কুমিল্লায় গোমতী নদীতে চাঁদাবাজির অভিযোগ

প্রতিবাদে অবস্থান ধর্মঘট শ্রমিক-মালিকদের

কুমিল্লায় গোমতী নদীতে বালু বোঝাই ভলগেট থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় ৮-১০টি স্থানে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চাঁদাবাজি করে আসছে একটি চক্র। প্রতিটি ভলগেট থেকে ৩শ’ টাকা থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত করা হচ্ছে। আর চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে হামলা, মারধরসহ সন্ত্রাসীদের হাতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে শ্রমিকদের।

জলদস্যুদের এসব ঘটনায় ওই এলাকায় ভলগেট শ্রমিকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে প্রতিবাদ জানিয়ে জেলার দাউদকান্দি ব্রিজের নিচে গতকাল রবিবার দিনব্যাপী অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে দাউদকান্দি-গজারিয়া ভলগেট পরিবহন মালিক সমিতি। এ সময় ভলগেটে কর্মরত ৯ শতাধিক শ্রমিকও ওই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এদিকে জলদস্যুদের হাতে চাঁদাবাজি বন্ধে ওই নদীতে দ্রুত নৌ-পুলিশের টহল জোরদারসহ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী সুমন।

জানা গেছে, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বালুর ঘাট থেকে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে বালু ও পাথর সরবরাহ করে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। এখানে প্রতিদিনই গোমতী ও মেঘনা নদী থেকে শ্রমিকরা বালু উত্তোলন করে দুই শতাধিক ভলগেটের মাধ্যমে ঘাটে নিয়ে আসেন। কখনো কখনো ভলগেটের মাধ্যমে অন্যান্য জেলা থেকেও সিলেকশন পাথর এনে এ ঘাট থেকে বিক্রি করা হয়। কিন্তু কুমিল্লা অংশের দাউদকান্দি ও তিতাস এলাকায় প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভলগেট বালু উত্তোলন করে আনা-নেয়ার পথে জলদস্যুদের হাতে হামলা ও মারধরের শিকার হচ্ছেন শ্রমিকরা।

এসব ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করা হলেও প্রতিকার পাননি তারা। এর প্রতিবাদে গজারিয়া-দাউদকান্দি ভলগেট পরিবহন মালিক সমিতির উদ্যোগে দাউদকান্দি ব্রিজের নিচে গোমতী নদীতে রোববার দিনব্যাপী ভলগেট-এ চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান ধর্মঘট পালন করা হয়। শ্রমিকরা জানান, গত ৩-৪ বছর ধরে নদীতে ভলগেট চালানোর সময় দাউদকান্দি ও তিতাস উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে কখনো দিনে আবার কখনো রাতে জলদস্যুরা সাঁতার কেটে এসে ভলগেটে ওঠে চাঁদা দাবি করে। কখনো কখনো মোবাইল, টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। প্রতিবাদ করলে মারধর করে পিটিয়ে আহত করে এবং অস্ত্র নিয়ে হুমকি-ধমকি প্রদান করে।

২শ’ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা পর্যন্ত যখন যা চায়, তা দিয়েই আমাদের ভলগেট পরিচালনা করতে হয়। কতিপয় সন্ত্রাসীদের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে আছি। এ পেশার মাধ্যমে প্রায় এক হাজার শ্রমিকের পরিবার চলে। আমরা কর্ম করে খাই, যদি তা না করতে পারি আমরা কিভাবে চলবো। সরকারের কাছে আমাদের দাবি- অবিলম্বে যেন গোমতী নদীতে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়।

