রাজধানীর বৃত্তাকার নৌপথে চলুক ওয়াটার বাস

তিনবারের চেষ্টাতেও রাজধানীর বৃত্তাকার নৌপথে চালু করা গেল না ওয়াটার বাস। কয়েক দফা চেষ্টা করেও সদরঘাট-গাবতলী এবং টঙ্গী-নারায়ণগঞ্জ নৌপথ চালু করা যায়নি। সর্বশেষ বুড়িগঙ্গা নদীতেও যাত্রী পারাপারের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, বৃত্তাকার নৌপথের তিন পর্বের প্রথম দুটিতে খরচ হয়েছে ১০০ কেটি টাকা। বর্তমানে ১২টি ওয়াটার বাসের মধ্যে চট্টগ্রামে জাহাজ থেকে ঘাটে যাত্রী ওঠানো-নামানোর জন্য একটি ব্যবহৃত হচ্ছে। বাকিগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় বিভিন্ন জায়গায় পড়ে আছে। ২০০৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এ জলপথ প্রকল্পের টাকা যেন জলেই গেল!

বিআইডাব্লিউটিসির নৌপথ চালুকরণ প্রকল্প থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালে ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’ নামে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু হয়। মাসখানেক চলে এটা বন্ধ হওয়ার পর ২০১০ সালে আবার দ্বিতীয়বার চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ যাত্রাও ১১ মাস পরে বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ ‘ওয়াটার বাস’ নামে এ প্রকল্প চালু হয় ২০১৩ সালে। তাও বছরখানেক পরে বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর কাজে লাগেনি বেসরকারি উদ্যোগ ও বুড়িগঙ্গায় যাত্রী পারাপারেও। কখনও দীর্ঘায়িত না হওয়া এবং প্রত্যেকবার সীমিত আকারে চলা এসব ওয়াটার বাসে যাত্রী সেবার মান নিয়ে ছিল বিস্তর অভিযোগ।

সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, এ প্রকল্পের সফলতার মুখ না দেখার কারণ বহুবিধ। এগুলোর মধ্যে নদী দূষণ এবং বার্ষকালে নাব্য সংকটই প্রধান। রাজধানীতে কম উচ্চতার ১৩টি সেতু প্রতিস্থাপন করার কথা ছিল, তা করা হয়নি। তাছাড়া ওয়াটার বাসগুলো চালাতে বিভিন্ন রুটে ১২টি ল্যান্ডিং স্টেশন বা ঘাট স্থাপন করা হয়েছিল, যেগুলো বাস স্ট্যান্ডের কাছে না। এমনকি নেই সংযোগ সড়কও। তাই যাত্রী দুর্ভোগ ছিল চরমে।

রাজধানীবাসীকে সহজ ও আরামদায়ক যোগাযোগের অনেক স্বপ্নই দেখানো হয়েছিল। স্বপ্নগুলো অধরাই থেকে গেছে এখনও। রাজধানীকে ঘিরে থাকা চারটি নদীর সুবিধা কাজে লাগানো গেল না, ওয়াটার বাস চালু করা গেল না। মেট্রো রেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুফল কবে মিলবে সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। নাগরিকদের যাতায়াত-যোগাযোগের দুর্দশা থেকে যে সহসাই মুক্তি মিলছে না সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

চক্রাকার ওয়াটার বাসের ব্যর্থতার জন্য দায়ী সমস্যাগুলো সমাধানে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা আন্তরিক সেই প্রশ্ন উঠেছে। তারা একে অন্যকে দোষারোপেই বেশি ব্যস্ত। তাদের সমন্বয়হীনতার কারণে বৃত্তাকার নৌপথ চালু করা গেল না। আর এসব সমস্যা থেকে কীভাবে বেড়িয়ে আসা যাবে সে প্রচেষ্টাও তাদের মধ্যে দেখা যায় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়াটার বাস চালু করতে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিশ্বের উন্নত শহরগুলোতে যাতায়াত ব্যবস্থাকে সহজ করার জন্য সড়ক, রেল ও নদী, এ তিনটি পথকেই একসঙ্গে কাজে লাগানো হয়। ঢাকা মহনগরীর যাতায়ত-যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক করতে হলে নৌপথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তাই বৃত্তাকার ওয়াটার বাস যাতে চালু করা যায় সেজন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। নদী দূষণ রোধ, নাব্য সংকট দূরীকরণ, পরিকল্পিত ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণ, নদীর উপরে সেতু পুনর্নির্মাণ করে হলেও এটাকে চালু করতে হবে।

