অস্তিত্ব ও সমৃদ্ধির জন্য পানি

এ কে এম এ হামিদ

এই রহস্যময় বিশ্ব ভূম-ে পৃথিবী নামক গ্রহে পানির উপস্থিতিই নিঃসন্দেহে এক অনন্য বিস্ময়। If there is magic on the planet, it is contained water. প্রতিটি প্রাণীর জীবনের অস্তিত্ব টিকে রাখার জন্য পানি অপরিহার্য। জীবন-জীবিকা রক্ষার প্রতিটি উপাদানের সঙ্গে পানির প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রার ৬নং লক্ষ্যে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া, এসডিজির ২, ৩, ১২, ১৪ ও ১৫ নং লক্ষ্য অর্জনেও পানির রয়েছে অপরিহার্য গুরুত্ব।

নদীমাতৃক বাংলাদেশে বিশুদ্ধ পানির উৎস হচ্ছে প্রাকৃতিক জলাধার, নদ নদী, বৃষ্টির পানি ও ভূগর্ভস্থ পানি। দেশে ছোট বড় মিলে নদী রয়েছে ২৩০টি। এর মধ্যে ৫৭টি নদী আন্তর্জাতিক। এই নদীগুলোর মধ্যে ৫৪টির উৎসস্থল ভারত এবং বাকি ৩টি মায়ানমার। বর্তমানে ভারতের সঙ্গে নদীর পানির হিস্যা নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার কারণে এখন এই দেশের বিভিন্ন নদীতে সঠিক প্রবাহে পানি আসছে না। অপরিকল্পিত ও অদূরদর্শী উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলে বড় বড় নদীগুলো থেকে সৃষ্ট ছোট নদীগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পরিকল্পনাহীনভাবে রাস্তাঘাট নির্মাণের কারণে বিভিন্নভাবে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নদীবাহিত পলি পানি অপ্রতুলতার কারণে সাগরে যেতে না পারায় নদীগুলোর তলদেশ ভরে নাব্যতা হারাচ্ছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে ২৫ হাজার ৪০০ কিলোমিটার নৌপথ ছিল, তা এখন সাত হাজার ৬০০ কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে ইতোমধ্যে প্রায় ১৩টি নদী হারিয়ে গেছে। ছোট ছোট বহু নদী আজ মৃতপ্রায়। অন্যদিকে, বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে আসা পানি এবং বৃষ্টিজনিত পানির সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং, নদ নদীগুলো নাব্যতা হারানোর কারণে বর্ষা মৌসুমে বন্যায় এবং শুষ্ক মৌসুমে খরায় পুরো দেশকে ভুগতে হচ্ছে।

তথ্য উপাত্ত থেকে জানা যায়-প্রতিবর্গ কিলোমিটারে মিঠা পানির প্রাপ্যতার হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান পৃথিবীতে এক নম্বর। আমাদের রিজার্ভ ১ হাজার ২২৩ কিউবিক কিলোমিটার। তা সত্ত্বেও, বছরের চার মাস দেশের একটা বড় অংশ পানি শূন্যতায় হাহাকার করে।

বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত খাদ্য সংস্থানে বেড়ে চলছে উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ। যার অধিকাংশই নির্ভর করছে ভূগর্ভস্থ সেচ পানি ব্যবস্থার ওপর। এছাড়া, ক্রমাগত নগরায়নের ফলে প্রাকৃতিক জলাশয় ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। প্রাকৃতিক পানি উৎস যেখানে দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে, সেখানে বিশুদ্ধ পানির চাহিদা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেহেতু, ভূ-পৃষ্ঠ পানির উৎস ক্রমেই ব্যাপকভাবে দূষিত হচ্ছে, তাই বাধ্য হয়ে এই ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদার জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুশ্চিন্তার কারণ হলো ভূ-গর্ভস্থ পানি নির্ভরতার কারণে দেশের ক্রমাগত পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা যায়, রাজধানীতে উপরিভাগে যত পানির উৎস আছে, তার ৯২ শতাংশই দূষণের শিকার। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ এবং বালু নদীর পানি প্রায় শতভাগ দূষিত। আর পানির দূষণের অন্যতম কারণ শিল্প বর্জ্য। রাজধানীতে সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলছে। এটি শুধু রাজধানী ঢাকার চিত্র নয়, ক্রমাগত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে এটি পুরো দেশের চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে ধীরে ধীরে ভূ-গর্ভস্থ পানিই একমাত্র নিরাপদ পানির উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের জনসংখার ৯৫ থেকে ৯৭ শতাংশই টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করেন, যা ভূ-গর্ভস্থ পানির উৎসের ওপর নির্ভরশীল। মাত্রারিক্ত ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর যেমন দ্রুত নিচে নেমে যাওয়ার পাশাপাশি আর্সেনিক সমস্যা প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দীর্ঘ সময় অব্যাহতভাবে ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট ফাঁপা তথা voied বা vacuum থাকার কারণে যে কোন সময় বিভিন্ন অংশ ডেবে যেতে পারে এবং সামান্য ভূমিধসে শহরটি তছনছ বা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। ঢাকা ওয়াসার ১ হাজার এবং বেসরকারি নিবন্ধিত ৪ হাজার এবং নিবন্ধনহীন আনুমানিক আরও ৪ থেকে ৫০০ গভীর নলকূপ ৮০০ থেকে ১১০০ ফুট গভীর থেকে অব্যাহতভাবে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করছে। সত্তরের দশকে যেখানে ভূ-গর্ভস্থ পানিস্তর ছিল ২০/৩০ ফুটের মধ্যে, তা বর্তমানে স্ট্যাটিক লেবেল ১৮০ থেকে ২৮০ ফুট পর্যন্ত নেমে গেছে।

গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার এবং প্রাকৃতিক জলাধার রক্ষা না করা হলেও কি ধরনের বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, প্রকৃতির ভারসাম্য কীভাবে হুমকির মুখে পড়ে, সেটি আমরা তুরস্কের কনিয়া রাজ্যের পরিণতির থেকে কিছুটা অনুধাবন করতে পারি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ বিষয়ে নিউজ হেডলাইন হয়েছিল ‘দৈত্যকায় সিংকহোল তুরস্ককে গিলে খাচ্ছে।” বিপুল গম উৎপাদনখ্যাত তুরস্কের এ অঞ্চলের কৃষকরা পানি ব্যবস্থাপনার জন্য ভূ-অভ্যন্তরের পানি বিরামহীনভাবে উঠাতে থাকে। এতেই হুমকির মুখে পড়ছে জমির তলার ভিত। গত ১০-১৫ বছরে অবস্থার অবনতি ঘটেছে প্রচুর পরিমাণে। সেচের জন্য সেই পানি আবার ফসলের জমির পাশে বড় গর্ত করে জমিয়ে রাখে। আর এ কারণেই হুটহাট জমির মধ্যে দেখা দিচ্ছে ভূমিধস। সৃষ্টি হচ্ছে ১০ মিটার চওড়া ও ১৫০ মিটার গভীর গর্ত। গর্তগুলো নিচের দিকে বেশি চওড়া হওয়ায় সহজে এগুলো ভরাট করা সম্ভব হয় না। ওপরে মাটি দিলে নিচের দিকে ধসে যেতে থাকে। ২০২০ সালে তুরস্কে যেখানে ৩৬০টি সিংকহোল ছিল, এ বছর সেখানে সাড়ে ৬শ’র বেশি গর্ত তৈরি হয়েছে। এটি যে শুধু তুরস্কের সমস্যা তা নয়, এটি এখন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ইতালি, স্পেনেও দেখা যাচ্ছে। এখন থেকে বাংলাদেশ ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে সতর্ক না হলেও অদূর ভবিষ্যতেও অনুরূপ প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, যা শুধু কৃষিজমির জন্য হুমকি নয়, মানববসতির ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই, আমাদের প্রাকৃতিক জলাধার রক্ষা ও ভূ-পৃষ্ঠের পানি ব্যবহারে মনোযোগী হওয়ার বিকল্প নেই। অন্যথায় শুধু বিপর্যয় নয়-ধ্বংসও অনিবার্য।

[লেখক : সভাপতি, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)]

বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১ , ১০ আষাঢ় ১৪২৮ ১২ জিলকদ ১৪৪২

