করোনা গ্রাম-শহর চিনছে না

করোনা এখন গ্রাম-শহর চিনছে না। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একদিনে আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। যশোর, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, সিলেটের পরিস্থিতি আতঙ্কজনক। কুষ্টিয়ায় স্বজনের কান্নায় ভারি হচ্ছে হাসপাতালের বাতাস। যশোরে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৪৭০, চুয়াডাঙ্গায় ২৪, কুষ্টিয়ায় ৭৭, দিনাজপুরে ৫২, সিলেটে ৬৪ জন শনাক্ত হয়েছেন। সাতক্ষীরায় সংক্রমণের নিম্নগতি হলেও মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতিতে আতঙ্ক বাড়ছে। লালমনিরহাটে স্বামীর পর স্ত্রীও মারা গেছেন।

রামেক হাসপাতালে ২৬ দিনে মারা গেছেন ২৯১ জন

রাজশাহী : জেলায় করোনা এখন গ্রাম-শহর চিনছে না। মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছেই। কোনভাবেই বাধ মানানো যাচ্ছে না। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একদিনে আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি মাসের গত ২৬ দিনে মারা গেলেন ২৯১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫২ জন। গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৫৭ বেডের বিপরীতে মোট চিকিৎসাধীন রোগী আছেন ৪৩১ জন। অতিরিক্ত রোগীদের মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইউসিইউতে ভর্তি আছেন ২০ জন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনসহ আশপাশের উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে এখন ঘরে ঘরে দেখা দিচ্ছে জ্বর, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথার মতো উপসর্গ। ফলে কোনটি করোনা আর কোনটি সাধারণ বর্ষার সাধারণ মৌসুমি উপসর্গ তা এখন ঠিক করে বুঝে উঠতে পারছেন না অনেকেই। পরিস্থিতি যখন জটিল হচ্ছে তখন রোগী নিয়ে দৌড়াচ্ছেন হাসপাতালে। সেখানে উপসর্গ নিয়ে ঝরছে প্রাণ। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীরা অনেক দেরিতে হাসপাতালে আসছেন। আক্রান্ত হওয়ার এক পর্যায়ে যখন দেখতে পাচ্ছেন আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না তখন হাসপাতালে আসছেন। রোগীরা দেরি করে ফেলায় মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। মূলত যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাচ্ছে তারাই হাসপাতালে ভর্তি হতে আসছেন। ফলে শতভাগ রোগীকেই অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। সেন্ট্রাল লাইনে অক্সিজেন সরবরাহ দেয়া হচ্ছে।

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহিরুল ইসলাম বলেন, মৌসুম পরিবর্তন হচ্ছে। অনেকেই নানা কারণে বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজছেন। এতে অনেকেই মৌসুমি সর্দি-কাশি, জ্বর ও গলা ব্যথার মতো সিজোনাল ফ্লুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এখন জ্বর-সর্দিজনিত যে হারে রোগী পাচ্ছি তাদের অধিকাংশই করোনা আক্রান্ত। এর মধ্যে গ্রামের রোগীই বেশি।

কুষ্টিয়ায় স্বজনের কান্নায় ভারি হচ্ছে হাসপাতালের বাতাস

কুষ্টিয়া : এক নারীর বিলাপে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। কিছুক্ষণ আগে ওই নারীর স্বামী কুষ্টিয়া পৌরসভার মিনাপাড়া মহল্লার মিলন হোসেন (৪৫) করোনায় মারা গেছেন। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে নাসিমার চারদিকে নেমে এসেছে অন্ধকার। এমন হৃদয় ভাঙ্গা দৃশ্যের অবতারণা এখন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে প্রতিদিন ঘটছে। কোনদিন ৯ জন, কোনদিন ৫ জন, কোনদিন ৭ জন এভাবেই মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মুখ।

এদিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত ৫ জন এবং উপসর্গ নিয়ে ২ জনের মৃত্যু হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রোগী ভর্তির চাপ প্রতিদিন বাড়ছে। বর্তমানে হাসপাতালে ১৮৮ জন রোগী ভর্তি আছেন।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন বলেন, এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে তাহলে অতিরিক্ত লোকবল প্রয়োজন হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হচ্ছে। শুক্রবার ২২৩টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে জেলায় নতুন করে ৭৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৫.৬৪ শতাংশ।

