ঢাকা রক্ষায় সাত জেলায় লকডাউন

সংক্রমণ শীর্ষে ঢাকা বিভাগ শনাক্ত বেড়েছে খুলনায়, কমেছে রাজশাহী বিভাগে

সর্বশেষ হিসেবে ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ বাড়লেও ঢাকা ‘লকডাউনে’র কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে রাজধানী ঢাকায় করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে চারপাশের সাত জেলায় ‘কঠোর লকডাউন’ আরোপ করেছে সরকার। যা আজ থেকেই কার্যকর হচ্ছে। গত একদিনে মহানগরসহ ঢাকা জেলায় প্রায় ১৩শ মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আগের দিনের তুলনায় ঢাকায় শনাক্ত বেড়েছে প্রায় ৫০শ’।

সাত জেলায় আজ সকাল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মানুষ ও যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ থাকবে। জেলাগুলো হলো, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ।

দুই মাসের মধ্যে গত একদিনে (গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায়) দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। একদিনে চার হাজার ৬৩৬ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৭৮ জনের, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে- ২৩ জনের। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে একদিনে শনাক্তের হারও ১৯ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

করোনার প্রকোপ থেকে রাজধানী ঢাকাকে সুরক্ষিত রাখতে এর পার্শ্ববর্তী সাত জেলায় ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে বলে গতকাল বিকেলে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান।

শনাক্ত বাড়লেও ঢাকায় ‘লকডাউন’ আরোপের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি প্রশাসন। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ঢাকা আমরা বন্ধ করিনি। ঢাকার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা আবার বসব। ভিডিও কনফারেন্স করব। দেখা যাক, আগে বসি, তারপর। এখানে স্বাস্থ্য রিলেটেড সবাই থাকবেন।’

একদিনে শনাক্তের শীর্ষে ঢাকা বিভাগ

ঢাকা নগরসহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক এক হাজার ২৯৪ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন ঢাকায় ৮২২ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল।

বিভাগভিত্তিক হিসেবে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে আগের দিন শনাক্তের সংখ্যা এক হাজার ৪৫ জন, গত একদিনে শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৮৩৭ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে ২৯৩ জন থেকে বেড়ে ৪৬১ জন, খুলনা বিভাগে ৭৬৩ জন থেকে বেড়ে ৯৪৫ জন হয়েছে।

রাজশাহী বিভাগে শনাক্ত কমেছে। এ বিভাগে গত একদিনে শনাক্ত হয়েছে ৭৯৯ জন করোনা রোগী, যা আগের দিন ছিল এক হাজার ২৩ জন।

জেলা অনুযায়ী, একদিনে টাঙ্গাইলে ১৬৫ জন, ফরিদপুরে ১১৬ জন, চট্টগ্রামে ১৯০ জন ও নোয়াখালীতে ১০৪ জন, রাজশাহীতে ৩৭২ জন, দিনাজপুরে ১২৩ জন, যশোরে ৩০৫ জন, খুলনায় ১৭৫ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

শনাক্তের হার ১৯ শতাংশ ছাড়াল

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত একদিনে মোট ২৪ হাজার ৫৭টি নমুনা পরীক্ষায় চার হাজার ৬৩৬ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর আগে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত ১৪ এপ্রিল। ওইদিন পাঁচ হাজার ১৮৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

গত একদিনে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর আগের দিন দেশে তিন হাজার ৬৪১ জনের করোনা শনাক্ত ও ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওইদিন শনাক্তের হার ছিল ১৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

গত একদিনে শনাক্ত হওয়া রোগীসহ দেশে শনাক্তের মোট সংখ্যা দাঁড়াল আট লাখ ৫৬ হাজার ৩০৪ জন। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আর মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৩ হাজার ৬২৬ জনে। মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৮২৭ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়েছেন মোট সাত লাখ ৮৫ হাজার ৪৮২ জন। সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

গত একদিনে সবচেয়ে বেশি ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এরপর রাজশাহী বিভাগে ১৫ জন, খুলনা বিভাগে ১৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১ জন, রংপুর বিভাগে ৯ জন, বরিশালে তিন জন, সিলেটে দুই জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে এক জনের মৃত্যু হয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ৫৬ জন এবং নারী ২২ জন। তাদের ৬৩ জন সরকারি হাসপাতালে, ৯ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং বাসায় মারা গেছেন ছয় জন।

তাদের ৩৯ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ২৩ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, আট জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, সাত জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং এক জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।

