২ বছর অতিক্রম করেছে বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকা-। এদিকে রায় কর্যকর না হওয়ায় হতাশ রিফাত শরীফের বাবা মা, অন্যদিকে মুক্তির আশায় দিন গুণছে মিন্নির পরিবার। মিন্নি বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে দিবালোকে শাহ নেওয়াজ রিফাত শরীফকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে নয়ন বন্ড বাহিনী। পরে ওইদিন বিকেলে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিফাত শরীফ। এরপর বিচারের রায়ে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ৬ জনের ফাঁসি, অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- হয়।
ঘটনার দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনও রিফাতের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে কাঁদেন তার মা-বাবা ও বোন। মা ডেইজি আক্তার ও বাবা আ. হালিম দুলালের দাবি, আদালত খোলার সঙ্গে সঙ্গে যেন এ মামলার রায় দ্রুত সম্পন্ন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, একমাত্র ছেলে ও মেয়ে নিয়ে তাদের সুখের সংসার ছিল। মিন্নির কারণে সেই সুখের সংসার ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। তারা সবসময় রিফাতের শূন্যতাকে অনুভব করেন। রিফাতের শোকে রিফাতের মা নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন শয্যাশায়ী।
মামলার বিচার কার্যক্রম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এমএ আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, করোনার কারণে সব মামলার বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। পেপারবুক প্রস্তুত হলেই রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও দ্রুত শুনানি হয় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে।
রিফাত শরীফ হত্যা ঘটনার পরদিন বরগুনা সদর থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। নৃশংস এ হত্যাকা-ের ছয়দিন পর এ মামলার প্রধান আসামি বন্ড বাহিনী প্রধান সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এছাড়া এ হত্যাকা-ের ২০ দিন পর এ মামলার প্রধান সাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে দীর্ঘ তদন্ত শেষে ওই বছরের ১ অক্টোবর বিকেলে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ক্যাটাগরিতে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে বরগুনার সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এতে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ককে আসামি করা হয়।
পরে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিচার কাজ শুরু করেন। আর একই বছরের ৮ জানুয়ারি বরগুনার শিশু আদালত অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিচার কাজ শুরু করেন। পরে দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই বছরের ছয় মাসের জন্য এ মামলার বিচার কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণা করেন আদালত। এ রায়ে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে হত্যাকা-ের প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করে মিন্নিসহ ছয় আসামিকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়। আর বাকি চার আসামিকে খালাস দেন আদালত। অন্যদিকে একই বছরের ২৭ অক্টোবর অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির রায় ঘোষণা করেন বরগুনার শিশু আদালত। রায়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছয় আসামিকে ১০ বছরের কারাদন্ড প্রদান করে আদালত।
এছাড়া চারজনকে পাঁচ বছর এবং একজনকে তিন বছরের কারাদ- দিয়ে তিনজনকে খালাস দেয়া হয়। পরে নিম্ন আদালতের এ রায়ের পর উচ্চ আদালতে আপিল করেন দ-িত সব আসামি। তবে করোনার কারণে আদালত বন্ধ থাকায় থমকে আছে এ মামলার বিচার কার্যক্রম। এ মামলার ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামিরা হলো রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী, আল কাইয়উম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি।
কারাগারে অসুস্থ মিন্নি, চিকিৎসার জন্য আবেদন
রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে হত্যাকা-ের প্রধান পরিকল্পনাকারী উল্লেখ করে ফাঁসির আদেশ দেয়ার পর ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম বরগুনা জেলা কারাগার, সেখান থেকে বর্তমানে কাশিমপুর আছেন মিন্নি। বহুল আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার ৯ মাস পরও মিন্নিকে নির্দোষ দাবি করেছেন তার বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।
মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, মিন্নিকে অন্যায়ভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, মিন্নি কোনভাবেই দোষী না এবং ও (মিন্নি) কোন পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিল না। এটা কেউ প্রমাণও করতে পারেনি। কুচক্রী মহল মিন্নিকে এই মামলায় জড়িয়ে ফাঁসির দ-ে দ-িত করেছে। উচ্চ আদালতে মিন্নি বেকসুর খালাস পাবে বলে দাবি করেন তিনি।
মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, মৃত্যুর আগে রিফাত তার বাবার কাছে হামলাকারীদের নাম বলেছে এবং মামলায় মিন্নিকে সাক্ষী করতে বলেছে। রিফাতের কথা অনুযায়ী তার বাবা মামলা দায়ের করেছেন এবং মামলার এজাহারে এসব কথা স্পষ্টভাবে লেখা আছে। এছাড়া রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ যে সাক্ষী দিয়েছেন তাতেও এসব কথা উঠে এসেছে। পরবর্তীতে পুলিশ প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের সাক্ষী উপস্থাপন করে মিন্নিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। মিন্নি আসলেই নির্দোষ। তাই উচ্চ আদালতে মিন্নি সুফল পাবে।
মিন্নির শারীরিক অবস্থা নিয়ে মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, মিন্নির দাঁতে ব্যথা ও মাথা ব্যথাসহ অন্য অনেক উপসর্গ আছে। মিন্নি খেতে পারে না, ঘুমাতে পারে না। সব সময় অসুস্থ থাকে। তাই খুবই দুর্বল হয়ে গেছে। মিন্নির চিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এ আবেদন অনুমোদিত হলে মিন্নিকে বাইরে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হবে বলে জানান কিশোর।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার কারণে মিন্নিকে চেনা এখন দুষ্কর ব্যাপার। মিন্নি কোনদিন কোন অভাব দেখেনি। বাড়িতে ওর কোন শূন্যতাও ছিল না। মিন্নিকে তিনি কলেজে নিয়ে যেতেন আবার কলেজ থেকে নিয়ে বাসায় নিয়ে আসতেন বলে জানান। মিন্নি আজ মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন থেকে দূরে। আজ মিন্নিকে কারাগারের সেলে আবদ্ধ থাকতে হচ্ছে। তাই সেখানে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছে মিন্নি।
রিফাত হত্যা মামলার রায়ের পর গত বছরের ২৯ অক্টোবর বরগুনা জেলা কারাগার থেকে মিন্নিকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে এ কারাগারেই রয়েছেন মিন্নি। করোনার কারণে বন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ থাকায় প্রতি সপ্তাহে একবার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পায় মিন্নি।
রবিবার, ২৭ জুন ২০২১ , ১৩ আষাঢ় ১৪২৮ ১৫ জিলক্বদ ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরগুনা
২ বছর অতিক্রম করেছে বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকা-। এদিকে রায় কর্যকর না হওয়ায় হতাশ রিফাত শরীফের বাবা মা, অন্যদিকে মুক্তির আশায় দিন গুণছে মিন্নির পরিবার। মিন্নি বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে দিবালোকে শাহ নেওয়াজ রিফাত শরীফকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে নয়ন বন্ড বাহিনী। পরে ওইদিন বিকেলে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিফাত শরীফ। এরপর বিচারের রায়ে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ৬ জনের ফাঁসি, অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- হয়।
ঘটনার দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনও রিফাতের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে কাঁদেন তার মা-বাবা ও বোন। মা ডেইজি আক্তার ও বাবা আ. হালিম দুলালের দাবি, আদালত খোলার সঙ্গে সঙ্গে যেন এ মামলার রায় দ্রুত সম্পন্ন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, একমাত্র ছেলে ও মেয়ে নিয়ে তাদের সুখের সংসার ছিল। মিন্নির কারণে সেই সুখের সংসার ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। তারা সবসময় রিফাতের শূন্যতাকে অনুভব করেন। রিফাতের শোকে রিফাতের মা নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন শয্যাশায়ী।
মামলার বিচার কার্যক্রম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এমএ আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, করোনার কারণে সব মামলার বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। পেপারবুক প্রস্তুত হলেই রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও দ্রুত শুনানি হয় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে।
রিফাত শরীফ হত্যা ঘটনার পরদিন বরগুনা সদর থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। নৃশংস এ হত্যাকা-ের ছয়দিন পর এ মামলার প্রধান আসামি বন্ড বাহিনী প্রধান সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এছাড়া এ হত্যাকা-ের ২০ দিন পর এ মামলার প্রধান সাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে দীর্ঘ তদন্ত শেষে ওই বছরের ১ অক্টোবর বিকেলে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ক্যাটাগরিতে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে বরগুনার সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এতে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ককে আসামি করা হয়।
