙ্গা নাগরিক যারা ইতোমধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট নিয়েছেন এবং এর সব সুবিধা ভোগ করছেন। মামলার বাদী অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (মিডিয়া) আরিফ সাদেক জানান, মামলায় যারা আসামি হয়েছেন তারা হলেন রোহিঙ্গা নাগরিক মো. তৈয়ব, মোহাম্মদ ওয়ায়েস, মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, মো. রহিম, আবদুর রহমান, আবদুস সাকুর, নুর হাবিবা, আমাতুর রহিম, আসমাউল হুসনা, আমাতুর রহমান, নুর হামিদা, মোহাম্মদ ওসামা, হাফেজ নুরুল আলম। আর বাংলাদেশিদের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের কক্সবাজার জেলার এসবির সাবেক পুলিশ পরিদর্শক এসএম মিজানুর রহমান, সাবেক পরিদর্শক মো. রুহুল আমিন, সাবেক পুলিশ পরিদর্শক প্রভাস চন্দ্র ধর, সাবেক জেলা নির্বাচন অফিসার মো. মোজাম্মেল হোসেন।

আসামিদের মধ্যে ১৩ রোহিঙ্গা নাগরিক ভুয়া নাম পরিচয় ও ঠিকানা ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও জন্মসনদ নিয়েছেন। আর ৩ পুলিশ কর্মকর্তা এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ভুয়া প্রতিবেদন দিয়ে রোহিঙ্গা নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট দিতে সহযোগিতা করেছেন। রোহিঙ্গা নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র ভুয়া দাবি করে তা বাতিলের আবেদন করলেও সংশ্লিষ্টা তা আমলে না নিয়ে উল্টো রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে প্রমাণ দেখিয়েছেন।

দুদক সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার ৮ নম্বর ইসলামাবাদ ইউনিয়নের একটি পরিবারের ২ শতাধিক মায়ানমার নাগিরক হওয়া সত্ত্বেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সহযোগিতায় বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয়ে জন্মনিবন্ধন সনদ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ভূমিহীন প্রত্যয়নপত্র, স্কুলের প্রত্যায়নপত্র, ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুবিধা এবং বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেয়েছেন।

দুদক জানায়, এদের অনেকেই বর্তমানে স্বপরিবারে বিদেশে আছেন বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়ত্র এবং পাসপোর্টের সুবিধা নিয়ে। এ পরিবারের অধিকাংশই ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনহীন ল্যাপটপের মাধ্যমে অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে মায়ানমার হতে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও তারা তাদের পরিবারের সদস্য দেখিয়ে একে অন্যকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে পাসপোর্ট পেতে সহযোগিতা করেছেন। তাদের অনেকেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে সামাজিক কার্যক্রম করছেন।

দুদকের অনুসন্ধান চলাকালে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারের বিশেষ শাখা ১৩ রোহিঙ্গা নাগরিকের বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাতিলেরও সুপারিশ করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে এসেছে, কক্সবাজারের সদর উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের অন্তর্গত এলাকাটি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। সেখানকার রোহিঙ্গারা সরকারি খাস জমি এবং বন বিভাগের জমি দখল করে আলিশান বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-দোকানপাট এবং অন্যান্য স্থাপনা তৈরি করছেন।

দুদক সূত্র জানায়, মামলার প্রধান আসামি তৈয়বের ১০ ভাই ২ বোন। ১০ ভাইয়ের মধ্যে ৫ ভাই বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন। এ জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তারা বাংলাদেশি পাসপোর্টও নিয়েছেন। বর্তমানে ওই পাসপোর্টের মাধ্যমে ভিসা করে ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব যান। বর্তমানে তারা সৌদি আরবেই আছেন। মামলার ২ নম্বর আসামি মোহাম্মদ ওয়ায়েসও তৈয়বের ভাই। সে আল্লামা ফয়জুল্লাহ ফাউন্ডেশনে চাকরি করছেন বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয়ে।

রোহিঙ্গা নাগরিক আমাতুর রহমান, মোহাম্মদ ওসামা, আসমাউল হুসনা, আবদুস শাকুর, আবদুর রহমান, নুর হাবিবা, নুর হামিদা জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বাংলাদেশি পাসপোর্টের আবেদন করেন। চট্টগ্রামের কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পরিদর্শক এসএম মিজানুর রহমান তা যাচাই-বাছাই না করেই ওই ৮ রোহিঙ্গা নাগরিককে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেয়ার জন্য প্রতিবেদন দেন। সেই প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই না করেই পুলিশ পরিদর্শক প্রভাশ চন্দ্র ধর একমত পোষণ করে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জমা দেন। পরে সেটি অনুমোদন করা হয়। এরপর ওই ৮ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেয়ে যান।