যশোরে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৪৭০

জনের করোনা শনাক্ত

যশোর : জেলায় করোনা শনাক্তের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৭০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যা এই জেলায় এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এই সময়ে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৯ জন।

যশোর সিভিল সার্জন অফিসের করোনা ফোকাল পারসন ডা. মো. রেহনেওয়াজ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যশোরে মোট ৯৫১ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭০ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৯ ভাগ।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, যশোরে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এখন গ্রাম পর্যায়েও মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। সংক্রমণের এখন পিক বা ঊর্ধ্বগতির সময় চলছে।

খুলনা বিভাগে কমেছে মৃত্যু ও শনাক্ত

খুলনা : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ১৭২ জন। এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৩৩৩ জন। মারা গেছেন ২৩৫ জন।

তবে খুলনা বিভাগে কমেছে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত। ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্ত হয়েছেন ৮৪৮ জন। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ৫০ হাজার ৯৬৫ জন। আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৫৩ জনে।

সাতক্ষীরায় সংক্রমণে নিম্নগতি, মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতিতে আতঙ্ক বাড়ছে

সাতক্ষীরা : জেলায় করোনা সংক্রমণে নিম্নগতি অব্যাহত আছে। তবে কমছে না মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতি। সরকারি হাসপাতালে গিজ গিজ করছে করোনা রোগী। আসনের বিপরীতে দেড়গুণ রোগী থাকায় নতুন করে ভর্তি হওয়ার সুযোগ কমে যাচ্ছে। এ সুযোগে গলাকাটা ব্যবসা করছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৬৬ জন।

গত ১ সপ্তাহে করোনা সংক্রমণের হার কমলেও বাড়ছে মৃত্যু। গত ৭ দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ০৯ জন। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৪৮ জন। এছাড়া জুন মাসে উপসর্গে মারা গেছেন শতাধিক রোগী। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৯ জন রোগী। অথচ মে মাসে করোনায় মৃত্যু হয়েছিল মাত্র ২ জনের।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসেইন শাফায়াত জানান, ভারতের ডেল্টা ভাইরাস সে দেশের জন্য খুবই শক্তিশালী ছিল। তবে একই ভাইরাস মিউটেশন হয়ে কিছুটা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আবার শক্তিশালী হতেও পারে। রোগীদের জলদি হাসপাতালে নিয়ে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। নিয়মিত অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপতে হবে। স্যাচুরেশন কমতে থাকলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলে, মৃত্যুহার অনেকটাই কমানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। শনাক্ত হয়েছে ৪৩ জনের। শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। এর আগের দিন ছিল ২৮ শতাংশ। তার আগের দিন ছিল ৩৭ শতাংশ।

গত ১৮ জুন সাতক্ষীরা জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ করোনা পজেটিভ ৬০ দশমিক ৮৭ শতাংশ শনাক্ত হয়। এর পর থেকে প্রতিদিনই পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। ১৯ জুন ৫০ শতাংশ, ২০ জুন ৪৩ দশমিক ১ শতাংশ, ২১ জুন ৪৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২২ জুন ৩৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ, ২৩ জুন ৩৭ দশমিক ০২ শতাংশ এবং ২৪ জুন ২৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে।

সংক্রমণের হার কমে যাওয়ার বিষয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. জয়ন্ত সরকার জানান, যে কোন ভাইরাস সংক্রমণের একটা পিক আওয়ার থাকে। সাতক্ষীরায় সে সময়টা চলে গেছে। এছাড়া তিন সপ্তাহের লকডাউনের সুফলতাও কিছুটা মিলেছে।

সামেক হাসপতালের কনসালট্যান্ট ডা. মানস মন্ডল জানান, নতুন করে রোগী ভর্তি খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের জন্য। ৩৯ জন নার্স পদায়ন করা হয়েছে। কিন্তু কমপক্ষে ২০ জন চিকিৎসক ও ৫০ জন ওয়ার্ড বয়-ক্লিনার নিয়োগ না দিলে চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। লজিস্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধি না করলে বেড বাড়ানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন চিকিৎসক মানস মন্ডল।

