মায়ানমারে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের দাবি জাতিসংঘের

সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ এবং গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে আন্দোলনরত মানুষের ওপর সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের কারণে ক্ষমতা দখলের চার মাস পর মায়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিবিসি

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মায়ানমারের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে ১১৯টি দেশ। স্বৈরশাসিত বেলারুশই একমাত্র এর বিপক্ষে মত দেয়। আর চীন-রাশিয়াসহ মোট ৩৬টি দেশ প্রস্তাবে মতামত দেয়া থেকে বিরত থাকে। মতামত প্রদানে বিরত থাকা দেশগুলোর মধ্যে কেউ কেউ এ সংকটকে মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ ইস্যু হিসেবে উল্লেখ করেছে। আর অন্যরা বলছে, ওই প্রস্তাবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নৃশংস সামরিক আক্রমণের বিষয়ে উল্লেখ নেই।

এদিকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করায় জান্তা সরকারের নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাবও পাস করেছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ।

একইসঙ্গে মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এছাড়া শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর সহিংসতা বন্ধেরও দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। জাতিসংঘের এই প্রস্তাবটি মিয়ানমার মানতে আইনত বাধ্য না হলেও রাজনৈতিকভাবে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মায়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন স্ক্যানার বার্গেনার সাধারণ পরিষদে দেয়া বক্তব্যে বলেন, মায়ানমারে ব্যাপকভাবে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার বড় সম্ভাবনা রয়েছে। যেটা করার আমাদের দ্রুত সেটা করতে হবে। সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতা থেকে সরানোর সম্ভাবনা ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে। তবে জাতিসংঘে মায়ানমারের নির্বাচিত সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী বিশেষ দূত কিয়াও মো তুন বলেছেন, এ ধরনের লঘু প্রস্তাব পাস করতে জাতিসংঘের এত দীর্ঘ সময় লাগায় তিনি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট।

জাতিসংঘে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত উলুফ স্কুগ বলেন, এই প্রস্তাব মায়ানমারের সামরিক জান্তাকে বেআইনি ঘোষণা করেছে, জনগণের ওপর তাদের সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে এবং বিশ্বের চোখে তাদের একঘরে করে দিয়েছে।

দেশটির সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনে কারচুপির অজুহাতে গতো ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর জান্তার হাতে আটক আছেন সে দেশের জনপ্রিয় নেত্রী অং সান সু চি। আদালতে সংক্ষিপ্ত উপস্থিতি ছাড়া তাকে দেখা বা তার বিষয়ে কিছু জানা যাচ্ছে না। অভ্যুত্থানের পর সামরিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ নিষ্ঠুরভাবে দমন করে চলেছে মায়ানমারের সামরিক বাহিনী। গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারী, কর্মী ও সাংবাদিকদের আটক করা হয়েছে।

পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার-এর তথ্যানুযায়ী, মায়ানমারে অভ্যুত্থানের পর এ পর্যন্ত ৫ হাজার জনকে আটক করা হয়েছে এবং বিক্ষোভ দমন অভিযানে হত্যা করা হয়েছে ৮৬০ জনেরও বেশি মানুষকে।

গত মাসে, মায়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সাধারণ পরিষদকে একটি প্রস্তাব পাসের অনুরোধ জানায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, রাষ্ট্রগুলোকে নিষেধাজ্ঞা মানতে আইনিভাবে বাধ্য করা না গেলেও এ ধরনের একটি প্রস্তাব উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করবে।

image

অভ্যুত্থানবিরোধী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সাধারণ জনগণকে এভাবেই নির্বিচারে গুলি হত্যা করছে মায়ানমার পুলিশ -রয়টার্স

আরও খবর
দ্বিতীয় মেয়াদে জাতিসংঘ মহাসচিব হলেন গুতেরেস
৪০ দেশ টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ডব্লিউএইচও
ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন টিকা চুক্তি বাতিল

রবিবার, ২০ জুন ২০২১ , ৬ আষাঢ় ১৪২৮ ৮ জিলকদ ১৪৪২

মায়ানমারে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের দাবি জাতিসংঘের

image

অভ্যুত্থানবিরোধী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সাধারণ জনগণকে এভাবেই নির্বিচারে গুলি হত্যা করছে মায়ানমার পুলিশ -রয়টার্স

সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ এবং গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে আন্দোলনরত মানুষের ওপর সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের কারণে ক্ষমতা দখলের চার মাস পর মায়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিবিসি

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মায়ানমারের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে ১১৯টি দেশ। স্বৈরশাসিত বেলারুশই একমাত্র এর বিপক্ষে মত দেয়। আর চীন-রাশিয়াসহ মোট ৩৬টি দেশ প্রস্তাবে মতামত দেয়া থেকে বিরত থাকে। মতামত প্রদানে বিরত থাকা দেশগুলোর মধ্যে কেউ কেউ এ সংকটকে মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ ইস্যু হিসেবে উল্লেখ করেছে। আর অন্যরা বলছে, ওই প্রস্তাবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নৃশংস সামরিক আক্রমণের বিষয়ে উল্লেখ নেই।

এদিকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করায় জান্তা সরকারের নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাবও পাস করেছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ।

একইসঙ্গে মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এছাড়া শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর সহিংসতা বন্ধেরও দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। জাতিসংঘের এই প্রস্তাবটি মিয়ানমার মানতে আইনত বাধ্য না হলেও রাজনৈতিকভাবে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মায়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন স্ক্যানার বার্গেনার সাধারণ পরিষদে দেয়া বক্তব্যে বলেন, মায়ানমারে ব্যাপকভাবে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার বড় সম্ভাবনা রয়েছে। যেটা করার আমাদের দ্রুত সেটা করতে হবে। সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতা থেকে সরানোর সম্ভাবনা ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে। তবে জাতিসংঘে মায়ানমারের নির্বাচিত সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী বিশেষ দূত কিয়াও মো তুন বলেছেন, এ ধরনের লঘু প্রস্তাব পাস করতে জাতিসংঘের এত দীর্ঘ সময় লাগায় তিনি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট।

জাতিসংঘে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত উলুফ স্কুগ বলেন, এই প্রস্তাব মায়ানমারের সামরিক জান্তাকে বেআইনি ঘোষণা করেছে, জনগণের ওপর তাদের সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে এবং বিশ্বের চোখে তাদের একঘরে করে দিয়েছে।

দেশটির সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনে কারচুপির অজুহাতে গতো ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর জান্তার হাতে আটক আছেন সে দেশের জনপ্রিয় নেত্রী অং সান সু চি। আদালতে সংক্ষিপ্ত উপস্থিতি ছাড়া তাকে দেখা বা তার বিষয়ে কিছু জানা যাচ্ছে না। অভ্যুত্থানের পর সামরিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ নিষ্ঠুরভাবে দমন করে চলেছে মায়ানমারের সামরিক বাহিনী। গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারী, কর্মী ও সাংবাদিকদের আটক করা হয়েছে।

পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার-এর তথ্যানুযায়ী, মায়ানমারে অভ্যুত্থানের পর এ পর্যন্ত ৫ হাজার জনকে আটক করা হয়েছে এবং বিক্ষোভ দমন অভিযানে হত্যা করা হয়েছে ৮৬০ জনেরও বেশি মানুষকে।

গত মাসে, মায়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সাধারণ পরিষদকে একটি প্রস্তাব পাসের অনুরোধ জানায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, রাষ্ট্রগুলোকে নিষেধাজ্ঞা মানতে আইনিভাবে বাধ্য করা না গেলেও এ ধরনের একটি প্রস্তাব উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করবে।