টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বংশাই ও ঝিনাই নদীতে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তীরবর্তী মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক শুরু হয়েছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। ভাঙন ঠেকাতে ব্যক্তি উদ্যোগে চলছে নানা প্রচেষ্টা।
স্থানীয়রা জানান, মির্জাপুরে নদী ভাঙন কবলিত এলাকা হিসেবে পরিচিত মির্জাপুর পৌর এলাকার পোস্টকামুরী সওদাগরপাড়া, বাওয়ার কুমারজানী উত্তরপাড়া এবং ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া, ফতেপুর, বানকাটা, চাকলেশ্বর, বৈলানপুর-পাতিলাপাড়া ও ভাতগ্রাম ইউনিয়নের গোড়াইল। বর্ষাকাল এলেই এসব এলাকার নদীর তীরবর্তী মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক শুরু হয়ে যায়। নদীতে পানি বৃদ্ধি ও কমার সময় দেখা দেয় ভাঙন। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বংশাই ও ঝিনাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এরইমধ্যে শুরু হয়েছ এসব এলকায় নদী ভাঙন। আর এই ভাঙন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে নদীর তীরবর্তী মানুষদের মধ্যে। বংশাই নদীর পোস্টকামুরী সওদাগড় পাড়ায় নির্মিত আলহাজ একাব্বর হোসেন এমপি সেতুও রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। গতবছর ওই সেতুর আশপাশের কয়েকশ পরিবার সওদাগড়পাড়া ও সেতুটি রক্ষার জন্য মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। তারপরও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বছরও সেতুর কাছ থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা হয়েছে। সেজন্য পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদীর তীরবর্তী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছে।ভাঙনে এরইমধ্যে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও বেশকিছু আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। উল্লেখ্য গত কয়েকবছরের ভাঙনে বানকাটা ও গোড়াইল গ্রামের দরিদ্র পরিবারের অনেকেই বসতবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এছাড়া হিলরা বাজারের উত্তর পাশের অধিকাংশ স্থান এবং বাজারের পার্শ্ববর্তী এলজিইডির ৪শ’ মিটার রাস্তা ও একটি কালভার্ট ভেঙ্গে গেছে। বিলীন হয়েছে শত শত একর আবাদি জমি। অভিযোগ রয়েছে গত কয়েকবছর ধরে শুকনো ও বর্ষা মৌসুমে নদীর ওইসব এলাকা থেকে খননযন্ত্র দিয়ে অসাধু ব্যক্তিরা বালু তুলছেন। এ কারণে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গতবছরে ভাঙনকবলিত হিলরা বাজারের উত্তর পাশ এবং বাজারের পার্শ্ববর্তী এলজিইডির সেই ৪শ মিটার রাস্তা ও কালভার্ট এলাকায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। এছাড়া সদরের পোস্টকামুরী সওদাগরপাড়া ও বাওয়ার কুমারজানী উত্তরপাড়াও ভাঙন শুরু হচ্ছে। ভাঙনরোধে সরকারি পর্যায়ে এখনও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে এসব স্থাপনা রক্ষায় বাড়ির মালিকরা নিজ উদ্যোগে বাঁশের বেড়া ও রাইস মিলের মালিক বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করছেন।
পোস্টকামুরী সওদাগরপাড়ার বাসিন্দা মজিবুর রহমান জানান, তার বাড়িটি ২৮ শতাংশ জমির ওপর ছিল। ভাঙনের ফলে এখন মাত্র ২ শতাংশ রয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে তিনি নিজ উদ্যোগে বাঁশের বেড়া দিয়েছেন বলে জানান। একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী বাড়ির জামাল মিয়া, শরব আলী ফকির, জাফর ও বাবলু মিয়ারও।
মির্জাপুর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শরব আলী ফকির বলেন, পানি বৃদ্ধি ও কমার সময় নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। গত কয়েকবছরে ভাঙতে ভাঙতে তার বাড়িসহ সওদাগরপাড়া এখন বিলীন হওয়ার পথে।
