মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় আসাম সরকার

সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর বিরোধিতা

সরকারি জমি বেদকলকারীদের বিরুদ্ধে আসাম সরকারের উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে যখন প্রবল বিতর্ক এবং এ নিয়ে মুসলিম সংখ্যালঘুদের টার্গেট করার লক্ষ্য, ঠিক তখন আবার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিচ্ছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। জমি বেদখল, দারিদ্র্য মুসলিমদের (অভিবাসী) সামাজিক ব্যাধির শিকর-ই জনবিস্ফোরণ। তাই এজন্য আসামের মুখ্যমন্ত্রী চান মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে এআইইউডিএফ ও আমসুর মতো সংখ্যালঘু সংগঠনগুলো এগিয়ে আসুক এবং তাদের সঙ্গে মিলে একসঙ্গে এ ব্যাপারে কাজ করতে চান তিনি। তবে বিভিন্ন এলাকার মঠ-মন্দিরের জমি বা বনাঞ্চলে যে বসতি স্থাপন করা হয়েছে তা কোন মতেই সরকার করতে দেবে না বলেও মুখ্যমন্ত্রী এদিন স্পষ্ট বলে দিয়েছেন।

হিমন্তবিশ্ব শর্মা ক্ষমতায় আসার এক মাসের মাথায় অবৈধ ড্রাগসহ বিভিন্ন দুর্নীতি এবং উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে। বিশেষ করে মন্দির, মঠ ও সত্রের জমি এবং বনাঞ্চল বেদখলমুক্ত করা হচ্ছে। এই আভিযানে সিপাঝাড়ে ১৮০ বিঘা, হোজাইয়ে ২৫০০ বিঘা জমি বেদখলমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া চাতিয়া, করমগঞ্জেও সরকারি জমি ও বনাঞ্চল থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। সরকারিভাবে বলা হয়েছে সরকারি- জমি ও বনাঞ্চল বেশিরভাগ বেদখল করেছে বাংলাদেস থেকে আসা মুসলিম অভিবাসীরা। তবে মুখ্যমন্ত্রী আসমি মুসলমানদের ব্যাপারে বলেছেন, তারা কখনও সরকারি জমি বা বনাঞ্চল বেদখল করেন না তারা আমাদের ভূমিপুত্র।

কিন্তু এই উচ্ছেদ আভিযানে সরকার কোন কিছু মান্য না করেই নির্বিচারে বেশিরভাগ উচ্ছেদ করছে মুসলিমদের। নতুন সরকারের এই উচ্ছেদ আভিযানের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে রাজ্যে। বিশেষ করে আমসু ও এআইইউডিএফ’র মতো সংখ্যালঘু সংগঠনগুলো এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছে। তাদের বক্তব্য পুনর্বাসন না করে কোন মানুষকে উচ্ছেদ করা চলবে না। এ নিয়ে তারা আন্দোলনে নেমেছে রাজপথে। কিন্তু আসাম সরকার তাদের এই দাবি না মেনে আবার নতুন করে মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে হিমন্ত বলেছেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা না হলে সামনে এমন দিন আসবে যখন থাকার জন্য স্থান সংকুলান হবে না। জমি বেদখলের মূল কারণই হচ্ছে জনসংখ্যার আধিক্য। এ ব্যাপারে প্রতিরোধ গড়ে তোলা না হলে সরকারি জমি, মঠ আর মন্দিরের জমি বেদখল করে বসতিস্থাপন করতে হবে, কিন্তু অন্য লোকেরা তা মেনে নেবে না ফলে এ নিয়ে সংঘাত অনিবার্য।

তাই সংগঠনগুলোর প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর উপদেশ, সরকারের সমালোচনা না করে মুসলিম পরিবারকে কীভাবে ছোট করা য়ায়, সেইসব চিন্তা করতে বলেছেন তাদের। সহজভাবে তিনি বলেন, একটি পরিবারে দশ বারোটি সন্তান হলে এবং তা নিয়ন্ত্রণ করা না হলে, কামাখ্যার জমিতে, আমার বাড়িতে তাদের বসতি স্থাপন করতে হবে, নয়ত আমরা জমি কোথায় পাব? নি¤œ আসামের কোন এক বিধানসভা কেন্দ্রে পাঁচ বছর আগে যেখানে মাত্র ৬৫ হাজার জনসংখ্যা ছিল, সেখানে বর্তমানে জনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮০ হাজার। এই উদাহরণ টেনে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব জানান, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আমরা আরও কিছু পদক্ষেপ নেব।

