ডাক্তারসহ জনবল সংকটে সেবাবঞ্চিত রোগীরা

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স শুধু কাগজে-কলমে এবং অবকাঠামোগতভাবে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট। নেই অনুমোদিত জনবল, যন্ত্রপাতি ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ফলে কাক্সিক্ষত সেবা বঞ্চিত ঈশ্বরদীবাসী। বর্তমানে ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্প ও ইপিজেডে চার সহস্র্রাধিক বিদেশীসহ প্রায় ৪০ হাজার মানুষ কর্মরত। এছাড়াও উপজেলায় সাড়ে তিন লাখ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বসবাস। দুর্ঘটনা, স্ট্রোক এবং সামান্য জটিল রোগী হাসপাতালে গেলেই রাজশাহী বা অন্যত্র পাঠানো হয়। অনেক সময় গুরুতর অসুস্থ রোগী অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরের সময় পথেই মারা যায়। বিদেশীদের ক্ষেত্রেও এ ধরনের কয়েকটি ঘটনা ঘটায় দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে তারা নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নিত হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং খাবারের বরাদ্দ ছাড়া ১০ বছরে আর কিছু হয়নি। ৫০ শয্যার মধ্যে ৩টি কেবিনসহ ১৬ বেড করোনা রোগীদের জন্য আইসোলেশন সেন্টার করা হয়েছে। নেই বিশেষজ্ঞ বা কনসালটেন্স। ৫০ শয্যায় উন্নিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহে বিশেষ পদ সৃষ্টির কথা বলা হলেও জনবল ১০ বছরেও অনুমোদন হয়নি। মোট ১৬৯ জন জনবলের মধ্যে রয়েছে ১০৮ জন। ২৭ ডাক্তারের কথা থাকলেও আছে মাত্র ১১ জন। ইউএইচএফপিও প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকেন। আরেকজন অলিখিতভাবে অনুপস্থিত। ৯ জন ডাক্তার রোটেশন করে দায়িত্ব পালন করেন। আর এদের বেশিরভাগই জুনিয়র। ৯ জন বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্সের পদ থাকলেও একজনও নেই। ল্যাব টেকনিশিয়ান, কম্পাউন্ডার, কার্ডিওগ্রাফার, ল্যাব এ্যাটেনটেড, ওটি বয়সহ অনেকগুলো পদ শুন্য রয়েছে। হাসপাতালে এক্সরে, ইসিজি ও আলট্রাসনোগ্রাম হয় না। পুরাতন ভগ্নদশার এ্যাম্বুলেন্সটি বেশি দূরুত্বের রোগী বহন করতে পারে না। ক্লিনিকের দালাল ও প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের চালকরা সবসময় ভিড় করে থাকে। হাসপাতালে যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না। প্রচেষ্টা না থাকায় ৫০ শয্যার বাস্তবায়ন নেই। ঈশ্বরদী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার গোলাম মোস্তফা চান্না মন্ডল জানান, রোগী গেলেই রাজশাহী, পাবনা বা ক্লিনিকে পাঠানো হয়। চিকিৎসা ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ভেঙ্গে পড়লেও প্রতিকার হচ্ছে না। হাসপাতালের অব্যস্থাপনার কারণে বিদেশীদের কাছে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফ এ আসমা খান জনবল সঙ্কট, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, টেকনিশিয়ান না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ইসিজি ও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন এখানে আছে। এক্সরে মেশিন এসেছে কিন্তু এখনও খেলা হয়নি। পুরাতন একটি এ্যাম্বুলেন্স আছে, তবে দূরে যেতে পারে না। ইতোপূর্বে জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে ঈশ্বরদীসহ দেশের ৮টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১০০ শয্যায় উন্নিত করণের তালিকা হয়েছিল। কিন্তু পরে তালিকা থেকে ঈশ্বরদী অন্যত্র নেয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, সকল নাগরিকের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য সরকারের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। ঈশ্বরদী হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা এবং সমস্যার বিষয় আমি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করব। জনগুরুত্ব এবং বিদেশী নাগরিকের অবস্থানের কারণে ঈশ্বরদী হাসপাতাল ১০০ শয্যায় উন্নিত করা উচিত বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