এদিকে চতুর্থ দফা লকডাউনের প্রথম দিন চলছে খুবই ঢিলে-ঢালাভাবে। শহরে কিছুটা প্রশাসনিক তৎপরতা থাকলেও গ্রামাঞ্চল রয়েছে তৎপরতার বাইরে।

চুয়াডাঙ্গায় আক্রান্ত আরও ২৪ জন

চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা ও আলুকদিয়া ইউনিয়নে চলমান লকডাউন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা উপসর্গে নিয়ে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ৬১টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে আরও ২৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএসও) জানান, গত এক সপ্তাহে করোনা ভাইরাস রোগী শনাক্তের গড় আনুপাতিক হার ৬৫ দশমিক ১৪ শতাংশ।

দিনাজপুরে নতুন শনাক্ত ৫২ : হার ৩৮ দশমিক ২৩ শতাংশ

দিনাজপুর : জেলার দুটি হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসাসেবা দিতে যথেষ্ট হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবদুল কুদ্দুছ জানান, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫২ জন শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭ হাজার ৯৪৭ জনে। জেলায় বর্তমান করোনা রোগী আছেন ১ হাজার ৭৫১ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১২৮ জন।

বগুড়ায় হাসপাতালে রোগী সংখ্যা বেড়েই চলেছে

বগুড়া : জেলার হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগী সংখ্যা বেড়েই চলছে। ৩ জন মারা গেছেন। রোগীর চাপ সামাল দিতে বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে তৃতীয় দফায় শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছে তাদের আর করোনা বেড বাড়ানোর অবস্থা নেই।

বগুড়ার স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২৪ ঘণ্টায় জেলায় আরও ৫৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৩। জেলার ৩টি হাসপাতালে শনিবার সকাল পর্যন্ত করোনা রোগী রয়েছেন ৩৪৬ জন।

সিলেটে শনাক্ত ৬৪ জন

সিলেট : জেলায় নতুন করে ৬৪ জন শনাক্ত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৬২ জনে। সিলেট বিভাগে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে আরও ১২২ জন । এর মধ্যে ৬৪ জনই সিলেট জেলার। সিলেট বিভাগে মোট করোনা প্রমাণিত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ২৪ হাজার ৯২৯ জনে। যাদের মধ্যে সিলেট জেলায় ১৬ হাজার ৪৯১ জন, সুনামগঞ্জে ২ হাজার ৯৩৪ জন, হবিগঞ্জ জেলায় ২ হাজার ৬৩৩ জন ও মৌলভীবাজারে ২ হাজার ৮৭১ জন।

লালমনিরহাটে স্বামীর পর স্ত্রীর মৃত্যু

লালমনিরহাট : জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে স্বামীর পর স্ত্রীও মারা গেলেন। সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাকোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা উম্মে কুলছুম হ্যাপী (৫৫) মারা গেছেন। এর আগে তার তার স্বামী জিয়াউল হায়দার (৫৪) করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার স্বামীও কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দক্ষিণ মরানদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৩৪৩ জন।

মহাদেবপুরে আক্রান্ত ১০

মহাদেবপুর (নওগাঁ) : উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ২১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এ নিয়ে এই উপজেলায় মোট আক্রান্ত হলেন ৩৭১ জন। বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রয়েছেন ১০৮ জন।

চট্টগ্রামে চিকিৎসকসহ তিনজনের মৃত্যু

চট্টগ্রাম : জেলায় ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন শনাক্ত হয়েছে ২১৬ জনের। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত ৫৭ হাজার ৩৭০ জন। এ পর্যন্ত নগরে ৪৬৭ জন এবং উপজেলায় ২০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। এই তিনজনের মধ্যে দিনার জেবিন (২৯) নামে আরও এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২৫ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। সারাদেশে মৃত্যু হয়েছে ১৫৭ চিকিৎসকের। গত শুক্রবার সকালে নগরের মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় ২১৬ জন নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ হাজার ৩৭টি।

