চিকিৎসকের মৃত্যু : মামলা তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ

এক চিকিৎসকের মৃত্যুতে চিকিৎসায় ‘অবহেলার’ অভিযোগে অন্য তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

তিন হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ ঐ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে বলে তার বাবার অভিযোগ। বাদী নিজে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট বলে জানানো হয়েছে। আর মামলায় একজন চিকিৎসককেও সাক্ষী করা হয়েছে।

এভার কেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. তৌফিক এনামের মৃত্যুতে তার বাবা আক্তারুজ্জামান মিয়া রোববার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।

গত ৩০ মে রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডা. এনাম মারা যান বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।

ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী বাদীর জবানবন্দি শুনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন।

অভিযুক্ত তিন চিকিৎসক : কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালের ল্যাপারোস্কপিক সার্জন অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওহাব খান, ল্যাব এইড হসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল এবং বিআরবি হাসপাতালের হেপাটো বিলিয়ারি সার্জন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী।

এই বিষয়ে এই তিন চিকিৎসকের কারও বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

মামলায় বলা হয়, তৌফিক এনাম অসুস্থ হলে গত ৪ মে কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. আব্দুল ওহাব খানকে দেখান। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গলব্লাডারে পাথর ধরা পড়ার কথা জানানো হয়। ৫ মে ডা. ওহাব অস্ত্রোপচার করেন। পরদিন ডা. এনামকে ছাড়পত্র দিলে তিনি বাসায? চলে যান।

কিন্তু ৯ মে তৌফিক এনামের অবস্থার অবনতি হয়। তখন তারা ডা. ওহাব খানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি আবারও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জরুরিভিত্তিতে ল্যাবএইড হাসপাতালে ডা. মামুন আল-মাহতাব স্বপ্নীলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

মামলার আর্জিতে বলা হয়, ডা. স্বপ্নীল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাদের বলেন, গলব্লাডার অপারেশনের সময় ‘ভুল জায়গায় ক্লিপ’ লাগানো হয়েছে। এরপর ডা. স্বপ্নীল দইআরসিপি উইথ স্টেন্টিং’ করেন। তবে রোগীর অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। তখন তিনি জরুরিভিত্তিতে রোগীকে বিআরবি হাসপাতালের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর কাছে পাঠান।

ডা. আলী গত ১২ মে রোগীকে বিআরবি হাসপাতাল ভর্তি করান এবং জরুরিভিত্তিতে অপারেশন করার কথা বলেন।

মামলায় বলা হয়, ৩০ মে বিআরবি হাসপাতালে ডা. এনামের অস্ত্রোপচারের সময় তার বাবাকে প্রথমে তিন ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হবে বলে জানানো হয়। তিন ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করার পর আরও চার ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন বলে জানান ডা. মোহাম্মদ আলী।

তখন হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে বাদীর স্বজনদের ‘কথা কাটাকাটি হয়’। এক পর্যায়ে ডা. তৌফিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, “অভিযুক্তরা অর্থলোভী। তারা মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা নেয়ার জন্য ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না করে হাসপাতালে সন্ত্রাসী মাস্তান রেখে জোর করে টাকা আদায় করে।”

শেষ পর্যন্ত পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে বাদী তার ছেলের মরদেহ হাসপাতাল থেকে গ্রহণ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

আর্জিতে অভিযোগ, “ডা. তৌফিক এনাম বার বার বলছিলেন যে, ‘ভুল চিকিৎসা হচ্ছে, আমাকে এখানথেকে পিজি (বঙ্গবন্ধু মেডিকেল) হাসপাতালে নিয়ে যাও।’ কিন্তু ৩ নম্বর আসামি ডা. মোহাম্মদ আলী রোগীর বাবা মা কাউকে কোন পাত্তা দেননি। তারা জোর করে অপারেশন করার পর রোগী মারা যায়। এক পর্যায়ে অভিযুক্তরা ক্ষমা চান।”

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক), ৩৮৬, ৪০৬, ৪২০ ধারায় অপরাধ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদনও করেন বাদী। আর্জিতে মোট আটজনকে সাক্ষী করা হয়েছে। আর ৫ নম্বর সাক্ষী মেহেবুবা সুলতানাও একজন চিকিৎসক।

