কয়লাভিত্তিক ১০ বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল

প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

প্রকল্পগুলো হচ্ছে- পটুয়াখালীর ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, উত্তরবঙ্গ ১২০০ মেগাওয়াট সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট, মাওয়া ৫২২ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকার ২৮২ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চট্টগ্রামের ২৮২ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, খুলনার ৫৬৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মহেশখালীর দুটি ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ৭০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সিপিজিসিবিএল-সুমিতোমো ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

২০০৮ সালের পর দেশে যে ১৮টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন পায়, তার মধ্যেই ১০টি প্রকল্প এখন বাতিল হলো। তবে চাইলে এখানে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা যাবে।

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘২০১০-২০১১ সালের বিদ্যুতের মাস্টারপ্ল্যানে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এগুলো সময় মতো বাস্তবায়ন করা যায়নি। বাতিল করার ক্ষেত্রে সেই বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।’ ‘তাছাড়া প্যারিস এগ্রিমেন্টে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করায় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় পরিবেশবান্ধব জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।’- যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে এলএনজি আমদানি করে পাওয়ার প্ল্যান্ট করা যায়। সেই কারণে এলএনজির দিকেও কিছুটা হয়তো পরিধি বাড়াব।’ এই পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো বাদ দেয়ার ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি হবে না দাবি করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যতে কোন অঞ্চলে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগবে, তার ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যত পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের হাতে যে পরিমাণ পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে এবং আগামীতে যে পরিমাণ আমরা পাব, এতে দেখা যাচ্ছে আমাদের প্রায় ১৩ হাজার মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে সিস্টেমে অতিরিক্ত থাকবে।’

নেপাল থেকে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনতে আগামী মাসে চূড়ান্ত চুক্তি হবে বলে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভুটান থেকে হাইড্রো পাওয়ার নিয়ে আসার বিষয়টিও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের ট্রান্সমিশন কোম্পানি জিএমআর ট্রান্সমিশন লাইন করে আমাদের বিদ্যুৎ দেবে। ভবিষ্যতে এই লাইন দিয়ে আমরা আরও বিদ্যুৎ আনতে পারব। আমরা চেষ্টা করছি ড্রাই সিজনে আমাদের বিদ্যুৎ ওদের ওখানে রপ্তানি করার।’

ইউনেস্কোর উদ্বেগ যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সেগুলোর মধ্যে রামপাল আছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কনসার্ন পাওয়ার প্ল্যান্টটা কত দ্রুত হবে। আরও কত দ্রুত পাওয়ার দিতে পারব। ওইটা (ইউনেস্কোর উদ্বেগ) পরিবেশ অধিদপ্তর বলবে।’

দেশে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত নেই জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড সিচুয়েশন যদি না থাকতো, তাহলে চাহিদা ১৫ থেকে ১৬ হাজার যেত। তখন সরবরাহ কঠিন হয়ে যেত। অনেকে বলে ৪ থেকে ৫ হাজার মেগাওয়াট সারপ্লাস আছে। আমি খুঁজে পাই না যে কোথায় আছে।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যদি আমি ১৫ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত দিতে পারি আর আমার সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট ক্যাপটিভ আছে। তাহলে প্রায় ১৯ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ এখন আমি দিচ্ছি। তাহলে হাতে আছে চার হাজার মেগাওয়াট। আমরা কিন্তু একেবারে নেট টু নেটে আছি। আমাদের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হাতে রাখতে হবে। কারণ পাওয়ার যখন তখন উঠানামা করে।’

ছোট ছোট (রেন্টাল) পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো ভবিষ্যতে কন্টিনিউ করা হলে ‘নো পেমেন্ট, নো ইলেক্ট্রিসিটি বেসিসে’ রাখা হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

সোমবার, ২৮ জুন ২০২১ , ১৪ আষাঢ় ১৪২৮ ১৬ জিলক্বদ ১৪৪২

কয়লাভিত্তিক ১০ বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

প্রকল্পগুলো হচ্ছে- পটুয়াখালীর ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, উত্তরবঙ্গ ১২০০ মেগাওয়াট সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট, মাওয়া ৫২২ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকার ২৮২ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চট্টগ্রামের ২৮২ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, খুলনার ৫৬৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মহেশখালীর দুটি ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ৭০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সিপিজিসিবিএল-সুমিতোমো ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

২০০৮ সালের পর দেশে যে ১৮টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন পায়, তার মধ্যেই ১০টি প্রকল্প এখন বাতিল হলো। তবে চাইলে এখানে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা যাবে।

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘২০১০-২০১১ সালের বিদ্যুতের মাস্টারপ্ল্যানে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এগুলো সময় মতো বাস্তবায়ন করা যায়নি। বাতিল করার ক্ষেত্রে সেই বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।’ ‘তাছাড়া প্যারিস এগ্রিমেন্টে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করায় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় পরিবেশবান্ধব জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।’- যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে এলএনজি আমদানি করে পাওয়ার প্ল্যান্ট করা যায়। সেই কারণে এলএনজির দিকেও কিছুটা হয়তো পরিধি বাড়াব।’ এই পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো বাদ দেয়ার ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি হবে না দাবি করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যতে কোন অঞ্চলে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগবে, তার ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যত পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের হাতে যে পরিমাণ পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে এবং আগামীতে যে পরিমাণ আমরা পাব, এতে দেখা যাচ্ছে আমাদের প্রায় ১৩ হাজার মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে সিস্টেমে অতিরিক্ত থাকবে।’

নেপাল থেকে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনতে আগামী মাসে চূড়ান্ত চুক্তি হবে বলে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভুটান থেকে হাইড্রো পাওয়ার নিয়ে আসার বিষয়টিও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের ট্রান্সমিশন কোম্পানি জিএমআর ট্রান্সমিশন লাইন করে আমাদের বিদ্যুৎ দেবে। ভবিষ্যতে এই লাইন দিয়ে আমরা আরও বিদ্যুৎ আনতে পারব। আমরা চেষ্টা করছি ড্রাই সিজনে আমাদের বিদ্যুৎ ওদের ওখানে রপ্তানি করার।’

ইউনেস্কোর উদ্বেগ যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সেগুলোর মধ্যে রামপাল আছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কনসার্ন পাওয়ার প্ল্যান্টটা কত দ্রুত হবে। আরও কত দ্রুত পাওয়ার দিতে পারব। ওইটা (ইউনেস্কোর উদ্বেগ) পরিবেশ অধিদপ্তর বলবে।’

দেশে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত নেই জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড সিচুয়েশন যদি না থাকতো, তাহলে চাহিদা ১৫ থেকে ১৬ হাজার যেত। তখন সরবরাহ কঠিন হয়ে যেত। অনেকে বলে ৪ থেকে ৫ হাজার মেগাওয়াট সারপ্লাস আছে। আমি খুঁজে পাই না যে কোথায় আছে।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যদি আমি ১৫ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত দিতে পারি আর আমার সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট ক্যাপটিভ আছে। তাহলে প্রায় ১৯ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ এখন আমি দিচ্ছি। তাহলে হাতে আছে চার হাজার মেগাওয়াট। আমরা কিন্তু একেবারে নেট টু নেটে আছি। আমাদের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হাতে রাখতে হবে। কারণ পাওয়ার যখন তখন উঠানামা করে।’

ছোট ছোট (রেন্টাল) পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো ভবিষ্যতে কন্টিনিউ করা হলে ‘নো পেমেন্ট, নো ইলেক্ট্রিসিটি বেসিসে’ রাখা হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।