পরে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিচার কাজ শুরু করেন। আর একই বছরের ৮ জানুয়ারি বরগুনার শিশু আদালত অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিচার কাজ শুরু করেন। পরে দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই বছরের ছয় মাসের জন্য এ মামলার বিচার কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণা করেন আদালত। এ রায়ে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে হত্যাকা-ের প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করে মিন্নিসহ ছয় আসামিকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়। আর বাকি চার আসামিকে খালাস দেন আদালত। অন্যদিকে একই বছরের ২৭ অক্টোবর অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির রায় ঘোষণা করেন বরগুনার শিশু আদালত। রায়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছয় আসামিকে ১০ বছরের কারাদন্ড প্রদান করে আদালত।
এছাড়া চারজনকে পাঁচ বছর এবং একজনকে তিন বছরের কারাদ- দিয়ে তিনজনকে খালাস দেয়া হয়। পরে নিম্ন আদালতের এ রায়ের পর উচ্চ আদালতে আপিল করেন দ-িত সব আসামি। তবে করোনার কারণে আদালত বন্ধ থাকায় থমকে আছে এ মামলার বিচার কার্যক্রম। এ মামলার ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামিরা হলো রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী, আল কাইয়উম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি।
কারাগারে অসুস্থ মিন্নি, চিকিৎসার জন্য আবেদন
রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে হত্যাকা-ের প্রধান পরিকল্পনাকারী উল্লেখ করে ফাঁসির আদেশ দেয়ার পর ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম বরগুনা জেলা কারাগার, সেখান থেকে বর্তমানে কাশিমপুর আছেন মিন্নি। বহুল আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার ৯ মাস পরও মিন্নিকে নির্দোষ দাবি করেছেন তার বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।
মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, মিন্নিকে অন্যায়ভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, মিন্নি কোনভাবেই দোষী না এবং ও (মিন্নি) কোন পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিল না। এটা কেউ প্রমাণও করতে পারেনি। কুচক্রী মহল মিন্নিকে এই মামলায় জড়িয়ে ফাঁসির দ-ে দ-িত করেছে। উচ্চ আদালতে মিন্নি বেকসুর খালাস পাবে বলে দাবি করেন তিনি।
মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, মৃত্যুর আগে রিফাত তার বাবার কাছে হামলাকারীদের নাম বলেছে এবং মামলায় মিন্নিকে সাক্ষী করতে বলেছে। রিফাতের কথা অনুযায়ী তার বাবা মামলা দায়ের করেছেন এবং মামলার এজাহারে এসব কথা স্পষ্টভাবে লেখা আছে। এছাড়া রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ যে সাক্ষী দিয়েছেন তাতেও এসব কথা উঠে এসেছে। পরবর্তীতে পুলিশ প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের সাক্ষী উপস্থাপন করে মিন্নিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। মিন্নি আসলেই নির্দোষ। তাই উচ্চ আদালতে মিন্নি সুফল পাবে।
মিন্নির শারীরিক অবস্থা নিয়ে মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, মিন্নির দাঁতে ব্যথা ও মাথা ব্যথাসহ অন্য অনেক উপসর্গ আছে। মিন্নি খেতে পারে না, ঘুমাতে পারে না। সব সময় অসুস্থ থাকে। তাই খুবই দুর্বল হয়ে গেছে। মিন্নির চিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এ আবেদন অনুমোদিত হলে মিন্নিকে বাইরে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হবে বলে জানান কিশোর।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার কারণে মিন্নিকে চেনা এখন দুষ্কর ব্যাপার। মিন্নি কোনদিন কোন অভাব দেখেনি। বাড়িতে ওর কোন শূন্যতাও ছিল না। মিন্নিকে তিনি কলেজে নিয়ে যেতেন আবার কলেজ থেকে নিয়ে বাসায় নিয়ে আসতেন বলে জানান। মিন্নি আজ মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন থেকে দূরে। আজ মিন্নিকে কারাগারের সেলে আবদ্ধ থাকতে হচ্ছে। তাই সেখানে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছে মিন্নি।
রিফাত হত্যা মামলার রায়ের পর গত বছরের ২৯ অক্টোবর বরগুনা জেলা কারাগার থেকে মিন্নিকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে এ কারাগারেই রয়েছেন মিন্নি। করোনার কারণে বন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ থাকায় প্রতি সপ্তাহে একবার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পায় মিন্নি।