রবিবার, ২৭ জুন ২০২১ , ১৩ আষাঢ় ১৪২৮ ১৫ জিলক্বদ ১৪৪২

ঈশ্বরদীর ৫০ শয্যা হাসপাতাল

ডাক্তারসহ জনবল সংকটে সেবাবঞ্চিত রোগীরা

প্রতিনিধি, ঈশ্বরদী (পাবনা)

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স শুধু কাগজে-কলমে এবং অবকাঠামোগতভাবে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট। নেই অনুমোদিত জনবল, যন্ত্রপাতি ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ফলে কাক্সিক্ষত সেবা বঞ্চিত ঈশ্বরদীবাসী। বর্তমানে ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্প ও ইপিজেডে চার সহস্র্রাধিক বিদেশীসহ প্রায় ৪০ হাজার মানুষ কর্মরত। এছাড়াও উপজেলায় সাড়ে তিন লাখ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বসবাস। দুর্ঘটনা, স্ট্রোক এবং সামান্য জটিল রোগী হাসপাতালে গেলেই রাজশাহী বা অন্যত্র পাঠানো হয়। অনেক সময় গুরুতর অসুস্থ রোগী অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরের সময় পথেই মারা যায়। বিদেশীদের ক্ষেত্রেও এ ধরনের কয়েকটি ঘটনা ঘটায় দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে তারা নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নিত হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং খাবারের বরাদ্দ ছাড়া ১০ বছরে আর কিছু হয়নি। ৫০ শয্যার মধ্যে ৩টি কেবিনসহ ১৬ বেড করোনা রোগীদের জন্য আইসোলেশন সেন্টার করা হয়েছে। নেই বিশেষজ্ঞ বা কনসালটেন্স। ৫০ শয্যায় উন্নিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহে বিশেষ পদ সৃষ্টির কথা বলা হলেও জনবল ১০ বছরেও অনুমোদন হয়নি। মোট ১৬৯ জন জনবলের মধ্যে রয়েছে ১০৮ জন। ২৭ ডাক্তারের কথা থাকলেও আছে মাত্র ১১ জন। ইউএইচএফপিও প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকেন। আরেকজন অলিখিতভাবে অনুপস্থিত। ৯ জন ডাক্তার রোটেশন করে দায়িত্ব পালন করেন। আর এদের বেশিরভাগই জুনিয়র। ৯ জন বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্সের পদ থাকলেও একজনও নেই। ল্যাব টেকনিশিয়ান, কম্পাউন্ডার, কার্ডিওগ্রাফার, ল্যাব এ্যাটেনটেড, ওটি বয়সহ অনেকগুলো পদ শুন্য রয়েছে। হাসপাতালে এক্সরে, ইসিজি ও আলট্রাসনোগ্রাম হয় না। পুরাতন ভগ্নদশার এ্যাম্বুলেন্সটি বেশি দূরুত্বের রোগী বহন করতে পারে না। ক্লিনিকের দালাল ও প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের চালকরা সবসময় ভিড় করে থাকে। হাসপাতালে যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না। প্রচেষ্টা না থাকায় ৫০ শয্যার বাস্তবায়ন নেই। ঈশ্বরদী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার গোলাম মোস্তফা চান্না মন্ডল জানান, রোগী গেলেই রাজশাহী, পাবনা বা ক্লিনিকে পাঠানো হয়। চিকিৎসা ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ভেঙ্গে পড়লেও প্রতিকার হচ্ছে না। হাসপাতালের অব্যস্থাপনার কারণে বিদেশীদের কাছে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফ এ আসমা খান জনবল সঙ্কট, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, টেকনিশিয়ান না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ইসিজি ও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন এখানে আছে। এক্সরে মেশিন এসেছে কিন্তু এখনও খেলা হয়নি। পুরাতন একটি এ্যাম্বুলেন্স আছে, তবে দূরে যেতে পারে না। ইতোপূর্বে জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে ঈশ্বরদীসহ দেশের ৮টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১০০ শয্যায় উন্নিত করণের তালিকা হয়েছিল। কিন্তু পরে তালিকা থেকে ঈশ্বরদী অন্যত্র নেয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, সকল নাগরিকের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য সরকারের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। ঈশ্বরদী হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা এবং সমস্যার বিষয় আমি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করব। জনগুরুত্ব এবং বিদেশী নাগরিকের অবস্থানের কারণে ঈশ্বরদী হাসপাতাল ১০০ শয্যায় উন্নিত করা উচিত বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।