আমরা শান্তিপূর্ণভাবে নদীতে চলাচল করতে চাই। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া ভলগেট মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব মোল্লা জানান, ‘গজারিয়া ও দাউদকান্দি এলাকায় দুই শতাধিক ভলগেট রয়েছে। এসব ভলগেট এ ৯ শতাধিক শ্রমিক কাজ করছে। বিগত সময়ে আমাদের অনেক শ্রমিককে চাঁদার দাবিতে হামলা, মারধর করে আহত করেছে। এসব ঘটনায় অভিযোগ করেও আমরা সমাধান পাইনি।’ দাউদকান্দি ভলগেট পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মেহেদী হাসান টিপু জানান, ‘ভলগেট-এ সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হোক।’ এদিকে ভলগেট পরিবহন মালিক সমিতির অবস্থান ধর্মঘটের খবর পেয়ে রবিবার বিকেলে সেখানে ছুটে যান দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী সুমন।

এ সময় তিনি নৌ-পথে চাঁদাবাজি বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ বিষয়ে দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী সুমন বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। মেঘনা-গোমতী নদীতে সন্ত্রাসীমহল চাঁদাবাজি করছে। সরকারের কাছে অনুরোধ- নৌ-টহলের দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তারা যেন নদীতে টহল বৃদ্ধি করেন। আমার জানামতে গোমতী নদীর ইতিহাসে কখনো নৌ-টহল আসেনি। এ ভলগেটগুলোর মাধ্যমে বালি ও পাথর চট্টগ্রাম বিভাগে সরবরাহ করা হচ্ছে। এজন্য জরুরিভিত্তিতে এখানে নৌ-টহল বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে এখানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ হবে।’

image

গোমতী নদীতে ভলগেটে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাউদকান্দি-গজারিয়া পরিবহন মালিক সমিতির অবস্থান ধর্মঘট -সংবাদ

আরও খবর
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৬টিতে নৌকার জয়
পড়াশোনা ছাড়াই কেউ কেউ আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন আইনমন্ত্রী
বনে খাবারের সংকটে লোকালয়ে নেমে আসছে বানরেরা
ব্যয় কমাতে নতুন কোন বিদ্যুৎকেন্দ্র না করার সুপারিশ সিপিডির
মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় আসাম সরকার
অনলাইনে অবৈধ ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনা বেচা, গ্রেপ্তার ৪
৫ দিনের রিমান্ডে গৃহকর্তা হিফজুর
রাবি প্রশাসন ভবনে অনির্দিষ্টকালের জন্য তালা
ব্যবসায়ী থেকে বিএনপি নেতা শফি চৌধুরী দল থেকে বহিষ্কার
টার্মিনাল ছাড়া টোলের নামে চাঁদা নেয়া যাবে না

সোমবার, ২১ জুন ২০২১ , ৭ আষাঢ় ১৪২৮ ৯ জিলকদ ১৪৪২

কুমিল্লায় গোমতী নদীতে চাঁদাবাজির অভিযোগ

প্রতিবাদে অবস্থান ধর্মঘট শ্রমিক-মালিকদের

জেলা বার্তা পরিবেশক, কুমিল্লা

image

গোমতী নদীতে ভলগেটে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাউদকান্দি-গজারিয়া পরিবহন মালিক সমিতির অবস্থান ধর্মঘট -সংবাদ

কুমিল্লায় গোমতী নদীতে বালু বোঝাই ভলগেট থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় ৮-১০টি স্থানে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চাঁদাবাজি করে আসছে একটি চক্র। প্রতিটি ভলগেট থেকে ৩শ’ টাকা থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত করা হচ্ছে। আর চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে হামলা, মারধরসহ সন্ত্রাসীদের হাতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে শ্রমিকদের।

জলদস্যুদের এসব ঘটনায় ওই এলাকায় ভলগেট শ্রমিকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে প্রতিবাদ জানিয়ে জেলার দাউদকান্দি ব্রিজের নিচে গতকাল রবিবার দিনব্যাপী অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে দাউদকান্দি-গজারিয়া ভলগেট পরিবহন মালিক সমিতি। এ সময় ভলগেটে কর্মরত ৯ শতাধিক শ্রমিকও ওই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এদিকে জলদস্যুদের হাতে চাঁদাবাজি বন্ধে ওই নদীতে দ্রুত নৌ-পুলিশের টহল জোরদারসহ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী সুমন।

