অমির বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা

পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার তুহিন সিদ্দিকী অমির বিরুদ্ধে এবার মানবপাচারের অভিযোগে মামলা হয়েছে। রাজধানীর দক্ষিণখান থানায় এ মামলা করেন একজন ভুক্তভোগী। মামলায় অমি ছাড়া আরও পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও পাঁচ-সাতজনকে। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ নিয়ে অমির বিরুদ্ধে ৪টি মামলা হয়েছে।

গতকাল দক্ষিণখান থানার ওসি শিকদার মো. শামীম হোসেন বলেন, একজন ভুক্তভোগী বাদী হয়ে অমিসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও পাঁচ-সাতজনের নামে একটি মামলা করেছেন। মামলায় মানবপাচারের অভিযোগ করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর আগে গত মঙ্গলবার বিশেষ অনুমতি ছাড়া বেআইনিভাবে পাসপোর্ট রাখার দায়ে অমির দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলায় অমি ও তার দুই সহযোগীকে আসামি করা হয়। অমিকে গ্রেপ্তারের সময় বিদেশি মদ ও ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় তাকে সাতদিনের রিমান্ডে পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। বর্তমানে তাকে ডিবি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

অমির তিন সহযোগী কারাগারে

এদিকে পরীমনির মামলার আসামি তুহিন সিদ্দিকী অমির তিন সহযোগীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। তারা হলো লিপি আক্তার (১৮), সুমি আক্তার (১৯) ও নাজমা। গতকাল তিনদিনের রিমান্ড শেষে তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মন্ডল তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে গত ১৫ জুন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ তাদের তিনজনকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর বিমানবন্দর থানার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসি আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ (৬৫) ও তুহিন সিদ্দিকী অমির (৩৩) ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়া আদালত অন্য তিন আসামি লিপি আক্তার, সুমি আক্তার ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধার তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ১৪ জুন দুপুরে রাজধানীর উত্তরা-১ নম্বর সেক্টরের-১২ নম্বর রোডের বাসা থেকে ওই পাঁচজনকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। অভিযান শেষে ডিবির যুগ্ম-কমিশনার হারুন-অর-রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, এটা (যেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে) পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার অমির বাসা। পরীমনির সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে নাসির ওই তিন নারীকে নিয়ে এ বাসায় পালিয়ে ছিলেন। মাদক রাখার অভিযোগে সেই তিন নারীকেও আমরা গ্রেপ্তার করেছি। নাসির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নাসিরের বিরুদ্ধে আগেও মাদক ও নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে। নানা অভিযোগে তাকে উত্তরা ক্লাব থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে বলে জেনেছি। কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে আমরা সেগুলোর তদন্ত করব। এর আগে গত ১৩ জুন রাত ৮টার দিকে ফেইসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়ে অভিযোগ তোলার পর রাতে সাংবাদিকদের বনানীর বাসায় ডেকে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি।

পরীমনির স্ট্যাটাস সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. সোহেল রানা বলেন, তিনি অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন। আমরা তার ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করব। কেন তিনি আইজিপি স্যারের নাম উল্লেখ করেছেন তা আমি বুঝতে পারছি না। আমরা নিশ্চিত, তিনি মোটেই আইজিপি স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। আইজিপি স্যার সর্বদা নারী ও শিশুদের অধিকারের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার বনানীর বাসায় সাংবাদিকদের কাছে ‘নির্যাতনকারীদের’ নাম-পরিচয় প্রকাশ করেন পরীমনি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ৯ জুন রাত ১২টায় আমাকে বিরুলিয়ায় নাসির উদ্দিন মাহমুদের কাছে নিয়ে যায় অমি। ওই সময় নাসির নিজেকে ঢাকা বোট ক্লাবের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন। সেখানে নাসির আমাকে মদ খেতে অফার করেন। আমি রাজি না হলে আমাকে জোর করে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। তারপর আমাকে নির্যাতন ও হত্যার চেষ্টা করেন। অমিও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