দুদক জানায়, রোহিঙ্গা নাগরিককে বাংলাদেশি হিসেবে জন্মসনদ, ভূমিহীন সনদ, ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তকরণের বালাম বই ইসলামাবাদ ইউনিয়ন থেকে গায়েব করে ফেলা হয়। দুদক বারবার তগাদা দিলেও ইসলামাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ এসব পাওয়া যাচ্ছে না বলে দুদককে জানায়। এসব রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট আবেদনের অনুকূলে নথিপত্র সত্যায়িত করেন কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ। অ্যডভোকেট আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেয়ার অভিযোগে একটি মামলা আছে।

দুদক জানায়, ইসলামাবাদ ইউয়িনরে বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ আনসারী ১৩ আসামির জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিলের আবেদন জানান নির্বাচন কমিশন বরাবার। বিষয়টি তদন্তে পাঠানো হলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোজাম্মেদ হক সঠিকভাবে তদন্ত না করেই উল্টো ১৩ রোহিঙ্গা নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়াটা সঠিক বলে মতামত দেন। তিনি অভিযোগকারীর অভিযোগ সত্য নয় বলেও মতামত দেন। অথচ আসামিদের দেয়া জন্মনিবন্ধন সনদের কোন বালাম ছিল না। ভোটার নিবন্ধন ফরম ২ সদর উপজেলায় সংরক্ষিত না রেখে তা গায়েব করা হয়েছে।

মামলায় বলা হয়েছে, তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে কক্সবজার সদর থানার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের বিশেষ শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং ইসলামবাদ ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান, সচিবসহ সংশ্লিষ্টদেরও আসামি করা হতে পারে।

শুক্রবার, ১৮ জুন ২০২১ , ৪ আষাড় ১৪২৮ ৬ জিলকদ ১৪৪২

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি জাল জন্মসনদ-পাসপোর্ট

পুলিশ ও ইসি কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাদ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মায়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত একটি পরিবারের সদস্য সংখ্যা ২ শতাধিক। বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত এ পরিবারের অধিকাংশ সদস্য বর্তমানে বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয়ে বিদেশেও আছে। রোহিঙ্গা নাগরিক হয়েও তারা বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, ভূমিহীন সনদ, এমনকি পাসপোর্টও পেয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের নেতৃত্বে টিমের অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

গতকাল জাল জালিয়াতির মাধ্যমে এ পরিবারের সদস্যদের বাংলাদেশি হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদ, পাসপোর্ট দেয়ার অভিযোগে ৩ পুলিশ কর্মকর্তা এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয় ২-এর কার্যালয়ে মামলায় ১৭ আসামির মধ্যে ১৩ জনই রোহিঙ্গা নাগরিক যারা ইতোমধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট নিয়েছেন এবং এর সব সুবিধা ভোগ করছেন। মামলার বাদী অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (মিডিয়া) আরিফ সাদেক জানান, মামলায় যারা আসামি হয়েছেন তারা হলেন রোহিঙ্গা নাগরিক মো. তৈয়ব, মোহাম্মদ ওয়ায়েস, মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, মো. রহিম, আবদুর রহমান, আবদুস সাকুর, নুর হাবিবা, আমাতুর রহিম, আসমাউল হুসনা, আমাতুর রহমান, নুর হামিদা, মোহাম্মদ ওসামা, হাফেজ নুরুল আলম। আর বাংলাদেশিদের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের কক্সবাজার জেলার এসবির সাবেক পুলিশ পরিদর্শক এসএম মিজানুর রহমান, সাবেক পরিদর্শক মো. রুহুল আমিন, সাবেক পুলিশ পরিদর্শক প্রভাস চন্দ্র ধর, সাবেক জেলা নির্বাচন অফিসার মো. মোজাম্মেল হোসেন।

আসামিদের মধ্যে ১৩ রোহিঙ্গা নাগরিক ভুয়া নাম পরিচয় ও ঠিকানা ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও জন্মসনদ নিয়েছেন। আর ৩ পুলিশ কর্মকর্তা এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ভুয়া প্রতিবেদন দিয়ে রোহিঙ্গা নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট দিতে সহযোগিতা করেছেন। রোহিঙ্গা নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র ভুয়া দাবি করে তা বাতিলের আবেদন করলেও সংশ্লিষ্টা তা আমলে না নিয়ে উল্টো রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে প্রমাণ দেখিয়েছেন।

