ধর্ষণ-নিপীড়নের বিচার ও পৃথক স্বাধীন ভূমি কমিশন চায় আদিবাসীরা

টাঙ্গাইলের সখিপুরে কোচ আদিবাসী নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণ, খাগড়াছড়ির সিন্ধুকছড়িতে ত্রিপুরা অধীবাসীদের ভূমি বেদখল ও মধুপুরে মাদীদের ঐতিহ্যগত ভূমি ও প্রাচীন মারুংদাম (শ্মশান) বেদখল করে সীমানা প্রাচীর ও গেস্ট হাউজ নির্মাণের প্রতিবাদে প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে দশটায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের ব্যানারে এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন তারা। সমাবেশে আদিবাসীদের জন্য পৃথক স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি অনন্ত বিকাশ ধামাই ও সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ।

বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে তারা জুলুম নির্যাতনকারীদের গ্রেপ্তার ও আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণে ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করেন। তাদের দাবিসমূহ হলো :

১। টাঙ্গাইলের সখীপুরে কোচ আদিবাসী নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।

২। পর্যটন কেন্দ্রের নামে সিন্ধুকছড়িতে আদিবাসীদের ভূমি বেদখল ও উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে।

৩। মধুপুরে গারো আদিবাসীদের প্রাচীন মাংরুদামের (শ্মশান) ওপর সীমানা প্রাচীর ও গেস্ট হাউজ নির্মাণ বন্ধ করতে হবে।

৪। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।

৫। সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।

৬। আদিবাসীদের নামে হয়রানিমূলক সকল মিথ্যা বন মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

সমাবেশে সংহতি জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন। তিনি বলেন, ‘১২ জুন ১৯৯৬ সালে কল্পনা চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে থেকে অপহরণ করা হয়েছিল। সেই একই তারিখে ২০২১ সালে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের একজনের বাড়ি-ঘর ভেঙে দেয়া হয়েছে। শুধু তার বাড়ি-ঘরই ভাঙচুর করা হয়নি তার জমিও দখল করে নেয়া হয়েছে। পাঁচতারকা হোটেলের নামে, সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের বাতাস দেয়ার নামে দফায় দফায় আদিবাসীদের ভূমি দখল করা হচ্ছে। চুম্বক পাহাড়ে পাঁচতারকা হোটেল মানুষ চায়নি। শুধু নির্মাণের রাজনীতির নামে এসব ভূমি দখল করা হচ্ছে। প্রতি মাসেই আদিবাসী নারীদের ধর্ষণের ঘটনা শুনতে পাওয়া যায়। আমি এই নিপীড়ন ও দখলের রাজনীতির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এসব ঘটনাকে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে পার পাওয়া যাবে না। এসব আদিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার পাঁয়তারা, তাদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র।’

আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াং ম্রু বলেন, ‘যেখানে প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করছেন, সেখানে আমাদের আদিবাসীরা ভূমি লুণ্ঠনের শিকার হচ্ছে, তারা ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদের শিকার হচ্ছে। গত ১০ জুন কোচ নারী ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়া। কিন্তু তারা উন্নয়নের নামে আমাদের (আদবাসী) উচ্ছেদ চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের চিড়িয়াখানার পশুপাখিদের মতো দেখার জন্য তারা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। মারা যাওয়ার পর যে শ্মশান সেখান থেকেও আমাদের উচ্ছেদের পাঁয়তারা চলছে। আদিবাসীরা এই দেশের নাগরিক। আর দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সম্মানের সঙ্গে এই রাষ্ট্রে বাস করার অধিকার রয়েছে। আমাদের দাবি আদায় না হলে আমরা এগুলো কঠোর হস্তে দমন করব।’

এ সময় সংহতি জানিয়ে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রুবাইয়াত ফেরদৌস। এছাড়া আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও আদিবাসী যুব ফোরামের বিভিন্ন নেতারা বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশ শেষে আন্দোলনকারীরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ ঘুরে আবার শাহবাগ গিয়ে শেষ করে।