রবিবার, ২৭ জুন ২০২১ , ১৩ আষাঢ় ১৪২৮ ১৫ জিলক্বদ ১৪৪২

করোনা গ্রাম-শহর চিনছে না

সংবাদ ডেস্ক

করোনা এখন গ্রাম-শহর চিনছে না। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একদিনে আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। যশোর, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, সিলেটের পরিস্থিতি আতঙ্কজনক। কুষ্টিয়ায় স্বজনের কান্নায় ভারি হচ্ছে হাসপাতালের বাতাস। যশোরে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৪৭০, চুয়াডাঙ্গায় ২৪, কুষ্টিয়ায় ৭৭, দিনাজপুরে ৫২, সিলেটে ৬৪ জন শনাক্ত হয়েছেন। সাতক্ষীরায় সংক্রমণের নিম্নগতি হলেও মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতিতে আতঙ্ক বাড়ছে। লালমনিরহাটে স্বামীর পর স্ত্রীও মারা গেছেন।

রামেক হাসপাতালে ২৬ দিনে মারা গেছেন ২৯১ জন

রাজশাহী : জেলায় করোনা এখন গ্রাম-শহর চিনছে না। মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছেই। কোনভাবেই বাধ মানানো যাচ্ছে না। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একদিনে আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি মাসের গত ২৬ দিনে মারা গেলেন ২৯১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫২ জন। গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৫৭ বেডের বিপরীতে মোট চিকিৎসাধীন রোগী আছেন ৪৩১ জন। অতিরিক্ত রোগীদের মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইউসিইউতে ভর্তি আছেন ২০ জন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনসহ আশপাশের উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে এখন ঘরে ঘরে দেখা দিচ্ছে জ্বর, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথার মতো উপসর্গ। ফলে কোনটি করোনা আর কোনটি সাধারণ বর্ষার সাধারণ মৌসুমি উপসর্গ তা এখন ঠিক করে বুঝে উঠতে পারছেন না অনেকেই। পরিস্থিতি যখন জটিল হচ্ছে তখন রোগী নিয়ে দৌড়াচ্ছেন হাসপাতালে। সেখানে উপসর্গ নিয়ে ঝরছে প্রাণ। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীরা অনেক দেরিতে হাসপাতালে আসছেন। আক্রান্ত হওয়ার এক পর্যায়ে যখন দেখতে পাচ্ছেন আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না তখন হাসপাতালে আসছেন। রোগীরা দেরি করে ফেলায় মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। মূলত যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাচ্ছে তারাই হাসপাতালে ভর্তি হতে আসছেন। ফলে শতভাগ রোগীকেই অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। সেন্ট্রাল লাইনে অক্সিজেন সরবরাহ দেয়া হচ্ছে।

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহিরুল ইসলাম বলেন, মৌসুম পরিবর্তন হচ্ছে। অনেকেই নানা কারণে বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজছেন। এতে অনেকেই মৌসুমি সর্দি-কাশি, জ্বর ও গলা ব্যথার মতো সিজোনাল ফ্লুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এখন জ্বর-সর্দিজনিত যে হারে রোগী পাচ্ছি তাদের অধিকাংশই করোনা আক্রান্ত। এর মধ্যে গ্রামের রোগীই বেশি।

কুষ্টিয়ায় স্বজনের কান্নায় ভারি হচ্ছে হাসপাতালের বাতাস

কুষ্টিয়া : এক নারীর বিলাপে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। কিছুক্ষণ আগে ওই নারীর স্বামী কুষ্টিয়া পৌরসভার মিনাপাড়া মহল্লার মিলন হোসেন (৪৫) করোনায় মারা গেছেন। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে নাসিমার চারদিকে নেমে এসেছে অন্ধকার। এমন হৃদয় ভাঙ্গা দৃশ্যের অবতারণা এখন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে প্রতিদিন ঘটছে। কোনদিন ৯ জন, কোনদিন ৫ জন, কোনদিন ৭ জন এভাবেই মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মুখ।

এদিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত ৫ জন এবং উপসর্গ নিয়ে ২ জনের মৃত্যু হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রোগী ভর্তির চাপ প্রতিদিন বাড়ছে। বর্তমানে হাসপাতালে ১৮৮ জন রোগী ভর্তি আছেন।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন বলেন, এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে তাহলে অতিরিক্ত লোকবল প্রয়োজন হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হচ্ছে। শুক্রবার ২২৩টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে জেলায় নতুন করে ৭৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৫.৬৪ শতাংশ।

যশোরে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৪৭০

জনের করোনা শনাক্ত

যশোর : জেলায় করোনা শনাক্তের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৭০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যা এই জেলায় এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এই সময়ে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৯ জন।

যশোর সিভিল সার্জন অফিসের করোনা ফোকাল পারসন ডা. মো. রেহনেওয়াজ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যশোরে মোট ৯৫১ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭০ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৯ ভাগ।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, যশোরে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এখন গ্রাম পর্যায়েও মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। সংক্রমণের এখন পিক বা ঊর্ধ্বগতির সময় চলছে।

খুলনা বিভাগে কমেছে মৃত্যু ও শনাক্ত

খুলনা : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ১৭২ জন। এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৩৩৩ জন। মারা গেছেন ২৩৫ জন।

তবে খুলনা বিভাগে কমেছে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত। ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্ত হয়েছেন ৮৪৮ জন। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ৫০ হাজার ৯৬৫ জন। আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৫৩ জনে।

সাতক্ষীরায় সংক্রমণে নিম্নগতি, মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতিতে আতঙ্ক বাড়ছে

সাতক্ষীরা : জেলায় করোনা সংক্রমণে নিম্নগতি অব্যাহত আছে। তবে কমছে না মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতি। সরকারি হাসপাতালে গিজ গিজ করছে করোনা রোগী। আসনের বিপরীতে দেড়গুণ রোগী থাকায় নতুন করে ভর্তি হওয়ার সুযোগ কমে যাচ্ছে। এ সুযোগে গলাকাটা ব্যবসা করছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৬৬ জন।

গত ১ সপ্তাহে করোনা সংক্রমণের হার কমলেও বাড়ছে মৃত্যু। গত ৭ দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ০৯ জন। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৪৮ জন। এছাড়া জুন মাসে উপসর্গে মারা গেছেন শতাধিক রোগী। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৯ জন রোগী। অথচ মে মাসে করোনায় মৃত্যু হয়েছিল মাত্র ২ জনের।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসেইন শাফায়াত জানান, ভারতের ডেল্টা ভাইরাস সে দেশের জন্য খুবই শক্তিশালী ছিল। তবে একই ভাইরাস মিউটেশন হয়ে কিছুটা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আবার শক্তিশালী হতেও পারে। রোগীদের জলদি হাসপাতালে নিয়ে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। নিয়মিত অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপতে হবে। স্যাচুরেশন কমতে থাকলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলে, মৃত্যুহার অনেকটাই কমানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। শনাক্ত হয়েছে ৪৩ জনের। শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। এর আগের দিন ছিল ২৮ শতাংশ। তার আগের দিন ছিল ৩৭ শতাংশ।

গত ১৮ জুন সাতক্ষীরা জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ করোনা পজেটিভ ৬০ দশমিক ৮৭ শতাংশ শনাক্ত হয়। এর পর থেকে প্রতিদিনই পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। ১৯ জুন ৫০ শতাংশ, ২০ জুন ৪৩ দশমিক ১ শতাংশ, ২১ জুন ৪৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২২ জুন ৩৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ, ২৩ জুন ৩৭ দশমিক ০২ শতাংশ এবং ২৪ জুন ২৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে।

সংক্রমণের হার কমে যাওয়ার বিষয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. জয়ন্ত সরকার জানান, যে কোন ভাইরাস সংক্রমণের একটা পিক আওয়ার থাকে। সাতক্ষীরায় সে সময়টা চলে গেছে। এছাড়া তিন সপ্তাহের লকডাউনের সুফলতাও কিছুটা মিলেছে।

সামেক হাসপতালের কনসালট্যান্ট ডা. মানস মন্ডল জানান, নতুন করে রোগী ভর্তি খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের জন্য। ৩৯ জন নার্স পদায়ন করা হয়েছে। কিন্তু কমপক্ষে ২০ জন চিকিৎসক ও ৫০ জন ওয়ার্ড বয়-ক্লিনার নিয়োগ না দিলে চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। লজিস্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধি না করলে বেড বাড়ানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন চিকিৎসক মানস মন্ডল।

