মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

দেশের ৪ হাজার ৪৫২টি বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানে বছরে মেডিকেল বর্জ্য তৈরি হয় প্রায় ৬৭ হাজার ২০০ টন। এসব চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের ৬৯.৮৬ ভাগেরই তরল ও কঠিন বর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা জরিপ-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বেসরকারি খাতের ৪৫.৮৭ শতাংশ হাসপাতাল সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার নির্ধারিত স্থানে বর্জ্য ফেলে। ৫৪.১৩ শতাংশ হাসপাতাল বর্জ্য ফেলে খোলা স্থানে।

বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত নিয়ে বিবিএস জরিপটি করেছিল ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। জরিপ থেকে আরও জানা যাচ্ছে, দেশের ১০ হাজার ২৯১টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে ৯ হাজার ৬০৪টি প্রতিষ্ঠান নদীতে বর্জ্য ফেলে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের গত বছর করা এক গবেষণা থেকে জানা যায়, দেশের চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ২৪৮ টন মেডিকেল বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর প্রায় ৮৬ শতাংশই থেকে যাচ্ছে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বাইরে। এসব বর্জ্য মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

২০১৮ সালের জাতীয় পরিবেশ নীতি অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকা বাধ্যতামূলক। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালায় দুই শ্রেণীর অসংক্রামক ও নয় শ্রেণীর সংক্রামক বর্জ্যরে জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সিংহভাগ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানই সেটা মানছে না।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর অবহেলায় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের কারণে এ ঝুঁকি আরও বেড়েছে। মাস্ক, গ্লাভস, সিরিঞ্জিরে মতো মেডিকেল সরঞ্জাম যেখানে-সেখানে ফেলা হলে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে।

সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছাড়া চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো বছরের পর বছর চলছে কীভাবে সেটা একটা প্রশ্ন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন। শুধু চড়া দামে মাস্ক কেনায় তাদের মনোযোগ নিবদ্ধ করলে চলবে না। দেশের সব চিকিৎসা কেন্দ্রে যেন সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠে সেদিকেও তাদের খেয়াল রাখতে হবে।

নিয়ম অনুযায়ী চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো বর্জ্য সংগ্রহ, আলাদাকরণ, শোধন ও অপসারণ করছে কিনা সেটা তাদের নিশ্চিত করতে হবে। কঠিন বর্জ্য ধ্বংসের জন্য মেডিকেল ইনসিনেরেটর ও অটোক্লেভ বা দাহন যন্ত্রের মতো আধুনিক ব্যবস্থা রাখা এবং তরল বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। অন্ততপক্ষে মেডিকেল বর্জ্য পুড়িয়ে বা মাটিতে পুঁতে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। এসব বর্জ্য যেন কোনভাবেই নদী-নালায় না মেশে, উন্মুক্ত স্থানে ফেলা না হয় সে বিষয় সতর্ক থাকতে হবে, নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। যেসব চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।

রবিবার, ২৭ জুন ২০২১ , ১৩ আষাঢ় ১৪২৮ ১৫ জিলক্বদ ১৪৪২

মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

দেশের ৪ হাজার ৪৫২টি বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানে বছরে মেডিকেল বর্জ্য তৈরি হয় প্রায় ৬৭ হাজার ২০০ টন। এসব চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের ৬৯.৮৬ ভাগেরই তরল ও কঠিন বর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা জরিপ-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বেসরকারি খাতের ৪৫.৮৭ শতাংশ হাসপাতাল সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার নির্ধারিত স্থানে বর্জ্য ফেলে। ৫৪.১৩ শতাংশ হাসপাতাল বর্জ্য ফেলে খোলা স্থানে।

বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত নিয়ে বিবিএস জরিপটি করেছিল ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। জরিপ থেকে আরও জানা যাচ্ছে, দেশের ১০ হাজার ২৯১টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে ৯ হাজার ৬০৪টি প্রতিষ্ঠান নদীতে বর্জ্য ফেলে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের গত বছর করা এক গবেষণা থেকে জানা যায়, দেশের চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ২৪৮ টন মেডিকেল বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর প্রায় ৮৬ শতাংশই থেকে যাচ্ছে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বাইরে। এসব বর্জ্য মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

২০১৮ সালের জাতীয় পরিবেশ নীতি অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকা বাধ্যতামূলক। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালায় দুই শ্রেণীর অসংক্রামক ও নয় শ্রেণীর সংক্রামক বর্জ্যরে জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সিংহভাগ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানই সেটা মানছে না।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর অবহেলায় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের কারণে এ ঝুঁকি আরও বেড়েছে। মাস্ক, গ্লাভস, সিরিঞ্জিরে মতো মেডিকেল সরঞ্জাম যেখানে-সেখানে ফেলা হলে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে।

সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছাড়া চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো বছরের পর বছর চলছে কীভাবে সেটা একটা প্রশ্ন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন। শুধু চড়া দামে মাস্ক কেনায় তাদের মনোযোগ নিবদ্ধ করলে চলবে না। দেশের সব চিকিৎসা কেন্দ্রে যেন সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠে সেদিকেও তাদের খেয়াল রাখতে হবে।

নিয়ম অনুযায়ী চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো বর্জ্য সংগ্রহ, আলাদাকরণ, শোধন ও অপসারণ করছে কিনা সেটা তাদের নিশ্চিত করতে হবে। কঠিন বর্জ্য ধ্বংসের জন্য মেডিকেল ইনসিনেরেটর ও অটোক্লেভ বা দাহন যন্ত্রের মতো আধুনিক ব্যবস্থা রাখা এবং তরল বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। অন্ততপক্ষে মেডিকেল বর্জ্য পুড়িয়ে বা মাটিতে পুঁতে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। এসব বর্জ্য যেন কোনভাবেই নদী-নালায় না মেশে, উন্মুক্ত স্থানে ফেলা না হয় সে বিষয় সতর্ক থাকতে হবে, নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। যেসব চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।