সোমবার, ২১ জুন ২০২১ , ৭ আষাঢ় ১৪২৮ ৯ জিলকদ ১৪৪২

চিকিৎসকের মৃত্যু : মামলা তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ

আদালত বার্তা পরিবেশক

এক চিকিৎসকের মৃত্যুতে চিকিৎসায় ‘অবহেলার’ অভিযোগে অন্য তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

তিন হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ ঐ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে বলে তার বাবার অভিযোগ। বাদী নিজে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট বলে জানানো হয়েছে। আর মামলায় একজন চিকিৎসককেও সাক্ষী করা হয়েছে।

এভার কেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. তৌফিক এনামের মৃত্যুতে তার বাবা আক্তারুজ্জামান মিয়া রোববার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।

গত ৩০ মে রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডা. এনাম মারা যান বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।

ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী বাদীর জবানবন্দি শুনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন।

অভিযুক্ত তিন চিকিৎসক : কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালের ল্যাপারোস্কপিক সার্জন অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওহাব খান, ল্যাব এইড হসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল এবং বিআরবি হাসপাতালের হেপাটো বিলিয়ারি সার্জন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী।

এই বিষয়ে এই তিন চিকিৎসকের কারও বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

মামলায় বলা হয়, তৌফিক এনাম অসুস্থ হলে গত ৪ মে কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. আব্দুল ওহাব খানকে দেখান। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গলব্লাডারে পাথর ধরা পড়ার কথা জানানো হয়। ৫ মে ডা. ওহাব অস্ত্রোপচার করেন। পরদিন ডা. এনামকে ছাড়পত্র দিলে তিনি বাসায? চলে যান।

কিন্তু ৯ মে তৌফিক এনামের অবস্থার অবনতি হয়। তখন তারা ডা. ওহাব খানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি আবারও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জরুরিভিত্তিতে ল্যাবএইড হাসপাতালে ডা. মামুন আল-মাহতাব স্বপ্নীলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

মামলার আর্জিতে বলা হয়, ডা. স্বপ্নীল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাদের বলেন, গলব্লাডার অপারেশনের সময় ‘ভুল জায়গায় ক্লিপ’ লাগানো হয়েছে। এরপর ডা. স্বপ্নীল দইআরসিপি উইথ স্টেন্টিং’ করেন। তবে রোগীর অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। তখন তিনি জরুরিভিত্তিতে রোগীকে বিআরবি হাসপাতালের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর কাছে পাঠান।

ডা. আলী গত ১২ মে রোগীকে বিআরবি হাসপাতাল ভর্তি করান এবং জরুরিভিত্তিতে অপারেশন করার কথা বলেন।

মামলায় বলা হয়, ৩০ মে বিআরবি হাসপাতালে ডা. এনামের অস্ত্রোপচারের সময় তার বাবাকে প্রথমে তিন ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হবে বলে জানানো হয়। তিন ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করার পর আরও চার ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন বলে জানান ডা. মোহাম্মদ আলী।

তখন হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে বাদীর স্বজনদের ‘কথা কাটাকাটি হয়’। এক পর্যায়ে ডা. তৌফিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, “অভিযুক্তরা অর্থলোভী। তারা মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা নেয়ার জন্য ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না করে হাসপাতালে সন্ত্রাসী মাস্তান রেখে জোর করে টাকা আদায় করে।”

শেষ পর্যন্ত পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে বাদী তার ছেলের মরদেহ হাসপাতাল থেকে গ্রহণ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

আর্জিতে অভিযোগ, “ডা. তৌফিক এনাম বার বার বলছিলেন যে, ‘ভুল চিকিৎসা হচ্ছে, আমাকে এখানথেকে পিজি (বঙ্গবন্ধু মেডিকেল) হাসপাতালে নিয়ে যাও।’ কিন্তু ৩ নম্বর আসামি ডা. মোহাম্মদ আলী রোগীর বাবা মা কাউকে কোন পাত্তা দেননি। তারা জোর করে অপারেশন করার পর রোগী মারা যায়। এক পর্যায়ে অভিযুক্তরা ক্ষমা চান।”

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক), ৩৮৬, ৪০৬, ৪২০ ধারায় অপরাধ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদনও করেন বাদী। আর্জিতে মোট আটজনকে সাক্ষী করা হয়েছে। আর ৫ নম্বর সাক্ষী মেহেবুবা সুলতানাও একজন চিকিৎসক।