সোমবার, ২১ জুন ২০২১ , ৭ আষাঢ় ১৪২৮ ৯ জিলকদ ১৪৪২

মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় আসাম সরকার

সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর বিরোধিতা

দীপক মুখার্জী, কলকাতা

সরকারি জমি বেদকলকারীদের বিরুদ্ধে আসাম সরকারের উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে যখন প্রবল বিতর্ক এবং এ নিয়ে মুসলিম সংখ্যালঘুদের টার্গেট করার লক্ষ্য, ঠিক তখন আবার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিচ্ছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। জমি বেদখল, দারিদ্র্য মুসলিমদের (অভিবাসী) সামাজিক ব্যাধির শিকর-ই জনবিস্ফোরণ। তাই এজন্য আসামের মুখ্যমন্ত্রী চান মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে এআইইউডিএফ ও আমসুর মতো সংখ্যালঘু সংগঠনগুলো এগিয়ে আসুক এবং তাদের সঙ্গে মিলে একসঙ্গে এ ব্যাপারে কাজ করতে চান তিনি। তবে বিভিন্ন এলাকার মঠ-মন্দিরের জমি বা বনাঞ্চলে যে বসতি স্থাপন করা হয়েছে তা কোন মতেই সরকার করতে দেবে না বলেও মুখ্যমন্ত্রী এদিন স্পষ্ট বলে দিয়েছেন।

হিমন্তবিশ্ব শর্মা ক্ষমতায় আসার এক মাসের মাথায় অবৈধ ড্রাগসহ বিভিন্ন দুর্নীতি এবং উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে। বিশেষ করে মন্দির, মঠ ও সত্রের জমি এবং বনাঞ্চল বেদখলমুক্ত করা হচ্ছে। এই আভিযানে সিপাঝাড়ে ১৮০ বিঘা, হোজাইয়ে ২৫০০ বিঘা জমি বেদখলমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া চাতিয়া, করমগঞ্জেও সরকারি জমি ও বনাঞ্চল থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। সরকারিভাবে বলা হয়েছে সরকারি- জমি ও বনাঞ্চল বেশিরভাগ বেদখল করেছে বাংলাদেস থেকে আসা মুসলিম অভিবাসীরা। তবে মুখ্যমন্ত্রী আসমি মুসলমানদের ব্যাপারে বলেছেন, তারা কখনও সরকারি জমি বা বনাঞ্চল বেদখল করেন না তারা আমাদের ভূমিপুত্র।

কিন্তু এই উচ্ছেদ আভিযানে সরকার কোন কিছু মান্য না করেই নির্বিচারে বেশিরভাগ উচ্ছেদ করছে মুসলিমদের। নতুন সরকারের এই উচ্ছেদ আভিযানের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে রাজ্যে। বিশেষ করে আমসু ও এআইইউডিএফ’র মতো সংখ্যালঘু সংগঠনগুলো এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছে। তাদের বক্তব্য পুনর্বাসন না করে কোন মানুষকে উচ্ছেদ করা চলবে না। এ নিয়ে তারা আন্দোলনে নেমেছে রাজপথে। কিন্তু আসাম সরকার তাদের এই দাবি না মেনে আবার নতুন করে মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে হিমন্ত বলেছেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা না হলে সামনে এমন দিন আসবে যখন থাকার জন্য স্থান সংকুলান হবে না। জমি বেদখলের মূল কারণই হচ্ছে জনসংখ্যার আধিক্য। এ ব্যাপারে প্রতিরোধ গড়ে তোলা না হলে সরকারি জমি, মঠ আর মন্দিরের জমি বেদখল করে বসতিস্থাপন করতে হবে, কিন্তু অন্য লোকেরা তা মেনে নেবে না ফলে এ নিয়ে সংঘাত অনিবার্য।

তাই সংগঠনগুলোর প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর উপদেশ, সরকারের সমালোচনা না করে মুসলিম পরিবারকে কীভাবে ছোট করা য়ায়, সেইসব চিন্তা করতে বলেছেন তাদের। সহজভাবে তিনি বলেন, একটি পরিবারে দশ বারোটি সন্তান হলে এবং তা নিয়ন্ত্রণ করা না হলে, কামাখ্যার জমিতে, আমার বাড়িতে তাদের বসতি স্থাপন করতে হবে, নয়ত আমরা জমি কোথায় পাব? নি¤œ আসামের কোন এক বিধানসভা কেন্দ্রে পাঁচ বছর আগে যেখানে মাত্র ৬৫ হাজার জনসংখ্যা ছিল, সেখানে বর্তমানে জনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮০ হাজার। এই উদাহরণ টেনে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব জানান, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আমরা আরও কিছু পদক্ষেপ নেব।