আম বাগানের সাথী বোরো ত্রি-ফসলের উজ্জ্বল সম্ভাবনা

রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে বোরো ধান কাটা মাড়াই এখন শেষ পর্যায়ে। তবে জেলার দুর্গাপুর উপজেলার রৈপাড়া গ্রামের বিলে আমগাছের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে বোরো ধানের সবুজে সমারোহ। দুই ভাই মিলে প্রায় পোনে তিনবিঘা জমির আমবাগানে রোপণ করেছেন বোরো ধান। জমিতে মসুর থাকায় দেরিতে বোরো ধান রোপণ করা হলেও সেই ধানে এখন শীষ গজাতে শুরু করছে। একই জমিতে মিশ্র ফসল করে লাভবান হচ্ছেন তারা। ফলে কৃষিতে এক নতুন সম্ভাবনার দেখা পেয়েছে দুর্গাপুর এলাকার প্রান্তিক কৃষকরা।

রৈপাড়া এলাকার কৃষক দুই ভাই রিপন ও খোকন জানান, পারিবারিকভাবে ওয়ারিশ সূত্রে জমি বণ্টন হওয়ায় কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কীভাবে অল্প খরচে, অল্প জমিতে, অল্প সময়ে অধিক ফসল পাওয়া যাবে এ চিন্তা থেকে আমবাগানে বছরে তিনটি ফসল করছি। বাগানে বোরো ধানের আগে চাষ করা হয়ে ছিল মসূর। তাতে বাম্পার ফলন হয়েছে। মসুর দেরিতে উঠায় বোরোধান রোপণ করতে দেরি হয়ে যায়। তারা বলেন, আম এ অঞ্চলের লাভজনক ফসল।

এ কারণে ফসলি জমিতে আম গাছ লাগানো হয়েছে। জমিতে আমগাছ লাগানোর ১০ বছর পর্যন্ত জমিতে অন্য মিশ্র আবাদ করা যায়। পাশাপাশি বাগান থেকে আমও পাওয়া যায়। ফলে একই জমিতে মিশ্র ফসল করে বেশি লাভবান হওয়া যায়। তবে গত বছর এসব চারা আমগাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আম এসে ছিল। অন্যদিকে মসূর ও ধানের ভাল ফলন হয়েছে।

দুর্গাপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ অঞ্চলের মাটি খুবই ঊর্বর। একটি জমিতে থেকে বছরে এখন তিনটি থেকে চারটি পর্যন্ত ফসল ফলে থাকে। এরপরও কিছু কৌশলী কৃষক রয়েছেন তারা এক ফসলের ভেতর দুই থেকে তিন রকম ফসল চাষ করে থাকেন। এতে তারা অধিক লাভবান হোন। উপজেলার নওপাড়া, শ্যামপুর, শিবপুর, উজানখলসী, কানপাড়া, রসুলপুর, দাওকান্দি, মোহাম্মাদপুর, কিসমত বগুড়া, আড়ইল, পানানগর, হরিরামপুর, শালঘরিয়া, দেবীপুর, চুনিয়াপাড়া, বাজুখলসী সহ বিভিন্ন গ্রামে একই জমিতে মিশ্র পদ্ধতিতে ফসল চাষ করতে দেখা যায়। দুর্গাপুর এলাকার মাটি কলা, পেঁপে, পেঁয়ারা, লেবু, ধান, আদা, কচু, হলুদসহ নানা কৃষি ফসল চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। আম, পেঁয়ারা, লেবু ও সবজি চাষের সঙ্গে সাথী ফসল চাষের পদ্ধতি বেশি প্রয়োগ করা হচ্ছে।

উপজেলার দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়নের নারায়ণ পুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম জানান, তার মূল ফসল পেঁয়ারা। সঙ্গে এক বছরের ফসল পেঁপে লাগান। এরপরও জমির ধার দিয়ে আদা ও কঁচু লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, একই জমি থেকে আমি বানিজ্যকভাবে পেঁয়ারা বিক্রি করতে পারব। বাড়িতে খাওয়ার জন্য আদা ও কচু পাবো। ফলে এক জমিতে মিশ্র ফসল করে অধিক লাভবান হওয়া যাচ্ছে। ঝালুকা গ্রামের শাহিনুল বলেন, এক বিঘা জমিতে সাজিয়েছেন ৫ ফসলের বাগান। এক সঙ্গে লাগিয়েছেন দেড়শো পেঁপে মরিচ আদা ও লেবু। অপর কৃষক শরিফুল তার জমিতে একইভাবে লাগিয়েছেন কলা, পেঁপে, আদা, কচু, ডাটা ও পুঁইশাক। এভাবে উপজেলায় একই পদ্ধতিতে অনেক কৃষক ফসল চাষে ঝুঁকেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মসিউর রহমান বলেন, কৃষকরা এখন পেঁয়ারা বাগানে এক সঙ্গে আদা, পেঁপে, কচু, হলুদ, লেবু, মরিচসহ নানা কৃষি ফসল চাষ করছে। এটা একটা ইতিবাচক মিশ্র ফসল চাষ পদ্ধতি। এ পদ্ধতির চাষের ফলে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।