দুদক সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার ৮ নম্বর ইসলামাবাদ ইউনিয়নের একটি পরিবারের ২ শতাধিক মায়ানমার নাগিরক হওয়া সত্ত্বেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সহযোগিতায় বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয়ে জন্মনিবন্ধন সনদ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ভূমিহীন প্রত্যয়নপত্র, স্কুলের প্রত্যায়নপত্র, ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুবিধা এবং বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেয়েছেন।

দুদক জানায়, এদের অনেকেই বর্তমানে স্বপরিবারে বিদেশে আছেন বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়ত্র এবং পাসপোর্টের সুবিধা নিয়ে। এ পরিবারের অধিকাংশই ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনহীন ল্যাপটপের মাধ্যমে অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে মায়ানমার হতে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও তারা তাদের পরিবারের সদস্য দেখিয়ে একে অন্যকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে পাসপোর্ট পেতে সহযোগিতা করেছেন। তাদের অনেকেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে সামাজিক কার্যক্রম করছেন।

দুদকের অনুসন্ধান চলাকালে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারের বিশেষ শাখা ১৩ রোহিঙ্গা নাগরিকের বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাতিলেরও সুপারিশ করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে এসেছে, কক্সবাজারের সদর উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের অন্তর্গত এলাকাটি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। সেখানকার রোহিঙ্গারা সরকারি খাস জমি এবং বন বিভাগের জমি দখল করে আলিশান বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-দোকানপাট এবং অন্যান্য স্থাপনা তৈরি করছেন।

দুদক সূত্র জানায়, মামলার প্রধান আসামি তৈয়বের ১০ ভাই ২ বোন। ১০ ভাইয়ের মধ্যে ৫ ভাই বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন। এ জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তারা বাংলাদেশি পাসপোর্টও নিয়েছেন। বর্তমানে ওই পাসপোর্টের মাধ্যমে ভিসা করে ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব যান। বর্তমানে তারা সৌদি আরবেই আছেন। মামলার ২ নম্বর আসামি মোহাম্মদ ওয়ায়েসও তৈয়বের ভাই। সে আল্লামা ফয়জুল্লাহ ফাউন্ডেশনে চাকরি করছেন বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয়ে।

রোহিঙ্গা নাগরিক আমাতুর রহমান, মোহাম্মদ ওসামা, আসমাউল হুসনা, আবদুস শাকুর, আবদুর রহমান, নুর হাবিবা, নুর হামিদা জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বাংলাদেশি পাসপোর্টের আবেদন করেন। চট্টগ্রামের কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পরিদর্শক এসএম মিজানুর রহমান তা যাচাই-বাছাই না করেই ওই ৮ রোহিঙ্গা নাগরিককে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেয়ার জন্য প্রতিবেদন দেন। সেই প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই না করেই পুলিশ পরিদর্শক প্রভাশ চন্দ্র ধর একমত পোষণ করে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জমা দেন। পরে সেটি অনুমোদন করা হয়। এরপর ওই ৮ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেয়ে যান।

দুদক জানায়, রোহিঙ্গা নাগরিককে বাংলাদেশি হিসেবে জন্মসনদ, ভূমিহীন সনদ, ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তকরণের বালাম বই ইসলামাবাদ ইউনিয়ন থেকে গায়েব করে ফেলা হয়। দুদক বারবার তগাদা দিলেও ইসলামাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ এসব পাওয়া যাচ্ছে না বলে দুদককে জানায়। এসব রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট আবেদনের অনুকূলে নথিপত্র সত্যায়িত করেন কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ। অ্যডভোকেট আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেয়ার অভিযোগে একটি মামলা আছে।

দুদক জানায়, ইসলামাবাদ ইউয়িনরে বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ আনসারী ১৩ আসামির জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিলের আবেদন জানান নির্বাচন কমিশন বরাবার। বিষয়টি তদন্তে পাঠানো হলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোজাম্মেদ হক সঠিকভাবে তদন্ত না করেই উল্টো ১৩ রোহিঙ্গা নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়াটা সঠিক বলে মতামত দেন। তিনি অভিযোগকারীর অভিযোগ সত্য নয় বলেও মতামত দেন। অথচ আসামিদের দেয়া জন্মনিবন্ধন সনদের কোন বালাম ছিল না। ভোটার নিবন্ধন ফরম ২ সদর উপজেলায় সংরক্ষিত না রেখে তা গায়েব করা হয়েছে।

মামলায় বলা হয়েছে, তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে কক্সবজার সদর থানার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের বিশেষ শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং ইসলামবাদ ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান, সচিবসহ সংশ্লিষ্টদেরও আসামি করা হতে পারে।