জরুরি পরিসেবা ছাড়া সব বন্ধ থাকবে ৭ জেলায়

সাত জেলায় ‘লকডাউনে’ জরুরি পরিসেবা অর্থাৎ খাদ্য, ওষুধ, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের মতো সেবা চলমান থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এছাড়া ওই অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি-আধা সরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এমনকি সাধারণ জনচলাচল পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সাত জেলা থেকে ঢাকাগামী কোন যানবাহন চলতে দেয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেবলমাত্র অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি খাদ্য, ওষুধ ও পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া অন্য কোন যানবাহন চলাচল একেবারেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব জেলা আমরা লকডাউনে নিয়ে নিয়েছি। এসব জেলার মানুষ ঢাকায় ঢুকতে পারবেন না। ঢাকার সঙ্গে মুভমেন্ট বন্ধ হলে এমনিতেই সংক্রমণ সারাদেশে কমে যাবে।’

যেকোন জেলা প্রশাসন মনে করলে সেখানে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে- জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একেক দিন একেক বিভাগের সঙ্গে বসব।’

বর্তমানে সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের মংলা, যশোর পৌরসভা, অভয়নগর, শার্শা, ঝিকরগাছা, কুষ্টিয়া সদর, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা, মেহেরপুর পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড, মাগুরা পৌরসভায় ‘লকডাউন’ আছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

এছাড়া রাজশাহী সিটি করপোরেশন, নাটোর পৌরসভা ও সিংড়া, বগুড়া পৌরসভা, জয়পুরহাট পৌরসভা, কালাই ও পাঁচবিবি লকডাউনের বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন সরকারের শীর্ষ এই কর্মকর্তা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে বলা হয়েছে, বিধিনিষেধের সময়ে এই সাত জেলায় সার্বিক কার্যাবলি/চলাচল (জনসাধারণের চলাচলসহ) বন্ধ থাকবে।

তবে আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিসেবা, যেমন- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (নদীবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি- বেসরকারি), গণমাধ্যম, বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং পণ্যবাহী ট্রাক/লরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না।

সাত জেলায় কী কী বন্ধ থাকছে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সব বন্ধ থাকবে। মানুষও যাতায়াত করতে পারবে না। শুধুমাত্র মালবাহী ট্রাক এবং অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কিছু চলবে না। জেলাগুলো ব্লকড থাকবে, কেউ ঢুকতে পারবে না।’

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রেক্ষাপটে গত ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে জরুরি কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা ‘সর্বাত্মক’ ‘লকডাউন’ নামে পরিচিতি পায়।

মঙ্গলবার, ২২ জুন ২০২১ , ৮ আষাঢ় ১৪২৮ ১০ জিলকদ ১৪৪২

ঢাকা রক্ষায় সাত জেলায় লকডাউন

সংক্রমণ শীর্ষে ঢাকা বিভাগ শনাক্ত বেড়েছে খুলনায়, কমেছে রাজশাহী বিভাগে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সর্বশেষ হিসেবে ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ বাড়লেও ঢাকা ‘লকডাউনে’র কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে রাজধানী ঢাকায় করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে চারপাশের সাত জেলায় ‘কঠোর লকডাউন’ আরোপ করেছে সরকার। যা আজ থেকেই কার্যকর হচ্ছে। গত একদিনে মহানগরসহ ঢাকা জেলায় প্রায় ১৩শ মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আগের দিনের তুলনায় ঢাকায় শনাক্ত বেড়েছে প্রায় ৫০শ’।

সাত জেলায় আজ সকাল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মানুষ ও যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ থাকবে। জেলাগুলো হলো, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ।

দুই মাসের মধ্যে গত একদিনে (গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায়) দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। একদিনে চার হাজার ৬৩৬ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৭৮ জনের, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে- ২৩ জনের। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে একদিনে শনাক্তের হারও ১৯ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

করোনার প্রকোপ থেকে রাজধানী ঢাকাকে সুরক্ষিত রাখতে এর পার্শ্ববর্তী সাত জেলায় ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে বলে গতকাল বিকেলে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান।

শনাক্ত বাড়লেও ঢাকায় ‘লকডাউন’ আরোপের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি প্রশাসন। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ঢাকা আমরা বন্ধ করিনি। ঢাকার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা আবার বসব। ভিডিও কনফারেন্স করব। দেখা যাক, আগে বসি, তারপর। এখানে স্বাস্থ্য রিলেটেড সবাই থাকবেন।’

একদিনে শনাক্তের শীর্ষে ঢাকা বিভাগ

ঢাকা নগরসহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক এক হাজার ২৯৪ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন ঢাকায় ৮২২ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল।

বিভাগভিত্তিক হিসেবে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে আগের দিন শনাক্তের সংখ্যা এক হাজার ৪৫ জন, গত একদিনে শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৮৩৭ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে ২৯৩ জন থেকে বেড়ে ৪৬১ জন, খুলনা বিভাগে ৭৬৩ জন থেকে বেড়ে ৯৪৫ জন হয়েছে।

