‘স্পট লাইট বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী

দুই বছরে ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের হালাল পণ্যের বাজার সৃষ্টি হবে

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে কাজ করছে। বিশ্ববাজারে হালাল ফুডের একটি বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্ববাজারে প্রায় ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের হালাল পণ্যের বাজার সৃষ্টি হতে পারে।’

গতকাল ‘স্পট লাইট বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তৃতা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এরপর মন্ত্রী ভার্চুয়ালি সিঙ্গাপুরের ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড মিনিস্টার ইন চার্জ অব ট্রেড রিলেশনস এস ইসওয়ারানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেন। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ হালাল ফুড উৎপাদন করতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের নতুন প্রযুক্তি ও সহযোগিতা হালাল ফুড উৎপাদনে সহায়ক হবে। বাংলাদেশ যৌথভাবে হালাল ফুড উৎপাদনে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে কাজ করতে পারে।’

দ্বিপক্ষীয় আলোচনাকালে সিঙ্গাপুরের ট্রেড রিলেশনস মিনিস্টার যৌথভাবে বাংলাদেশে হালাল ফুড উৎপাদন, বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘মিউচুয়াল রিকগনিশন, সার্টিফিকেশন এবং কোয়ালিটি নিশ্চিত করে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় হালাল পণ্যের চাহিদা মেটানো সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ভিশন-২০২১ সফল করার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্যে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পেপারলেস ট্রেডে সক্ষমতা অর্জন করছে। এজন্য বাংলাদেশ ইউএনএস্ক্যাপ এ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা ভোগ করছে। বাংলাদেশ তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যে দক্ষতা অর্জন করে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ বা পিটিএ স্বাক্ষরের মতো বাণিজ্য চুক্তি করে বাণিজ্য সুবিধা গ্রহণের চেষ্টা করছে। সিঙ্গাপুর এ ধরনের অনেক বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করেছে, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করলে বাংলাদেশ উপকৃত হবে। এতে করে বাংলাদেশ বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের সময় সমঝোতার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারবে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে ইজ অব ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্সে বিশ্বে যে ২০ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ তার একটি। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) দেশে বিনিয়োগ সহজ করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে সমন্বয় করছে যাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অতি সহজেই ব্যবসাবান্ধব পরিবেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। এখন সবকাজ অনলাইনে সম্পন্ন করার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। তাছাড়া ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে, যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন আমদানি ও রপ্তানি অফিস, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের অফিস, রপ্তানি উন্নয়ন বু্যুরোর সেবা প্রদান ডিজিটাল করা হয়েছে। সেখানে অনলাইন সেবা চালু করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমদানি-রপ্তানি সহজ করতে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইনন্ডোজ চালু করেছে। সিঙ্গাপুর এবং বাংলাদেশের মধ্যে নৌ ও আকাশ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন অনেক উন্নত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার পটুয়াখালীতে নতুন আধুনিক পায়রা সমুদ্রবন্দর চালু করেছে, মোংলা সমুদ্রবন্দরকে আধুনিক করা হয়েছে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং চট্টগ্রামের মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে।’

‘স্পট লাইট বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওয়েবিনারের আয়োজন করেন এন্টারপ্রাইজ সিংগাপুর, সিঙ্গাপুর মেন্যুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ হাই কমিশন ইন সিঙ্গাপুর, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি, এফবিসিসিআই এবং বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুর।

ওয়েবিনারে অন্যদের মধ্যে উদ্বোধনী বক্তৃতা করেন সিঙ্গাপুরের ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড মিনিস্টার ইন চার্জ অব ট্রেড রিলেশনস এস ইসওয়ারান এবং এসবিএফ দক্ষিণ এশিয়া বিজনেস গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান প্রসন মুখার্জি। ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম।

ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তৃতা করেন এফবিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন, সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মিসেস আয়সা আজিজ খান, সাউথ এশিয়া অ্যান্ড মিডল ইস্ট পিএসএর রিজিওনাল সিইও ওয়ান সি ফং, মার্কেটার্স ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের বোর্ড মেম্বার আসিফ ইকবাল, গ্রামীণ ফোন এক্সেলেটর প্রধান মিনহাজ আনোয়ার।