রবিবার, ২০ জুন ২০২১ , ৬ আষাঢ় ১৪২৮ ৮ জিলকদ ১৪৪২

আম বাগানের সাথী বোরো ত্রি-ফসলের উজ্জ্বল সম্ভাবনা

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী

রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে বোরো ধান কাটা মাড়াই এখন শেষ পর্যায়ে। তবে জেলার দুর্গাপুর উপজেলার রৈপাড়া গ্রামের বিলে আমগাছের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে বোরো ধানের সবুজে সমারোহ। দুই ভাই মিলে প্রায় পোনে তিনবিঘা জমির আমবাগানে রোপণ করেছেন বোরো ধান। জমিতে মসুর থাকায় দেরিতে বোরো ধান রোপণ করা হলেও সেই ধানে এখন শীষ গজাতে শুরু করছে। একই জমিতে মিশ্র ফসল করে লাভবান হচ্ছেন তারা। ফলে কৃষিতে এক নতুন সম্ভাবনার দেখা পেয়েছে দুর্গাপুর এলাকার প্রান্তিক কৃষকরা।

রৈপাড়া এলাকার কৃষক দুই ভাই রিপন ও খোকন জানান, পারিবারিকভাবে ওয়ারিশ সূত্রে জমি বণ্টন হওয়ায় কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কীভাবে অল্প খরচে, অল্প জমিতে, অল্প সময়ে অধিক ফসল পাওয়া যাবে এ চিন্তা থেকে আমবাগানে বছরে তিনটি ফসল করছি। বাগানে বোরো ধানের আগে চাষ করা হয়ে ছিল মসূর। তাতে বাম্পার ফলন হয়েছে। মসুর দেরিতে উঠায় বোরোধান রোপণ করতে দেরি হয়ে যায়। তারা বলেন, আম এ অঞ্চলের লাভজনক ফসল।

এ কারণে ফসলি জমিতে আম গাছ লাগানো হয়েছে। জমিতে আমগাছ লাগানোর ১০ বছর পর্যন্ত জমিতে অন্য মিশ্র আবাদ করা যায়। পাশাপাশি বাগান থেকে আমও পাওয়া যায়। ফলে একই জমিতে মিশ্র ফসল করে বেশি লাভবান হওয়া যায়। তবে গত বছর এসব চারা আমগাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আম এসে ছিল। অন্যদিকে মসূর ও ধানের ভাল ফলন হয়েছে।

দুর্গাপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ অঞ্চলের মাটি খুবই ঊর্বর। একটি জমিতে থেকে বছরে এখন তিনটি থেকে চারটি পর্যন্ত ফসল ফলে থাকে। এরপরও কিছু কৌশলী কৃষক রয়েছেন তারা এক ফসলের ভেতর দুই থেকে তিন রকম ফসল চাষ করে থাকেন। এতে তারা অধিক লাভবান হোন। উপজেলার নওপাড়া, শ্যামপুর, শিবপুর, উজানখলসী, কানপাড়া, রসুলপুর, দাওকান্দি, মোহাম্মাদপুর, কিসমত বগুড়া, আড়ইল, পানানগর, হরিরামপুর, শালঘরিয়া, দেবীপুর, চুনিয়াপাড়া, বাজুখলসী সহ বিভিন্ন গ্রামে একই জমিতে মিশ্র পদ্ধতিতে ফসল চাষ করতে দেখা যায়। দুর্গাপুর এলাকার মাটি কলা, পেঁপে, পেঁয়ারা, লেবু, ধান, আদা, কচু, হলুদসহ নানা কৃষি ফসল চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। আম, পেঁয়ারা, লেবু ও সবজি চাষের সঙ্গে সাথী ফসল চাষের পদ্ধতি বেশি প্রয়োগ করা হচ্ছে।

উপজেলার দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়নের নারায়ণ পুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম জানান, তার মূল ফসল পেঁয়ারা। সঙ্গে এক বছরের ফসল পেঁপে লাগান। এরপরও জমির ধার দিয়ে আদা ও কঁচু লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, একই জমি থেকে আমি বানিজ্যকভাবে পেঁয়ারা বিক্রি করতে পারব। বাড়িতে খাওয়ার জন্য আদা ও কচু পাবো। ফলে এক জমিতে মিশ্র ফসল করে অধিক লাভবান হওয়া যাচ্ছে। ঝালুকা গ্রামের শাহিনুল বলেন, এক বিঘা জমিতে সাজিয়েছেন ৫ ফসলের বাগান। এক সঙ্গে লাগিয়েছেন দেড়শো পেঁপে মরিচ আদা ও লেবু। অপর কৃষক শরিফুল তার জমিতে একইভাবে লাগিয়েছেন কলা, পেঁপে, আদা, কচু, ডাটা ও পুঁইশাক। এভাবে উপজেলায় একই পদ্ধতিতে অনেক কৃষক ফসল চাষে ঝুঁকেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মসিউর রহমান বলেন, কৃষকরা এখন পেঁয়ারা বাগানে এক সঙ্গে আদা, পেঁপে, কচু, হলুদ, লেবু, মরিচসহ নানা কৃষি ফসল চাষ করছে। এটা একটা ইতিবাচক মিশ্র ফসল চাষ পদ্ধতি। এ পদ্ধতির চাষের ফলে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।