করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ও ইউপি নির্বাচন

মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি উপেক্ষা করেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শুরু হয়েছে সোমবার। প্রথম ধাপে ২০৪টি ইউপির নির্বাচন হয়েছে। পাশাপাশি দুটি পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচনে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হয়েছে, ভোটারদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যায়নি। ভোটের লাইনে মানুষকে গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এ নির্বাচন করোনার সংক্রমণকে আরো তীব্র করবে কিনাÑ সেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দেশে করোনার সংক্রমণের হার ও সংক্রমিত মানুষের মৃত্যুর ঘটনা আবারো বাড়ছে। এ সময়ে স্থানীয় নির্বাচন করা কতটা জরুরি ছিল সেই প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনকে ঘিরে জনসমাগম ঘটলে সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইউপি নির্বাচনের আগে বলেছেন, নির্বাচন করলেই করোনা সংক্রমণ বাড়ে তা সঠিক নয়। নির্বাচন করোনাভাইরাস ছড়ানোর একমাত্র কারণ নয়, ১০০টি কারণের মধ্যে একটি কারণ হতে পারে। ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ভারতের যেসব রাজ্যে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে করোনার তেমন প্রভাব পড়েনি।

নির্বাচন করোনাভাইরাস ছড়ানোর একক কারণ নয়, তবে অন্যতম কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যেসব কারণে তার অন্যতম প্রধান দুটি কারণ হচ্ছে নির্বাচন ও কুম্ভমেলা। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন শুরু হয় গত ২৭ মার্চ। রাজ্যটিতে ১ এপ্রিল করোনা শনাক্তের হার ছিল প্রায় ৫ শতাংশ। এর এক মাসেরও কম সময়ে সেখানে শনাক্তের হার বেড়ে ৩৩ শতাংশে পৌঁছে। সেখানে শনাক্ত ও মৃত্যুর নতুন নতুন রেকর্ড হতে দেখা গেছে। করোনার সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক রয়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

সিইসি বলেছেন, নির্বাচনের গুরুত্ব করোনার চেয়েও বেশি। যেসব এলকায় লকডাউন নেই সেসব এলাকায় তিনি নির্বাচন চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দেশে দেশে করোনার প্রাণসংহারী রূপ সম্পর্কে জানলে কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তির পক্ষে এমন ঘোষণা দেয়া সম্ভব নয়। মানুষের প্রাণের চেয়ে মূল্যবান আর কিছু হতে পারে না। মানুষ বেঁচে থাকলে, সুস্থ থাকলে ভোট পরেও দেয়া যাবে।

দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে, টিকাদানের গতি ধীর হয়ে গেছে। সিংহভাগ মানুষ টিকা পায়নি। এ অবস্থায় দেশের কোথাও এমন কোন উপলক্ষ তৈরি করা সঙ্গত নয়, যার কারণে ব্যাপক জনসমাগম ঘটে। নির্বাচন কেবল একটি দিনকে কেন্দ্র করেই সংঘটিত হয় না। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের যে আমেজ শুরু হয় তা বজায় থাকে ভোটের ফলের পরও। দেশে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ বরাবরই বেশি। নির্বাচনে স্বাস্থ্যবিধি মানা না গেলে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। করোনার সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতির মধ্যে নির্বাচন থেকে বিরত থাকাই কমিশনের পক্ষে শুভবুদ্ধির পরিচায়ক হবে।

মঙ্গলবার, ২২ জুন ২০২১ , ৮ আষাঢ় ১৪২৮ ১০ জিলকদ ১৪৪২

করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ও ইউপি নির্বাচন

মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি উপেক্ষা করেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শুরু হয়েছে সোমবার। প্রথম ধাপে ২০৪টি ইউপির নির্বাচন হয়েছে। পাশাপাশি দুটি পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচনে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হয়েছে, ভোটারদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যায়নি। ভোটের লাইনে মানুষকে গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এ নির্বাচন করোনার সংক্রমণকে আরো তীব্র করবে কিনাÑ সেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দেশে করোনার সংক্রমণের হার ও সংক্রমিত মানুষের মৃত্যুর ঘটনা আবারো বাড়ছে। এ সময়ে স্থানীয় নির্বাচন করা কতটা জরুরি ছিল সেই প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনকে ঘিরে জনসমাগম ঘটলে সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইউপি নির্বাচনের আগে বলেছেন, নির্বাচন করলেই করোনা সংক্রমণ বাড়ে তা সঠিক নয়। নির্বাচন করোনাভাইরাস ছড়ানোর একমাত্র কারণ নয়, ১০০টি কারণের মধ্যে একটি কারণ হতে পারে। ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ভারতের যেসব রাজ্যে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে করোনার তেমন প্রভাব পড়েনি।

নির্বাচন করোনাভাইরাস ছড়ানোর একক কারণ নয়, তবে অন্যতম কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যেসব কারণে তার অন্যতম প্রধান দুটি কারণ হচ্ছে নির্বাচন ও কুম্ভমেলা। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন শুরু হয় গত ২৭ মার্চ। রাজ্যটিতে ১ এপ্রিল করোনা শনাক্তের হার ছিল প্রায় ৫ শতাংশ। এর এক মাসেরও কম সময়ে সেখানে শনাক্তের হার বেড়ে ৩৩ শতাংশে পৌঁছে। সেখানে শনাক্ত ও মৃত্যুর নতুন নতুন রেকর্ড হতে দেখা গেছে। করোনার সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক রয়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

সিইসি বলেছেন, নির্বাচনের গুরুত্ব করোনার চেয়েও বেশি। যেসব এলকায় লকডাউন নেই সেসব এলাকায় তিনি নির্বাচন চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দেশে দেশে করোনার প্রাণসংহারী রূপ সম্পর্কে জানলে কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তির পক্ষে এমন ঘোষণা দেয়া সম্ভব নয়। মানুষের প্রাণের চেয়ে মূল্যবান আর কিছু হতে পারে না। মানুষ বেঁচে থাকলে, সুস্থ থাকলে ভোট পরেও দেয়া যাবে।

দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে, টিকাদানের গতি ধীর হয়ে গেছে। সিংহভাগ মানুষ টিকা পায়নি। এ অবস্থায় দেশের কোথাও এমন কোন উপলক্ষ তৈরি করা সঙ্গত নয়, যার কারণে ব্যাপক জনসমাগম ঘটে। নির্বাচন কেবল একটি দিনকে কেন্দ্র করেই সংঘটিত হয় না। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের যে আমেজ শুরু হয় তা বজায় থাকে ভোটের ফলের পরও। দেশে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ বরাবরই বেশি। নির্বাচনে স্বাস্থ্যবিধি মানা না গেলে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। করোনার সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতির মধ্যে নির্বাচন থেকে বিরত থাকাই কমিশনের পক্ষে শুভবুদ্ধির পরিচায়ক হবে।