শুক্রবার, ২৫ জুন ২০২১ , ১১ আষাঢ় ১৪২৮ ১৩ জিলকদ ১৪৪২

‘স্পট লাইট বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী

দুই বছরে ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের হালাল পণ্যের বাজার সৃষ্টি হবে

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে কাজ করছে। বিশ্ববাজারে হালাল ফুডের একটি বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্ববাজারে প্রায় ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের হালাল পণ্যের বাজার সৃষ্টি হতে পারে।’

গতকাল ‘স্পট লাইট বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তৃতা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এরপর মন্ত্রী ভার্চুয়ালি সিঙ্গাপুরের ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড মিনিস্টার ইন চার্জ অব ট্রেড রিলেশনস এস ইসওয়ারানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেন। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ হালাল ফুড উৎপাদন করতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের নতুন প্রযুক্তি ও সহযোগিতা হালাল ফুড উৎপাদনে সহায়ক হবে। বাংলাদেশ যৌথভাবে হালাল ফুড উৎপাদনে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে কাজ করতে পারে।’

দ্বিপক্ষীয় আলোচনাকালে সিঙ্গাপুরের ট্রেড রিলেশনস মিনিস্টার যৌথভাবে বাংলাদেশে হালাল ফুড উৎপাদন, বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘মিউচুয়াল রিকগনিশন, সার্টিফিকেশন এবং কোয়ালিটি নিশ্চিত করে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় হালাল পণ্যের চাহিদা মেটানো সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ভিশন-২০২১ সফল করার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্যে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পেপারলেস ট্রেডে সক্ষমতা অর্জন করছে। এজন্য বাংলাদেশ ইউএনএস্ক্যাপ এ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা ভোগ করছে। বাংলাদেশ তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যে দক্ষতা অর্জন করে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ বা পিটিএ স্বাক্ষরের মতো বাণিজ্য চুক্তি করে বাণিজ্য সুবিধা গ্রহণের চেষ্টা করছে। সিঙ্গাপুর এ ধরনের অনেক বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করেছে, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করলে বাংলাদেশ উপকৃত হবে। এতে করে বাংলাদেশ বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের সময় সমঝোতার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারবে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে ইজ অব ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্সে বিশ্বে যে ২০ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ তার একটি। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) দেশে বিনিয়োগ সহজ করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে সমন্বয় করছে যাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অতি সহজেই ব্যবসাবান্ধব পরিবেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। এখন সবকাজ অনলাইনে সম্পন্ন করার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। তাছাড়া ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে, যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন আমদানি ও রপ্তানি অফিস, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের অফিস, রপ্তানি উন্নয়ন বু্যুরোর সেবা প্রদান ডিজিটাল করা হয়েছে। সেখানে অনলাইন সেবা চালু করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমদানি-রপ্তানি সহজ করতে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইনন্ডোজ চালু করেছে। সিঙ্গাপুর এবং বাংলাদেশের মধ্যে নৌ ও আকাশ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন অনেক উন্নত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার পটুয়াখালীতে নতুন আধুনিক পায়রা সমুদ্রবন্দর চালু করেছে, মোংলা সমুদ্রবন্দরকে আধুনিক করা হয়েছে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং চট্টগ্রামের মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে।’

‘স্পট লাইট বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওয়েবিনারের আয়োজন করেন এন্টারপ্রাইজ সিংগাপুর, সিঙ্গাপুর মেন্যুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ হাই কমিশন ইন সিঙ্গাপুর, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি, এফবিসিসিআই এবং বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুর।

ওয়েবিনারে অন্যদের মধ্যে উদ্বোধনী বক্তৃতা করেন সিঙ্গাপুরের ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড মিনিস্টার ইন চার্জ অব ট্রেড রিলেশনস এস ইসওয়ারান এবং এসবিএফ দক্ষিণ এশিয়া বিজনেস গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান প্রসন মুখার্জি। ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম।

ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তৃতা করেন এফবিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন, সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মিসেস আয়সা আজিজ খান, সাউথ এশিয়া অ্যান্ড মিডল ইস্ট পিএসএর রিজিওনাল সিইও ওয়ান সি ফং, মার্কেটার্স ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের বোর্ড মেম্বার আসিফ ইকবাল, গ্রামীণ ফোন এক্সেলেটর প্রধান মিনহাজ আনোয়ার।