শনিবার, ১৯ জুন ২০২১ , ৫ আষাঢ় ১৪২৮ ৭ জিলকদ ১৪৪২

ধর্ষণ-নিপীড়নের বিচার ও পৃথক স্বাধীন ভূমি কমিশন চায় আদিবাসীরা

প্রতিনিধি, ঢাবি

image

টাঙ্গাইলের সখিপুরে কোচ আদিবাসী নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণ, খাগড়াছড়ির সিন্ধুকছড়িতে ত্রিপুরা অধীবাসীদের ভূমি বেদখল ও মধুপুরে মাদীদের ঐতিহ্যগত ভূমি ও প্রাচীন মারুংদাম (শ্মশান) বেদখল করে সীমানা প্রাচীর ও গেস্ট হাউজ নির্মাণের প্রতিবাদে প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে দশটায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের ব্যানারে এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন তারা। সমাবেশে আদিবাসীদের জন্য পৃথক স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি অনন্ত বিকাশ ধামাই ও সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ।

বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে তারা জুলুম নির্যাতনকারীদের গ্রেপ্তার ও আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণে ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করেন। তাদের দাবিসমূহ হলো :

১। টাঙ্গাইলের সখীপুরে কোচ আদিবাসী নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।

২। পর্যটন কেন্দ্রের নামে সিন্ধুকছড়িতে আদিবাসীদের ভূমি বেদখল ও উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে।

৩। মধুপুরে গারো আদিবাসীদের প্রাচীন মাংরুদামের (শ্মশান) ওপর সীমানা প্রাচীর ও গেস্ট হাউজ নির্মাণ বন্ধ করতে হবে।

৪। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।

৫। সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।

৬। আদিবাসীদের নামে হয়রানিমূলক সকল মিথ্যা বন মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

সমাবেশে সংহতি জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন। তিনি বলেন, ‘১২ জুন ১৯৯৬ সালে কল্পনা চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে থেকে অপহরণ করা হয়েছিল। সেই একই তারিখে ২০২১ সালে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের একজনের বাড়ি-ঘর ভেঙে দেয়া হয়েছে। শুধু তার বাড়ি-ঘরই ভাঙচুর করা হয়নি তার জমিও দখল করে নেয়া হয়েছে। পাঁচতারকা হোটেলের নামে, সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের বাতাস দেয়ার নামে দফায় দফায় আদিবাসীদের ভূমি দখল করা হচ্ছে। চুম্বক পাহাড়ে পাঁচতারকা হোটেল মানুষ চায়নি। শুধু নির্মাণের রাজনীতির নামে এসব ভূমি দখল করা হচ্ছে। প্রতি মাসেই আদিবাসী নারীদের ধর্ষণের ঘটনা শুনতে পাওয়া যায়। আমি এই নিপীড়ন ও দখলের রাজনীতির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এসব ঘটনাকে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে পার পাওয়া যাবে না। এসব আদিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার পাঁয়তারা, তাদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র।’

আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াং ম্রু বলেন, ‘যেখানে প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করছেন, সেখানে আমাদের আদিবাসীরা ভূমি লুণ্ঠনের শিকার হচ্ছে, তারা ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদের শিকার হচ্ছে। গত ১০ জুন কোচ নারী ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়া। কিন্তু তারা উন্নয়নের নামে আমাদের (আদবাসী) উচ্ছেদ চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের চিড়িয়াখানার পশুপাখিদের মতো দেখার জন্য তারা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। মারা যাওয়ার পর যে শ্মশান সেখান থেকেও আমাদের উচ্ছেদের পাঁয়তারা চলছে। আদিবাসীরা এই দেশের নাগরিক। আর দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সম্মানের সঙ্গে এই রাষ্ট্রে বাস করার অধিকার রয়েছে। আমাদের দাবি আদায় না হলে আমরা এগুলো কঠোর হস্তে দমন করব।’

এ সময় সংহতি জানিয়ে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রুবাইয়াত ফেরদৌস। এছাড়া আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও আদিবাসী যুব ফোরামের বিভিন্ন নেতারা বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশ শেষে আন্দোলনকারীরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ ঘুরে আবার শাহবাগ গিয়ে শেষ করে।