অস্তিত্ব ও সমৃদ্ধির জন্য পানি

এ কে এম এ হামিদ

image

এই রহস্যময় বিশ্ব ভূম-ে পৃথিবী নামক গ্রহে পানির উপস্থিতিই নিঃসন্দেহে এক অনন্য বিস্ময়। If there is magic on the planet, it is contained water. প্রতিটি প্রাণীর জীবনের অস্তিত্ব টিকে রাখার জন্য পানি অপরিহার্য। জীবন-জীবিকা রক্ষার প্রতিটি উপাদানের সঙ্গে পানির প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রার ৬নং লক্ষ্যে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া, এসডিজির ২, ৩, ১২, ১৪ ও ১৫ নং লক্ষ্য অর্জনেও পানির রয়েছে অপরিহার্য গুরুত্ব।

নদীমাতৃক বাংলাদেশে বিশুদ্ধ পানির উৎস হচ্ছে প্রাকৃতিক জলাধার, নদ নদী, বৃষ্টির পানি ও ভূগর্ভস্থ পানি। দেশে ছোট বড় মিলে নদী রয়েছে ২৩০টি। এর মধ্যে ৫৭টি নদী আন্তর্জাতিক। এই নদীগুলোর মধ্যে ৫৪টির উৎসস্থল ভারত এবং বাকি ৩টি মায়ানমার। বর্তমানে ভারতের সঙ্গে নদীর পানির হিস্যা নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার কারণে এখন এই দেশের বিভিন্ন নদীতে সঠিক প্রবাহে পানি আসছে না। অপরিকল্পিত ও অদূরদর্শী উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলে বড় বড় নদীগুলো থেকে সৃষ্ট ছোট নদীগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পরিকল্পনাহীনভাবে রাস্তাঘাট নির্মাণের কারণে বিভিন্নভাবে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নদীবাহিত পলি পানি অপ্রতুলতার কারণে সাগরে যেতে না পারায় নদীগুলোর তলদেশ ভরে নাব্যতা হারাচ্ছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে ২৫ হাজার ৪০০ কিলোমিটার নৌপথ ছিল, তা এখন সাত হাজার ৬০০ কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে ইতোমধ্যে প্রায় ১৩টি নদী হারিয়ে গেছে। ছোট ছোট বহু নদী আজ মৃতপ্রায়। অন্যদিকে, বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে আসা পানি এবং বৃষ্টিজনিত পানির সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং, নদ নদীগুলো নাব্যতা হারানোর কারণে বর্ষা মৌসুমে বন্যায় এবং শুষ্ক মৌসুমে খরায় পুরো দেশকে ভুগতে হচ্ছে।

তথ্য উপাত্ত থেকে জানা যায়-প্রতিবর্গ কিলোমিটারে মিঠা পানির প্রাপ্যতার হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান পৃথিবীতে এক নম্বর। আমাদের রিজার্ভ ১ হাজার ২২৩ কিউবিক কিলোমিটার। তা সত্ত্বেও, বছরের চার মাস দেশের একটা বড় অংশ পানি শূন্যতায় হাহাকার করে।

বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত খাদ্য সংস্থানে বেড়ে চলছে উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ। যার অধিকাংশই নির্ভর করছে ভূগর্ভস্থ সেচ পানি ব্যবস্থার ওপর। এছাড়া, ক্রমাগত নগরায়নের ফলে প্রাকৃতিক জলাশয় ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। প্রাকৃতিক পানি উৎস যেখানে দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে, সেখানে বিশুদ্ধ পানির চাহিদা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেহেতু, ভূ-পৃষ্ঠ পানির উৎস ক্রমেই ব্যাপকভাবে দূষিত হচ্ছে, তাই বাধ্য হয়ে এই ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদার জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুশ্চিন্তার কারণ হলো ভূ-গর্ভস্থ পানি নির্ভরতার কারণে দেশের ক্রমাগত পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা যায়, রাজধানীতে উপরিভাগে যত পানির উৎস আছে, তার ৯২ শতাংশই দূষণের শিকার। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ এবং বালু নদীর পানি প্রায় শতভাগ দূষিত। আর পানির দূষণের অন্যতম কারণ শিল্প বর্জ্য। রাজধানীতে সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলছে। এটি শুধু রাজধানী ঢাকার চিত্র নয়, ক্রমাগত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে এটি পুরো দেশের চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে ধীরে ধীরে ভূ-গর্ভস্থ পানিই একমাত্র নিরাপদ পানির উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের জনসংখার ৯৫ থেকে ৯৭ শতাংশই টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করেন, যা ভূ-গর্ভস্থ পানির উৎসের ওপর নির্ভরশীল। মাত্রারিক্ত ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর যেমন দ্রুত নিচে নেমে যাওয়ার পাশাপাশি আর্সেনিক সমস্যা প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দীর্ঘ সময় অব্যাহতভাবে ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট ফাঁপা তথা voied বা vacuum থাকার কারণে যে কোন সময় বিভিন্ন অংশ ডেবে যেতে পারে এবং সামান্য ভূমিধসে শহরটি তছনছ বা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। ঢাকা ওয়াসার ১ হাজার এবং বেসরকারি নিবন্ধিত ৪ হাজার এবং নিবন্ধনহীন আনুমানিক আরও ৪ থেকে ৫০০ গভীর নলকূপ ৮০০ থেকে ১১০০ ফুট গভীর থেকে অব্যাহতভাবে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করছে। সত্তরের দশকে যেখানে ভূ-গর্ভস্থ পানিস্তর ছিল ২০/৩০ ফুটের মধ্যে, তা বর্তমানে স্ট্যাটিক লেবেল ১৮০ থেকে ২৮০ ফুট পর্যন্ত নেমে গেছে।

গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার এবং প্রাকৃতিক জলাধার রক্ষা না করা হলেও কি ধরনের বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, প্রকৃতির ভারসাম্য কীভাবে হুমকির মুখে পড়ে, সেটি আমরা তুরস্কের কনিয়া রাজ্যের পরিণতির থেকে কিছুটা অনুধাবন করতে পারি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ বিষয়ে নিউজ হেডলাইন হয়েছিল ‘দৈত্যকায় সিংকহোল তুরস্ককে গিলে খাচ্ছে।” বিপুল গম উৎপাদনখ্যাত তুরস্কের এ অঞ্চলের কৃষকরা পানি ব্যবস্থাপনার জন্য ভূ-অভ্যন্তরের পানি বিরামহীনভাবে উঠাতে থাকে। এতেই হুমকির মুখে পড়ছে জমির তলার ভিত। গত ১০-১৫ বছরে অবস্থার অবনতি ঘটেছে প্রচুর পরিমাণে। সেচের জন্য সেই পানি আবার ফসলের জমির পাশে বড় গর্ত করে জমিয়ে রাখে। আর এ কারণেই হুটহাট জমির মধ্যে দেখা দিচ্ছে ভূমিধস। সৃষ্টি হচ্ছে ১০ মিটার চওড়া ও ১৫০ মিটার গভীর গর্ত। গর্তগুলো নিচের দিকে বেশি চওড়া হওয়ায় সহজে এগুলো ভরাট করা সম্ভব হয় না। ওপরে মাটি দিলে নিচের দিকে ধসে যেতে থাকে। ২০২০ সালে তুরস্কে যেখানে ৩৬০টি সিংকহোল ছিল, এ বছর সেখানে সাড়ে ৬শ’র বেশি গর্ত তৈরি হয়েছে। এটি যে শুধু তুরস্কের সমস্যা তা নয়, এটি এখন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ইতালি, স্পেনেও দেখা যাচ্ছে। এখন থেকে বাংলাদেশ ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে সতর্ক না হলেও অদূর ভবিষ্যতেও অনুরূপ প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, যা শুধু কৃষিজমির জন্য হুমকি নয়, মানববসতির ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই, আমাদের প্রাকৃতিক জলাধার রক্ষা ও ভূ-পৃষ্ঠের পানি ব্যবহারে মনোযোগী হওয়ার বিকল্প নেই। অন্যথায় শুধু বিপর্যয় নয়-ধ্বংসও অনিবার্য।

[লেখক : সভাপতি, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)]