সোমবার, ২১ জুন ২০২১ , ৭ আষাঢ় ১৪২৮ ৯ জিলকদ ১৪৪২

রাজধানীর বৃত্তাকার নৌপথে চলুক ওয়াটার বাস

তিনবারের চেষ্টাতেও রাজধানীর বৃত্তাকার নৌপথে চালু করা গেল না ওয়াটার বাস। কয়েক দফা চেষ্টা করেও সদরঘাট-গাবতলী এবং টঙ্গী-নারায়ণগঞ্জ নৌপথ চালু করা যায়নি। সর্বশেষ বুড়িগঙ্গা নদীতেও যাত্রী পারাপারের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, বৃত্তাকার নৌপথের তিন পর্বের প্রথম দুটিতে খরচ হয়েছে ১০০ কেটি টাকা। বর্তমানে ১২টি ওয়াটার বাসের মধ্যে চট্টগ্রামে জাহাজ থেকে ঘাটে যাত্রী ওঠানো-নামানোর জন্য একটি ব্যবহৃত হচ্ছে। বাকিগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় বিভিন্ন জায়গায় পড়ে আছে। ২০০৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এ জলপথ প্রকল্পের টাকা যেন জলেই গেল!

বিআইডাব্লিউটিসির নৌপথ চালুকরণ প্রকল্প থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালে ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’ নামে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু হয়। মাসখানেক চলে এটা বন্ধ হওয়ার পর ২০১০ সালে আবার দ্বিতীয়বার চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ যাত্রাও ১১ মাস পরে বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ ‘ওয়াটার বাস’ নামে এ প্রকল্প চালু হয় ২০১৩ সালে। তাও বছরখানেক পরে বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর কাজে লাগেনি বেসরকারি উদ্যোগ ও বুড়িগঙ্গায় যাত্রী পারাপারেও। কখনও দীর্ঘায়িত না হওয়া এবং প্রত্যেকবার সীমিত আকারে চলা এসব ওয়াটার বাসে যাত্রী সেবার মান নিয়ে ছিল বিস্তর অভিযোগ।

সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, এ প্রকল্পের সফলতার মুখ না দেখার কারণ বহুবিধ। এগুলোর মধ্যে নদী দূষণ এবং বার্ষকালে নাব্য সংকটই প্রধান। রাজধানীতে কম উচ্চতার ১৩টি সেতু প্রতিস্থাপন করার কথা ছিল, তা করা হয়নি। তাছাড়া ওয়াটার বাসগুলো চালাতে বিভিন্ন রুটে ১২টি ল্যান্ডিং স্টেশন বা ঘাট স্থাপন করা হয়েছিল, যেগুলো বাস স্ট্যান্ডের কাছে না। এমনকি নেই সংযোগ সড়কও। তাই যাত্রী দুর্ভোগ ছিল চরমে।

রাজধানীবাসীকে সহজ ও আরামদায়ক যোগাযোগের অনেক স্বপ্নই দেখানো হয়েছিল। স্বপ্নগুলো অধরাই থেকে গেছে এখনও। রাজধানীকে ঘিরে থাকা চারটি নদীর সুবিধা কাজে লাগানো গেল না, ওয়াটার বাস চালু করা গেল না। মেট্রো রেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুফল কবে মিলবে সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। নাগরিকদের যাতায়াত-যোগাযোগের দুর্দশা থেকে যে সহসাই মুক্তি মিলছে না সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

চক্রাকার ওয়াটার বাসের ব্যর্থতার জন্য দায়ী সমস্যাগুলো সমাধানে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা আন্তরিক সেই প্রশ্ন উঠেছে। তারা একে অন্যকে দোষারোপেই বেশি ব্যস্ত। তাদের সমন্বয়হীনতার কারণে বৃত্তাকার নৌপথ চালু করা গেল না। আর এসব সমস্যা থেকে কীভাবে বেড়িয়ে আসা যাবে সে প্রচেষ্টাও তাদের মধ্যে দেখা যায় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়াটার বাস চালু করতে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিশ্বের উন্নত শহরগুলোতে যাতায়াত ব্যবস্থাকে সহজ করার জন্য সড়ক, রেল ও নদী, এ তিনটি পথকেই একসঙ্গে কাজে লাগানো হয়। ঢাকা মহনগরীর যাতায়ত-যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক করতে হলে নৌপথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তাই বৃত্তাকার ওয়াটার বাস যাতে চালু করা যায় সেজন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। নদী দূষণ রোধ, নাব্য সংকট দূরীকরণ, পরিকল্পিত ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণ, নদীর উপরে সেতু পুনর্নির্মাণ করে হলেও এটাকে চালু করতে হবে।