জানা গেছে, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বালুর ঘাট থেকে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে বালু ও পাথর সরবরাহ করে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। এখানে প্রতিদিনই গোমতী ও মেঘনা নদী থেকে শ্রমিকরা বালু উত্তোলন করে দুই শতাধিক ভলগেটের মাধ্যমে ঘাটে নিয়ে আসেন। কখনো কখনো ভলগেটের মাধ্যমে অন্যান্য জেলা থেকেও সিলেকশন পাথর এনে এ ঘাট থেকে বিক্রি করা হয়। কিন্তু কুমিল্লা অংশের দাউদকান্দি ও তিতাস এলাকায় প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভলগেট বালু উত্তোলন করে আনা-নেয়ার পথে জলদস্যুদের হাতে হামলা ও মারধরের শিকার হচ্ছেন শ্রমিকরা।

এসব ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করা হলেও প্রতিকার পাননি তারা। এর প্রতিবাদে গজারিয়া-দাউদকান্দি ভলগেট পরিবহন মালিক সমিতির উদ্যোগে দাউদকান্দি ব্রিজের নিচে গোমতী নদীতে রোববার দিনব্যাপী ভলগেট-এ চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান ধর্মঘট পালন করা হয়। শ্রমিকরা জানান, গত ৩-৪ বছর ধরে নদীতে ভলগেট চালানোর সময় দাউদকান্দি ও তিতাস উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে কখনো দিনে আবার কখনো রাতে জলদস্যুরা সাঁতার কেটে এসে ভলগেটে ওঠে চাঁদা দাবি করে। কখনো কখনো মোবাইল, টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। প্রতিবাদ করলে মারধর করে পিটিয়ে আহত করে এবং অস্ত্র নিয়ে হুমকি-ধমকি প্রদান করে।

২শ’ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা পর্যন্ত যখন যা চায়, তা দিয়েই আমাদের ভলগেট পরিচালনা করতে হয়। কতিপয় সন্ত্রাসীদের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে আছি। এ পেশার মাধ্যমে প্রায় এক হাজার শ্রমিকের পরিবার চলে। আমরা কর্ম করে খাই, যদি তা না করতে পারি আমরা কিভাবে চলবো। সরকারের কাছে আমাদের দাবি- অবিলম্বে যেন গোমতী নদীতে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়।

আমরা শান্তিপূর্ণভাবে নদীতে চলাচল করতে চাই। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া ভলগেট মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব মোল্লা জানান, ‘গজারিয়া ও দাউদকান্দি এলাকায় দুই শতাধিক ভলগেট রয়েছে। এসব ভলগেট এ ৯ শতাধিক শ্রমিক কাজ করছে। বিগত সময়ে আমাদের অনেক শ্রমিককে চাঁদার দাবিতে হামলা, মারধর করে আহত করেছে। এসব ঘটনায় অভিযোগ করেও আমরা সমাধান পাইনি।’ দাউদকান্দি ভলগেট পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মেহেদী হাসান টিপু জানান, ‘ভলগেট-এ সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হোক।’ এদিকে ভলগেট পরিবহন মালিক সমিতির অবস্থান ধর্মঘটের খবর পেয়ে রবিবার বিকেলে সেখানে ছুটে যান দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী সুমন।

এ সময় তিনি নৌ-পথে চাঁদাবাজি বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ বিষয়ে দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী সুমন বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। মেঘনা-গোমতী নদীতে সন্ত্রাসীমহল চাঁদাবাজি করছে। সরকারের কাছে অনুরোধ- নৌ-টহলের দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তারা যেন নদীতে টহল বৃদ্ধি করেন। আমার জানামতে গোমতী নদীর ইতিহাসে কখনো নৌ-টহল আসেনি। এ ভলগেটগুলোর মাধ্যমে বালি ও পাথর চট্টগ্রাম বিভাগে সরবরাহ করা হচ্ছে। এজন্য জরুরিভিত্তিতে এখানে নৌ-টহল বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে এখানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ হবে।’