এদিকে চতুর্থ দফা লকডাউনের প্রথম দিন চলছে খুবই ঢিলে-ঢালাভাবে। শহরে কিছুটা প্রশাসনিক তৎপরতা থাকলেও গ্রামাঞ্চল রয়েছে তৎপরতার বাইরে।

চুয়াডাঙ্গায় আক্রান্ত আরও ২৪ জন

চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা ও আলুকদিয়া ইউনিয়নে চলমান লকডাউন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা উপসর্গে নিয়ে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ৬১টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে আরও ২৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএসও) জানান, গত এক সপ্তাহে করোনা ভাইরাস রোগী শনাক্তের গড় আনুপাতিক হার ৬৫ দশমিক ১৪ শতাংশ।

দিনাজপুরে নতুন শনাক্ত ৫২ : হার ৩৮ দশমিক ২৩ শতাংশ

দিনাজপুর : জেলার দুটি হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসাসেবা দিতে যথেষ্ট হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবদুল কুদ্দুছ জানান, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫২ জন শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭ হাজার ৯৪৭ জনে। জেলায় বর্তমান করোনা রোগী আছেন ১ হাজার ৭৫১ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১২৮ জন।

বগুড়ায় হাসপাতালে রোগী সংখ্যা বেড়েই চলেছে

বগুড়া : জেলার হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগী সংখ্যা বেড়েই চলছে। ৩ জন মারা গেছেন। রোগীর চাপ সামাল দিতে বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে তৃতীয় দফায় শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছে তাদের আর করোনা বেড বাড়ানোর অবস্থা নেই।

বগুড়ার স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২৪ ঘণ্টায় জেলায় আরও ৫৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৩। জেলার ৩টি হাসপাতালে শনিবার সকাল পর্যন্ত করোনা রোগী রয়েছেন ৩৪৬ জন।

সিলেটে শনাক্ত ৬৪ জন

সিলেট : জেলায় নতুন করে ৬৪ জন শনাক্ত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৬২ জনে। সিলেট বিভাগে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে আরও ১২২ জন । এর মধ্যে ৬৪ জনই সিলেট জেলার। সিলেট বিভাগে মোট করোনা প্রমাণিত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ২৪ হাজার ৯২৯ জনে। যাদের মধ্যে সিলেট জেলায় ১৬ হাজার ৪৯১ জন, সুনামগঞ্জে ২ হাজার ৯৩৪ জন, হবিগঞ্জ জেলায় ২ হাজার ৬৩৩ জন ও মৌলভীবাজারে ২ হাজার ৮৭১ জন।

লালমনিরহাটে স্বামীর পর স্ত্রীর মৃত্যু

লালমনিরহাট : জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে স্বামীর পর স্ত্রীও মারা গেলেন। সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাকোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা উম্মে কুলছুম হ্যাপী (৫৫) মারা গেছেন। এর আগে তার তার স্বামী জিয়াউল হায়দার (৫৪) করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার স্বামীও কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দক্ষিণ মরানদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৩৪৩ জন।

মহাদেবপুরে আক্রান্ত ১০

মহাদেবপুর (নওগাঁ) : উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ২১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এ নিয়ে এই উপজেলায় মোট আক্রান্ত হলেন ৩৭১ জন। বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রয়েছেন ১০৮ জন।

চট্টগ্রামে চিকিৎসকসহ তিনজনের মৃত্যু

চট্টগ্রাম : জেলায় ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন শনাক্ত হয়েছে ২১৬ জনের। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত ৫৭ হাজার ৩৭০ জন। এ পর্যন্ত নগরে ৪৬৭ জন এবং উপজেলায় ২০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। এই তিনজনের মধ্যে দিনার জেবিন (২৯) নামে আরও এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২৫ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। সারাদেশে মৃত্যু হয়েছে ১৫৭ চিকিৎসকের। গত শুক্রবার সকালে নগরের মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় ২১৬ জন নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ হাজার ৩৭টি।