বাওয়ার কুমারজানী উত্তরপাড়ায় বিসমিল্লাহ রাইস মিলের মালিক জহির হোসেন বলেন, তাদের ৫০ শতাংশ রাইস মিল ভাঙতে ভাঙতে এখন ২০ শতাংশে এসে ঠেকেছে। গত তিন সপ্তাহ ধরে নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে তিনি নিজ উদ্যোগে বালুর বস্তা ফেলে এই ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন।
থলপাড়া গ্রামের প্যাচান্ডাপাড়া বাসিন্দা সাগর ম-ল দক্ষিণপাড়ার ফিরোজ আলম জানান, গতবছর কুর্ণী-ফতেপুর সড়কের হিলরা বাজারের উত্তর পাশে এলজিইডির ৪শ মিটার পাকা রাস্তা ও কালভার্ট ভেঙ্গে গেছে। সে কারণে এই রাস্তা দিয়ে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ট্রাক-সব ধরনের মোটর গাড়ির চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
থলপাড়া গ্রামের বৈলানপুরের বাসিন্দা আবুল কাশেম খান, বানকাটা গ্রামের হেলাল মিয়া, আজিম মিয়া বলেন, ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিবছর ঝিনাই নদীর প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে বালু উত্তোলন করে থাকে। এছাড়া কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে খননযন্ত্র দিয়ে ঝিনাই নদী থেকে বালু উত্তোলন করার ফলে ভাঙন ভয়াবহ রূপ নেয়। বানকাটা গ্রামের নন্দরাজ বংশী, মন্টুরাজ বংশী, মোনাইরাজ বংশী বলেন, গত কয়েকবছরের ভাঙ্গনের ফলে তাদের বাড়ি নদী গর্ভে চলে গেছে। গ্রামের অন্যত্র জমি কিনে তারা বাড়ি তৈরি করেছেন। তারা বলেন, অনেকের বাড়ি ও আবাদি জমি নদী ভাঙনে কবলে পড়েছে তারা এতই দরিদ্র যে অন্যত্র বাড়ি বানানোর অবস্থাও নেই। চাকলেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা হাবেল মৃধা জানান, ভাঙনের ফলে আবাদি জমি ও বাড়ি নদীতে যাচ্ছে। ভাঙন ঠেকাতে জরুরি পদক্ষেপ দরকার।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফতেপুর নদী ভাঙন কবলিত এলাকা সম্পর্কে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই কাজ শুরু করা হবে।
বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১ , ১০ আষাঢ় ১৪২৮ ১২ জিলকদ ১৪৪২
প্রতিনিধি, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল)
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বংশাই ও ঝিনাই নদীতে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তীরবর্তী মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক শুরু হয়েছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। ভাঙন ঠেকাতে ব্যক্তি উদ্যোগে চলছে নানা প্রচেষ্টা।
স্থানীয়রা জানান, মির্জাপুরে নদী ভাঙন কবলিত এলাকা হিসেবে পরিচিত মির্জাপুর পৌর এলাকার পোস্টকামুরী সওদাগরপাড়া, বাওয়ার কুমারজানী উত্তরপাড়া এবং ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া, ফতেপুর, বানকাটা, চাকলেশ্বর, বৈলানপুর-পাতিলাপাড়া ও ভাতগ্রাম ইউনিয়নের গোড়াইল। বর্ষাকাল এলেই এসব এলাকার নদীর তীরবর্তী মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক শুরু হয়ে যায়। নদীতে পানি বৃদ্ধি ও কমার সময় দেখা দেয় ভাঙন। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বংশাই ও ঝিনাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এরইমধ্যে শুরু হয়েছ এসব এলকায় নদী ভাঙন। আর এই ভাঙন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে নদীর তীরবর্তী মানুষদের মধ্যে। বংশাই নদীর পোস্টকামুরী সওদাগড় পাড়ায় নির্মিত আলহাজ একাব্বর হোসেন এমপি সেতুও রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। গতবছর ওই সেতুর আশপাশের কয়েকশ পরিবার সওদাগড়পাড়া ও সেতুটি রক্ষার জন্য মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। তারপরও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বছরও সেতুর কাছ থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা হয়েছে। সেজন্য পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদীর তীরবর্তী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছে।ভাঙনে এরইমধ্যে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও বেশকিছু আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। উল্লেখ্য গত কয়েকবছরের ভাঙনে বানকাটা ও গোড়াইল গ্রামের দরিদ্র পরিবারের অনেকেই বসতবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এছাড়া হিলরা বাজারের উত্তর পাশের অধিকাংশ স্থান এবং বাজারের পার্শ্ববর্তী এলজিইডির ৪শ’ মিটার রাস্তা ও একটি কালভার্ট ভেঙ্গে গেছে। বিলীন হয়েছে শত শত একর আবাদি জমি। অভিযোগ রয়েছে গত কয়েকবছর ধরে শুকনো ও বর্ষা মৌসুমে নদীর ওইসব এলাকা থেকে খননযন্ত্র দিয়ে অসাধু ব্যক্তিরা বালু তুলছেন। এ কারণে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গতবছরে ভাঙনকবলিত হিলরা বাজারের উত্তর পাশ এবং বাজারের পার্শ্ববর্তী এলজিইডির সেই ৪শ মিটার রাস্তা ও কালভার্ট এলাকায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। এছাড়া সদরের পোস্টকামুরী সওদাগরপাড়া ও বাওয়ার কুমারজানী উত্তরপাড়াও ভাঙন শুরু হচ্ছে। ভাঙনরোধে সরকারি পর্যায়ে এখনও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে এসব স্থাপনা রক্ষায় বাড়ির মালিকরা নিজ উদ্যোগে বাঁশের বেড়া ও রাইস মিলের মালিক বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করছেন।
পোস্টকামুরী সওদাগরপাড়ার বাসিন্দা মজিবুর রহমান জানান, তার বাড়িটি ২৮ শতাংশ জমির ওপর ছিল। ভাঙনের ফলে এখন মাত্র ২ শতাংশ রয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে তিনি নিজ উদ্যোগে বাঁশের বেড়া দিয়েছেন বলে জানান। একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী বাড়ির জামাল মিয়া, শরব আলী ফকির, জাফর ও বাবলু মিয়ারও।
মির্জাপুর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শরব আলী ফকির বলেন, পানি বৃদ্ধি ও কমার সময় নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। গত কয়েকবছরে ভাঙতে ভাঙতে তার বাড়িসহ সওদাগরপাড়া এখন বিলীন হওয়ার পথে।
বাওয়ার কুমারজানী উত্তরপাড়ায় বিসমিল্লাহ রাইস মিলের মালিক জহির হোসেন বলেন, তাদের ৫০ শতাংশ রাইস মিল ভাঙতে ভাঙতে এখন ২০ শতাংশে এসে ঠেকেছে। গত তিন সপ্তাহ ধরে নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে তিনি নিজ উদ্যোগে বালুর বস্তা ফেলে এই ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন।
থলপাড়া গ্রামের প্যাচান্ডাপাড়া বাসিন্দা সাগর ম-ল দক্ষিণপাড়ার ফিরোজ আলম জানান, গতবছর কুর্ণী-ফতেপুর সড়কের হিলরা বাজারের উত্তর পাশে এলজিইডির ৪শ মিটার পাকা রাস্তা ও কালভার্ট ভেঙ্গে গেছে। সে কারণে এই রাস্তা দিয়ে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ট্রাক-সব ধরনের মোটর গাড়ির চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
থলপাড়া গ্রামের বৈলানপুরের বাসিন্দা আবুল কাশেম খান, বানকাটা গ্রামের হেলাল মিয়া, আজিম মিয়া বলেন, ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিবছর ঝিনাই নদীর প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে বালু উত্তোলন করে থাকে। এছাড়া কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে খননযন্ত্র দিয়ে ঝিনাই নদী থেকে বালু উত্তোলন করার ফলে ভাঙন ভয়াবহ রূপ নেয়। বানকাটা গ্রামের নন্দরাজ বংশী, মন্টুরাজ বংশী, মোনাইরাজ বংশী বলেন, গত কয়েকবছরের ভাঙ্গনের ফলে তাদের বাড়ি নদী গর্ভে চলে গেছে। গ্রামের অন্যত্র জমি কিনে তারা বাড়ি তৈরি করেছেন। তারা বলেন, অনেকের বাড়ি ও আবাদি জমি নদী ভাঙনে কবলে পড়েছে তারা এতই দরিদ্র যে অন্যত্র বাড়ি বানানোর অবস্থাও নেই। চাকলেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা হাবেল মৃধা জানান, ভাঙনের ফলে আবাদি জমি ও বাড়ি নদীতে যাচ্ছে। ভাঙন ঠেকাতে জরুরি পদক্ষেপ দরকার।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফতেপুর নদী ভাঙন কবলিত এলাকা সম্পর্কে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই কাজ শুরু করা হবে।