রাজশাহী বিভাগে শনাক্ত কমেছে। এ বিভাগে গত একদিনে শনাক্ত হয়েছে ৭৯৯ জন করোনা রোগী, যা আগের দিন ছিল এক হাজার ২৩ জন।

জেলা অনুযায়ী, একদিনে টাঙ্গাইলে ১৬৫ জন, ফরিদপুরে ১১৬ জন, চট্টগ্রামে ১৯০ জন ও নোয়াখালীতে ১০৪ জন, রাজশাহীতে ৩৭২ জন, দিনাজপুরে ১২৩ জন, যশোরে ৩০৫ জন, খুলনায় ১৭৫ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

শনাক্তের হার ১৯ শতাংশ ছাড়াল

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত একদিনে মোট ২৪ হাজার ৫৭টি নমুনা পরীক্ষায় চার হাজার ৬৩৬ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর আগে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত ১৪ এপ্রিল। ওইদিন পাঁচ হাজার ১৮৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

গত একদিনে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর আগের দিন দেশে তিন হাজার ৬৪১ জনের করোনা শনাক্ত ও ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওইদিন শনাক্তের হার ছিল ১৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

গত একদিনে শনাক্ত হওয়া রোগীসহ দেশে শনাক্তের মোট সংখ্যা দাঁড়াল আট লাখ ৫৬ হাজার ৩০৪ জন। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আর মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৩ হাজার ৬২৬ জনে। মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৮২৭ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়েছেন মোট সাত লাখ ৮৫ হাজার ৪৮২ জন। সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

গত একদিনে সবচেয়ে বেশি ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এরপর রাজশাহী বিভাগে ১৫ জন, খুলনা বিভাগে ১৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১ জন, রংপুর বিভাগে ৯ জন, বরিশালে তিন জন, সিলেটে দুই জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে এক জনের মৃত্যু হয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ৫৬ জন এবং নারী ২২ জন। তাদের ৬৩ জন সরকারি হাসপাতালে, ৯ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং বাসায় মারা গেছেন ছয় জন।

তাদের ৩৯ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ২৩ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, আট জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, সাত জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং এক জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।

জরুরি পরিসেবা ছাড়া সব বন্ধ থাকবে ৭ জেলায়

সাত জেলায় ‘লকডাউনে’ জরুরি পরিসেবা অর্থাৎ খাদ্য, ওষুধ, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের মতো সেবা চলমান থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এছাড়া ওই অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি-আধা সরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এমনকি সাধারণ জনচলাচল পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সাত জেলা থেকে ঢাকাগামী কোন যানবাহন চলতে দেয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেবলমাত্র অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি খাদ্য, ওষুধ ও পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া অন্য কোন যানবাহন চলাচল একেবারেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব জেলা আমরা লকডাউনে নিয়ে নিয়েছি। এসব জেলার মানুষ ঢাকায় ঢুকতে পারবেন না। ঢাকার সঙ্গে মুভমেন্ট বন্ধ হলে এমনিতেই সংক্রমণ সারাদেশে কমে যাবে।’

যেকোন জেলা প্রশাসন মনে করলে সেখানে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে- জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একেক দিন একেক বিভাগের সঙ্গে বসব।’

বর্তমানে সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের মংলা, যশোর পৌরসভা, অভয়নগর, শার্শা, ঝিকরগাছা, কুষ্টিয়া সদর, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা, মেহেরপুর পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড, মাগুরা পৌরসভায় ‘লকডাউন’ আছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

এছাড়া রাজশাহী সিটি করপোরেশন, নাটোর পৌরসভা ও সিংড়া, বগুড়া পৌরসভা, জয়পুরহাট পৌরসভা, কালাই ও পাঁচবিবি লকডাউনের বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন সরকারের শীর্ষ এই কর্মকর্তা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে বলা হয়েছে, বিধিনিষেধের সময়ে এই সাত জেলায় সার্বিক কার্যাবলি/চলাচল (জনসাধারণের চলাচলসহ) বন্ধ থাকবে।

তবে আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিসেবা, যেমন- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (নদীবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি- বেসরকারি), গণমাধ্যম, বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং পণ্যবাহী ট্রাক/লরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না।

সাত জেলায় কী কী বন্ধ থাকছে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সব বন্ধ থাকবে। মানুষও যাতায়াত করতে পারবে না। শুধুমাত্র মালবাহী ট্রাক এবং অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কিছু চলবে না। জেলাগুলো ব্লকড থাকবে, কেউ ঢুকতে পারবে না।’

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রেক্ষাপটে গত ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে জরুরি কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা ‘সর্বাত্মক’ ‘লকডাউন’ নামে পরিচিতি পায়।