রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘকে দৃশ্যমান ভূমিকা রাখতে হবে

শরণার্থী রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মায়ানমারে ফেরাত পাঠাতে জাতিসংঘকে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করার দাবি জানিয়েছে সরকার। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের মায়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন এস বার্গনারের সঙ্গে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় এক বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ দাবি জানান। সে সময় ক্রিস্টিন এস বার্গনার বলেন, মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযোগী অনুকূল পরিবেশ তৈরি ও দ্রুতই প্রত্যাবাসন শুরুর লক্ষ্যে সদস্য রাষ্ট্রসহ মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ ও বাইরের সব অংশীজনদের সঙ্গে জাতিসংঘ যোগাযোগ ও আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।

২০১৭ সালের অগাস্টে মায়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনী ব্যাপক অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়। তখন সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দেয়। তার আগে গত কয়েক দশকে দমন-নিপীড়নের শিকার হয়ে সেখান থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দেয়া বিপুলসংখ্যক শরণার্থীদের ভার বাংলাদেশের পক্ষে কতদিন বহন করা সম্ভব হবে সেই প্রশ্ন রয়েছে। রোহিঙ্গাদের উপস্থিতির কারণে স্থানীয় পরিবেশ ও সমাজে বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে প্রায় ১৯ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে এটা কোন সমাধান নয়। একমাত্র প্রত্যাবাসনই হতে পারে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান। কিন্তু গত চার বছরেও এ বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে মায়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করা হয়েছে। ২০১৯ সালে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগও নেয়া হয় দুবার। তবে আন্তর্জাতিক মহলের আপত্তি আর রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণে সেটা আলোর মুখ দেখেনি। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ বেশকিছু ইস্যুতে মায়ানামারের নেতিবাচক ভূমিকার কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আগাচ্ছে না। এ বিষয়ে জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক মহলের ভূমিকাও আশানুরূপ নয়।

জাতিসংঘ বলছে, সদস্যরাষ্ট্রসহ মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ ও বাইরের সব অংশীজনদের সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আমরা দেখছি, যোগাযোগ আর আলোচনাতে চার বছর পার হয়ে গেছে কিন্তু দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। মায়ানমার এখনও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযোগী অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেনি। রোহিঙ্গাদের যেন ফেরত নেয়া হয় সেজন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে মায়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। তাদের বাধ্য করা না হলে প্রত্যাবাসন কাজ আলোর মুখ দেখবে না। প্রত্যাবাসনের একটি রোডম্যাপ থাকা জরুরি। রোহিঙ্গাদের মায়ানমার কবে কীভাবে ফেরত নেবে সেটা রোডম্যাপে থাকতে হবে। নইলে মায়ানমার বরাবরের মতোই এ কাজ গড়িমসি করবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে জাতিসংঘ সুস্পষ্ট একটি রোডম্যাপ তৈরি করবে এবং সে অনুযায়ী দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু হবে সেটা আমাদের আশা। শুধু আশ্বাস দিয়ে দায়িত্ব সারলে চলবে না।

শনিবার, ১৯ জুন ২০২১ , ৫ আষাঢ় ১৪২৮ ৭ জিলকদ ১৪৪২

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘকে দৃশ্যমান ভূমিকা রাখতে হবে

শরণার্থী রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মায়ানমারে ফেরাত পাঠাতে জাতিসংঘকে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করার দাবি জানিয়েছে সরকার। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের মায়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন এস বার্গনারের সঙ্গে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় এক বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ দাবি জানান। সে সময় ক্রিস্টিন এস বার্গনার বলেন, মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযোগী অনুকূল পরিবেশ তৈরি ও দ্রুতই প্রত্যাবাসন শুরুর লক্ষ্যে সদস্য রাষ্ট্রসহ মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ ও বাইরের সব অংশীজনদের সঙ্গে জাতিসংঘ যোগাযোগ ও আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।

২০১৭ সালের অগাস্টে মায়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনী ব্যাপক অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়। তখন সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দেয়। তার আগে গত কয়েক দশকে দমন-নিপীড়নের শিকার হয়ে সেখান থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দেয়া বিপুলসংখ্যক শরণার্থীদের ভার বাংলাদেশের পক্ষে কতদিন বহন করা সম্ভব হবে সেই প্রশ্ন রয়েছে। রোহিঙ্গাদের উপস্থিতির কারণে স্থানীয় পরিবেশ ও সমাজে বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে প্রায় ১৯ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে এটা কোন সমাধান নয়। একমাত্র প্রত্যাবাসনই হতে পারে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান। কিন্তু গত চার বছরেও এ বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে মায়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করা হয়েছে। ২০১৯ সালে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগও নেয়া হয় দুবার। তবে আন্তর্জাতিক মহলের আপত্তি আর রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণে সেটা আলোর মুখ দেখেনি। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ বেশকিছু ইস্যুতে মায়ানামারের নেতিবাচক ভূমিকার কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আগাচ্ছে না। এ বিষয়ে জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক মহলের ভূমিকাও আশানুরূপ নয়।

জাতিসংঘ বলছে, সদস্যরাষ্ট্রসহ মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ ও বাইরের সব অংশীজনদের সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আমরা দেখছি, যোগাযোগ আর আলোচনাতে চার বছর পার হয়ে গেছে কিন্তু দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। মায়ানমার এখনও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযোগী অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেনি। রোহিঙ্গাদের যেন ফেরত নেয়া হয় সেজন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে মায়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। তাদের বাধ্য করা না হলে প্রত্যাবাসন কাজ আলোর মুখ দেখবে না। প্রত্যাবাসনের একটি রোডম্যাপ থাকা জরুরি। রোহিঙ্গাদের মায়ানমার কবে কীভাবে ফেরত নেবে সেটা রোডম্যাপে থাকতে হবে। নইলে মায়ানমার বরাবরের মতোই এ কাজ গড়িমসি করবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে জাতিসংঘ সুস্পষ্ট একটি রোডম্যাপ তৈরি করবে এবং সে অনুযায়ী দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু হবে সেটা আমাদের আশা। শুধু আশ্বাস দিয়ে দায়িত্ব সারলে চলবে না।