রবিবার, ২০ জুন ২০২১ , ৬ আষাঢ় ১৪২৮ ৮ জিলকদ ১৪৪২

পরীমনির মামলার আসামি

অমির বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার তুহিন সিদ্দিকী অমির বিরুদ্ধে এবার মানবপাচারের অভিযোগে মামলা হয়েছে। রাজধানীর দক্ষিণখান থানায় এ মামলা করেন একজন ভুক্তভোগী। মামলায় অমি ছাড়া আরও পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও পাঁচ-সাতজনকে। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ নিয়ে অমির বিরুদ্ধে ৪টি মামলা হয়েছে।

গতকাল দক্ষিণখান থানার ওসি শিকদার মো. শামীম হোসেন বলেন, একজন ভুক্তভোগী বাদী হয়ে অমিসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও পাঁচ-সাতজনের নামে একটি মামলা করেছেন। মামলায় মানবপাচারের অভিযোগ করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর আগে গত মঙ্গলবার বিশেষ অনুমতি ছাড়া বেআইনিভাবে পাসপোর্ট রাখার দায়ে অমির দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলায় অমি ও তার দুই সহযোগীকে আসামি করা হয়। অমিকে গ্রেপ্তারের সময় বিদেশি মদ ও ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় তাকে সাতদিনের রিমান্ডে পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। বর্তমানে তাকে ডিবি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

অমির তিন সহযোগী কারাগারে

এদিকে পরীমনির মামলার আসামি তুহিন সিদ্দিকী অমির তিন সহযোগীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। তারা হলো লিপি আক্তার (১৮), সুমি আক্তার (১৯) ও নাজমা। গতকাল তিনদিনের রিমান্ড শেষে তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মন্ডল তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে গত ১৫ জুন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ তাদের তিনজনকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর বিমানবন্দর থানার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসি আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ (৬৫) ও তুহিন সিদ্দিকী অমির (৩৩) ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়া আদালত অন্য তিন আসামি লিপি আক্তার, সুমি আক্তার ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধার তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ১৪ জুন দুপুরে রাজধানীর উত্তরা-১ নম্বর সেক্টরের-১২ নম্বর রোডের বাসা থেকে ওই পাঁচজনকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। অভিযান শেষে ডিবির যুগ্ম-কমিশনার হারুন-অর-রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, এটা (যেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে) পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার অমির বাসা। পরীমনির সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে নাসির ওই তিন নারীকে নিয়ে এ বাসায় পালিয়ে ছিলেন। মাদক রাখার অভিযোগে সেই তিন নারীকেও আমরা গ্রেপ্তার করেছি। নাসির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নাসিরের বিরুদ্ধে আগেও মাদক ও নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে। নানা অভিযোগে তাকে উত্তরা ক্লাব থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে বলে জেনেছি। কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে আমরা সেগুলোর তদন্ত করব। এর আগে গত ১৩ জুন রাত ৮টার দিকে ফেইসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়ে অভিযোগ তোলার পর রাতে সাংবাদিকদের বনানীর বাসায় ডেকে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি।

পরীমনির স্ট্যাটাস সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. সোহেল রানা বলেন, তিনি অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন। আমরা তার ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করব। কেন তিনি আইজিপি স্যারের নাম উল্লেখ করেছেন তা আমি বুঝতে পারছি না। আমরা নিশ্চিত, তিনি মোটেই আইজিপি স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। আইজিপি স্যার সর্বদা নারী ও শিশুদের অধিকারের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার বনানীর বাসায় সাংবাদিকদের কাছে ‘নির্যাতনকারীদের’ নাম-পরিচয় প্রকাশ করেন পরীমনি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ৯ জুন রাত ১২টায় আমাকে বিরুলিয়ায় নাসির উদ্দিন মাহমুদের কাছে নিয়ে যায় অমি। ওই সময় নাসির নিজেকে ঢাকা বোট ক্লাবের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন। সেখানে নাসির আমাকে মদ খেতে অফার করেন। আমি রাজি না হলে আমাকে জোর করে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। তারপর আমাকে নির্যাতন ও হত্যার চেষ্টা করেন। অমিও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।