থোক বরাদ্দ থেকে লকডাউনে গরিবের জন্য খরচের সুপারিশ

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সাত হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে নতুন করে ‘লকডাউন’ দেয়া হচ্ছে। তাই লকডাউনের এ সময়ে থোক বরাদ্দের টাকা গরিব মানুষের জন্য খরচ করার সুপারিশ করেছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত এক বাজেট আলোচনায় গতকাল এ সুপারিশ করা হয়। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ও বেসরকারি খাত নিয়ে অনলাইনে এ আলোচনা সভা করেছে আইবিএফবি। এতে সভাপতি আইবিএফবি সভাপতি হুমায়ূন রশীদ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা অনুভব করি ঘাটতি আছে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

আমি যখন চাকরি শুরু করি, তখন যে অবস্থায় ছিল, এর চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। হয়তো ‘সাগর’ পরিবর্তন করতে পারিনি, কিন্তু ‘পুকুর’ পরিবর্তন করতে পেরেছি।’

দুর্নীতি সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘দুর্নীতি কেউ চায় না। তবু দুর্নীতি বিরাজমান। এটাকে আক্রমণ করার অস্ত্র আপাতত নেই। সরকার চেষ্টা করছে। যেমন, ব্যবসা করতে লাইসেন্স লাগে। এটা কমাতে হবে। আইনকানুন বানাতে হবে।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, বাজেটে থোক বরাদ্দ হিসেবে সাত হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এখন আবার লকডাউন দেয়া হচ্ছে। এই সময়ে যেন এই টাকা গরিব মানুষের জন্য খরচ করা হয়। তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে প্রণোদনার টাকা নিয়েছেন। ব্যাংকগুলো মনে করছে, তাদের অনেকেই টাকা ফেরত দিতে পারবে না। তিনি মনে করেন, করোনার মধ্যেও সংস্কার কার্যক্রম যেন অব্যাহত থাকে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘রিজার্ভ বাড়লেই তা অর্থনীতির জন্য স্বাস্থ্যকর নাও হতে পারে। আমরা হয়তো শ্রীলঙ্কা ও সুদানকে ঋণ দিয়ে বাহবা নিতে পারব।

এই অর্থ বসিয়ে না রেখে অর্থনীতিতে কাজে লাগানো উচিত। এ বিষয়ে তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, শরীরের সুগার (চিনি) ভালো। এটি ৬ শতাংশ পর্যন্ত সহনীয়, কিন্তু ১৩-১৪ শতাংশ হয়ে গেলে ডায়াবেটিস হয়ে যাবে।’

বর্তমানে পোলট্রি ব্যবসায় নিয়োজিত সাবেক সেনাপ্রধান হারুন অর রশিদ। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি যে মাত্রায় পৌঁছেছে, তা নিয়ে বাজেটে কোন দিকনির্দেশনা নেই। বর্তমানে কৃষি খাতের ব্যবসায় নয়টি লাইসেন্স লাগে। এসব লাইসেন্স নিতে এবং নবায়ন করতে আমাদের দু’জন কর্মকর্তা সারা বছর দৌড়ান। এতে লাইসেন্স লাগবে কেন?’

পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে প্রাধান্য দেয়া হয়নি।

আইবিএফবি’র সহসভাপতি এমএস সিদ্দিকী বলেন, বাজেটে কোন কোন খাতে ৮ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রিম কর দিতে হয়। সেক্ষেত্রে ওই খাতকে বছর শেষে ৩৫ শতাংশ মুনাফা করতে হবে। তা না হলে ওই অগ্রিম কর ফেরত পাওয়া মুশকিল।

রবিবার, ২৭ জুন ২০২১ , ১৩ আষাঢ় ১৪২৮ ১৫ জিলক্বদ ১৪৪২

থোক বরাদ্দ থেকে লকডাউনে গরিবের জন্য খরচের সুপারিশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সাত হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে নতুন করে ‘লকডাউন’ দেয়া হচ্ছে। তাই লকডাউনের এ সময়ে থোক বরাদ্দের টাকা গরিব মানুষের জন্য খরচ করার সুপারিশ করেছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত এক বাজেট আলোচনায় গতকাল এ সুপারিশ করা হয়। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ও বেসরকারি খাত নিয়ে অনলাইনে এ আলোচনা সভা করেছে আইবিএফবি। এতে সভাপতি আইবিএফবি সভাপতি হুমায়ূন রশীদ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা অনুভব করি ঘাটতি আছে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

আমি যখন চাকরি শুরু করি, তখন যে অবস্থায় ছিল, এর চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। হয়তো ‘সাগর’ পরিবর্তন করতে পারিনি, কিন্তু ‘পুকুর’ পরিবর্তন করতে পেরেছি।’

দুর্নীতি সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘দুর্নীতি কেউ চায় না। তবু দুর্নীতি বিরাজমান। এটাকে আক্রমণ করার অস্ত্র আপাতত নেই। সরকার চেষ্টা করছে। যেমন, ব্যবসা করতে লাইসেন্স লাগে। এটা কমাতে হবে। আইনকানুন বানাতে হবে।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, বাজেটে থোক বরাদ্দ হিসেবে সাত হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এখন আবার লকডাউন দেয়া হচ্ছে। এই সময়ে যেন এই টাকা গরিব মানুষের জন্য খরচ করা হয়। তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে প্রণোদনার টাকা নিয়েছেন। ব্যাংকগুলো মনে করছে, তাদের অনেকেই টাকা ফেরত দিতে পারবে না। তিনি মনে করেন, করোনার মধ্যেও সংস্কার কার্যক্রম যেন অব্যাহত থাকে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘রিজার্ভ বাড়লেই তা অর্থনীতির জন্য স্বাস্থ্যকর নাও হতে পারে। আমরা হয়তো শ্রীলঙ্কা ও সুদানকে ঋণ দিয়ে বাহবা নিতে পারব।

এই অর্থ বসিয়ে না রেখে অর্থনীতিতে কাজে লাগানো উচিত। এ বিষয়ে তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, শরীরের সুগার (চিনি) ভালো। এটি ৬ শতাংশ পর্যন্ত সহনীয়, কিন্তু ১৩-১৪ শতাংশ হয়ে গেলে ডায়াবেটিস হয়ে যাবে।’

বর্তমানে পোলট্রি ব্যবসায় নিয়োজিত সাবেক সেনাপ্রধান হারুন অর রশিদ। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি যে মাত্রায় পৌঁছেছে, তা নিয়ে বাজেটে কোন দিকনির্দেশনা নেই। বর্তমানে কৃষি খাতের ব্যবসায় নয়টি লাইসেন্স লাগে। এসব লাইসেন্স নিতে এবং নবায়ন করতে আমাদের দু’জন কর্মকর্তা সারা বছর দৌড়ান। এতে লাইসেন্স লাগবে কেন?’

পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে প্রাধান্য দেয়া হয়নি।

আইবিএফবি’র সহসভাপতি এমএস সিদ্দিকী বলেন, বাজেটে কোন কোন খাতে ৮ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রিম কর দিতে হয়। সেক্ষেত্রে ওই খাতকে বছর শেষে ৩৫ শতাংশ মুনাফা করতে হবে। তা না হলে ওই অগ্রিম কর ফেরত পাওয়া মুশকিল।